দৈনিক বনলতা.
বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ‘কৈলাসে দেবালয়ে’ ফিরলেন ‘দুর্গতিনাশিনী দেবী’, সাঙ্গ হল বাঙালি হিন্দুর সবচেয়ে বড় পার্বণ শারদীয় দুর্গোৎসবের।
ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় ‘আনন্দময়ীর’ নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনে তার সাঙ্গ হল শুক্রবার।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে যান কৈলাসে স্বামীর ঘরে। এক বছর পর নতুন শরতে আবার তিনি আসবেন ‘পিতৃগৃহ’ এই ধরণীতে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে এসেছেন, গেলেন দোলায় (পালকি) চড়ে।
আজ সন্ধা ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে নন্দকুঁজা নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গুরুদাসপুরে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
উপজেলা পুজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি ধীরেন্দ্র নাথ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, “মহিষাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে আজ (শুক্রবার) বিজয়ী হয়েছেন দুর্গা মা। সে কারণেই আজ আমাদের আনন্দের দিন, আমরা উৎসব করি। জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ সবাইকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাই।”
সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাক শ্রী অসীম কুমার পাল দৈনিক বনলতাকে জানান, এ বছর এমনিতেই করোনার কারনে আনন্দ উৎসব কম ছিলো তার উপর আবার ধর্মীয় উম্মদনার কারনে দেশ ব্যাপি চলছে অস্থিতিশীল পরিবেশ যার কারনে আনন্দে ছিলো কিছুটা ভাটা।
“এ বছর গুরুদাসপুরে ৩৪টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, যার যার মত করে এসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জন দেবে।”
নবরাত্রির ষষ্ঠ দিন সোমবার দুর্গ পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল এবার। তবে অষ্টমীর দিন বুধবার সাম্প্রদায়িক উস্কানি আর কয়েকটি জেলায় মণ্ডপে-মন্দিরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় সার্বজনীন এ উৎসবের চেতনায় চোট লেগেছে।
মহা নবমী পেরিয়ে শুক্রবার সকালে বিজয়া দশমীর ‘বিহিত পূজায়’ ষোড়শপ্রচার পূজার পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়।
সবশেষে দর্পণ বিসর্জনের সময় প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে তাতে দেবীকে দেখে তার কাছ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় নেন ভক্তরা। মূলত এর মধ্য দিয়ে দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন সম্পন্ন হয়। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে আবার ভক্তের হৃদয়ে ‘মাকে’ নিয়ে আসাকে বিসর্জন বলে।
শ্বশুরালয়ে ফেরার আগে দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গাকে সিঁদুর, পান আর দুর্বা দিয়ে বরণ কর নেন নারী পূণ্যার্থীরা; এর মধ্য দিয়ে জরা কাটিয়ে পৃথিবী যেন শস্য শ্যামল হয়ে ওঠে, সেই প্রার্থনা করা হয়। তবে মহামারী পরিস্থিতিতে এবারও কোনো সিঁদুর খেলার আয়োজন রাখা হয়নি।
বিকালে উপজেলারে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমা নিয়ে শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের সনাতনি বাদ্যে দেবী বন্দনার গানে গানে বিসর্জনের জন্য নদী ঘাটে আসেন ভক্তরা।
ঘাটে আসার পর ভক্তরা শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়।
গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুল মতিন বলেন, প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি স্পেশাল ফোর্স ও আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।