শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হাঁসের খামারে ভাগ্য বদলেছে চলনবিলের নিম্নবৃত্ত হাজারো মানুষের

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ নভেম্বর ২০২১
  • ৫৩ Time View

মো. মাজেম আলী মলিন, 
চলনবিলে বাণিজ্যিকভাবে শত শত হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারের আয়ে চলনবিল অধ্যুষিত ৭ টি উপজেলার বহুমানুষের ভাগ্য বদলেছে। হাঁসপালনে খামারিদের সুদিন ফিরায় এই পেশায় নামছেন আরো অনেকেই।
নাটোর প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে- শুধু চলনবিলেই তালিকাভুক্ত খামারের তালিকায় রয়েছে ৪৫১টি হাঁসের খামার। প্রতিটি খামারে হাঁস রয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার। এছাড়া তালিকার বাইরেও পারিবারিক পর্যায়ে শত শত খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারীদের পাশাপাশি খামারকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বেকারত্ব ঘুঁচিয়েছেন।
পরিসংখ্যান বলছে- খামার পর্যায়ে রাজহাঁস পালন হচ্ছে ৩৮ হাজার ৫৫০টি। এছাড়া পাতিহাঁস ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯২টি। বর্ষার শুরুতে খাদ্য কম লাগায় ১ দিনের বাচ্চা থেকেই এসব হাঁস পালন শুরু করেন খামারিরা। ৬ মাস পর থেকে এসব হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। এতে খামারিরা খরচ বাদে প্রতি মাসে ১০ হাজারের বেশি অর্থাৎ বছরে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় করে থাকেন।
স্থানীয়রা বলছেন- সরকারি তালিকাভুক্তি ছাড়াও কয়েক’শ হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে ১০ লাখেরও বেশি হাঁস রয়েছে। হাঁসপালনে এই অঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষের বেকারত্ব ঘুঁচেছে। বেড়েছে আয়। পূরণ হচ্ছে স্থানীয়দের আমিষের চাহিদাও।
নাটোর প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানালেন- চলনবিলের সিংড়ায় ১৫০টি, গুরুদাসপুরে ৭০টি, নলডাঙ্গায় ৫৬টি, বড়াইগ্রামে ৬০টি, বাগাতিপাড়ায় ৬০টি ও লালপুরে রয়েছে ৫৫টি হাঁসের খামার। চলনবিলের আবহাওয়া অনুযায়ী তিন জাতের হাঁস বেশি পালন করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পালন হয় খাটি ক্যামবেল জাতের হাঁস। এছাড়া ইন্ডিয়ান রানার ও চায়না জাতের হাঁসও পালন করছেন খামারিরা।
তিনি বলেন, হাঁসপালনে খামারিদের সরকারিভাবে বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে হাঁসের খামারের সংখ্যা। বাণিজ্যিক খামার পর্যায় ছাড়াও ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার হাঁস পালনের সাথে যুক্ত রয়েছে। এসব খামারে রয়েছে ৭ থেকে ৮ লাখ। ব্যক্তিগত পর্যায়ের খামার থেকে প্রতিটি পরিবার ভালো আয় করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে- চলনবিলের সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও নলডাঙ্গা বিলের বিভিন্ন স্থানে খামার রয়েছে। কেউ কেউ জালের ঘের তৈরি করে হাঁস পালন করছেন। ভোর বেলাতেই খামারি এবং এর সাথে যুক্ত মানুষ হাঁস নিয়ে অথৈ বিলে যান। সন্ধায় আবার হাঁসনিয়ে খামারে ফিরে আসেন।
নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া জানালেন, তিনি ২০-২৫টি হাঁস পালন করেন। সকালে হাঁসগুলো পাশের পুকুরে চলে যায়। সারাদিন পুকুরের শামুক-ঝিনুক খায়। তিনি নিজেও কিছু খাবার দেন। পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ ছাড়াও হাঁস বিক্রি করে আয় করছেন তিনি।
সিংড়া উপজেলার নিংগইন এলাকার খামারি সোহাগ জানান, তিনি সারা বছরই হাঁস পালন করেন। এখন তার খামারে ক্যাম্বেল ও জিংডিং জাতের ৫৮২টি হাঁস রয়েছে। ৪-৫ মাস বয়সী হাঁস কেনেন সোহাগ। সাড়ে ৫ মাস বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে। এখন তার খামারের ৪৮০টি হাঁস ডিম দিচ্ছে। বছরে খরচ বাদে ৩-৪ লাখ টাকা লাভ থাকে তার।
আরেক খামারি আফজাল ও আব্দুর রহিম জানান, এক দিনের বাচ্চা কিনে ডিম উপযোগী করতে ৫শ হাঁসে খরচ হয় প্রায় এক লাখ টাকা। তবে ডিম দেওয়া শুরু করলে খরচ নিয়ে ভাবনা থাকেনা।

Tag :

হাঁসের খামারে ভাগ্য বদলেছে চলনবিলের নিম্নবৃত্ত হাজারো মানুষের

Update Time : ০৯:০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ নভেম্বর ২০২১

মো. মাজেম আলী মলিন, 
চলনবিলে বাণিজ্যিকভাবে শত শত হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারের আয়ে চলনবিল অধ্যুষিত ৭ টি উপজেলার বহুমানুষের ভাগ্য বদলেছে। হাঁসপালনে খামারিদের সুদিন ফিরায় এই পেশায় নামছেন আরো অনেকেই।
নাটোর প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে- শুধু চলনবিলেই তালিকাভুক্ত খামারের তালিকায় রয়েছে ৪৫১টি হাঁসের খামার। প্রতিটি খামারে হাঁস রয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার। এছাড়া তালিকার বাইরেও পারিবারিক পর্যায়ে শত শত খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারীদের পাশাপাশি খামারকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বেকারত্ব ঘুঁচিয়েছেন।
পরিসংখ্যান বলছে- খামার পর্যায়ে রাজহাঁস পালন হচ্ছে ৩৮ হাজার ৫৫০টি। এছাড়া পাতিহাঁস ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯২টি। বর্ষার শুরুতে খাদ্য কম লাগায় ১ দিনের বাচ্চা থেকেই এসব হাঁস পালন শুরু করেন খামারিরা। ৬ মাস পর থেকে এসব হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। এতে খামারিরা খরচ বাদে প্রতি মাসে ১০ হাজারের বেশি অর্থাৎ বছরে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় করে থাকেন।
স্থানীয়রা বলছেন- সরকারি তালিকাভুক্তি ছাড়াও কয়েক’শ হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে ১০ লাখেরও বেশি হাঁস রয়েছে। হাঁসপালনে এই অঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষের বেকারত্ব ঘুঁচেছে। বেড়েছে আয়। পূরণ হচ্ছে স্থানীয়দের আমিষের চাহিদাও।
নাটোর প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানালেন- চলনবিলের সিংড়ায় ১৫০টি, গুরুদাসপুরে ৭০টি, নলডাঙ্গায় ৫৬টি, বড়াইগ্রামে ৬০টি, বাগাতিপাড়ায় ৬০টি ও লালপুরে রয়েছে ৫৫টি হাঁসের খামার। চলনবিলের আবহাওয়া অনুযায়ী তিন জাতের হাঁস বেশি পালন করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পালন হয় খাটি ক্যামবেল জাতের হাঁস। এছাড়া ইন্ডিয়ান রানার ও চায়না জাতের হাঁসও পালন করছেন খামারিরা।
তিনি বলেন, হাঁসপালনে খামারিদের সরকারিভাবে বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে হাঁসের খামারের সংখ্যা। বাণিজ্যিক খামার পর্যায় ছাড়াও ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার হাঁস পালনের সাথে যুক্ত রয়েছে। এসব খামারে রয়েছে ৭ থেকে ৮ লাখ। ব্যক্তিগত পর্যায়ের খামার থেকে প্রতিটি পরিবার ভালো আয় করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে- চলনবিলের সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও নলডাঙ্গা বিলের বিভিন্ন স্থানে খামার রয়েছে। কেউ কেউ জালের ঘের তৈরি করে হাঁস পালন করছেন। ভোর বেলাতেই খামারি এবং এর সাথে যুক্ত মানুষ হাঁস নিয়ে অথৈ বিলে যান। সন্ধায় আবার হাঁসনিয়ে খামারে ফিরে আসেন।
নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া জানালেন, তিনি ২০-২৫টি হাঁস পালন করেন। সকালে হাঁসগুলো পাশের পুকুরে চলে যায়। সারাদিন পুকুরের শামুক-ঝিনুক খায়। তিনি নিজেও কিছু খাবার দেন। পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ ছাড়াও হাঁস বিক্রি করে আয় করছেন তিনি।
সিংড়া উপজেলার নিংগইন এলাকার খামারি সোহাগ জানান, তিনি সারা বছরই হাঁস পালন করেন। এখন তার খামারে ক্যাম্বেল ও জিংডিং জাতের ৫৮২টি হাঁস রয়েছে। ৪-৫ মাস বয়সী হাঁস কেনেন সোহাগ। সাড়ে ৫ মাস বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে। এখন তার খামারের ৪৮০টি হাঁস ডিম দিচ্ছে। বছরে খরচ বাদে ৩-৪ লাখ টাকা লাভ থাকে তার।
আরেক খামারি আফজাল ও আব্দুর রহিম জানান, এক দিনের বাচ্চা কিনে ডিম উপযোগী করতে ৫শ হাঁসে খরচ হয় প্রায় এক লাখ টাকা। তবে ডিম দেওয়া শুরু করলে খরচ নিয়ে ভাবনা থাকেনা।