শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আরও মহামারী আসতে পারে, প্রস্তুতি রাখতে হবে: ড. ফেরদৌসী কাদরী

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:২৭:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অক্টোবর ২০২১
  • ৪০ Time View
বনলতা ডেস্ক.

মর্যাদাপূর্ণ র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারজয়ী ফেরদৌসী কাদরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চলমান মহামারী, ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে কথা বলেছেন।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এই জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেন, “বর্তমানে সবাই করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত। তবে অনেক রকম রোগ আসতে পারে। আজ কোভিড-১৯ আছে, কাল অবশ্যই অন্য কিছু আসবে। এজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

কেন এই শঙ্কা- তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এমার্জিং প্যাথোজেন, যেটা নিয়ে আমরা অনেক চিন্তা করি, নিপাহ, ডেঙ্গু … পরিবর্তন সব জায়গায় হচ্ছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়েল রেজিস্ট্যান্সও মারাত্মক জিনিস। একটা জীবাণু যদি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়, তাহলে কোনো ওষুধই কাজ করবে না। তখন চিহ্নিত রোগও মহামারী আকারে চলে যাবে। এমার্জিং এবং রি-এমার্জিং ইনফেকশন নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।”

তবে ড. কাদরী মনে করেন, করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় করতে গিয়ে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে কাজে আসবে।

“শুরুতে ৪-৫টা আরটি-পিসিআর ল্যাব ছিল, এখন এক হাজারের কাছাকাছি হয়েছে। আমরা এখন বায়োসেইফটি-২ তে কাজ করছি। বায়োহ্যাজার্ড নিয়ে সচেতনতা এসেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব, সরকারের দায়িত্ব এই অবকাঠামো এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা যেন থাকে। এটা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা থাকতে হবে।”

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে বাংলাদেশে এক সময় করোনাভাইরাসে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার, মৃত্যু আড়াইশ এবং শনাক্তের হার ৩২ শতাংশের উপরে উঠেছিল।

মাসখানেক ধরে সংক্রমণ নিম্নমুখী। শুক্রবার নতুন করে ৬৪৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এদিন ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা সাত মাসে সর্বনিম্ন। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

আইসিডিডিআরবি,র এই বিজ্ঞানী সংক্রমণের বিচারে দেশে বর্তমান পরিস্থিতি ‘ভালো’ বললেও নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আবার যে সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে, তা নিয়ে সতর্কও থাকতে বললেন।

“গতবারও দেখেছিলাম সংক্রমণ কমেছিল। কিন্তু ডেল্টা আসার পর আবার বেড়ে গিয়েছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে, আরেকটা ওয়েভ আসতে পারে, ভ্যারিয়েন্ট আরেকটু চেঞ্জ হতে পারে। এটা আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করে, ভাইরাসের ক্ষমতা কমে গেছে কি না? কিন্তু আমি এখনও বলব না যে একেবারে কমে গেছে, ভাইরাসের ক্ষমতাটা এনডেমিক হয়ে গেছে। আমি এখনও সন্তুষ্ট হতে পারছি না।”

দেশে করোনাভাইরাসের টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্ট ড. ফেরদৌসী কাদরী। তবে টিকার সঙ্কট পুরোপুরি কাটাতেদেশে টিকা তৈরির উপর জোর দেন তিনি।

“আমরা কোভিড সম্পর্কে জানতাম না, ভ্যাকসিন সম্পর্কে ঠিকমতো বুঝতে পারি নাই। কিন্তু সেখান থেকে আমরা অনেক এগিয়ে এসেছি। এখন আমরা টিকা কিনছি, কোভ্যাক্স থেকে আনছি, পাশাপাশি নিজেরা তৈরি করার চেষ্টাও করছি। দেশে যদি টিকা তৈরি না হয়, আমরা সব সময় টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে থাকব।”

বিশ্বে টিকার ক্ষেত্রে যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তার উপরও আলোকপাত করেন বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানী।

“বেশিরভাগ ধনী দেশ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ টিকা তাদের নিজেদের জন্য রেখে দিচ্ছে। তারা বুস্টার ডোজের জন্য রেখে দিচ্ছে। তারা অনেক টিকা নষ্ট করছে। এমনিতে তো সব সময় বৈষম্য থাকে। কিন্তু টিকা নিয়ে বৈষম্যটা আমরা আরও বেশি দেখতে পাচ্ছি। আমাদের কাছে আর টিকা আসত যদি উন্নত দেশগুলো এসব টিকা শেয়ার করতো।”

Tag :

আরও মহামারী আসতে পারে, প্রস্তুতি রাখতে হবে: ড. ফেরদৌসী কাদরী

Update Time : ০১:২৭:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ অক্টোবর ২০২১
বনলতা ডেস্ক.

মর্যাদাপূর্ণ র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারজয়ী ফেরদৌসী কাদরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চলমান মহামারী, ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে কথা বলেছেন।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এই জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেন, “বর্তমানে সবাই করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত। তবে অনেক রকম রোগ আসতে পারে। আজ কোভিড-১৯ আছে, কাল অবশ্যই অন্য কিছু আসবে। এজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

কেন এই শঙ্কা- তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এমার্জিং প্যাথোজেন, যেটা নিয়ে আমরা অনেক চিন্তা করি, নিপাহ, ডেঙ্গু … পরিবর্তন সব জায়গায় হচ্ছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়েল রেজিস্ট্যান্সও মারাত্মক জিনিস। একটা জীবাণু যদি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়, তাহলে কোনো ওষুধই কাজ করবে না। তখন চিহ্নিত রোগও মহামারী আকারে চলে যাবে। এমার্জিং এবং রি-এমার্জিং ইনফেকশন নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।”

তবে ড. কাদরী মনে করেন, করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় করতে গিয়ে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে কাজে আসবে।

“শুরুতে ৪-৫টা আরটি-পিসিআর ল্যাব ছিল, এখন এক হাজারের কাছাকাছি হয়েছে। আমরা এখন বায়োসেইফটি-২ তে কাজ করছি। বায়োহ্যাজার্ড নিয়ে সচেতনতা এসেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব, সরকারের দায়িত্ব এই অবকাঠামো এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা যেন থাকে। এটা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা থাকতে হবে।”

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে বাংলাদেশে এক সময় করোনাভাইরাসে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার, মৃত্যু আড়াইশ এবং শনাক্তের হার ৩২ শতাংশের উপরে উঠেছিল।

মাসখানেক ধরে সংক্রমণ নিম্নমুখী। শুক্রবার নতুন করে ৬৪৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এদিন ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা সাত মাসে সর্বনিম্ন। নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

আইসিডিডিআরবি,র এই বিজ্ঞানী সংক্রমণের বিচারে দেশে বর্তমান পরিস্থিতি ‘ভালো’ বললেও নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আবার যে সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে, তা নিয়ে সতর্কও থাকতে বললেন।

“গতবারও দেখেছিলাম সংক্রমণ কমেছিল। কিন্তু ডেল্টা আসার পর আবার বেড়ে গিয়েছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে, আরেকটা ওয়েভ আসতে পারে, ভ্যারিয়েন্ট আরেকটু চেঞ্জ হতে পারে। এটা আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করে, ভাইরাসের ক্ষমতা কমে গেছে কি না? কিন্তু আমি এখনও বলব না যে একেবারে কমে গেছে, ভাইরাসের ক্ষমতাটা এনডেমিক হয়ে গেছে। আমি এখনও সন্তুষ্ট হতে পারছি না।”

দেশে করোনাভাইরাসের টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্ট ড. ফেরদৌসী কাদরী। তবে টিকার সঙ্কট পুরোপুরি কাটাতেদেশে টিকা তৈরির উপর জোর দেন তিনি।

“আমরা কোভিড সম্পর্কে জানতাম না, ভ্যাকসিন সম্পর্কে ঠিকমতো বুঝতে পারি নাই। কিন্তু সেখান থেকে আমরা অনেক এগিয়ে এসেছি। এখন আমরা টিকা কিনছি, কোভ্যাক্স থেকে আনছি, পাশাপাশি নিজেরা তৈরি করার চেষ্টাও করছি। দেশে যদি টিকা তৈরি না হয়, আমরা সব সময় টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে থাকব।”

বিশ্বে টিকার ক্ষেত্রে যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তার উপরও আলোকপাত করেন বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানী।

“বেশিরভাগ ধনী দেশ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ টিকা তাদের নিজেদের জন্য রেখে দিচ্ছে। তারা বুস্টার ডোজের জন্য রেখে দিচ্ছে। তারা অনেক টিকা নষ্ট করছে। এমনিতে তো সব সময় বৈষম্য থাকে। কিন্তু টিকা নিয়ে বৈষম্যটা আমরা আরও বেশি দেখতে পাচ্ছি। আমাদের কাছে আর টিকা আসত যদি উন্নত দেশগুলো এসব টিকা শেয়ার করতো।”