বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে কারাবরণ করা তিন বন্ধুর পাশে ইউএনও তমাল

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৪৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০
  • ৭৫ Time View

গুরুদাসপুর(নাটোর)প্রতিনিধি.
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি,বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। তবে ভিন্ন ভাবে এই দিবসটি প্রতি বছর পালন করেন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারের তিন বন্ধু। প্রতি বছরের ১৫ই আগষ্টের দিনে তাদের জেল খানার স্মৃতি গুলো মনে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৫ বছরেও তাদের কোন খোঁজ রাখেনি কেউ। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ২০১৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তিন বন্ধুকে গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেন। সম্প্রতি গতকাল ১৫ই আগষ্ট শনিবার সকালে সেই তিন বন্ধুর বাড়িতে তাদের সার্বিক খোঁজ খবর নিতে ছুটে যান ইউএনও মোঃ তমাল হোসেন ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ আবু রাসেল। তিন বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান তিন বন্ধুর এক বন্ধু অশোক কুমার পালের সহধর্মীনি অসুস্থ অবস্থায় বাসায় পড়ে আছেন। অসুস্থ স্ত্রী ও সংসারের খরচ যোগাতে তাকে ভাঙ্গা হারমোনিয়াম নিয়ে ছুটতে হয় বাড়ি বাড়ি। পেশায় তিনি একজন সঙ্গীত শিক্ষক। অশোক কুমারের অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ ও তাকে একটি নতুন হারমোনিয়াম দেওয়া হবে বলে তাকে জানিয়েছেন ইউএনও। দ্বিতীয় বন্ধু নির্মল কর্মকার। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায় বিভিন্ন ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার কারনে ঋণ গ্রস্থ হয়ে পরেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক এনজিওর চাপে অসহায় হয়ে পরেছেন এবং তার চোঁখের অপারেশনের অভাবে ভাল ভাবে দেখতে পায়না। ইউএনও তমাল হোসেন তার চোখের অপারেশনের যাবতীয় খরচ ও ব্যাংক এনজিও’র সাথে কথা বলে তার ঋণের সুদ মৌখুব করার আশ্বাস দেন। অপর তৃতীয় বন্ধু প্রবীর বর্মনও পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসা করতে গিয়ে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরে অসহায় অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন তিনি। তার স্ত্রীও দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ হয়ে বাসায় পরে আছেন। উন্নত চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ অবস্থায় বাসায় পরে রয়েছে। তার স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা করার জন্য সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করা হবে বলেও ইউএনও তমাল হোসেন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, পচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদ করায় নাটোরের গুরুদাসপুরে তিন বন্ধুকে দুই বছর ডিটেনশন ও ছয় মাস সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। ওই সময় তাদের পক্ষে কথা বলারও কেউ ছিল না। ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ এ তিনবন্ধু প্রবীর কুমার বর্মন, নির্মল কর্মকার ও অশোক কুমার পালকে ১৯৭৫ সালে “রক্তের বদলে রক্ত চাই, মুজিব হত্যার বিচার চাই” শ্লোগানে পোস্টারিং ও লিফলেট বিতরণ করার অপরাধে আটক করে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল। টানা ২৯ মাস কারাভোগের পর ১৯৭৭ সালে তাদের মুক্তি দেয়া হয়।
তারা বলেন, সে সময় অন্যায়ভাবে আটক করে তাদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলা হয়। জীবনের সোনালী সময়ে গড়তে দেয়া হয়নি তাদের উজ্জ¦ল ভবিষ্যত। জেল থেকে মুক্তির পরও তারা ভয়ে ভয়ে থাকতেন। কখন জানি তাদের গ্রেফতার করা হয়। গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে ওই তিন বন্ধুর বসবাস।#
তিন বন্ধুর পক্ষে অশোক কুমার পাল বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে দুই বছর ডিটেনশ ও ছয় মাস সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিলো। তারপর থেকে তাদের আতঙ্কে কেটে গেছে কয়েক বছর। বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৪ বছরেও কেউ খোঁজ রাখেনি তাদের তিন বন্ধুর। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের বিষয়ে জানার পরে বিজয় দিবসের পোগ্রামে গুরুদাসপুর উপজেলাবাসীর সামনে তাদের তিন বন্ধুকে সম্মানিত করে এবং সম্প্রতি গতকাল ১৫ই আগষ্ট তাদের বাড়িতে গিয়ে সার্বিক সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। ইউএনও তমাল হোসেনের প্রতি তিন বন্ধু কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
ইউএনও মোঃ তমাল হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাওয়া তিন বন্ধুর বিষয়ে জানার পরেই তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে এবং তিন বন্ধুর অসুস্থতার উন্নত চিকিৎসাসহ সার্বিক সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Tag :

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে কারাবরণ করা তিন বন্ধুর পাশে ইউএনও তমাল

Update Time : ০৮:৪৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০

গুরুদাসপুর(নাটোর)প্রতিনিধি.
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি,বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। তবে ভিন্ন ভাবে এই দিবসটি প্রতি বছর পালন করেন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারের তিন বন্ধু। প্রতি বছরের ১৫ই আগষ্টের দিনে তাদের জেল খানার স্মৃতি গুলো মনে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৫ বছরেও তাদের কোন খোঁজ রাখেনি কেউ। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ২০১৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তিন বন্ধুকে গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেন। সম্প্রতি গতকাল ১৫ই আগষ্ট শনিবার সকালে সেই তিন বন্ধুর বাড়িতে তাদের সার্বিক খোঁজ খবর নিতে ছুটে যান ইউএনও মোঃ তমাল হোসেন ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ আবু রাসেল। তিন বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান তিন বন্ধুর এক বন্ধু অশোক কুমার পালের সহধর্মীনি অসুস্থ অবস্থায় বাসায় পড়ে আছেন। অসুস্থ স্ত্রী ও সংসারের খরচ যোগাতে তাকে ভাঙ্গা হারমোনিয়াম নিয়ে ছুটতে হয় বাড়ি বাড়ি। পেশায় তিনি একজন সঙ্গীত শিক্ষক। অশোক কুমারের অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ ও তাকে একটি নতুন হারমোনিয়াম দেওয়া হবে বলে তাকে জানিয়েছেন ইউএনও। দ্বিতীয় বন্ধু নির্মল কর্মকার। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায় বিভিন্ন ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার কারনে ঋণ গ্রস্থ হয়ে পরেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক এনজিওর চাপে অসহায় হয়ে পরেছেন এবং তার চোঁখের অপারেশনের অভাবে ভাল ভাবে দেখতে পায়না। ইউএনও তমাল হোসেন তার চোখের অপারেশনের যাবতীয় খরচ ও ব্যাংক এনজিও’র সাথে কথা বলে তার ঋণের সুদ মৌখুব করার আশ্বাস দেন। অপর তৃতীয় বন্ধু প্রবীর বর্মনও পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসা করতে গিয়ে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরে অসহায় অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন তিনি। তার স্ত্রীও দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ হয়ে বাসায় পরে আছেন। উন্নত চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ অবস্থায় বাসায় পরে রয়েছে। তার স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা করার জন্য সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করা হবে বলেও ইউএনও তমাল হোসেন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, পচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদ করায় নাটোরের গুরুদাসপুরে তিন বন্ধুকে দুই বছর ডিটেনশন ও ছয় মাস সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। ওই সময় তাদের পক্ষে কথা বলারও কেউ ছিল না। ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ এ তিনবন্ধু প্রবীর কুমার বর্মন, নির্মল কর্মকার ও অশোক কুমার পালকে ১৯৭৫ সালে “রক্তের বদলে রক্ত চাই, মুজিব হত্যার বিচার চাই” শ্লোগানে পোস্টারিং ও লিফলেট বিতরণ করার অপরাধে আটক করে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল। টানা ২৯ মাস কারাভোগের পর ১৯৭৭ সালে তাদের মুক্তি দেয়া হয়।
তারা বলেন, সে সময় অন্যায়ভাবে আটক করে তাদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলা হয়। জীবনের সোনালী সময়ে গড়তে দেয়া হয়নি তাদের উজ্জ¦ল ভবিষ্যত। জেল থেকে মুক্তির পরও তারা ভয়ে ভয়ে থাকতেন। কখন জানি তাদের গ্রেফতার করা হয়। গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে ওই তিন বন্ধুর বসবাস।#
তিন বন্ধুর পক্ষে অশোক কুমার পাল বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে দুই বছর ডিটেনশ ও ছয় মাস সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিলো। তারপর থেকে তাদের আতঙ্কে কেটে গেছে কয়েক বছর। বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৪ বছরেও কেউ খোঁজ রাখেনি তাদের তিন বন্ধুর। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের বিষয়ে জানার পরে বিজয় দিবসের পোগ্রামে গুরুদাসপুর উপজেলাবাসীর সামনে তাদের তিন বন্ধুকে সম্মানিত করে এবং সম্প্রতি গতকাল ১৫ই আগষ্ট তাদের বাড়িতে গিয়ে সার্বিক সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। ইউএনও তমাল হোসেনের প্রতি তিন বন্ধু কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
ইউএনও মোঃ তমাল হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাওয়া তিন বন্ধুর বিষয়ে জানার পরেই তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে এবং তিন বন্ধুর অসুস্থতার উন্নত চিকিৎসাসহ সার্বিক সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।