শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:০৬:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মে ২০২০
  • ১২৬ Time View

বনলতা নিউজ ডেস্ক.

দেশবাসী ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে বসেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার আহবান জানিয়েছেন।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঈদুল ফিতর মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ এ উৎসবে সমানভাবে শামিল হন। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে উপভোগ করেন। কিন্তু এবছর এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। করোনা নামক এক প্রাণঘাতী ভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তার উপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তাণ্ডবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এবছর আমরা সব ধরনের গণ-জমায়েতের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছি। কাজেই স্বাভাবিক সময়ের মতো এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা সম্ভব হবে না।

ঈদগাহ ময়দানের পরিবর্তে মসজিদে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ইতোপূর্বে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবস এবং বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানও জনসমাগম এড়িয়ে রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছে।

ঘরে বসে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে আমি ঘরে বসেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানাই, এই দুঃসময়ে আপনি আপনার দরিদ্র প্রতিবেশী, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর কথা ভুলে যাবেন না।

আপনার যেটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। তাহলেই ঈদের আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে আপনার ঘর এবং হৃদয়-মন।

করোনা আক্রান্তদের যারা সেবা দিচ্ছেন তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি ডাক্তার, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের যারা সামনে থেকে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

শুভেচ্ছা জানাই পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।

অনেকক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের ব্যবস্থাও তাদের করতে হচ্ছে।

সংবাদকর্মীরা সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরছেন এবং মানুষকে সচেতন করতে সহায়তা করছেন। তাদেরও ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

এসব কাজ করতে গিয়ে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মী এবং সংবাদকর্মী করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ব্যাংক ও সংবাদকর্মী ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিদেশে বসবাসকারী সাড়ে ৬শরও বেশি বাংলাদেশি ভাইবোন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমি সবার রুহের মাগফিরাত এবং আত্মার শান্তি কামনা করছি।

দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দ উৎসবের জন্য মহান আল্লাহতায়ালা ঈদুল ফিতরের দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এক মাসের কষ্ট আর ক্লান্তিকে ভুলে গিয়ে এদিন আনন্দ ও খুশিতে মেতে ওঠার দিন। এবছর আমরা সশরীরে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হতে বা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারলেও টেলিফোন বা ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেবো।

বিদ্রোহী কবি, মানবতার কবি, ইসলামীভাবের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গানের কয়েকটি চরণ উদ্ধৃত করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি:

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।

তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ

দে জাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন। ঘরে বসেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করুন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আবারও সবাইকে ঈদ মোবারক।

Tag :

দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা

Update Time : ০৯:০৬:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মে ২০২০

বনলতা নিউজ ডেস্ক.

দেশবাসী ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে বসেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার আহবান জানিয়েছেন।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঈদুল ফিতর মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ এ উৎসবে সমানভাবে শামিল হন। ঈদের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে উপভোগ করেন। কিন্তু এবছর এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। করোনা নামক এক প্রাণঘাতী ভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তার উপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তাণ্ডবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এবছর আমরা সব ধরনের গণ-জমায়েতের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছি। কাজেই স্বাভাবিক সময়ের মতো এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা সম্ভব হবে না।

ঈদগাহ ময়দানের পরিবর্তে মসজিদে মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ইতোপূর্বে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবস এবং বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানও জনসমাগম এড়িয়ে রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছে।

ঘরে বসে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে আমি ঘরে বসেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানাই, এই দুঃসময়ে আপনি আপনার দরিদ্র প্রতিবেশী, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর কথা ভুলে যাবেন না।

আপনার যেটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। তাহলেই ঈদের আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে আপনার ঘর এবং হৃদয়-মন।

করোনা আক্রান্তদের যারা সেবা দিচ্ছেন তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি ডাক্তার, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের যারা সামনে থেকে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

শুভেচ্ছা জানাই পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।

অনেকক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের ব্যবস্থাও তাদের করতে হচ্ছে।

সংবাদকর্মীরা সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরছেন এবং মানুষকে সচেতন করতে সহায়তা করছেন। তাদেরও ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

এসব কাজ করতে গিয়ে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মী এবং সংবাদকর্মী করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ব্যাংক ও সংবাদকর্মী ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিদেশে বসবাসকারী সাড়ে ৬শরও বেশি বাংলাদেশি ভাইবোন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমি সবার রুহের মাগফিরাত এবং আত্মার শান্তি কামনা করছি।

দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দ উৎসবের জন্য মহান আল্লাহতায়ালা ঈদুল ফিতরের দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এক মাসের কষ্ট আর ক্লান্তিকে ভুলে গিয়ে এদিন আনন্দ ও খুশিতে মেতে ওঠার দিন। এবছর আমরা সশরীরে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হতে বা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারলেও টেলিফোন বা ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেবো।

বিদ্রোহী কবি, মানবতার কবি, ইসলামীভাবের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গানের কয়েকটি চরণ উদ্ধৃত করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি:

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।

তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ

দে জাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন। ঘরে বসেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করুন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আবারও সবাইকে ঈদ মোবারক।