শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিক্ষক হেলেন হত্যার দুই বছরেও উদঘাটন হয়নি রহস্য!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:২৮:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ জুলাই ২০২১
  • ৭৬ Time View

প্রভাষক মো:মাজেম আলী মলিন.
আজ ২৩ জুলাই শুক্রবার। ২০১৯ সালের ২৩জুলাই শিক্ষক লতিফা জাহান হেলেন(মঞ্জু)কে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। হেলেন হত্যার দুই বছর পুর্ণ হলেও মুল আসামীরা এখনো অধরা। চিহ্নিত আসামীরা ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যেই। প্রশাসনের ভ্রক্ষেপ নেই সেদিকে। উল্টো আসামী পক্ষই হুমকী দিচ্ছে হত্যা মামালার বাদী বৃদ্ধা মোনোয়ারা বেগম (৬০) ও নাতনি কলেজ ছাত্রী মিতুকে(১৭)।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়-এক সন্তানের জননী মনোয়ারা বেগমের বিয়ের ৫ বছরের মাথায় স্বামী নাজির উদ্দিনকে চোখের সামনে খুন হতে দেখেন বিধবা মনোয়ারা বেগম। অনেক কষ্টে একমাত্র মেয়ে লতিফা হেলেনকে বড় করে বিবাহ দেন প্রতিবেশী মমিনুলের সাথে। বিয়ের কিছু দিন না যেতেই মমিনুল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। একপর্যায়ে লতিফা হেলেনের সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
বৃদ্ধা মনোয়ারা একমাত্র মেয়ে হেলেনকে নিয়ে পড়েন অথৈই সাগরে। শত যন্ত্রনা আর কষ্টের মাঝেও ভেঙ্গে পরেননি তিনি। সমাজের সকল সমালোচকদের চোঁখে আঙ্গুল দিয়ে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করে চাকুরী দেন উপজেলার বৃ-কাশো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু ওই সুখ আর বেশী দিন সহ্য হয়নি বিধবা মনোয়ারার কপালে। মেয়ে জামাই মমিনুলের হাতেই খুন হলেন মেয়ে হেলেন। এখন এক মাত্র নাতনি মিতুকে ঘিরেই যেন তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটাকে নিয়েও যেন চিন্তার শেষ নেই বৃদ্ধা মনোয়ারার।

এদিকে উচ্চ আদালত থেকে মমিনুল জামিনে এসেই মেয়ে হেলেন হত্যা মামলার এক মাত্র স্বাক্ষী নাতনি মিতুকে  হুমকি দিচ্ছে প্রকাশ্যেই। এভাবেই কষ্টগুলো প্রকাশ করলেন ৬০ বছরের বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম। নিহত হেলেন গুপিনাথপুর দক্ষিনপাড়া গ্রামের মৃত নাজির উদ্দিনের মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, একই গ্রামের ডা. মো.মনছের আলীর ছেলে মমিন (৪৫) এর সাথে ২৫ বছর পুর্বে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় ওই শিক্ষিকা হেলেনের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দুই বছরের মাথায় নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এর পর বহু কষ্টে লেখাপড়া শেষ করে ৪ জানুয়ারী ২০১০ সালে বৃ-কাশো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।  একমাত্র মেয়ে নবম শ্রেণীতে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় লেখাপড়া কালিন তার বাবার কাছেই থাকতো। আর শিক্ষিকা লতিফা হেলেন তার বুদ্ধা মাকে নিয়ে নিজ বাড়ীতেই বাস করতেন।  মেয়েটি(মিতু) তার বৃদ্ধা নানী এই মামলার বাদী মনোয়ারার কাছেই রয়েছেন। বর্তমনে সে স্থানীয় এক কলেজের  উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে  অধ্যয়ন করছে।

ঘটনার রাতে হেলেন বৃদ্ধা মাতাকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। তখন মুষলধারে বৃষ্টিও হচ্ছিল। ওই সময় হেলেনের মা মনোয়ারা পান আনতে পাশের এক বাড়িতে যায়।  দুর্বৃত্তরা ওই সুযোগে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হেলেনকে হত্যা করে বাড়ির পাশেই পুকুরে ফেলে রেখে যায়। এই হত্যার  রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি। তবে এব্যাপারে মামিনুলের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এক আত্বীয় তাকে সাহায্য করছে বলে এলাকাবাসী জানান।
নিহত হেলেনের মেয়ে বর্তমানে কলেজ শিক্ষার্থী মিতু জানায়, আমার মা যখন খুন হন। তখন আমি বাবার কাছেই থাকতাম। ঘটনার রাতে বাবা বাসায় ফিরে প্রথমে রক্তমাখা শরীরটা পরিস্কার করে পশুর জন্য রান্না করা খাবার খেতে থাকে। তার অস্বাভাবিক আচরণ দেখে জিজ্ঞাসা করি বাবা তোমার কি হয়েছে। বলে কই কিছু হয়নী তো। তাহলে তোমার গায়ে রক্ত কেন আর তুমি গরুর রান্না খাবার খাচ্ছ কেন। কথা গুলো বলতেই নানী এসে চিৎকার দিয়ে বলে মিতু তোর বাবা তোর মাকে মেরে পালিয়েছে। তখন বাবা নামের ওই পশুটা রুমের মধ্যে গিয়ে পালায়। আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই আমার পা জরিয়ে ধরে বলে আমাকে বাঁচা মা। তখনই আমি ওই বাবা নামক পশুটির বাড়ী থেকে বের হয়ে নানীর কাছে চলে আসি।

তখন থেকেই নানীর সাথে অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে আছি। মিতু বলেন মামলাটির কোন অগ্রগতি না হওয়ায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে থানা থেকে মামলাটি প্রতাহার করে ডি.আই.জি রাজশাহী রেঞ্জ গোয়েন্দা সংস্থায় নেওয়া হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী মমিনুল ইসলাম উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতেই আছেন দের বছর যাবৎ। বাঁকী আসামী একই গ্রামের হুকুম দাতা মনছুর রহমান,মোস্তফার ছেলে আহসান,আকবরের ছেলে হামজা পলাতক রয়েছেন।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাটোরের পিআইবি ইন্সপেক্টর নাছির হোসেন এপ্রতিবেদককে জানান,অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি গোয়েন্দা শাখায় রয়েছে’। তদন্ত চলছে। খুব শীঘ্রই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

Tag :
About Author Information

Daily Banalata

শিক্ষক হেলেন হত্যার দুই বছরেও উদঘাটন হয়নি রহস্য!

Update Time : ০৭:২৮:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ জুলাই ২০২১

প্রভাষক মো:মাজেম আলী মলিন.
আজ ২৩ জুলাই শুক্রবার। ২০১৯ সালের ২৩জুলাই শিক্ষক লতিফা জাহান হেলেন(মঞ্জু)কে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। হেলেন হত্যার দুই বছর পুর্ণ হলেও মুল আসামীরা এখনো অধরা। চিহ্নিত আসামীরা ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন প্রকাশ্যেই। প্রশাসনের ভ্রক্ষেপ নেই সেদিকে। উল্টো আসামী পক্ষই হুমকী দিচ্ছে হত্যা মামালার বাদী বৃদ্ধা মোনোয়ারা বেগম (৬০) ও নাতনি কলেজ ছাত্রী মিতুকে(১৭)।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়-এক সন্তানের জননী মনোয়ারা বেগমের বিয়ের ৫ বছরের মাথায় স্বামী নাজির উদ্দিনকে চোখের সামনে খুন হতে দেখেন বিধবা মনোয়ারা বেগম। অনেক কষ্টে একমাত্র মেয়ে লতিফা হেলেনকে বড় করে বিবাহ দেন প্রতিবেশী মমিনুলের সাথে। বিয়ের কিছু দিন না যেতেই মমিনুল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। একপর্যায়ে লতিফা হেলেনের সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
বৃদ্ধা মনোয়ারা একমাত্র মেয়ে হেলেনকে নিয়ে পড়েন অথৈই সাগরে। শত যন্ত্রনা আর কষ্টের মাঝেও ভেঙ্গে পরেননি তিনি। সমাজের সকল সমালোচকদের চোঁখে আঙ্গুল দিয়ে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করে চাকুরী দেন উপজেলার বৃ-কাশো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু ওই সুখ আর বেশী দিন সহ্য হয়নি বিধবা মনোয়ারার কপালে। মেয়ে জামাই মমিনুলের হাতেই খুন হলেন মেয়ে হেলেন। এখন এক মাত্র নাতনি মিতুকে ঘিরেই যেন তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটাকে নিয়েও যেন চিন্তার শেষ নেই বৃদ্ধা মনোয়ারার।

এদিকে উচ্চ আদালত থেকে মমিনুল জামিনে এসেই মেয়ে হেলেন হত্যা মামলার এক মাত্র স্বাক্ষী নাতনি মিতুকে  হুমকি দিচ্ছে প্রকাশ্যেই। এভাবেই কষ্টগুলো প্রকাশ করলেন ৬০ বছরের বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম। নিহত হেলেন গুপিনাথপুর দক্ষিনপাড়া গ্রামের মৃত নাজির উদ্দিনের মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, একই গ্রামের ডা. মো.মনছের আলীর ছেলে মমিন (৪৫) এর সাথে ২৫ বছর পুর্বে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় ওই শিক্ষিকা হেলেনের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দুই বছরের মাথায় নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এর পর বহু কষ্টে লেখাপড়া শেষ করে ৪ জানুয়ারী ২০১০ সালে বৃ-কাশো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।  একমাত্র মেয়ে নবম শ্রেণীতে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় লেখাপড়া কালিন তার বাবার কাছেই থাকতো। আর শিক্ষিকা লতিফা হেলেন তার বুদ্ধা মাকে নিয়ে নিজ বাড়ীতেই বাস করতেন।  মেয়েটি(মিতু) তার বৃদ্ধা নানী এই মামলার বাদী মনোয়ারার কাছেই রয়েছেন। বর্তমনে সে স্থানীয় এক কলেজের  উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে  অধ্যয়ন করছে।

ঘটনার রাতে হেলেন বৃদ্ধা মাতাকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। তখন মুষলধারে বৃষ্টিও হচ্ছিল। ওই সময় হেলেনের মা মনোয়ারা পান আনতে পাশের এক বাড়িতে যায়।  দুর্বৃত্তরা ওই সুযোগে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হেলেনকে হত্যা করে বাড়ির পাশেই পুকুরে ফেলে রেখে যায়। এই হত্যার  রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি। তবে এব্যাপারে মামিনুলের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এক আত্বীয় তাকে সাহায্য করছে বলে এলাকাবাসী জানান।
নিহত হেলেনের মেয়ে বর্তমানে কলেজ শিক্ষার্থী মিতু জানায়, আমার মা যখন খুন হন। তখন আমি বাবার কাছেই থাকতাম। ঘটনার রাতে বাবা বাসায় ফিরে প্রথমে রক্তমাখা শরীরটা পরিস্কার করে পশুর জন্য রান্না করা খাবার খেতে থাকে। তার অস্বাভাবিক আচরণ দেখে জিজ্ঞাসা করি বাবা তোমার কি হয়েছে। বলে কই কিছু হয়নী তো। তাহলে তোমার গায়ে রক্ত কেন আর তুমি গরুর রান্না খাবার খাচ্ছ কেন। কথা গুলো বলতেই নানী এসে চিৎকার দিয়ে বলে মিতু তোর বাবা তোর মাকে মেরে পালিয়েছে। তখন বাবা নামের ওই পশুটা রুমের মধ্যে গিয়ে পালায়। আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই আমার পা জরিয়ে ধরে বলে আমাকে বাঁচা মা। তখনই আমি ওই বাবা নামক পশুটির বাড়ী থেকে বের হয়ে নানীর কাছে চলে আসি।

তখন থেকেই নানীর সাথে অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে আছি। মিতু বলেন মামলাটির কোন অগ্রগতি না হওয়ায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে থানা থেকে মামলাটি প্রতাহার করে ডি.আই.জি রাজশাহী রেঞ্জ গোয়েন্দা সংস্থায় নেওয়া হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী মমিনুল ইসলাম উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতেই আছেন দের বছর যাবৎ। বাঁকী আসামী একই গ্রামের হুকুম দাতা মনছুর রহমান,মোস্তফার ছেলে আহসান,আকবরের ছেলে হামজা পলাতক রয়েছেন।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাটোরের পিআইবি ইন্সপেক্টর নাছির হোসেন এপ্রতিবেদককে জানান,অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি গোয়েন্দা শাখায় রয়েছে’। তদন্ত চলছে। খুব শীঘ্রই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।