ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি.
জয়পুরহাট জেলা শহর হতে ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ক্ষেতলাল উপজেলা। এই উপজেলার ১৪২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২৯৮০৫ টি পরিবারে বাস করে ১ লাখ ৮ হাজার ৩২৬ জন লোক ( ২০১১ আদমশুমারি অনুযায়ী)। ১৮৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ থানায় স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরেও গড়ে উঠেনি কোন পর্যটন বা ভাল মানের কোন বিনোদন কেন্দ্র।
উপজেলা সদর হতে ৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। সেই পরিষদ ভবন হতে মাত্র দুই কিলোমিটার পশ্চিমে আঁকাবাঁকা পাকা রাস্তা পেরিয়েই এক নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত ছায়া ঘেরা ঐতিহাসিক ওই আছরাঙ্গা দীঘি ।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা, দীঘিটির আয়তন ২৫ একর। যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭০ ফুট এবং প্রস্থ ১ হাজার ফুট। দীঘির চারিদিকে লাগানো রয়েছে সারি সারি শোভাবর্ধনকারী ৫ হাজারেরও অধিক বনজ ও ফলজ গাছ।
জনশ্রুতি আছে, আছরাঙ্গা দীঘি অনেক প্রাচীন একটি দীঘি। ধারনা করা হয় আনুমানিক ৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রাচীন এই দীঘিটি খনন করা হয়েছিল। তবে কে খনন করে সে নিয়ে রয়েছে মত পার্থক্য আছে। জমিদার মহারাজাদের হুকুমে রাজেন্দ্র রায় দীঘিটি খনন করেন। অনেকের মতে তাহেরপুর রাজ পরিবারের সদস্য মনু ভুট্র এই দীঘিটা খনন করেন। যার মালিক ছিল রাজ বংশের রাজা কংশ নারায়ণ রায়। রাজ পরিবারের গোসল ও পানি ব্যবহারের সুবিধার্থে দীঘিটির চারদিকে ৫০ ফুট দৈর্ঘের চারটি ঘাট নির্মান করা হয়, যা এখনও বিদ্যমান। ১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় দীঘিটি পুনঃ খনন করা হয়। ফলে এটি আবার ফিরে পায় তার হারানো ঐতিহ্য। ওই বছর ৩ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীঘিটির সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন এবং এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। কিন্তু আজও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি সেই ঘোষণা।
বিগত ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা হুইপ স্বপন মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রবেশ মুখেই আছরাঙ্গা দীঘির দূরত্ব উল্লেখসহ একটি প্রবেশ গেট উদ্বোধন করেন। এছাড়া এ বছর গত মার্চ মাসে তিনি এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে চীনের কয়েকজন নাগরিকদের নিয়ে দীঘিটি পরিদর্শন করেন।
১৯৯২ সাল হতে দীর্ঘ ২৪ বছরেও ছিলনা কোন উন্নয়নের ছোঁয়া। কিন্তু বর্তমান জাতীয় সংসদের হুইপ ও জয়পুরহাট-২ সংসদীয় আসনের এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে এই জনপদের দায়িত্ব নিলে দীঘিটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগা শুরু করে। কাঁচা রাস্তার পরিবর্তে হয়েছে পাকা রাস্তা। বর্তমানে দীঘিতে আগত অতিথিদের বসার জন্য দীঘির চারপাশে নির্মাণ করা হয়েছে ইট দিয়ে ৮ টি ব্রেঞ্চ এবং ২ কক্ষের একটি আধুনিক মানের অতিথিশালা। এছাড়া অতিথিশালার পূর্ব পাশে নির্মাণ করা হয়েছে দীঘিটির সংক্ষিপ্ত পরিচিত ফলক।
উপজেলাবাসী আশা করছেন, হুইপ স্বপন স্বাধীনতার ৫০ বছর পর একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র উপহার দিবেন।
ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ( ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল মজিদ মোল্লা জানান, সুস্থ বিনোদন ও মেধা বিকাশে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠা জরুরী। আমরা সেই দিক হতে বঞ্চিত। আমাদের হুইপ স্বপন ভাই এটির জন্য কাজ করছে। আমি আশা করি আমাদের জনপ্রিয় নেতা হুইপ স্বপন ভাই ৫০ বছরের অপূর্ণতার অবসান ঘটিয়ে আছরাঙ্গা দীঘিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ক্ষেতলালবাসীকে উপহার দিবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম আবু সুফিয়ান বলেন, আছরাঙ্গা দীঘি গাছ গাছালিতে ভরা এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের জায়গা। আমি স্বসস্ত্রীকও সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখানে অতিথিদের বসার জন্য ৮টি বেঞ্চ ও ১টি ২ কক্ষের অতিথিশালা জেলা ও উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। যা গত ১৪ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শরীফুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এখন একটি টয়লেট ও বৃষ্টির পানি হতে বাঁচতে সেড করা প্রয়োজন। আরো বলেন, আছরাঙ্গা দীঘিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে। তবে সকল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রেখেই সেখানে বিনোদন কেন্দ্র করা উচিত বলে আমি মনে করি।
ক্ষেতলাল উপজেলার তরুন চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডল বলেন, উপজেলাবাসীর জন্য সুন্দর ও সুষ্ঠু বিনোদনের জন্য আছরাঙ্গা দীঘিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে কিছু কাজ করা হয়েছে। হুইপ স্বপন ভাইয়ের দিকনির্দেশনায় পর্যায়ক্রমে এটিকে একটি মানসম্মত বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।