শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধার অভিমান ভাঙ্গালেন ইউএনও তমাল হোসেন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১
  • ৯৪ Time View

প্রভাষক মোঃ মাজেম আলী মলিন
‘অভিমান করে জাতিয় দিবসগুলোতে আসেন না মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন প্রাং ওরফে বল্টু আকবর’ ছোট বেলা থেকেই ছিলেন যেমন জিদি তেমন সাহসী। অন্যায়ের সাথে আপোস করেননি কোন দিন। ৭১ এ যুদ্ধের পর থেকেই সংসার নামক শব্দটা ভুলে যান তিনি। ঘুড়ে বেড়ান দেশের নানা প্রান্তে। বিনা বেতনে শিশুদের শিক্ষা দেওয়াই তাঁর কাজ। কখনো বছরান্তে হঠাৎ করেই দেখা মেলে অভিমানী ওই মুক্তিযোদ্ধার।

অত্যান্ত রাগী মানুষ হলেও তার সার্বক্ষণিক হাসিমাখা মুখটাই বলে দেয় তাঁর মায়া আর ভালোবাসাটা কতটা প্রবল। দেশের প্রতি যেমন প্রচন্ড ভালোবাসা তেমনি মানুষের প্রতিও ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা বোধ যা বাস্তবে না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই। সংসার বিমুখ অভিমানী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা হয় বনলতার সম্পাদকের। অভিমানের কারন জানতে চাইলে তিনি হাসিমাখা মুখে জানান,বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিলাম দেশ মাতৃকাকে মুক্ত করতে। তখন আমি ২২ বছরের একজন টগবগে তরুণ। বর্তমান বয়স ৭২। বয়সের ভারে এখন ক্লান্ত তিনি। রোগে শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

সমপ্রতি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় রয়েছেন। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তাঁকে কেন দেখা যায় না,এত অভিমান কিসের ? প্রশ্ন করতেই উঠে বসলেন। মাতৃভুমিকে ভালো বেসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে অস্ত্র হাতে জীবন বাঁজী রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। অনেক শত্রুকে ঘায়েল করেছি এমনকি রাজাকারদেরও। কিন্তু বিএনপি জামাতয়াতের শাসনামলে যখন দেখলাম রাজাকারদের সাথে আমাকে ফুল নিতে হয় একই চেয়ারে বসতে হয় তখন থেকেই ঘৃনা জন্মে নিজেদের উপর। সে সময় থেকেই ওই অনুষ্ঠান বর্জন করি। আজ অব্দী জাতীয় দিবসগুলোতে যাই না বা যেতে ভালো লাগেনা।

অভিমানের কিছু নেই হারানোরও কিছু নেই। মৃত্যুর আগে হলেও শেখ সাহেবের বিটির(শেখ হাসিনা) মধ্যে শেখের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। ভালো লাগে দেশের উন্নয়ন দেখে। কথাগুলো বলতেই আবেগ আপ্লুত হয়ে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পরেন এক সময়ের দুঃসাহসী এই যোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন আরো জানান,জীবনে অনেক সম্মান পেয়েছেন তিনি সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে কিন্তু আজ এই ৭২ বছর বয়সে এসে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেনের নিকট থেকে যে ভালোবাসা আর সম্মানটা পেলাম তা ভুলবার নয়। আজ অনেক দিন যাবত অসুস্থ ছিলাম কেউ খোঁজ খবর নেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর পেয়ে ইউএনও সাহেব শত ব্যস্তুার মাঝেও রাত ১১টার সময় আমার বাসায় এসে আমাকে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে জড়িয়ে নিলেন। তিনি এসেই আমার স্বাস্থ্যের খোঁজ কবর নিলেন। আমার চিকৎসার ব্যায়ভার বহনের সকল প্রকার ব্যাবস্থা করে দিলেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেন জানান,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন অভিমানী মুক্তিযোদ্ধার অসুস্থ্যতার কথা নজরে আসার পরপরই গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেলক্সের চিকিৎস মোঃ মেজবাহউল ইসলাম সেতুকে সাথে নিয়ে রাত ১১টায় তাঁর বাসায় যাই।  উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে খাদ্য সহায়তা ও সার্বিক চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন আজ মুক্তিযোদ্ধাদের কারনেই বিচারক,ডাক্তার,ডিসি,এসপি আর ইউএনও হতে পেরেছি। দেশের সকল বীর যোদ্ধাদের সবার আগে মুল্যায়ন করা উচিত।

গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের আকবর হোসেন (৭২) বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশকে শত্রু মুক্ত করতে ৭ নং সেক্টরে ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার নুরুজ্জামানের অধিনে ৩৫০জন যোদ্ধা ট্রেনিং নেন পলাশডাঙ্গা ও মানকের চর (ইন্ডিয়ায়)। তিনি ঐ দল থেকে , বগুড়া, রংপুর,কুড়িগ্রাম ও সর্বশেষ আমজাদ হোসেন মিলনের অধিনে ৮-১০ জনের দলে বিভক্ত হয়ে নওগাঁ জেলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় যুদ্ধ করে মাতৃভুমিকে শত্রুমুক্ত করেন। তাঁর গেজেট নং-১২৩৩,লাল বার্তা ০৩০৪০৫০০৬৪। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই চাকুরীর চিন্তা না করে দেশের প্রত্যান্ত এলাকায় শিশুদের বিনা বেতনে শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িয়ে পরেন। পরিবার স্বজনদের কথা না ভেবে এভাবেই পার করেন পুরো জীবন। ১৯৯৬ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেওয়া সিদ্ধান্ত হয় ৩শ টাকা করে।ওই টাকা দিয়েই অতিকষ্টে জীবন চলত তাঁর । সেই সময়য়ের অনেক সুখস্মৃতি এখনো মনের গভীরে দাগ কেটে আছে তাঁর।

Tag :

অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধার অভিমান ভাঙ্গালেন ইউএনও তমাল হোসেন

Update Time : ০৫:০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুলাই ২০২১

প্রভাষক মোঃ মাজেম আলী মলিন
‘অভিমান করে জাতিয় দিবসগুলোতে আসেন না মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন প্রাং ওরফে বল্টু আকবর’ ছোট বেলা থেকেই ছিলেন যেমন জিদি তেমন সাহসী। অন্যায়ের সাথে আপোস করেননি কোন দিন। ৭১ এ যুদ্ধের পর থেকেই সংসার নামক শব্দটা ভুলে যান তিনি। ঘুড়ে বেড়ান দেশের নানা প্রান্তে। বিনা বেতনে শিশুদের শিক্ষা দেওয়াই তাঁর কাজ। কখনো বছরান্তে হঠাৎ করেই দেখা মেলে অভিমানী ওই মুক্তিযোদ্ধার।

অত্যান্ত রাগী মানুষ হলেও তার সার্বক্ষণিক হাসিমাখা মুখটাই বলে দেয় তাঁর মায়া আর ভালোবাসাটা কতটা প্রবল। দেশের প্রতি যেমন প্রচন্ড ভালোবাসা তেমনি মানুষের প্রতিও ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা বোধ যা বাস্তবে না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই। সংসার বিমুখ অভিমানী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা হয় বনলতার সম্পাদকের। অভিমানের কারন জানতে চাইলে তিনি হাসিমাখা মুখে জানান,বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিলাম দেশ মাতৃকাকে মুক্ত করতে। তখন আমি ২২ বছরের একজন টগবগে তরুণ। বর্তমান বয়স ৭২। বয়সের ভারে এখন ক্লান্ত তিনি। রোগে শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

সমপ্রতি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় রয়েছেন। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তাঁকে কেন দেখা যায় না,এত অভিমান কিসের ? প্রশ্ন করতেই উঠে বসলেন। মাতৃভুমিকে ভালো বেসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে অস্ত্র হাতে জীবন বাঁজী রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। অনেক শত্রুকে ঘায়েল করেছি এমনকি রাজাকারদেরও। কিন্তু বিএনপি জামাতয়াতের শাসনামলে যখন দেখলাম রাজাকারদের সাথে আমাকে ফুল নিতে হয় একই চেয়ারে বসতে হয় তখন থেকেই ঘৃনা জন্মে নিজেদের উপর। সে সময় থেকেই ওই অনুষ্ঠান বর্জন করি। আজ অব্দী জাতীয় দিবসগুলোতে যাই না বা যেতে ভালো লাগেনা।

অভিমানের কিছু নেই হারানোরও কিছু নেই। মৃত্যুর আগে হলেও শেখ সাহেবের বিটির(শেখ হাসিনা) মধ্যে শেখের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। ভালো লাগে দেশের উন্নয়ন দেখে। কথাগুলো বলতেই আবেগ আপ্লুত হয়ে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পরেন এক সময়ের দুঃসাহসী এই যোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন আরো জানান,জীবনে অনেক সম্মান পেয়েছেন তিনি সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে কিন্তু আজ এই ৭২ বছর বয়সে এসে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেনের নিকট থেকে যে ভালোবাসা আর সম্মানটা পেলাম তা ভুলবার নয়। আজ অনেক দিন যাবত অসুস্থ ছিলাম কেউ খোঁজ খবর নেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর পেয়ে ইউএনও সাহেব শত ব্যস্তুার মাঝেও রাত ১১টার সময় আমার বাসায় এসে আমাকে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে জড়িয়ে নিলেন। তিনি এসেই আমার স্বাস্থ্যের খোঁজ কবর নিলেন। আমার চিকৎসার ব্যায়ভার বহনের সকল প্রকার ব্যাবস্থা করে দিলেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেন জানান,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন অভিমানী মুক্তিযোদ্ধার অসুস্থ্যতার কথা নজরে আসার পরপরই গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেলক্সের চিকিৎস মোঃ মেজবাহউল ইসলাম সেতুকে সাথে নিয়ে রাত ১১টায় তাঁর বাসায় যাই।  উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে খাদ্য সহায়তা ও সার্বিক চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন আজ মুক্তিযোদ্ধাদের কারনেই বিচারক,ডাক্তার,ডিসি,এসপি আর ইউএনও হতে পেরেছি। দেশের সকল বীর যোদ্ধাদের সবার আগে মুল্যায়ন করা উচিত।

গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের আকবর হোসেন (৭২) বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশকে শত্রু মুক্ত করতে ৭ নং সেক্টরে ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার নুরুজ্জামানের অধিনে ৩৫০জন যোদ্ধা ট্রেনিং নেন পলাশডাঙ্গা ও মানকের চর (ইন্ডিয়ায়)। তিনি ঐ দল থেকে , বগুড়া, রংপুর,কুড়িগ্রাম ও সর্বশেষ আমজাদ হোসেন মিলনের অধিনে ৮-১০ জনের দলে বিভক্ত হয়ে নওগাঁ জেলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় যুদ্ধ করে মাতৃভুমিকে শত্রুমুক্ত করেন। তাঁর গেজেট নং-১২৩৩,লাল বার্তা ০৩০৪০৫০০৬৪। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই চাকুরীর চিন্তা না করে দেশের প্রত্যান্ত এলাকায় শিশুদের বিনা বেতনে শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িয়ে পরেন। পরিবার স্বজনদের কথা না ভেবে এভাবেই পার করেন পুরো জীবন। ১৯৯৬ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেওয়া সিদ্ধান্ত হয় ৩শ টাকা করে।ওই টাকা দিয়েই অতিকষ্টে জীবন চলত তাঁর । সেই সময়য়ের অনেক সুখস্মৃতি এখনো মনের গভীরে দাগ কেটে আছে তাঁর।