বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

“ভরা বর্ষাতেও পানি শূন্যতায় ধুঁকছে চলনবিল”

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অগাস্ট ২০২১
  • ৯৩ Time View

মোঃ মাজেম আলী মলিন, 
বর্ষা মৌসুমে দেশের বৃহত্তম চলনবিলের মাঠ-ঘাট রাস্তা তলিয়ে যায় পানিতে। ছোট বড় সব নালা, খাল-বিল থৈ থৈ করে পানির কলতানে। পানিতে ভরপুর থাকে গোটা চলনবিল। বাহারী সব নৌকা পালতুলে কখনোবা ইঞ্জিন চালিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় চলনবিল এলাকার নানা প্রান্তে। তবে এবার চলনবিলে ভরা বর্ষাতেও পানি নেই। যার প্রভাব পড়েছে তিন জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই বিলের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর।

নদী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দশক আগেও আষাঢ় মাসে চলনবিল থাকত পানিতে টইটম্বুর। এখন গোটা বিল পানিশূন্য। জলবায়ু পরিবর্তনের নির্মমতায় শিকার হতে চলছে এই বিল। এক সময় ধান ও মাছে পরিপুর্ণ ছিল চলনবিল। বিল ঘেঁষে গড়ে ওঠা শত শত দ্বীপের ন্যায় গ্রামগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করত। অধিকাংশ গ্রাম বাসী মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্ষাকালে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো ভ্রমন পিঁপাসু মানুষগুলো চলনবিলকে কাছ থেকে একনজর দেখার জন্য ছুটে আসত । নৌভ্রমণের মাধ্যমে চলনবিলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেন তারা।

মুলত: নির্মল প্রাকৃতিক আবহাওয়া,জলে দোল খাওয়া, নানা প্রকার দেশী বিদেশী পাখির কলতান ,দেশী মাছের স্বাধ,বিনোদন আর শহরের এক ঘেঁয়েমীপনা দুর করতেই পর্যটকরা আসতো দেশের নানাপ্রান্ত থেকে। সেই সাথে স্থানীয় লোকদেরও দু পয়সা আয় রোজগার হতো। বর্তমানে চলনবিল পানি শুন্য থাকায় বিলুপ্ত হতে বসেছে বিলের জীববৈচিত্র ও মৎস্য সম্পদ। ব্যাহত হচ্ছে কৃষি আবাদ।
রাজশাহী বিভাগের ৬ জেলার ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ছিল চলনবিল। বর্তমানে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ এই তিন জেলার ১০টি উপজেলার, ৬২টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৬০০ গ্রাম নিয়ে বৃহত্তর চলনবিল। বিলে রয়েছে ২১টি নদ-নদী, ৭১টি নালা-খাল ও ৯৩টি ছোট বিল।

পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, চলনবিলে মাছের উৎপাদন ছিলো ১৯৯২ সালে ১৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন, ১৯৯৭ সালে ১৫ হাজার ৪২১ মেট্রিক টন, ২০০২ সালে ১২ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন এবং ২০০৬ সালে উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন। এই হিসাবে ২৪ বছরে চলনবিলে মাছের উৎপাদন কমেছে ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ। গড় উৎপাদন কমেছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ। প্রতিবছর উৎপাদন কমেছে ৩ শতাংশ।

চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,আধুনিকতার ছোঁয়ায় ছোট-বড় ব্রিজ,কালর্ভাট,ডুব সড়ক, অপরিকল্পিত বাদ নির্মাণ,নতুন বসতিস্থাপন এসবের কারনে ভরা বর্ষা মৌসুমেও চলনবিলে যে পরিমাণ পানি থাকার কথা, তা নেই।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, অতীতে চলনবিলে বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর থাকতো। উঁচু জমিতে ফসল আবাদ, নদী-খালে মাছ শিকার চলত। অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণেই বৃহৎ এই বিল এখন পানিশূন্য। চলতি বর্ষা মৌসুমে পানিশূন্যতায় ধুঁকছে চলনবিলের জলাশয়গুলো। নেই তেমন বৃষ্টিপাতও। তাই দেখা মিলছে মাছের। একারনে অলস সময় পার করছেন এ অঞ্চলের জেলেরা। অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন।

শুকনো মৌসুমে অন্যের জমিতে কাজ করে আর বর্ষায় মাছ ধরে আর নৌকায় ভাড়া মেরে সংসার চলতো তাদের। কিন্তু এবার বর্ষায় বিলে পানি না আসায় তারা হতাশ। কারণ মাছ বিক্রি করেই ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসারের যাবতীয় খরচ যোগাতে হয় তাদের।

নাটোরের গুরুদাসপুরের বিলশা গ্রামের মৎস্যজীবিরা বলেন, মাছ ধরেই চলে আমাদের জীবন জীবিকা। তাই বর্ষা শুরুর আগেই মাছ ধরার জন্য খেয়া জাল, জাকই জাল, ধুন্দি, চাঁই, দোয়ার, পলোসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে রেখেছি। অথচ ভরা বর্ষায় পানি না থাকায় আমাদের উপার্জনের পথ বন্ধ হতে বসেছে।

চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহবায়ক মো.মিজানুর রহমান জানান, “ ফারাকার বাঁধ,অপরিকল্পিত উন্নয়ন, অবৈধ দখল দুষনে চলনবিল এখন বর্ষা মৌসুমেও পানিশূন্য।

Tag :

“ভরা বর্ষাতেও পানি শূন্যতায় ধুঁকছে চলনবিল”

Update Time : ১০:০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অগাস্ট ২০২১

মোঃ মাজেম আলী মলিন, 
বর্ষা মৌসুমে দেশের বৃহত্তম চলনবিলের মাঠ-ঘাট রাস্তা তলিয়ে যায় পানিতে। ছোট বড় সব নালা, খাল-বিল থৈ থৈ করে পানির কলতানে। পানিতে ভরপুর থাকে গোটা চলনবিল। বাহারী সব নৌকা পালতুলে কখনোবা ইঞ্জিন চালিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় চলনবিল এলাকার নানা প্রান্তে। তবে এবার চলনবিলে ভরা বর্ষাতেও পানি নেই। যার প্রভাব পড়েছে তিন জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই বিলের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর।

নদী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দশক আগেও আষাঢ় মাসে চলনবিল থাকত পানিতে টইটম্বুর। এখন গোটা বিল পানিশূন্য। জলবায়ু পরিবর্তনের নির্মমতায় শিকার হতে চলছে এই বিল। এক সময় ধান ও মাছে পরিপুর্ণ ছিল চলনবিল। বিল ঘেঁষে গড়ে ওঠা শত শত দ্বীপের ন্যায় গ্রামগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করত। অধিকাংশ গ্রাম বাসী মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্ষাকালে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো ভ্রমন পিঁপাসু মানুষগুলো চলনবিলকে কাছ থেকে একনজর দেখার জন্য ছুটে আসত । নৌভ্রমণের মাধ্যমে চলনবিলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেন তারা।

মুলত: নির্মল প্রাকৃতিক আবহাওয়া,জলে দোল খাওয়া, নানা প্রকার দেশী বিদেশী পাখির কলতান ,দেশী মাছের স্বাধ,বিনোদন আর শহরের এক ঘেঁয়েমীপনা দুর করতেই পর্যটকরা আসতো দেশের নানাপ্রান্ত থেকে। সেই সাথে স্থানীয় লোকদেরও দু পয়সা আয় রোজগার হতো। বর্তমানে চলনবিল পানি শুন্য থাকায় বিলুপ্ত হতে বসেছে বিলের জীববৈচিত্র ও মৎস্য সম্পদ। ব্যাহত হচ্ছে কৃষি আবাদ।
রাজশাহী বিভাগের ৬ জেলার ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ছিল চলনবিল। বর্তমানে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ এই তিন জেলার ১০টি উপজেলার, ৬২টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৬০০ গ্রাম নিয়ে বৃহত্তর চলনবিল। বিলে রয়েছে ২১টি নদ-নদী, ৭১টি নালা-খাল ও ৯৩টি ছোট বিল।

পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, চলনবিলে মাছের উৎপাদন ছিলো ১৯৯২ সালে ১৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন, ১৯৯৭ সালে ১৫ হাজার ৪২১ মেট্রিক টন, ২০০২ সালে ১২ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন এবং ২০০৬ সালে উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন। এই হিসাবে ২৪ বছরে চলনবিলে মাছের উৎপাদন কমেছে ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ। গড় উৎপাদন কমেছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ। প্রতিবছর উৎপাদন কমেছে ৩ শতাংশ।

চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,আধুনিকতার ছোঁয়ায় ছোট-বড় ব্রিজ,কালর্ভাট,ডুব সড়ক, অপরিকল্পিত বাদ নির্মাণ,নতুন বসতিস্থাপন এসবের কারনে ভরা বর্ষা মৌসুমেও চলনবিলে যে পরিমাণ পানি থাকার কথা, তা নেই।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, অতীতে চলনবিলে বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর থাকতো। উঁচু জমিতে ফসল আবাদ, নদী-খালে মাছ শিকার চলত। অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণেই বৃহৎ এই বিল এখন পানিশূন্য। চলতি বর্ষা মৌসুমে পানিশূন্যতায় ধুঁকছে চলনবিলের জলাশয়গুলো। নেই তেমন বৃষ্টিপাতও। তাই দেখা মিলছে মাছের। একারনে অলস সময় পার করছেন এ অঞ্চলের জেলেরা। অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন।

শুকনো মৌসুমে অন্যের জমিতে কাজ করে আর বর্ষায় মাছ ধরে আর নৌকায় ভাড়া মেরে সংসার চলতো তাদের। কিন্তু এবার বর্ষায় বিলে পানি না আসায় তারা হতাশ। কারণ মাছ বিক্রি করেই ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসারের যাবতীয় খরচ যোগাতে হয় তাদের।

নাটোরের গুরুদাসপুরের বিলশা গ্রামের মৎস্যজীবিরা বলেন, মাছ ধরেই চলে আমাদের জীবন জীবিকা। তাই বর্ষা শুরুর আগেই মাছ ধরার জন্য খেয়া জাল, জাকই জাল, ধুন্দি, চাঁই, দোয়ার, পলোসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে রেখেছি। অথচ ভরা বর্ষায় পানি না থাকায় আমাদের উপার্জনের পথ বন্ধ হতে বসেছে।

চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহবায়ক মো.মিজানুর রহমান জানান, “ ফারাকার বাঁধ,অপরিকল্পিত উন্নয়ন, অবৈধ দখল দুষনে চলনবিল এখন বর্ষা মৌসুমেও পানিশূন্য।