শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বদলে যাওয়া জনবান্ধব একটি থানার গল্প!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:২১:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ অগাস্ট ২০২০
  • ১৮৯ Time View

প্রভাষক মো:মাজেম আলী মলিন,
বিশ্ব ব্যাপি যখন করোনার থাবা চলছে। দেশে দেখা দিয়েছে নানা রকম অপরাধ প্রবনতা। সে সব বাঁধা পেরিয়ে নাটোরের গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোজাহারুল ইসলাম পাল্টে দিয়েছেন পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা। সেই সাথে পাল্টে গেছে থানার চেহারাও। সরকারী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাধ্যমত দাঁড়িয়েছন সমাজের অসহায় দুস্থ্য মানুষের পাশে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, খরা এবং রোগব্যধিতেও রয়েছেন সক্রিয়।

থানা চত্বরের যে দিকেই তাকানো যায় সে দিকেই বিচিত্র সব ফুলের সমারোহ। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা থানার পরিবেশ যা এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়া থানার বাইরে গেটের দু পাশেই দৃষ্টি নন্দন বাউন্ডারি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ফুলের বাগান।
নতুন করে সীমানা প্রাচীর সংস্কার করা হয়েছে। দেয়ালে লেখা রয়েছে, ‘পুলিশ জনতা, জনতাই পুলিশ’সহ নানা শ্লোাগান। রয়েছে বঙ্গবন্ধু,শেখ হাসিনা এবং স্বাধিনতায় শহীদ হওয়াদের ছবিসহ নানা চিত্রকর্ম। প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকার সময় পরিষ্কার পরিছন্নতার জন্য বসানো হয়েছে বাথটাব,সাথে রয়েছে সিসি ক্যামেরাসহ নিরাপত্তা চৌকি। পুড়ো শহরকে আনা হয়েছে শর্টসার্কিট ক্যামেরার আওয়তায় যেন অপরাধিরা সহজেই পার পেয়ে যেতে না পারে। পাশেই রয়েছে একটি সেড। যেটি ‘সেবা ছাউনি’ নামে পরিচিত। জনগনের সুবিধা এবং মামলা জট কমানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় জরুরি সেবা দেওয়া হয় থানায় আসা ভুক্তভুগীদের।
মূল ভবনে ঢুকতেই একজন মহিলা পুলিশের জিজ্ঞাসা ভাই কি সমস্যা? ওসি সাহেবের সাথে দেখা করবো। প্লিজ একটু অপেক্ষা করেন। জি ভিতরে যান স্যার অফিসেই আছেন। মুলত থানার অবস্থা পর্যবেক্ষন করতেই সেখানে যাওয়া। প্রবাদে ছিল, ‘বাঘে ছুঁলে আঠেরো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ!’ কিন্তু গুরুদাসপুর থানার পুলিশের বদৌলতে পাল্টে যাচ্ছে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা।

সরেজমিনে দেখা যায়, থানার ভেতরে খালি জায়গা লাগানো হয়েছে হরেক রকমের ফুলের গাছ। যেটি প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ছুঁয়ে যাবে। জরাজীর্ণ ওয়ার্ক স্টেশন বদলে গেছে। সংস্কারের পর একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে বসে সেবা দিতে পারেন। সেবা প্রার্থীদের জন্য আনা হয়েছে নতুন সব আসবাবপত্র।

স্থানীয়রা জানান, মানুষ মনে করত পুলিশ শুধু চোর-ডাকাত আর আসামির পিছনেই ছোটে। থানার প্রতি তাদের আলাদা একটা ভিতি ছিল। এখন থানা দেখে মানুষের থানা পুলিশের ভীতি দুর হয়েছে। আর পুলিশেরও একটা সুন্দর মন থাকে ইতিমধ্যেই তা প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের মনে পুরোনো ধারনাটির পরিবর্তন করে দিয়েছেন ওসি মোজাহারুল ইসলাম। তিনি প্রমান করতে সক্ষম হয়েছেন সাধারণ মানুষ এবং পুলিশের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
থানা সংলগ্ন ফল ব্যাবসায়ী মোঃ আনিসুর রহমান জানান, আগে থানার পাশ দিয়ে আমরা ভয়ে হাঁটতাম না। সব সময় নোংরা থাকতো। এক সময় এই থানার বাউন্ডারি ওয়াল ভালো না থাকায় সর্বহারাদের দারা লুন্ঠিত হয়েছিল ওই থানা। তাদের ছোড়া গুলিতে মোবারক হোসেন নামে একজন পুলিশ কন্সটেবল শহীদ হয়েছিলেন। এখন অসাধারন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ বিরাজমান। নানা বয়সের মানুষেরা মগ্ধ হন এ নয়নাভিরাম দৃশ্যে। তিনি জানান গুরুদাসপুর থানা এখন অন্য থানাগুলোর রোল মডেল।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোজাহারুল ইসলাম বলেন, আমি এই থানায় যোগদানের পর পুলিশ যে জনগণের বন্ধু সেই কথাটার বাস্তবে রূপ দিতে নাটোর পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা স্যারের নির্দেশনায় গুরুদাসপুর থানার টিম সাজিয়ে কাজ করে চলছি।
ওসি বলেন, থানার অফিসাররা যাতে ভালো পরিবেশে কাজ করতে পারেন সেজন্য অত্যাধুনিক ওয়াচ টাওয়ার করা হয়েছে। জরুরি সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া করোনার মধ্যে ঝুকি নিয়েও করোনা রোগীসহ বানভাসীদের ত্রাণ বিতরণ,অসহায় মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণসহ মানবিক সেবা দিয়ে আসছি।’ এসব ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস সহ স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা। আমরা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।# সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক বনলতা,সভাপতি মডেল প্রেসক্লাব গুরুদাসপুর, চেয়ারম্যান স.বি বিভাগ রোজী মোজাম্মেল মহিলা অনার্স কলেজ,গুরুদাসপুর,নাটোর।

Tag :

বদলে যাওয়া জনবান্ধব একটি থানার গল্প!

Update Time : ০৭:২১:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ অগাস্ট ২০২০

প্রভাষক মো:মাজেম আলী মলিন,
বিশ্ব ব্যাপি যখন করোনার থাবা চলছে। দেশে দেখা দিয়েছে নানা রকম অপরাধ প্রবনতা। সে সব বাঁধা পেরিয়ে নাটোরের গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোজাহারুল ইসলাম পাল্টে দিয়েছেন পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা। সেই সাথে পাল্টে গেছে থানার চেহারাও। সরকারী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাধ্যমত দাঁড়িয়েছন সমাজের অসহায় দুস্থ্য মানুষের পাশে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, খরা এবং রোগব্যধিতেও রয়েছেন সক্রিয়।

থানা চত্বরের যে দিকেই তাকানো যায় সে দিকেই বিচিত্র সব ফুলের সমারোহ। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা থানার পরিবেশ যা এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়া থানার বাইরে গেটের দু পাশেই দৃষ্টি নন্দন বাউন্ডারি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ফুলের বাগান।
নতুন করে সীমানা প্রাচীর সংস্কার করা হয়েছে। দেয়ালে লেখা রয়েছে, ‘পুলিশ জনতা, জনতাই পুলিশ’সহ নানা শ্লোাগান। রয়েছে বঙ্গবন্ধু,শেখ হাসিনা এবং স্বাধিনতায় শহীদ হওয়াদের ছবিসহ নানা চিত্রকর্ম। প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকার সময় পরিষ্কার পরিছন্নতার জন্য বসানো হয়েছে বাথটাব,সাথে রয়েছে সিসি ক্যামেরাসহ নিরাপত্তা চৌকি। পুড়ো শহরকে আনা হয়েছে শর্টসার্কিট ক্যামেরার আওয়তায় যেন অপরাধিরা সহজেই পার পেয়ে যেতে না পারে। পাশেই রয়েছে একটি সেড। যেটি ‘সেবা ছাউনি’ নামে পরিচিত। জনগনের সুবিধা এবং মামলা জট কমানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় জরুরি সেবা দেওয়া হয় থানায় আসা ভুক্তভুগীদের।
মূল ভবনে ঢুকতেই একজন মহিলা পুলিশের জিজ্ঞাসা ভাই কি সমস্যা? ওসি সাহেবের সাথে দেখা করবো। প্লিজ একটু অপেক্ষা করেন। জি ভিতরে যান স্যার অফিসেই আছেন। মুলত থানার অবস্থা পর্যবেক্ষন করতেই সেখানে যাওয়া। প্রবাদে ছিল, ‘বাঘে ছুঁলে আঠেরো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ!’ কিন্তু গুরুদাসপুর থানার পুলিশের বদৌলতে পাল্টে যাচ্ছে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা।

সরেজমিনে দেখা যায়, থানার ভেতরে খালি জায়গা লাগানো হয়েছে হরেক রকমের ফুলের গাছ। যেটি প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ছুঁয়ে যাবে। জরাজীর্ণ ওয়ার্ক স্টেশন বদলে গেছে। সংস্কারের পর একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে বসে সেবা দিতে পারেন। সেবা প্রার্থীদের জন্য আনা হয়েছে নতুন সব আসবাবপত্র।

স্থানীয়রা জানান, মানুষ মনে করত পুলিশ শুধু চোর-ডাকাত আর আসামির পিছনেই ছোটে। থানার প্রতি তাদের আলাদা একটা ভিতি ছিল। এখন থানা দেখে মানুষের থানা পুলিশের ভীতি দুর হয়েছে। আর পুলিশেরও একটা সুন্দর মন থাকে ইতিমধ্যেই তা প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের মনে পুরোনো ধারনাটির পরিবর্তন করে দিয়েছেন ওসি মোজাহারুল ইসলাম। তিনি প্রমান করতে সক্ষম হয়েছেন সাধারণ মানুষ এবং পুলিশের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
থানা সংলগ্ন ফল ব্যাবসায়ী মোঃ আনিসুর রহমান জানান, আগে থানার পাশ দিয়ে আমরা ভয়ে হাঁটতাম না। সব সময় নোংরা থাকতো। এক সময় এই থানার বাউন্ডারি ওয়াল ভালো না থাকায় সর্বহারাদের দারা লুন্ঠিত হয়েছিল ওই থানা। তাদের ছোড়া গুলিতে মোবারক হোসেন নামে একজন পুলিশ কন্সটেবল শহীদ হয়েছিলেন। এখন অসাধারন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ বিরাজমান। নানা বয়সের মানুষেরা মগ্ধ হন এ নয়নাভিরাম দৃশ্যে। তিনি জানান গুরুদাসপুর থানা এখন অন্য থানাগুলোর রোল মডেল।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোজাহারুল ইসলাম বলেন, আমি এই থানায় যোগদানের পর পুলিশ যে জনগণের বন্ধু সেই কথাটার বাস্তবে রূপ দিতে নাটোর পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা স্যারের নির্দেশনায় গুরুদাসপুর থানার টিম সাজিয়ে কাজ করে চলছি।
ওসি বলেন, থানার অফিসাররা যাতে ভালো পরিবেশে কাজ করতে পারেন সেজন্য অত্যাধুনিক ওয়াচ টাওয়ার করা হয়েছে। জরুরি সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া করোনার মধ্যে ঝুকি নিয়েও করোনা রোগীসহ বানভাসীদের ত্রাণ বিতরণ,অসহায় মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণসহ মানবিক সেবা দিয়ে আসছি।’ এসব ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস সহ স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা। আমরা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।# সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক বনলতা,সভাপতি মডেল প্রেসক্লাব গুরুদাসপুর, চেয়ারম্যান স.বি বিভাগ রোজী মোজাম্মেল মহিলা অনার্স কলেজ,গুরুদাসপুর,নাটোর।