শরিফুল হাসান
বেসরকারি খাতের ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন হবে ৩৯ হাজার টাকা। আর ব্যাংকের অফিস সহায়কদের (নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মেসেঞ্জার) সর্বনিম্ন বেতন হবে ২৪ হাজার টাকা। তবে শুনলে অবাক হতে পারেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাংবাদিক ব্যাংকের সর্বনিম্ন বেতন ৩৯ হাজার টাকা তো দূরের কথা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য যে সর্বনিম্ন বেতন যে ২৪ হাজার ঠিক করা হলো, তার চেয়েও কম বেতন পান।
এবার বলেন একটা দেশের মেধাবীরা কেন সাংবাদিকতায় আসবে? কেন সাংবাদিকতায় থাকবে? যে কেউ চাইলে এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারেন। আফসোস সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যূনতম বেতন ঠিক করা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি ব্যাংক খাতের সর্বনিম্ন বেতন ঠিক করে নির্দেশনা জারি করেছে। এমনকি গার্মেন্টসেও সর্বনিম্ন বেতন ঠিক করা আছে। কিন্তু বাংলাদেশের সব ধরনের গণমাধ্যমের জন্য বেতন কাঠামো ঠিক করা নেই।
পত্রিকার জন্য যে ওয়েজ বোর্ড ঠিক করা আছে প্রথম সারির কয়েকটা গণমাধ্যম বাদে বেশিরভাগ সেটা মানে না। ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের অবস্থা আরেও খারাপ। তারা বেতন পান না বললেই চলে। উল্টো কোনো কোনো সময় অফিসকেই তাদের টাকা দিতে হয়।
আগেই বলেছি, পত্রিকার সাংবাদিকদের বেতন ঠিক করে সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড। এখন দেশে অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড আছে। ২০১৩ সালে এটি করা হয়েছিল। এরপর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কয়েকশ গুণ বাড়লেও গণমাধ্যম এখনো সেখানেই আটকে আছে। এক দশক আগে একজন সাংবাদিক যে বেতন পেতেন, তার চেয়ে খুব একটা বাড়েনি।
ভীষণ দুঃখের বিষয় হলো, ২০১৯ সালে নবম মজুরি বোর্ড কমিটি সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধিসহ একটি সুপারিশ জমা দেয়। কিন্তু এই দেশের প্রভাবশালী সব সম্পাদকরা সেটি আটকে রেখেছেন। তারা কোনভাবেই এটি বাস্তবায়ন করতে দিতে রাজি নয়। তারা মনে করেন সাংবাদিকদের এতো বেশি বেতন হওয়া উচিত না। আচ্ছা মেধাবী একটা ছেলেমেয়ে তাহলে কেন সাংবাদিকতায় আসবে? কেন সাংবাদিতায় থাকবে?
আরেকটা বিষয়। পত্রিকার সাংবাদিকদের জন্য তাও একটা বেতন কাঠামো আছে, যদিও বেশিরভাগ তা মানেন না। অন্যদিকে টেলিভিশনের সাংবাদিকদের জন্য কোনো বেতন কাঠামো নেই। সেখানে যে যা ইচ্ছে বেতন দেন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই দেশের ব্যাংকের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর যে বেতন ঠিক করা হয়েছে দেশের অন্তত ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সাংবাদিক সেই বেতনও পান না। তাহলে একটা দেশের সাংবাদিকতা এগোবে কী করে?
একই কথা প্রযোজ্য প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। সরকারি দপ্তরের পিয়ন দারোয়ানের চেয়ে তাদের বেতন কম। অথচ সাংবাদিকতা কিংবা শিক্ষকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় বেতন হওয়া উচিত এতো বেশি যাতে সবচেয়ে বেশি মেধাবীরা এসব পেশায় আসে এবং থাকে। আফসোস আমাদের গণমাধ্যম মালিক ও সম্পাদকরা সেগুলো বোঝেন না কিংবা বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকেন।
আফসোসের বিষয় হলো এই দেশের সাংবাদিককেদর বেতন ভাতা নিয়ে কোনদিন কোনো খবর হয় না। এ নিয়ে আলোচনা করাও মানা। অথচ এসব নিয়ে কথা বলা জরুরি গণমাধ্যমের স্বার্থেই। আর একটা দেশের গণমাধ্যম ঠিক হলে বহু কিছু ঠিক হতে বাধ্য।
(ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কলামিস্ট শরিফুল হাসানের ফেসবুক পোস্ট)