বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

একটি সেতুর আশায় নিজস্ব অর্থে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করছেন বিলহরিবাড়ি গ্রামবাসি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৩৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১
  • ৫৮ Time View

মোঃ মাজেম আলী মলিন গুরুদাসপুর(নাটোর) থেকে.

মাত্র ২শ ফিট সংযোগ সড়ক আর একটি সেতু নির্মাণে ৪০ বছর জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরে বারবার ধরনা দিয়েছে গ্রামবাসী। শুধুই আশ্বাসের বেড়াজালেই আটকে আছে সব কিছু, আজোও কাজটি হয়নি। শেষে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ৬লক্ষাধিক টাকার জায়গা ক্রয় করে স্বেচ্ছা শ্রমে বানালেন সংযোগ সড়ক শুধু একটি মাত্র সেতুর আশায়।

এই গল্প নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিলহরিবাড়ি গ্রামের মানুষের। ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো বাধাই যে দমিয়ে রাখা যায় না তার প্রমাণ সাড়ে চার শ মানুষের ঘাম ঝরানো শ্রমে তৈরি হওয়া রাস্তাটি সবার জন্যই দৃষ্টান্ত। একটি সেতু আর সংযোগ সড়কের আক্ষেপ প্রায় ৪ হাজার জনসংখ্যা বেষ্টিত এই বিলহরিবাড়ী গ্রামের উওরপাড়ের অধিবাসীদের। সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষের দুঃখ গাঁথা গল্প পোঁছায়না উচ্চ পর্যায়ে। বেঁচেও মরার মতো অধ্যায়কে সঙ্গি করে এভাবেই দিন কাটাচ্ছেন তারা।

স্থানীয়রা জানান, প্রবাহমান একটি নালা বিলহরিবাড়ীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে গ্রামটি হরদমা এবং বিলহরিবাড়ী নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। দুর্গাপুর- যোগেন্দ্র নগর রাবারড্যাম হয়ে একটি পাকা সড়ক ওই নালার দক্ষিণপারে এসে শেষ হয়েছে। নালার উওরপারে জনবহুল বিলহরিবাড়ী গ্রাম। আর দক্ষিণপারে হরদমা গ্রামে প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও বাজার রয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত এ উওরপারের মানুষদের শিক্ষা,লাশদাফন, চিকিৎসাসহ যাবতীয় প্রয়োজনে দক্ষিণপারের এসব প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়। কাঁচা সড়কের কাদা মারিয়ে ওই খেঁয়ার নৌকা পাড় হয়ে তারা ওই সব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এছাড়া উওরপাড়ের মানুষের জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র মাধ্যমও একটি খেয়া নৌকা।


স্থানীয়রা জানান, উররপারের বিলহরিবাড়ী গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে অতিকষ্টে তিন কি.মি. কাদাযুক্ত কাঁচা সড়ক ও ওই নালা পারাপার হয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে এভাবেই দূর্ভোগ নিয়ে পারাপার হলেও জনপ্রতিনিধিরা কাঁচা সড়কটি পাকাকরন ও সেতু নির্মানের আশ্বাস দিয়েছেন বহুবার। কিন্তু আশ্বাসেই শেষ, এলাকাবাসীর ভাগ্যেন্নোয়নে বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও সেতুটি নির্মীত হয়নি এখনও।
বিলহরিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ক্ষুদেশিক্ষার্থী, আরিফুল, সান্তা, মরিয়ম, আঁখি ও শাপলা জানায়, বিদ্যালয়ে যেতে কাঁচা সড়ক ও খেঁয়া নৌকা পার হতে হয়। কাঁদাযুক্ত পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় পা পিছলে পড়ে যায়। এজন্য প্রতিদিন বাড়তি পোষাক নিয়ে তারা বিদ্যালয়ে আসে।
্ঐ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম হয়। ওই নালার ওপর সেতু না থাকায় বর্ষাকাল ও শুষ্ক মওসুমেও খেঁয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে শত শত ছাত্র-ছাত্রী পারাপার করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘সড়কটির বেহাল অবস্থার কারনে কৃষকদের পণ্য পরিবহনে বাড়ে অসহোনীয় ভোগান্তি। বিশেষ করে ইরি-বোরো মওসুমে ধান বহনকারী গরু ও মহিষের গাড়ি কোন রকমে সড়ক বয়ে আসলেও ওই নালা পারাপারে দুর্ভোগ দেখা দেয়। তাছাড়া প্রসূতি ও অসুস্থ্যরা সময়মতো চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারা ওই কাঁচা সড়ক এবং সেতু নির্মানের ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’


বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সেতু না থাকায় ছোট একটি খেঁয়া নৌকায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীসহ বিলহরিবাড়ী গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পারাপার হন। তাছাড়া সড়কটি কাঁচা আর নিচু হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকে। এতে এই গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তি নিয়ে বসবাস করেন। বরাদ্দ পেলে ঐ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি লাঘবের জন্য কাঁচা সড়কটি পাকাকরনের চেষ্টা করব এবং সেতু নির্মানের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ কে অবগত করা হবে।
যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস জানান,ওই এলাকার জাবতীয় উন্নয়নমুলক কাজ করে দিয়েছি। সেতুর বিষয়টিও সময় মত দেখা হবে।

Tag :

একটি সেতুর আশায় নিজস্ব অর্থে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করছেন বিলহরিবাড়ি গ্রামবাসি

Update Time : ০৬:৩৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১

মোঃ মাজেম আলী মলিন গুরুদাসপুর(নাটোর) থেকে.

মাত্র ২শ ফিট সংযোগ সড়ক আর একটি সেতু নির্মাণে ৪০ বছর জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরে বারবার ধরনা দিয়েছে গ্রামবাসী। শুধুই আশ্বাসের বেড়াজালেই আটকে আছে সব কিছু, আজোও কাজটি হয়নি। শেষে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ৬লক্ষাধিক টাকার জায়গা ক্রয় করে স্বেচ্ছা শ্রমে বানালেন সংযোগ সড়ক শুধু একটি মাত্র সেতুর আশায়।

এই গল্প নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিলহরিবাড়ি গ্রামের মানুষের। ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো বাধাই যে দমিয়ে রাখা যায় না তার প্রমাণ সাড়ে চার শ মানুষের ঘাম ঝরানো শ্রমে তৈরি হওয়া রাস্তাটি সবার জন্যই দৃষ্টান্ত। একটি সেতু আর সংযোগ সড়কের আক্ষেপ প্রায় ৪ হাজার জনসংখ্যা বেষ্টিত এই বিলহরিবাড়ী গ্রামের উওরপাড়ের অধিবাসীদের। সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষের দুঃখ গাঁথা গল্প পোঁছায়না উচ্চ পর্যায়ে। বেঁচেও মরার মতো অধ্যায়কে সঙ্গি করে এভাবেই দিন কাটাচ্ছেন তারা।

স্থানীয়রা জানান, প্রবাহমান একটি নালা বিলহরিবাড়ীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে গ্রামটি হরদমা এবং বিলহরিবাড়ী নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। দুর্গাপুর- যোগেন্দ্র নগর রাবারড্যাম হয়ে একটি পাকা সড়ক ওই নালার দক্ষিণপারে এসে শেষ হয়েছে। নালার উওরপারে জনবহুল বিলহরিবাড়ী গ্রাম। আর দক্ষিণপারে হরদমা গ্রামে প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও বাজার রয়েছে। সুবিধা বঞ্চিত এ উওরপারের মানুষদের শিক্ষা,লাশদাফন, চিকিৎসাসহ যাবতীয় প্রয়োজনে দক্ষিণপারের এসব প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়। কাঁচা সড়কের কাদা মারিয়ে ওই খেঁয়ার নৌকা পাড় হয়ে তারা ওই সব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এছাড়া উওরপাড়ের মানুষের জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র মাধ্যমও একটি খেয়া নৌকা।


স্থানীয়রা জানান, উররপারের বিলহরিবাড়ী গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে অতিকষ্টে তিন কি.মি. কাদাযুক্ত কাঁচা সড়ক ও ওই নালা পারাপার হয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে এভাবেই দূর্ভোগ নিয়ে পারাপার হলেও জনপ্রতিনিধিরা কাঁচা সড়কটি পাকাকরন ও সেতু নির্মানের আশ্বাস দিয়েছেন বহুবার। কিন্তু আশ্বাসেই শেষ, এলাকাবাসীর ভাগ্যেন্নোয়নে বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও সেতুটি নির্মীত হয়নি এখনও।
বিলহরিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ক্ষুদেশিক্ষার্থী, আরিফুল, সান্তা, মরিয়ম, আঁখি ও শাপলা জানায়, বিদ্যালয়ে যেতে কাঁচা সড়ক ও খেঁয়া নৌকা পার হতে হয়। কাঁদাযুক্ত পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় পা পিছলে পড়ে যায়। এজন্য প্রতিদিন বাড়তি পোষাক নিয়ে তারা বিদ্যালয়ে আসে।
্ঐ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম হয়। ওই নালার ওপর সেতু না থাকায় বর্ষাকাল ও শুষ্ক মওসুমেও খেঁয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে শত শত ছাত্র-ছাত্রী পারাপার করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘সড়কটির বেহাল অবস্থার কারনে কৃষকদের পণ্য পরিবহনে বাড়ে অসহোনীয় ভোগান্তি। বিশেষ করে ইরি-বোরো মওসুমে ধান বহনকারী গরু ও মহিষের গাড়ি কোন রকমে সড়ক বয়ে আসলেও ওই নালা পারাপারে দুর্ভোগ দেখা দেয়। তাছাড়া প্রসূতি ও অসুস্থ্যরা সময়মতো চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারা ওই কাঁচা সড়ক এবং সেতু নির্মানের ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’


বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সেতু না থাকায় ছোট একটি খেঁয়া নৌকায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীসহ বিলহরিবাড়ী গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পারাপার হন। তাছাড়া সড়কটি কাঁচা আর নিচু হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকে। এতে এই গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তি নিয়ে বসবাস করেন। বরাদ্দ পেলে ঐ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি লাঘবের জন্য কাঁচা সড়কটি পাকাকরনের চেষ্টা করব এবং সেতু নির্মানের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ কে অবগত করা হবে।
যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সংসদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস জানান,ওই এলাকার জাবতীয় উন্নয়নমুলক কাজ করে দিয়েছি। সেতুর বিষয়টিও সময় মত দেখা হবে।