শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে তেলের মূল্য হ্রাসের নেপথ্যে যে কারণ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:১২:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ নভেম্বর ২০২১
  • ৩৭ Time View

বনলতা ডেস্ক.

কিছুদিন হলো দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম সেঞ্চুরি পার করেছে। অর্থাৎ প্রতিটি রাজ্যে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম লিটারে ১০০ রুপিকে ছাড়িয়ে গেছে। আর সর্ষের তেলের দাম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এখন প্রতি লিটার প্রায় আড়াইশ ছুঁইছুঁই। এমনকি পেঁয়াজও অর্ধশত রান পার করেছে। কেজিতে দাম ৫০ রুপি বা তারও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে দীপাবলির ঠিক আগের দিন মোদী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসলো, পেট্রোলের দাম লিটারে পাঁচ রুপি এবং ডিজেলের দাম লিটারে দশ রুপি কমানো হলো।

দীর্ঘদিন যাবত পেট্রোল-ডিজেলের দাম ক্রমে বাড়িয়ে গেছে মোদী সরকার। এতে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ অন্যান্য বিরোধীরা প্রকাশ্যে দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে। এমনকি বিভিন্ন সময় সড়কে নেমে আন্দোলনও করতে দেখা গেছে তাদের। পার্লামেন্টে ধাপে ধাপে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এতকিছুর পরও কোনো ফল আসেনি।

ক্ষমতাসীন মোদী সরকারের জবাব ছিল, তারা গরীব লোকদের জন্য প্রচুর জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পেট্রোল-ডিজেলের শুল্ক থেকে যে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে জনকল্যাণমূলক কাজের ব্যয় মেটানো হয়। আর তাই আন্তর্জাতিক বাজারে যখন পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেশ কম ছিল, তখনো দেশটিতে এসব জ্বালানির দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া।

গেল কয়েক মাসে সব হিসাব ছাড়িয়ে ১০০ পার করে দিয়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। যেখানে রাজধানী নয়াদিল্লিতে এক লিটার পেট্রোলের দাম ছিল ১০৮ টাকারও বেশি।

তাহলে এখন হঠাৎ কেন দাম কমানো হলো? এর পেছনে কি অন্য কোনো গল্প আছে? হ্যা…! সেটা ভোটের রাজনীতি। উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। ভারতের রাজনীতিতে এই নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। সেখানে বিধানসভায় শুধু ৪০০ আসন আছে তাই নয়, লোকসভায় ৮০টি আসন আছে। হিন্দি-বলয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য যার হাতে থাকে এটিকে। এখানে যারা জয়লাভ করে তারাই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করে।

বিজেপি সূত্র বলছে, সম্প্রতি দলটির শীর্ষ নেতারা উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় দলীয় নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরিস্থিতি জানতে চান। এরপর তারা যে রিপোর্ট দিয়েছেন তা হলো, এমনিতে পরিস্থিতি ভালো, কিন্তু গতবারের চেয়ে আসন দুই-একটা কমতে পারে। গতবার তিন শতাধিক আসনে জয়লাভ করেছিল ক্ষমতাসীন বিজেপি। এবার জেলা পর্যায়ে দুই-একটা করে আসন হ্রাস পাওয়া মানে প্রায় ১৫০-এর মতো আসন কমে যাওয়া। আর তাতেই দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

সমীক্ষা করে দেখা গেছে, উত্তরপ্রদেশের মানুষ দুইটি বিষয়ে ভীষণই ক্ষুব্ধ। এক- পেট্রোল-ডিজেলের দাম মাত্রা ছাড়া জায়গায় পৌঁছেছে। দুই- সর্ষের তেলের দাম ২০০ ছাড়িয়ে লিটারে ২৫০ টাকার কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। সেই সঙ্গে অন্য জিনিসের দাম বাড়া এবং স্থানীয় কিছু সমস্যা আছে। তারপরই পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমিয়ে এই দীপাবলির উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শুধু দাম কমানোই নয়, সেই সঙ্গে লাগাতার বিষয়টি প্রচার শুরুর পরিকল্পনাও নিয়েছে বিজেপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ দলটির ছোট-বড় নেতারা এরই মধ্যে তেলের মূল্য হ্রাস ইস্যুতে টুইট করতে শুরু করেছেন। তাদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাধারণ জনগণের পাশে থাকার বড় একটি উদাহরণ। তার সংবেদনশীলতার পরিচয়। এই প্রচারটাই এবার দেশজুড়ে চালিয়ে যেতে হবে।

বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন যাবত কোনো বিষয় মনে রাখে না। তাই ভোটের সময় তারা দাম কমানোর কথাটাই মনে রাখবে। দাম বাড়ার কথা নয়। এরপর সর্ষের তেলের দাম কমানো হবে। পেঁয়াজের দামে রাশ টানা হবে। আর সেই সব প্রচার তুঙ্গে উঠবে। দরকার হলে রান্নার গ্যাসের দামও সামান্য কমানো হতে পারে। এভাবেই মানুষের মনের ক্ষোভ দূর হবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশের ১৩টি রাজ্যে বেশকিছু বিধানসভা কেন্দ্রে ও তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছে। তার ফলে দেখা গেছে, আসাম ও উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলো ছাড়া বিজেপি কোথাও ভালো ফল করতে পারেনি। তিনটির মধ্যে তারা মাত্র একটি লোকসভা আসনে জিতেছে। কংগ্রেস একটি ও শিবসেনা একটিতে জিতেছে। হিমাচলে তিনটি বিধানসভা আসনেই হেরেছে। কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস একটি করে আসনে জিতেছে। রাজস্থানে বিজেপি একটিও আসনে জিততে পারেনি। দলীয় সূত্র বলছে, এই ফলের কারণ দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ।

Tag :

ভারতে তেলের মূল্য হ্রাসের নেপথ্যে যে কারণ

Update Time : ০৬:১২:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ নভেম্বর ২০২১

বনলতা ডেস্ক.

কিছুদিন হলো দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম সেঞ্চুরি পার করেছে। অর্থাৎ প্রতিটি রাজ্যে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম লিটারে ১০০ রুপিকে ছাড়িয়ে গেছে। আর সর্ষের তেলের দাম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এখন প্রতি লিটার প্রায় আড়াইশ ছুঁইছুঁই। এমনকি পেঁয়াজও অর্ধশত রান পার করেছে। কেজিতে দাম ৫০ রুপি বা তারও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে দীপাবলির ঠিক আগের দিন মোদী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসলো, পেট্রোলের দাম লিটারে পাঁচ রুপি এবং ডিজেলের দাম লিটারে দশ রুপি কমানো হলো।

দীর্ঘদিন যাবত পেট্রোল-ডিজেলের দাম ক্রমে বাড়িয়ে গেছে মোদী সরকার। এতে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ অন্যান্য বিরোধীরা প্রকাশ্যে দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে। এমনকি বিভিন্ন সময় সড়কে নেমে আন্দোলনও করতে দেখা গেছে তাদের। পার্লামেন্টে ধাপে ধাপে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এতকিছুর পরও কোনো ফল আসেনি।

ক্ষমতাসীন মোদী সরকারের জবাব ছিল, তারা গরীব লোকদের জন্য প্রচুর জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পেট্রোল-ডিজেলের শুল্ক থেকে যে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে জনকল্যাণমূলক কাজের ব্যয় মেটানো হয়। আর তাই আন্তর্জাতিক বাজারে যখন পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেশ কম ছিল, তখনো দেশটিতে এসব জ্বালানির দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া।

গেল কয়েক মাসে সব হিসাব ছাড়িয়ে ১০০ পার করে দিয়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম। যেখানে রাজধানী নয়াদিল্লিতে এক লিটার পেট্রোলের দাম ছিল ১০৮ টাকারও বেশি।

তাহলে এখন হঠাৎ কেন দাম কমানো হলো? এর পেছনে কি অন্য কোনো গল্প আছে? হ্যা…! সেটা ভোটের রাজনীতি। উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। ভারতের রাজনীতিতে এই নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। সেখানে বিধানসভায় শুধু ৪০০ আসন আছে তাই নয়, লোকসভায় ৮০টি আসন আছে। হিন্দি-বলয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য যার হাতে থাকে এটিকে। এখানে যারা জয়লাভ করে তারাই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করে।

বিজেপি সূত্র বলছে, সম্প্রতি দলটির শীর্ষ নেতারা উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় দলীয় নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরিস্থিতি জানতে চান। এরপর তারা যে রিপোর্ট দিয়েছেন তা হলো, এমনিতে পরিস্থিতি ভালো, কিন্তু গতবারের চেয়ে আসন দুই-একটা কমতে পারে। গতবার তিন শতাধিক আসনে জয়লাভ করেছিল ক্ষমতাসীন বিজেপি। এবার জেলা পর্যায়ে দুই-একটা করে আসন হ্রাস পাওয়া মানে প্রায় ১৫০-এর মতো আসন কমে যাওয়া। আর তাতেই দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

সমীক্ষা করে দেখা গেছে, উত্তরপ্রদেশের মানুষ দুইটি বিষয়ে ভীষণই ক্ষুব্ধ। এক- পেট্রোল-ডিজেলের দাম মাত্রা ছাড়া জায়গায় পৌঁছেছে। দুই- সর্ষের তেলের দাম ২০০ ছাড়িয়ে লিটারে ২৫০ টাকার কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। সেই সঙ্গে অন্য জিনিসের দাম বাড়া এবং স্থানীয় কিছু সমস্যা আছে। তারপরই পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমিয়ে এই দীপাবলির উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শুধু দাম কমানোই নয়, সেই সঙ্গে লাগাতার বিষয়টি প্রচার শুরুর পরিকল্পনাও নিয়েছে বিজেপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ দলটির ছোট-বড় নেতারা এরই মধ্যে তেলের মূল্য হ্রাস ইস্যুতে টুইট করতে শুরু করেছেন। তাদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাধারণ জনগণের পাশে থাকার বড় একটি উদাহরণ। তার সংবেদনশীলতার পরিচয়। এই প্রচারটাই এবার দেশজুড়ে চালিয়ে যেতে হবে।

বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন যাবত কোনো বিষয় মনে রাখে না। তাই ভোটের সময় তারা দাম কমানোর কথাটাই মনে রাখবে। দাম বাড়ার কথা নয়। এরপর সর্ষের তেলের দাম কমানো হবে। পেঁয়াজের দামে রাশ টানা হবে। আর সেই সব প্রচার তুঙ্গে উঠবে। দরকার হলে রান্নার গ্যাসের দামও সামান্য কমানো হতে পারে। এভাবেই মানুষের মনের ক্ষোভ দূর হবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশের ১৩টি রাজ্যে বেশকিছু বিধানসভা কেন্দ্রে ও তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছে। তার ফলে দেখা গেছে, আসাম ও উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলো ছাড়া বিজেপি কোথাও ভালো ফল করতে পারেনি। তিনটির মধ্যে তারা মাত্র একটি লোকসভা আসনে জিতেছে। কংগ্রেস একটি ও শিবসেনা একটিতে জিতেছে। হিমাচলে তিনটি বিধানসভা আসনেই হেরেছে। কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস একটি করে আসনে জিতেছে। রাজস্থানে বিজেপি একটিও আসনে জিততে পারেনি। দলীয় সূত্র বলছে, এই ফলের কারণ দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ।