বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাফিয়া চক্রের এজেন্ট মর্জিনা, ডিম বিক্রেতার কোটি টাকা লেনদেন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৫৩:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১
  • ৫২ Time View

বনলতা ডেস্ক.

এক সময় সৌদি আরবে ছিলেন বছর ত্রিশের মর্জিনা আক্তার। তিনি চেহারার লাবণ্যতা ও ভাষার শুদ্ধ ব্যবহারে খুব সহজেই পুরুষদের আকৃষ্ট করতে পারেন। পরে দেশে ফিরে পড়েন আর্থিক টানাপড়েনের কারণে হাঁটেন ভিন্নপথে। মর্জিনা হঠাৎ বনে যান কাস্টমস অফিসার। এই পরিচয় দিয়ে একটি চক্র তৈরি করে ফোন আলাপে বিদেশ থেকে আসা পণ্য খালাসের নামে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

এই চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই দ্বারস্থ হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। অভিযোগ পেয়ে মর্জিনাসহ সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মোট তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো মো. সজিব আহম্মেদ, মোছা. মর্জিনা আক্তার রনি ও মো. শরিফ হোসেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪৭ টি ব্যাংকের চেক জব্দ করা হয়।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এমনকি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মর্জিনা। ৩০ বছর বয়সী মর্জিনাকে ব্যবহার করতো আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। এই চক্রের হোতাদের একজন শহীদুল ইসলাম। শহীদুলই চক্রের সঙ্গে যুক্ত করে মর্জিনাকে। প্রায় এক বছর আগে মিরপুরে মর্জিনার সঙ্গে পরিচয় তার। খদ্দের হিসেবে তাকে এক ঘণ্টার জন্য ভাড়া করেছিল শহীদুল। তারপর একটি আবাসিক হোটেলে সময় কাটায় তারা। সেখানেই শহীদুল তাকে প্রস্তাব দেয় এই চক্রে জড়িত হওয়ার।

শহীদুল মর্জিনাকে বলেছিলো- ‘শরীর বিক্রি করে এভাবে আর কতো টাকা আয় করা যায়। তার চেয়ে বসে বসে অনেক টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে। কাজটা সহজ। শুধু ফোনে কথা বলা।’ সব শুনে রাজি হয় মর্জিনা। তারপর প্রশিক্ষণ দেয় শহীদুল নিজেই। প্রথম কাজ দেয়া হয় তাকে, ব্যাংকে কিছু একাউন্ট করাতে হবে। একাউন্ট যাদের নামে হবে তাদের প্রত্যেককে দেড় হাজার করে টাকা দেয়া হবে। একাউন্টের (স্বাক্ষরসহ) চেক বই, পাসওয়ার্ডসহ এটিএম কার্ড সব থাকবে শহীদুলের কাছে। প্রথম এসাইনমেন্টেই সফল মর্জিনা।

ডিম বিক্রেতা সজীব আহমেদ, অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ শরিফ হোসেনকে দিয়ে দু’টি একাউন্ট করানো হয়। এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রেফতারের সময় মর্জিনার বাসা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত টাকা এবং শরিফের কাছ থেকে ৪৭টি চেক উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সজিব, শরিফ ও মর্জিনাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৭০টি অ্যাকাউন্ট, ব্যাংকের চেক ও এটিএম কার্ড রয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রথমে কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে কেউ ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা, কেউ কাস্টমস অফিসার, কেউ উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে কাউকে ব্যাংকে চাকরি, কাউকে বড় ধরনের উপহার এবং নারী সদস্য প্রেমের অভিনয় করে বিভিন্ন লোভনীয় অফারের মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ঐসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, চেক ও এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে থাকে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত মর্জিনা, সজিব ও শরিফ প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি অংশ পেয়ে থাকে। এ প্রতারক চক্রটি বরিশালের এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৫৯ লাখ টাকা, ঝিনাইদহের যুব উন্নয়নের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ টাকা এবং সাতক্ষীরার মসজিদের ইমামের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, গ্রেফতার তিনজন ও মূলহোতা শহীদুলসহ চারজনের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ৭০টি একাউন্ট রয়েছে। এসব একাউন্টে লেনদেন হয়েছে কোটি কোটি টাকা। অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ শরিফ হোসেনের আটটি ব্যাংকের হিসাবে লেনদেন হয়েছে  ২ কোটি ৩০ লাখ ৮ হাজার ২৩ টাকা। ডিম বিক্রেতা সজীব আহমেদের ২২টি একাউন্টে লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ২ লাখ ৪ হাজার ৩শ’ ৪৯ টাকা। শহীদুলের পাঁচটি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ ৫০ টাকা।

তাদের কাছে প্রতারণার শিকার সামসাদ বেগম নামে এক নারী মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বন্ধুত্ব করে লন্ডন থেকে উপহার পাঠানো হয়েছে তার কাছে, এমনটি  জানানো হয়। ‘ম্যাডাম, শুভেচ্ছা নিবেন। আমি কাস্টমস অফিসার মর্জিনা বলছি। আপনার একটি দামি  উপহার এসেছে। বড় এমাউন্টের। এজন্য সোনালী ব্যাংকের সাত মসজিদ রোড শাখায় পৃথকভাবে প্রথমে  ৪০ হাজার ২৯ টাকা,  পরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ১শ’ ১৫ টাকা মিলিয়ে সর্বমোট ১ লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ ৪৪ টাকা জমা দিলে ওই উপহারটি আপনার বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে।’

এরপর গত ৩রা জুন ব্যাংকে ওই পরিমাণ টাকা জমা দেন সামসাদ বেগম। কিন্তু উপহার আর আসে না। কয়েক দিন পর জানানো হয়, ‘সরি ম্যাডাম। হিসাবে ভুল হয়েছে। আরও ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। কারণ যে উপহার এসেছে তা অনেক মূল্যবান।’ ততক্ষণে সামসাদ বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। আর টাকা জমা দেননি তিনি।

পরবর্তীতে ওই ফোন নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে ইংল্যান্ডের আল রায়ান ব্যাংকে মৃত দম্পতির হিসাবে থাকা ২৫ কোটি টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ঝিনাইদহের আবুল বাশারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা লুটে নিয়েছে এই চক্র। এ রকম অভিযোগ অনেক। এই প্রতারক চক্রে দেশি-বিদেশি অপরাধীরা জড়িত। বিদেশিরা চ্যাট করে বন্ধুত্ব করে। একই কাজ করে শহীদুলও। পরবর্তীতে মর্জিনা কাস্টমস অফিসার সেজে কথা বলেন। ব্যাংকে টাকা আসার পর সেই টাকা উত্তোলন করে শহীদুল ও চক্রের অন্যরা। সেখান থেকে কমিশন পান মর্জিনা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, বন্ধুতা করে, প্রলোভন দিয়ে উপহার পাঠানোর নামে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। ইতিমধ্যে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রতারণার ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও থানায় দু’টি মামলা হয়েছে। চক্রের অন্যদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। গ্রেফতার মর্জিনার বাড়ি ভোলা সদরের শান্তির হাটে। তাকে গত ৩ সেপ্টেম্বর মিরপুরের কালসির বাসা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। স্বামী ও সন্তান নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন মর্জিনা। বাসা থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

সুত্র.মানব জমিন

Tag :

মাফিয়া চক্রের এজেন্ট মর্জিনা, ডিম বিক্রেতার কোটি টাকা লেনদেন

Update Time : ০৭:৫৩:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১

বনলতা ডেস্ক.

এক সময় সৌদি আরবে ছিলেন বছর ত্রিশের মর্জিনা আক্তার। তিনি চেহারার লাবণ্যতা ও ভাষার শুদ্ধ ব্যবহারে খুব সহজেই পুরুষদের আকৃষ্ট করতে পারেন। পরে দেশে ফিরে পড়েন আর্থিক টানাপড়েনের কারণে হাঁটেন ভিন্নপথে। মর্জিনা হঠাৎ বনে যান কাস্টমস অফিসার। এই পরিচয় দিয়ে একটি চক্র তৈরি করে ফোন আলাপে বিদেশ থেকে আসা পণ্য খালাসের নামে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

এই চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই দ্বারস্থ হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। অভিযোগ পেয়ে মর্জিনাসহ সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মোট তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো মো. সজিব আহম্মেদ, মোছা. মর্জিনা আক্তার রনি ও মো. শরিফ হোসেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪৭ টি ব্যাংকের চেক জব্দ করা হয়।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এমনকি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মর্জিনা। ৩০ বছর বয়সী মর্জিনাকে ব্যবহার করতো আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। এই চক্রের হোতাদের একজন শহীদুল ইসলাম। শহীদুলই চক্রের সঙ্গে যুক্ত করে মর্জিনাকে। প্রায় এক বছর আগে মিরপুরে মর্জিনার সঙ্গে পরিচয় তার। খদ্দের হিসেবে তাকে এক ঘণ্টার জন্য ভাড়া করেছিল শহীদুল। তারপর একটি আবাসিক হোটেলে সময় কাটায় তারা। সেখানেই শহীদুল তাকে প্রস্তাব দেয় এই চক্রে জড়িত হওয়ার।

শহীদুল মর্জিনাকে বলেছিলো- ‘শরীর বিক্রি করে এভাবে আর কতো টাকা আয় করা যায়। তার চেয়ে বসে বসে অনেক টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে। কাজটা সহজ। শুধু ফোনে কথা বলা।’ সব শুনে রাজি হয় মর্জিনা। তারপর প্রশিক্ষণ দেয় শহীদুল নিজেই। প্রথম কাজ দেয়া হয় তাকে, ব্যাংকে কিছু একাউন্ট করাতে হবে। একাউন্ট যাদের নামে হবে তাদের প্রত্যেককে দেড় হাজার করে টাকা দেয়া হবে। একাউন্টের (স্বাক্ষরসহ) চেক বই, পাসওয়ার্ডসহ এটিএম কার্ড সব থাকবে শহীদুলের কাছে। প্রথম এসাইনমেন্টেই সফল মর্জিনা।

ডিম বিক্রেতা সজীব আহমেদ, অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ শরিফ হোসেনকে দিয়ে দু’টি একাউন্ট করানো হয়। এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রেফতারের সময় মর্জিনার বাসা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত টাকা এবং শরিফের কাছ থেকে ৪৭টি চেক উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সজিব, শরিফ ও মর্জিনাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৭০টি অ্যাকাউন্ট, ব্যাংকের চেক ও এটিএম কার্ড রয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রথমে কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে কেউ ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা, কেউ কাস্টমস অফিসার, কেউ উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে কাউকে ব্যাংকে চাকরি, কাউকে বড় ধরনের উপহার এবং নারী সদস্য প্রেমের অভিনয় করে বিভিন্ন লোভনীয় অফারের মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ঐসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, চেক ও এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে থাকে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত মর্জিনা, সজিব ও শরিফ প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি অংশ পেয়ে থাকে। এ প্রতারক চক্রটি বরিশালের এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৫৯ লাখ টাকা, ঝিনাইদহের যুব উন্নয়নের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ টাকা এবং সাতক্ষীরার মসজিদের ইমামের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, গ্রেফতার তিনজন ও মূলহোতা শহীদুলসহ চারজনের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ৭০টি একাউন্ট রয়েছে। এসব একাউন্টে লেনদেন হয়েছে কোটি কোটি টাকা। অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ শরিফ হোসেনের আটটি ব্যাংকের হিসাবে লেনদেন হয়েছে  ২ কোটি ৩০ লাখ ৮ হাজার ২৩ টাকা। ডিম বিক্রেতা সজীব আহমেদের ২২টি একাউন্টে লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ২ লাখ ৪ হাজার ৩শ’ ৪৯ টাকা। শহীদুলের পাঁচটি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ ৫০ টাকা।

তাদের কাছে প্রতারণার শিকার সামসাদ বেগম নামে এক নারী মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বন্ধুত্ব করে লন্ডন থেকে উপহার পাঠানো হয়েছে তার কাছে, এমনটি  জানানো হয়। ‘ম্যাডাম, শুভেচ্ছা নিবেন। আমি কাস্টমস অফিসার মর্জিনা বলছি। আপনার একটি দামি  উপহার এসেছে। বড় এমাউন্টের। এজন্য সোনালী ব্যাংকের সাত মসজিদ রোড শাখায় পৃথকভাবে প্রথমে  ৪০ হাজার ২৯ টাকা,  পরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ১শ’ ১৫ টাকা মিলিয়ে সর্বমোট ১ লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ ৪৪ টাকা জমা দিলে ওই উপহারটি আপনার বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে।’

এরপর গত ৩রা জুন ব্যাংকে ওই পরিমাণ টাকা জমা দেন সামসাদ বেগম। কিন্তু উপহার আর আসে না। কয়েক দিন পর জানানো হয়, ‘সরি ম্যাডাম। হিসাবে ভুল হয়েছে। আরও ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। কারণ যে উপহার এসেছে তা অনেক মূল্যবান।’ ততক্ষণে সামসাদ বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। আর টাকা জমা দেননি তিনি।

পরবর্তীতে ওই ফোন নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে ইংল্যান্ডের আল রায়ান ব্যাংকে মৃত দম্পতির হিসাবে থাকা ২৫ কোটি টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ঝিনাইদহের আবুল বাশারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা লুটে নিয়েছে এই চক্র। এ রকম অভিযোগ অনেক। এই প্রতারক চক্রে দেশি-বিদেশি অপরাধীরা জড়িত। বিদেশিরা চ্যাট করে বন্ধুত্ব করে। একই কাজ করে শহীদুলও। পরবর্তীতে মর্জিনা কাস্টমস অফিসার সেজে কথা বলেন। ব্যাংকে টাকা আসার পর সেই টাকা উত্তোলন করে শহীদুল ও চক্রের অন্যরা। সেখান থেকে কমিশন পান মর্জিনা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, বন্ধুতা করে, প্রলোভন দিয়ে উপহার পাঠানোর নামে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। ইতিমধ্যে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রতারণার ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও থানায় দু’টি মামলা হয়েছে। চক্রের অন্যদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। গ্রেফতার মর্জিনার বাড়ি ভোলা সদরের শান্তির হাটে। তাকে গত ৩ সেপ্টেম্বর মিরপুরের কালসির বাসা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। স্বামী ও সন্তান নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন মর্জিনা। বাসা থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

সুত্র.মানব জমিন