করোনায় প্রতিবন্ধী নজরুলের মানব সেবার গল্প

গুরুদাসপুর (নাটোর)প্রতিনিধি.
এক অবিস্মরনীয় মহানুভবতার গল্প। যা আমরা ভালো মানুষ হয়েও করতে পারিনি তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো একজন প্রতিবন্ধিী হয়ে। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়,টাকা নয়, ভালো কাজ করার জন্য যে একটা ভালো মন থাকা দরকার যেটি আজ ০৮ জানুয়ারী শুক্রবার গুরুদাসপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দৃশ্যমান হলো।
গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বাজার পাড়া এলাকার মৃত আব্দুল হাকিম মোল্লার ছেলে শারিরীক প্রতিবন্ধী সিএনজি চালক নজরুল ইসলাস(৫০)। তার ব্যাক্তিগত উদ্যোগে প্রতি শুক্রবার মসজিদে মসজিদে টিস্যুর বক্স হাতে এক পায় দাঁড়িয়ে থাকেন নজরুল ইসলাম নামের ওই শারিরীক প্রতিবন্ধী।
তার বাম পা হাটু পর্যন্ত কাটা। কথাও বলতে পারেন না ঠিক মতো। টিস্যু বিতরণের সময় কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। কেন এই টিস্যু বিতরণের কাজ করছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি অস্পষ্ট ভাষায় জানান, আমি যখন সুস্থ্য ছিলাম তখন এক মালিকের প্রাইভেট কার চালাতাম। কিন্তু হঠাৎ তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিসা। ২০ বছর পূর্বে তার ছোট বোন মারা যান। তার কবর খুড়তে গোরস্থানে যান তিনি। কবর খুরতে গিয়ে হঠাৎ কোদালের কোপ লাগে তার বাম পায়ে।
তৎক্ষনাত কিছু মনে না হলেও কিছু দিন পর পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। পরে ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি জানান পায়ে ইনফেকশান হয়েছে। এখন পা কাটা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। পরে ডাক্তারের পরামর্শে তার বাম পা হাটু পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়। এর পর প্রাইভেট কারের মালিক তাকে আর কাজে নেয়নি। তখন নিরুপায় হয়ে অনেক কষ্টে শেষ সম্বল টুকু বিক্রি করে একটা সিএনজি(অটোরিস্কা) ক্রয় করে সংসারের হাল ধরেন নজরুল।
সংসার চালানোর পাশাপাশি কিছু করে টাকা জোগার করেন তিনি। সেখান থেকেই তার চেয়েও গরিব দু:খিদের সাহায্য করতেন। তিনি জানান, করোনা কালিন সময়ে মসজিদে অজু শেষে মুসুল্লিদের গামছা বা রোমাল আনার কথা স্বরন থকেনা তারা মসজিদে রক্ষিত ভেঁজা ময়লাযুক্ত গামছা আর তোয়ালে দিয়েই হাত পরিস্কার করতে দেখেন যা পুরোপুরি নিরাপদ নয় বলে তিনি মনে করেন। সে কথা মাথায় রেখেই তার এই কাজ করা।
যার কারনে সে প্রতি জুম্মার দিন যেখানে নামাজ পড়তে যান (সিএনজি চালানোর সময়) সেখানেই নামাজ শুরু হবার পুর্ব পর্যন্ত টিস্যু হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। নিজের জমানো টাকা দিয়ে ইমানদার ভাইদের একটু সহযোগিতা করলে ভালো লাগে বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান,জনগণ যদি সচেতন থাকে আর সমাজের বৃত্তবানরা যদি একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তাহলে এই মহামারী রোগ থেকে আমরা দ্রুত পরিত্রান পাবো ইনশাল্লাহ।