শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চলে গেলেন ঢাবি শিক্ষক গুরুদাসপুরের সন্তান কাশিনাথ রায়

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:৪৯:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১
  • ৩৭২ Time View

গুরুদাসপুর (নাটোর)প্রতিনিধি.
‘তবুও দিনান্তে আমি বৃক্ষে ধরে রেখেছি ললাট।
জন্মাবধি অবনত এ আমার একমাত্র বিলাস।
জীবন্ত পাতাকে আমি অসম্মান করিনি কখনো।
আমার শিয়রে তাই জেগে থাকে এই অভিলাষ:
বৃক্ষ ভালোবেসে যদি করে থাকি ক্ষুদ্র পুণ্য কোনো
নিষ্ফল আমার নামে নিদ্রিত ছায়ায়
যে-কোনো বৃক্ষের থেকে যে-কোনো একটি পাতা
যেন ঝরে যায়।’
“কাশীনাথ রায়”
চলে গেলেন আমাদের কাশীনাথ স্যার। কবি অধ্যাপক কাশীনাথ রায়। বেশ কিছুদিন গুরুতর অসুস্থতার পর সম্প্রতি ঢাকার স্কোয়ার হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান হয়েছে। নিজের এপিটাফ তিনি লিখে রেখেছেন একটি কবিতায়। এখন পাতা ঝরার ঋতু। গাছের পাতারা এমনিতেই ঝরছে। কবিতায় ব্যক্ত ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁর নিদ্রিত ছায়ায় নিশ্চয় একটি গাছের একটি পাতা হলেও ঝরবে।
কাশীনাথ রায়ের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৭ সালে, নাটোরে জেলার গুরুদাসপুর উপজেলা বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্র নগর গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন পাবনা জেলা স্কুল, এডওয়ার্ড কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। শিক্ষকতা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন একমাত্র পুত্র বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. অপ্রতিম রায়, পুত্রবধু প্রকৃতি চক্রবর্তী এবং পৌত্র অভ্র রায়কে। আর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ও গুণমুগ্ধকে।

এককালের তুখোড় ছাত্র, প্রতিভাবান কবি, মনস্বী প্রাবন্ধিক এবং একজন তিমিরবিনাশী শিক্ষক কাশীনাথ রায় হয়ত বাংলাদেশের সমাজে খুব পরিচিত ছিলেন না। কারণ তিনি সবসময় নিজের অসামান্য দীপ্তিকে ঢেকে রেখে অতি সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাইতেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বে কত বিরল গুণের সমাবেশ ঘটেছিল সেটি খুব ভালো করে জানেন তাঁর ছাত্রছাত্রী, বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজনেরা।
এই কালান্তক সময়ে চারদিকে মৃত্যুর প্রবল ঝড়ের মধ্যেও তাঁর বজ্রাঘাত তুল্য মৃত্যু আমাদের জন্য অসহনীয়। তাঁর প্রসন্ন দৃষ্টির স্নিগ্ধ ছায়া আর কোনোদিন পাব না এ কথা ভাবতেই পারছি না। আমরা জানি, তাঁর মতো বহু গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ রাতারাতি একটি সমাজে আসেন না।

গত কয়েকদিন অনেকেই প্রচন্ড উদ্বেগে তাঁর খোঁজ নিয়েছেন, সুস্থতা কামনা করেছেন, সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে তাঁদের সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। এখন তাঁর আত্বার প্রতি প্রার্থনার জন্য মিনতি জানাই সবার কাছে। কামনা করি যেন শোকাহত পুত্র অপ্রতিম রায় ও পরিজনরা দ্রুতএই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন। এর বেশি কিছু বলার ভাষা আজ আর নেই।

Tag :

চলে গেলেন ঢাবি শিক্ষক গুরুদাসপুরের সন্তান কাশিনাথ রায়

Update Time : ১০:৪৯:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১

গুরুদাসপুর (নাটোর)প্রতিনিধি.
‘তবুও দিনান্তে আমি বৃক্ষে ধরে রেখেছি ললাট।
জন্মাবধি অবনত এ আমার একমাত্র বিলাস।
জীবন্ত পাতাকে আমি অসম্মান করিনি কখনো।
আমার শিয়রে তাই জেগে থাকে এই অভিলাষ:
বৃক্ষ ভালোবেসে যদি করে থাকি ক্ষুদ্র পুণ্য কোনো
নিষ্ফল আমার নামে নিদ্রিত ছায়ায়
যে-কোনো বৃক্ষের থেকে যে-কোনো একটি পাতা
যেন ঝরে যায়।’
“কাশীনাথ রায়”
চলে গেলেন আমাদের কাশীনাথ স্যার। কবি অধ্যাপক কাশীনাথ রায়। বেশ কিছুদিন গুরুতর অসুস্থতার পর সম্প্রতি ঢাকার স্কোয়ার হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান হয়েছে। নিজের এপিটাফ তিনি লিখে রেখেছেন একটি কবিতায়। এখন পাতা ঝরার ঋতু। গাছের পাতারা এমনিতেই ঝরছে। কবিতায় ব্যক্ত ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁর নিদ্রিত ছায়ায় নিশ্চয় একটি গাছের একটি পাতা হলেও ঝরবে।
কাশীনাথ রায়ের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৭ সালে, নাটোরে জেলার গুরুদাসপুর উপজেলা বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্র নগর গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন পাবনা জেলা স্কুল, এডওয়ার্ড কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। শিক্ষকতা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন একমাত্র পুত্র বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. অপ্রতিম রায়, পুত্রবধু প্রকৃতি চক্রবর্তী এবং পৌত্র অভ্র রায়কে। আর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ও গুণমুগ্ধকে।

এককালের তুখোড় ছাত্র, প্রতিভাবান কবি, মনস্বী প্রাবন্ধিক এবং একজন তিমিরবিনাশী শিক্ষক কাশীনাথ রায় হয়ত বাংলাদেশের সমাজে খুব পরিচিত ছিলেন না। কারণ তিনি সবসময় নিজের অসামান্য দীপ্তিকে ঢেকে রেখে অতি সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাইতেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বে কত বিরল গুণের সমাবেশ ঘটেছিল সেটি খুব ভালো করে জানেন তাঁর ছাত্রছাত্রী, বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজনেরা।
এই কালান্তক সময়ে চারদিকে মৃত্যুর প্রবল ঝড়ের মধ্যেও তাঁর বজ্রাঘাত তুল্য মৃত্যু আমাদের জন্য অসহনীয়। তাঁর প্রসন্ন দৃষ্টির স্নিগ্ধ ছায়া আর কোনোদিন পাব না এ কথা ভাবতেই পারছি না। আমরা জানি, তাঁর মতো বহু গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ রাতারাতি একটি সমাজে আসেন না।

গত কয়েকদিন অনেকেই প্রচন্ড উদ্বেগে তাঁর খোঁজ নিয়েছেন, সুস্থতা কামনা করেছেন, সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে তাঁদের সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। এখন তাঁর আত্বার প্রতি প্রার্থনার জন্য মিনতি জানাই সবার কাছে। কামনা করি যেন শোকাহত পুত্র অপ্রতিম রায় ও পরিজনরা দ্রুতএই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন। এর বেশি কিছু বলার ভাষা আজ আর নেই।