শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শুধু বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবসে নয়,বছর জুড়েই মুল্যায়িত হোক নারীরা-রোকসানা আকতার লিপি.

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:০৯:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০২০
  • ১৫৬ Time View

বনলতা নিউজ ডেস্ক.
জীবনে চলার পথে, ভালো-মন্দ, চরাই-উতরাই এ কোনো না কোনো বিশেষ নারীর অবদান থাকে। যাদের সহযোগিতা, ভালোবাসা, নিরলস শ্রম, ত্যাগ, সাহস কিংবা অনুপ্রেরণা আমাদের জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। সে সকল নারী যাদের অবদান পুরুষদের জীবনে অনস্বীকার্য। হয়তো সেই নারী হতে পারে আপনার মা, বোন, স্ত্রী, খালা, ফুফু কিংবা প্রিয় বান্ধবী। যাদের পরিশ্রমের ফসল আপনি ভোগ করছেন। অথচ তাদের মুল্যায়ন করছেন না। আমি চাই বছর জুড়েই মুল্যায়িত হোক নারীরা। বিশ্ব নারী দিবসে এ কথাগুলো বলেন গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী অধিকার আন্দোলন নেত্রী রোকসানা আকতার লিপি।

‘আমরা নারীরা মাঠে-ঘাটে কাজ করি, উৎপাদন করি; অনেক সময় পুরুষের চেয়েও বেশি কাজ করি; কিন্তু সরকার আমাদের কোন সুযোগ দেয় না। ব্যাংকগুলোও আমাদের ঋণ দেয় না। সুযোগ-সুবিধা পাইলে আমরা গ্রামীণ নারীরাও কৃষি ও উৎপাদনে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবো’ কথাগুলো বলেন গুরুদাসপুরের নারী কৃষক রহিমা বেগম(৪৫)।

কর্মজীবী নারীদের হিসাব মতে, কৃষি খাতের ২০টি কাজের মধ্যে ১৭টি কাজে নারীর অংশগ্রহণ থাকলেও; কৃষিতে নারীর স্বীকৃত নেই। বীজ সংরক্ষণ থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদন, সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে গ্রামীণ নারীর সিংহভাগ অংশগ্রহণ থাকলেও কৃষক হিসেবে তাদের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন হয় না। কৃষিঋণ ও কৃষকের জন্য দেয়া সরকারি সুযোগ-সুবিধাগুলো থেকেও গ্রামীণ নারীরা বঞ্চিত।
গ্রামীণ নারীকে নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের বিশ্বখ্যাতি অর্জনের পেছনে আজকের গ্রামীণ নারীর ব্যাপক অর্জন থাকলেও তা স্বীকার করা হয় না। শুধু কৃষক হিসেবে নন; গার্মেন্টস সেক্টরে নারীকর্মী, প্রবাসে নারীকর্মী দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। নারীর এসব অর্জন কেবল সাম্প্রতিক কালেই নয়; আবহমান কাল ধরে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। অথচ এই নারীরাই মজুরি বৈষম্য ও কাজের স্বীকৃতি না পাওয়ার বঞ্চনার শিকার। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালিত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। অথচ কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে? একাজ গুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব যদি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব বদলানো যায়।

ক্যাম্পেইনে বক্তারা দাবী করেন, জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদানের কথা পরিসংখ্যানসহ সকল প্রকার দলিলে উল্লেখ করতে হবে, নারীর অমূল্যায়িত বা গৃহস্থালী কাজের সঠিকমূল্য জিডিপি হিসাবে যুক্ত করার জন্য নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী শ্রমের জরিপ করতে হবে, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ এর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে, গৃহস্থালী কাজে নারীর অবদানকে জাতীয় অর্থনীতিতে স্কীকৃতি দিতে হবে।

গুরুদাসপুরের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন নীলু বলেন, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্য স্বীকার হচ্ছে। গৃহস্থালী কাজসহ গ্রামীণ নারীরা কৃষিকাজ এর সাথে সরাসরিযুক্ত। গৃহস্থালী কাজ ও নারীদের কৃষিকাজে অবদানের মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর গৃহস্থালী কাজকে স্বীকৃতি দেয়া হলে নারীর প্রতি যে বৈষম্য এবং নির্যাতনের পরিমাণ অনেকাংশে কমে আসবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার মতামত গুরুত্ব পেলে সার্বিক উন্নয়ন সংঘটিত হবে। তাই জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর গৃহস্থালী কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা জরুরী।

Tag :

শুধু বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবসে নয়,বছর জুড়েই মুল্যায়িত হোক নারীরা-রোকসানা আকতার লিপি.

Update Time : ১২:০৯:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০২০

বনলতা নিউজ ডেস্ক.
জীবনে চলার পথে, ভালো-মন্দ, চরাই-উতরাই এ কোনো না কোনো বিশেষ নারীর অবদান থাকে। যাদের সহযোগিতা, ভালোবাসা, নিরলস শ্রম, ত্যাগ, সাহস কিংবা অনুপ্রেরণা আমাদের জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। সে সকল নারী যাদের অবদান পুরুষদের জীবনে অনস্বীকার্য। হয়তো সেই নারী হতে পারে আপনার মা, বোন, স্ত্রী, খালা, ফুফু কিংবা প্রিয় বান্ধবী। যাদের পরিশ্রমের ফসল আপনি ভোগ করছেন। অথচ তাদের মুল্যায়ন করছেন না। আমি চাই বছর জুড়েই মুল্যায়িত হোক নারীরা। বিশ্ব নারী দিবসে এ কথাগুলো বলেন গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী অধিকার আন্দোলন নেত্রী রোকসানা আকতার লিপি।

‘আমরা নারীরা মাঠে-ঘাটে কাজ করি, উৎপাদন করি; অনেক সময় পুরুষের চেয়েও বেশি কাজ করি; কিন্তু সরকার আমাদের কোন সুযোগ দেয় না। ব্যাংকগুলোও আমাদের ঋণ দেয় না। সুযোগ-সুবিধা পাইলে আমরা গ্রামীণ নারীরাও কৃষি ও উৎপাদনে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবো’ কথাগুলো বলেন গুরুদাসপুরের নারী কৃষক রহিমা বেগম(৪৫)।

কর্মজীবী নারীদের হিসাব মতে, কৃষি খাতের ২০টি কাজের মধ্যে ১৭টি কাজে নারীর অংশগ্রহণ থাকলেও; কৃষিতে নারীর স্বীকৃত নেই। বীজ সংরক্ষণ থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদন, সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে গ্রামীণ নারীর সিংহভাগ অংশগ্রহণ থাকলেও কৃষক হিসেবে তাদের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন হয় না। কৃষিঋণ ও কৃষকের জন্য দেয়া সরকারি সুযোগ-সুবিধাগুলো থেকেও গ্রামীণ নারীরা বঞ্চিত।
গ্রামীণ নারীকে নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের বিশ্বখ্যাতি অর্জনের পেছনে আজকের গ্রামীণ নারীর ব্যাপক অর্জন থাকলেও তা স্বীকার করা হয় না। শুধু কৃষক হিসেবে নন; গার্মেন্টস সেক্টরে নারীকর্মী, প্রবাসে নারীকর্মী দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। নারীর এসব অর্জন কেবল সাম্প্রতিক কালেই নয়; আবহমান কাল ধরে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। অথচ এই নারীরাই মজুরি বৈষম্য ও কাজের স্বীকৃতি না পাওয়ার বঞ্চনার শিকার। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালিত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। অথচ কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে? একাজ গুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব যদি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব বদলানো যায়।

ক্যাম্পেইনে বক্তারা দাবী করেন, জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদানের কথা পরিসংখ্যানসহ সকল প্রকার দলিলে উল্লেখ করতে হবে, নারীর অমূল্যায়িত বা গৃহস্থালী কাজের সঠিকমূল্য জিডিপি হিসাবে যুক্ত করার জন্য নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী শ্রমের জরিপ করতে হবে, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ এর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে, গৃহস্থালী কাজে নারীর অবদানকে জাতীয় অর্থনীতিতে স্কীকৃতি দিতে হবে।

গুরুদাসপুরের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন নীলু বলেন, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্য স্বীকার হচ্ছে। গৃহস্থালী কাজসহ গ্রামীণ নারীরা কৃষিকাজ এর সাথে সরাসরিযুক্ত। গৃহস্থালী কাজ ও নারীদের কৃষিকাজে অবদানের মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর গৃহস্থালী কাজকে স্বীকৃতি দেয়া হলে নারীর প্রতি যে বৈষম্য এবং নির্যাতনের পরিমাণ অনেকাংশে কমে আসবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার মতামত গুরুত্ব পেলে সার্বিক উন্নয়ন সংঘটিত হবে। তাই জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর গৃহস্থালী কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা জরুরী।