রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫১জন ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালায় নাইজেরিয়ান মাফিয়াচক্র

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:২৫:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১
  • ৫৯ Time View

বনলতা ডেস্ক.

 ৫১ ব্যক্তির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার টাকা লেনদেন করে আসছে নাইজেরিয়ান চক্র। চক্রটির হোতা সাইফুর রহমান মিঠু। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাকে এবং তার দুই সহযোগীকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরা নাইজেরিয়ানদের নিয়ে চক্র গড়ে তুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

মিঠুর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১৬৪১৫১০৪৬১২৮৬ নম্বর অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার বেশি লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ ৫১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের এটিএম কার্ড এবং ১৮টি চেক বইয়ের মাধ্যমে পাওয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে সিআইডি চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসাইন।

তিনি জানান, মিঠুর দুই সহযোগী খালেদ হাসান ও তার স্ত্রী জাহেদা খানমকে গত ৬ সেপ্টেম্বর মিরপুরের শাহআলী থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বাসা থেকে ৫১টি ব্যাংকের এটিএম কার্ড এবং ১৮টি চেক বই জব্দ করা হয়। এসবের বিপরীতে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন ব্যবস্থাপনা করতেন খালেদ এবং জাহেদা। পার্সেল পাওয়ার নামে ভুক্তভোগীদের যেসব টাকা ওইসব অ্যাকাউন্টে জমা হতো, তা উত্তোলন করে মিঠুর হাতে দিতেন ওই দম্পতি। তবে মিঠু অন্য মামলায় দুই মাস আগেই গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে ছিলেন।

সূত্র জানায়, গত বছরের জানুয়ারিতে হোয়াটস অ্যাপের একটি নম্বর থেকে জলিল হাওলাদার নামে গার্মেন্টের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন মিঠু। কয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথাবার্তায় দুজনের সখ্য গড়ে ওঠে। মিঠু নিজেকে ফরিদপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। থাকেন আফগানিস্তানে। গত বছরের ৫ জুন মিঠু হোয়াটস অ্যাপে জলিলকে জানান, ফাস্ট গো কুরিয়ার অ্যান্ড কার্গো সার্ভিসের মাধ্যমে উপহারের একটি পার্সেল পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই পার্সেল ছাড়াতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১৬৪১৫১০৪৬১২৮৬ নম্বর অ্যাকাউন্টে ৭৫ হাজার টাকা জমা দিতে বলেন। ৮ জুন এক নারী নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কাস্টমস ফি বাবদ ৭৫ হাজার টাকা জলিলের কাছ থেকে আদায় করেন। ৯ জুন জলিল ওই টাকা ব্যাংকে জমা করেন। আবারও টাকা চাইলে পরদিন আরও ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জমা করেন। পার্সেলে অবৈধ ইউএস ডলার থাকার ভয় দেখিয়ে আরও ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দিতে বলেন কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া অজ্ঞাত নারী। এ টাকা দিতে অপারগতা দেখালে জলিলের নামে মানি লন্ডারিং আইনে মামলার হুমকি দেওয়া হয়।

প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে গত বছরের ১৮ জুন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন জলিল হাওলাদার। এরপর তিনি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারকে অবহিত করেন।

জলিল হাওলাদার জানিয়েছেন, চক্রটি ব্যাংক হিসাবে ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রতারণা করে তার ২ লাখ ৭১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনস) এস এম আশরাফুল আলম এ প্রতিবেদককে জানান, চক্রের হোতা মিঠুর বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার মধুখালীতে। তিনিসহ অন্যান্য সব চক্রের সদস্য বিভিন্ন ব্যক্তির নামে অসংখ্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করা এসব টাকা মিঠুকে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে খালেদা-জাহেদা দম্পতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাইজেরিয়ানদের নিয়ে গড়া এ চক্র বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ১৬টি অ্যাকাউন্ট খুলেছে। ব্র্যাক ব্যাংকে খুলেছে ছয়টি অ্যাকাউন্ট। ব্যাংক এশিয়ায়, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকে খুলেছে পাঁচটি করে অ্যাকাউন্ট। সাউথ-ইস্ট ব্যাংকে খুলেছে চারটি অ্যাকাউন্ট। ইস্টার্ন ব্যাংক ও ইউসিবি ব্যাংকে খুলেছে দুটি করে অ্যাকাউন্ট। ওয়ান ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে খুলেছে একটি করে অ্যাকাউন্ট। এ ছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংকের পাঁচটি চেক বই, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের তিনটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের দুটি, ব্র্যাক ব্যাংকের চারটি, ব্যাংক এশিয়ার একটি, পূবালী ব্যাংকের একটি, সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের একটি এবং সোনালী ব্যাংকের একটি চেক বই পাওয়া গেছে।

এর আগে সিআইডি পাঁচ বছর আগে মারা যাওয়া আতাউর রহমান (৫০) নামে এক ব্যবসায়ীর কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার তথ্য পান। তার মৃত্যুর দুই বছর পর তার নামের ওই অ্যাকাউন্টে এক বছরেই লেনদেন হয় ৬৫ লাখ টাকার বেশি। এমন অসংখ্য ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নাইজেরিয়ান প্রতারকরা। গত বছরের ৫ আগস্ট প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুই বাংলাদেশিসহ চার নাইজেরিয়ানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ৭ আগস্ট রাজধানীর কাফরুল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়। সে সময় টাকা জমা দেওয়ার কয়েকটি ব্যাংক স্লিপ পাওয়া যায়। এ মামলার তদন্ত সিআইডিতে পাঠানো হয়। এর আগে একই বছরের ২০ জুলাই রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে এক বাংলাদেশি নারীসহ ১২ নাইজেরিয়ানকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পার্সেল পাঠানোর নামে আত্মসাতের লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তিনটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়।

সিআইডি সূত্র জানায়, এসবের মধ্যে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর হলো- ১৬৪১৫১০৪৪৮৮৭৩। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি আতাউর রহমানের। সেখানে ইন্ট্রোডিউস অ্যাকাউন্ট দেওয়া হয়েছে তার স্ত্রী মিনাক্ষী সুলতানার। আর আতাউরের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে ৬৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৬ টাকা। এসব টাকা জমা পড়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর-১০ নম্বর শাখায়। ব্যাংকের ওই শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাকা উত্তোলনের সময় কোনো চেক ব্যবহার করা হয়নি। সব টাকা তোলা হয়েছে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে।

Tag :

৫১জন ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালায় নাইজেরিয়ান মাফিয়াচক্র

Update Time : ১২:২৫:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১

বনলতা ডেস্ক.

 ৫১ ব্যক্তির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার টাকা লেনদেন করে আসছে নাইজেরিয়ান চক্র। চক্রটির হোতা সাইফুর রহমান মিঠু। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাকে এবং তার দুই সহযোগীকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরা নাইজেরিয়ানদের নিয়ে চক্র গড়ে তুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

মিঠুর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১৬৪১৫১০৪৬১২৮৬ নম্বর অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার বেশি লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ ৫১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের এটিএম কার্ড এবং ১৮টি চেক বইয়ের মাধ্যমে পাওয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে সিআইডি চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসাইন।

তিনি জানান, মিঠুর দুই সহযোগী খালেদ হাসান ও তার স্ত্রী জাহেদা খানমকে গত ৬ সেপ্টেম্বর মিরপুরের শাহআলী থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বাসা থেকে ৫১টি ব্যাংকের এটিএম কার্ড এবং ১৮টি চেক বই জব্দ করা হয়। এসবের বিপরীতে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন ব্যবস্থাপনা করতেন খালেদ এবং জাহেদা। পার্সেল পাওয়ার নামে ভুক্তভোগীদের যেসব টাকা ওইসব অ্যাকাউন্টে জমা হতো, তা উত্তোলন করে মিঠুর হাতে দিতেন ওই দম্পতি। তবে মিঠু অন্য মামলায় দুই মাস আগেই গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে ছিলেন।

সূত্র জানায়, গত বছরের জানুয়ারিতে হোয়াটস অ্যাপের একটি নম্বর থেকে জলিল হাওলাদার নামে গার্মেন্টের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন মিঠু। কয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথাবার্তায় দুজনের সখ্য গড়ে ওঠে। মিঠু নিজেকে ফরিদপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। থাকেন আফগানিস্তানে। গত বছরের ৫ জুন মিঠু হোয়াটস অ্যাপে জলিলকে জানান, ফাস্ট গো কুরিয়ার অ্যান্ড কার্গো সার্ভিসের মাধ্যমে উপহারের একটি পার্সেল পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই পার্সেল ছাড়াতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১৬৪১৫১০৪৬১২৮৬ নম্বর অ্যাকাউন্টে ৭৫ হাজার টাকা জমা দিতে বলেন। ৮ জুন এক নারী নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কাস্টমস ফি বাবদ ৭৫ হাজার টাকা জলিলের কাছ থেকে আদায় করেন। ৯ জুন জলিল ওই টাকা ব্যাংকে জমা করেন। আবারও টাকা চাইলে পরদিন আরও ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জমা করেন। পার্সেলে অবৈধ ইউএস ডলার থাকার ভয় দেখিয়ে আরও ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দিতে বলেন কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া অজ্ঞাত নারী। এ টাকা দিতে অপারগতা দেখালে জলিলের নামে মানি লন্ডারিং আইনে মামলার হুমকি দেওয়া হয়।

প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে গত বছরের ১৮ জুন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন জলিল হাওলাদার। এরপর তিনি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারকে অবহিত করেন।

জলিল হাওলাদার জানিয়েছেন, চক্রটি ব্যাংক হিসাবে ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রতারণা করে তার ২ লাখ ৭১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনস) এস এম আশরাফুল আলম এ প্রতিবেদককে জানান, চক্রের হোতা মিঠুর বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার মধুখালীতে। তিনিসহ অন্যান্য সব চক্রের সদস্য বিভিন্ন ব্যক্তির নামে অসংখ্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করা এসব টাকা মিঠুকে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে খালেদা-জাহেদা দম্পতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাইজেরিয়ানদের নিয়ে গড়া এ চক্র বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ১৬টি অ্যাকাউন্ট খুলেছে। ব্র্যাক ব্যাংকে খুলেছে ছয়টি অ্যাকাউন্ট। ব্যাংক এশিয়ায়, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকে খুলেছে পাঁচটি করে অ্যাকাউন্ট। সাউথ-ইস্ট ব্যাংকে খুলেছে চারটি অ্যাকাউন্ট। ইস্টার্ন ব্যাংক ও ইউসিবি ব্যাংকে খুলেছে দুটি করে অ্যাকাউন্ট। ওয়ান ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে খুলেছে একটি করে অ্যাকাউন্ট। এ ছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংকের পাঁচটি চেক বই, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের তিনটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের দুটি, ব্র্যাক ব্যাংকের চারটি, ব্যাংক এশিয়ার একটি, পূবালী ব্যাংকের একটি, সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের একটি এবং সোনালী ব্যাংকের একটি চেক বই পাওয়া গেছে।

এর আগে সিআইডি পাঁচ বছর আগে মারা যাওয়া আতাউর রহমান (৫০) নামে এক ব্যবসায়ীর কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার তথ্য পান। তার মৃত্যুর দুই বছর পর তার নামের ওই অ্যাকাউন্টে এক বছরেই লেনদেন হয় ৬৫ লাখ টাকার বেশি। এমন অসংখ্য ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নাইজেরিয়ান প্রতারকরা। গত বছরের ৫ আগস্ট প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুই বাংলাদেশিসহ চার নাইজেরিয়ানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ৭ আগস্ট রাজধানীর কাফরুল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়। সে সময় টাকা জমা দেওয়ার কয়েকটি ব্যাংক স্লিপ পাওয়া যায়। এ মামলার তদন্ত সিআইডিতে পাঠানো হয়। এর আগে একই বছরের ২০ জুলাই রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে এক বাংলাদেশি নারীসহ ১২ নাইজেরিয়ানকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পার্সেল পাঠানোর নামে আত্মসাতের লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তিনটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়।

সিআইডি সূত্র জানায়, এসবের মধ্যে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর হলো- ১৬৪১৫১০৪৪৮৮৭৩। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি আতাউর রহমানের। সেখানে ইন্ট্রোডিউস অ্যাকাউন্ট দেওয়া হয়েছে তার স্ত্রী মিনাক্ষী সুলতানার। আর আতাউরের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে ৬৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৬ টাকা। এসব টাকা জমা পড়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর-১০ নম্বর শাখায়। ব্যাংকের ওই শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাকা উত্তোলনের সময় কোনো চেক ব্যবহার করা হয়নি। সব টাকা তোলা হয়েছে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে।