শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে সুদে কারবারী নারীর দাপট!

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:২১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুন ২০২০
  • ৬০ Time View

. নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী.

রাজশাহী নগরীর তোফাজ্জল হোসেন রুবেল নামে এক যুবককে শায়েস্তা করার হুমকি দিয়েই তার নামে থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন এক নারী। ইতি বেগম নামের ঐ নারী চার দিন পূর্বে মোবাইলে ‘রুবেলকে জেলের ভাত খাওয়ানোর ’হুমকী দিয়েছিলেন। রোববার (১৪ জুন) রাতে তিনি রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
সুদে কারবারী ইতি নগরীর টিকাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ভুক্তভোগীদের দাবি, ইতি ছাড়া তার বোন মায়া, আলো, ছবি এবং তার মা মাহেলা ও ভাই সুজন এলাকায় সুদের ব্যবসা করেন। এছাড়া মাদক ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে পরিবারটির বিরুদ্ধে। তাদের খপ্পড়ে পড়ে অনেক পরিবার নিঃস হয়ে গেছে।
ইতির দায়ের করা মামলার আসামি রুবেল নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকার দিলবর হোসেনের ছেলে। ইতির বোন মায়ার দায়ের করা অপর একটি মামলায় এক মাস ধরে জেল খাটছেন রুবেলের ভাই আলাউল হোসেন বিপ্লব। পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিপ্লব। পরিবারটির ইতোমধ্যে সুদের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত বিপ্লবকে নিয়েই। তার চাচাতো ভাই রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম রেজা বাইরোন জানান, ব্যবসা করার জন্য বিপ্লব ইতি-মায়া পরিবারের নিকট থেকে বিভিন্ন সময় টাকা নিয়েছেন। আর তাদের নিকট জমা রেখেছেন ব্যাংকের ফাঁকা চেক। কিন্তু টাকা নেয়ার পর চড়া সুদ দিতেই নাজেহাল হয়েছেন বিপ্লব। দোকানপাট বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন তিনি। প্রায় এক মাস আগে বিপ্লবকে আটকে পুলিশের হাতে তুলে দেন মায়া। পরে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। এ মামলায় বিপ্লব বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
বাইরোন বলেন, মায়া মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠালেও তার বোন ইতি আবার বিপ্লবের জামিন করার উদ্যোগ নেন। তিনি কারাগারে ওকালতনামা পাঠান। কিন্তু বিপ্লব তার পাঠানো ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেননি। ইতির দাবি, তিনিও বিপ্লবের নিকট টাকা পাবেন। বিপ্লবকে জামিনে বের করলেই টাকা নেয়া যাবে। কিন্তু বিপ্লব ওকালতনামায় স্বাক্ষর না করার কারণে ইতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
চার দিন পূর্বে ইতি বিপ্লবের মামাকে ফোন করে বলেন, ছোট ভাই রুবেলের পরামর্শে বিপ্লব ওকালতমানায় স্বাক্ষর করেননি। এ কারণে রুবেলকে দেখে নেয়া হবে। তাকেও জেলের ভাত খাওয়ানো হবে। এই কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে। এর তিন দিন পর তিনি রুবেলের বিরুদ্ধে থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন। রুবেল কোনো বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও তাকে আসামি করা হয়েছে। মিথ্যা এ মামলায় গ্রেফতার এড়াতে রুবেল পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বাইরোন জানান, মামলার বিষয়ে জানতে রোববার (১৪ জুন) রাতে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর পরিচালক ও নগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, নগরীর বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান রতন এবং তিনি থানায় যান। এ সময় বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন উল্টো তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন বলে দাবি করেন বাইরোন।
ইতির মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, তার ছেলের ওপর হামলার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। তবে মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ করে জানা গেছে, তারা রুবেলকে হামলা চালাতে দেখেননি। মামলার তদন্ত চলছে। রুবেলের সম্পৃক্ততা না থাকলে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয়া হবে। আর ইতির মামলা করার হুমকির রেকর্ড তিনি শুনেছেন বলেও জানান ওসি।
জানতে চাইলে ইতি বলেন, হুমকি তো আমি এমনি দেইনি। আমাকে হুমকি দেয়ায় পাল্টা হুমকি দিয়েছি। তিনি বলেন, হুমকি দিলেও মামলা মিথ্যা নয়। রুবেল আমার ছেলের হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছেন। এতে ১৬টি সেলাই পড়েছে। সুদের ব্যবসার অভিযোগের বিষয়ে বলেন, সুদের হিসাবে টাকা দেইনি। বিপ্লবকে এমনিতেই টাকা দিয়েছিলাম। ইতি বলেন, পাড়া-মহল্লায় এনজিও সুদের ব্যবসা করছে। তাদের কথা বলা হয় না। আমার কথা বলা হচ্ছে কেন?

Tag :

রাজশাহীতে সুদে কারবারী নারীর দাপট!

Update Time : ১২:২১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুন ২০২০

. নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী.

রাজশাহী নগরীর তোফাজ্জল হোসেন রুবেল নামে এক যুবককে শায়েস্তা করার হুমকি দিয়েই তার নামে থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন এক নারী। ইতি বেগম নামের ঐ নারী চার দিন পূর্বে মোবাইলে ‘রুবেলকে জেলের ভাত খাওয়ানোর ’হুমকী দিয়েছিলেন। রোববার (১৪ জুন) রাতে তিনি রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
সুদে কারবারী ইতি নগরীর টিকাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ভুক্তভোগীদের দাবি, ইতি ছাড়া তার বোন মায়া, আলো, ছবি এবং তার মা মাহেলা ও ভাই সুজন এলাকায় সুদের ব্যবসা করেন। এছাড়া মাদক ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে পরিবারটির বিরুদ্ধে। তাদের খপ্পড়ে পড়ে অনেক পরিবার নিঃস হয়ে গেছে।
ইতির দায়ের করা মামলার আসামি রুবেল নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকার দিলবর হোসেনের ছেলে। ইতির বোন মায়ার দায়ের করা অপর একটি মামলায় এক মাস ধরে জেল খাটছেন রুবেলের ভাই আলাউল হোসেন বিপ্লব। পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিপ্লব। পরিবারটির ইতোমধ্যে সুদের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত বিপ্লবকে নিয়েই। তার চাচাতো ভাই রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম রেজা বাইরোন জানান, ব্যবসা করার জন্য বিপ্লব ইতি-মায়া পরিবারের নিকট থেকে বিভিন্ন সময় টাকা নিয়েছেন। আর তাদের নিকট জমা রেখেছেন ব্যাংকের ফাঁকা চেক। কিন্তু টাকা নেয়ার পর চড়া সুদ দিতেই নাজেহাল হয়েছেন বিপ্লব। দোকানপাট বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন তিনি। প্রায় এক মাস আগে বিপ্লবকে আটকে পুলিশের হাতে তুলে দেন মায়া। পরে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। এ মামলায় বিপ্লব বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
বাইরোন বলেন, মায়া মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠালেও তার বোন ইতি আবার বিপ্লবের জামিন করার উদ্যোগ নেন। তিনি কারাগারে ওকালতনামা পাঠান। কিন্তু বিপ্লব তার পাঠানো ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেননি। ইতির দাবি, তিনিও বিপ্লবের নিকট টাকা পাবেন। বিপ্লবকে জামিনে বের করলেই টাকা নেয়া যাবে। কিন্তু বিপ্লব ওকালতনামায় স্বাক্ষর না করার কারণে ইতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
চার দিন পূর্বে ইতি বিপ্লবের মামাকে ফোন করে বলেন, ছোট ভাই রুবেলের পরামর্শে বিপ্লব ওকালতমানায় স্বাক্ষর করেননি। এ কারণে রুবেলকে দেখে নেয়া হবে। তাকেও জেলের ভাত খাওয়ানো হবে। এই কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে। এর তিন দিন পর তিনি রুবেলের বিরুদ্ধে থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন। রুবেল কোনো বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও তাকে আসামি করা হয়েছে। মিথ্যা এ মামলায় গ্রেফতার এড়াতে রুবেল পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বাইরোন জানান, মামলার বিষয়ে জানতে রোববার (১৪ জুন) রাতে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর পরিচালক ও নগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, নগরীর বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান রতন এবং তিনি থানায় যান। এ সময় বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন উল্টো তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন বলে দাবি করেন বাইরোন।
ইতির মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, তার ছেলের ওপর হামলার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। তবে মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ করে জানা গেছে, তারা রুবেলকে হামলা চালাতে দেখেননি। মামলার তদন্ত চলছে। রুবেলের সম্পৃক্ততা না থাকলে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয়া হবে। আর ইতির মামলা করার হুমকির রেকর্ড তিনি শুনেছেন বলেও জানান ওসি।
জানতে চাইলে ইতি বলেন, হুমকি তো আমি এমনি দেইনি। আমাকে হুমকি দেয়ায় পাল্টা হুমকি দিয়েছি। তিনি বলেন, হুমকি দিলেও মামলা মিথ্যা নয়। রুবেল আমার ছেলের হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছেন। এতে ১৬টি সেলাই পড়েছে। সুদের ব্যবসার অভিযোগের বিষয়ে বলেন, সুদের হিসাবে টাকা দেইনি। বিপ্লবকে এমনিতেই টাকা দিয়েছিলাম। ইতি বলেন, পাড়া-মহল্লায় এনজিও সুদের ব্যবসা করছে। তাদের কথা বলা হয় না। আমার কথা বলা হচ্ছে কেন?