শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভাষাসৈনিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন, থাকছে ছয় স্তরের নিরাপত্তা বলয়

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৫২:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৬২ Time View

বিশেষ প্রতিবেদক.

বাঙালী জাতির সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে বায়ান্ন সালের মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ’৪৭-এর দেশভাগের আগ থেকেই এ অঞ্চলের রাষ্ট্রীয় ভাষা কী হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল শাসকশ্রেণী ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে। পাকিস্তানীদের চক্রান্ত অনুধাবন করতে পেরেই পূর্ব বাংলার সংস্কৃতিকে ধরে রাখার প্রয়াসে গঠিত হয় তমদ্দুন মজলিস। সংগঠনটি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে চূড়ান্ত ফল অর্জিত হয়।

এ আন্দোলন পরবর্তী সকল সামাজিক- সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রেরণা যোগায়। এই সংগ্রামে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন সালাম, বরকত, রফিকসহ অনেকে। পঙ্গুত্ব বরণ করেন বিপুল সংখ্যক বাংলা ভাষী মানুষ।

বাঙালীর এই অকুতোভয় ভাষা সৈনিকদের শ্রদ্ধা জানাতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। দেয়াল লিখন, আলপনা ও দেয়াল চিত্রে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ফুটে উঠেছে ১৯৫২ সালের সেই কঠিন দিনগুলোর আবহ। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই (রবিবার দিবাগত রাত ১২টায়) শুরু হবে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর। রবিবার দিবাগত রাতের প্রথম প্রহরেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার পথ নির্ধারণ করে দিয়েছে একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। করোনাকালে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্বাস্থ্যবিধিও ঠিক করা হয়েছে। সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ দুজন একসঙ্গে শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। এসময় সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। লোকসমাগম সীমিত রেখে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ মিনারে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে দেখা গেছে, পুরো শহীদ মিনারকে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। র‌্যাব ও ডিএমপির পক্ষ থেকে বসানো হচ্ছে ‘ওয়াচ টাওয়ার’। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। র‌্যাব ডগ স্কোয়াড দিয়ে পুরো এলাকা তল্লাশি করেছে। সমগ্র এলাকাকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনে জনসাধারণকে সতর্ক করতে লাগানো হয়েছে ডিজিটাল সাইনবোর্ড। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ডানপাশে র‌্যাব, ডিএমপি ও ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে।

অপরদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদীসহ সম্মুখভাগে শেষ হয়েছে আলপনা আঁকার কাজ। এবারই প্রথম শহীদ মিনারের বামপাশের দেয়ালে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন চিত্রপট নিয়ে রংতুলি দিয়ে আঁকা হয়েছে অসাধারণ দেয়ালচিত্র। মূল বেদীর ঠিক বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের দেয়ালে লাল রং-এ লেখা হয়েছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। শহীদ মিনারের চতুর্দিকের দেয়ালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, কাজী নজরুল ইসলামসহ বিখ্যাত মনীষীদের ভাষা নিয়ে বিভিন্ন উক্তি লেখা হয়েছে।

ঘোষণা মঞ্চ থেকে প্রতিনিয়ত শব্দযন্ত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শহীদ মিনারকে ঝকঝকে রাখতে অনবরত কাজ করে চলছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান এবং ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম শহীদ মিনার এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ঢাবি উপাচার্য মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখার জন্য ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সমন্বয় কমিটি গৃহীত সব কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নিরাপত্তা পরিদর্শন শেষে শনিবার ডিএমপি কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে বলেন, মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এবার একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে কোন হুমকি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তারপরও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় তিন শিফটে ছয় স্তরের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে পুলিশ।

শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য নিরাপত্তার কোন ঘাটতি থাকবে না উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারির দিন ইউনিফর্মধারী সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডিবি, র‌্যাব ও সোয়াত টিম দায়িত্ব পালন করবে। সবার সমন্বয়ে ছয় স্তরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এদিকে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার পথ নির্ধারণ করে দিয়েছে একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সংবাদ সম্মেলনে এ পথনির্দেশনা তুলে ধরেন উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জনসাধারণকে পলাশী মোড় দিয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং জগন্নাথ হলের পাশের রাস্তা হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেতে হবে। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে চানখারপুল হয়ে বের হওয়া যাবে।

উপাচার্য বলেন, যেহেতু কোভিড পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি, তাই গতবারের মতো এবারও কিছু নিয়মনীতি মেনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করব। এর মানে এই নয় যে, বেশি মানুষ ফুল দিতে পারবে না। সবার জন্য এটা অবারিত থাকবে, তবে নিয়মানুযায়ী স্লটে স্লটে ভাগ করে। তিনি জানান, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পলাশী মোড় থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়কে তিন ফুট পর পর চিহ্ন দেয়া থাকবে। এই চিহ্ন অনুসরণ করে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে হবে।

এক্ষেত্রে যথাযথভাবে রুটম্যাপ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে আখতারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবকরা হ্যান্ড মাইক দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে প্রচার চালাবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিও তারা মনিটর করবেন। শহীদ মিনারে যাওয়া সকলকে কোভিড টিকার সনদ সঙ্গে রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। উপাচার্য বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যানডমলি যে কারও কোভিড সনদ চেক করতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি, যারাই শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসবেন, সবারই টিকা নেয়া হয়েছে। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে অতিথিদের জন্য অভ্যর্থনার ব্যবস্থা থাকলেও এ বছর পরিস্থিতি বিবেচনায় তা থাকছে না বলে জানান তিনি।

রাষ্ট্রীয় আচার অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২ উদযাপনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেছে একুশে উদযাপন কমিটি।

Tag :

স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভাষাসৈনিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন, থাকছে ছয় স্তরের নিরাপত্তা বলয়

Update Time : ০৭:৫২:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

বিশেষ প্রতিবেদক.

বাঙালী জাতির সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে বায়ান্ন সালের মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ’৪৭-এর দেশভাগের আগ থেকেই এ অঞ্চলের রাষ্ট্রীয় ভাষা কী হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল শাসকশ্রেণী ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে। পাকিস্তানীদের চক্রান্ত অনুধাবন করতে পেরেই পূর্ব বাংলার সংস্কৃতিকে ধরে রাখার প্রয়াসে গঠিত হয় তমদ্দুন মজলিস। সংগঠনটি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে চূড়ান্ত ফল অর্জিত হয়।

এ আন্দোলন পরবর্তী সকল সামাজিক- সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রেরণা যোগায়। এই সংগ্রামে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন সালাম, বরকত, রফিকসহ অনেকে। পঙ্গুত্ব বরণ করেন বিপুল সংখ্যক বাংলা ভাষী মানুষ।

বাঙালীর এই অকুতোভয় ভাষা সৈনিকদের শ্রদ্ধা জানাতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। দেয়াল লিখন, আলপনা ও দেয়াল চিত্রে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ফুটে উঠেছে ১৯৫২ সালের সেই কঠিন দিনগুলোর আবহ। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই (রবিবার দিবাগত রাত ১২টায়) শুরু হবে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর। রবিবার দিবাগত রাতের প্রথম প্রহরেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার পথ নির্ধারণ করে দিয়েছে একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। করোনাকালে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্বাস্থ্যবিধিও ঠিক করা হয়েছে। সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ দুজন একসঙ্গে শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। এসময় সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। লোকসমাগম সীমিত রেখে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ মিনারে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে দেখা গেছে, পুরো শহীদ মিনারকে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। র‌্যাব ও ডিএমপির পক্ষ থেকে বসানো হচ্ছে ‘ওয়াচ টাওয়ার’। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। র‌্যাব ডগ স্কোয়াড দিয়ে পুরো এলাকা তল্লাশি করেছে। সমগ্র এলাকাকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনে জনসাধারণকে সতর্ক করতে লাগানো হয়েছে ডিজিটাল সাইনবোর্ড। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ডানপাশে র‌্যাব, ডিএমপি ও ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে।

অপরদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদীসহ সম্মুখভাগে শেষ হয়েছে আলপনা আঁকার কাজ। এবারই প্রথম শহীদ মিনারের বামপাশের দেয়ালে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন চিত্রপট নিয়ে রংতুলি দিয়ে আঁকা হয়েছে অসাধারণ দেয়ালচিত্র। মূল বেদীর ঠিক বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের দেয়ালে লাল রং-এ লেখা হয়েছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। শহীদ মিনারের চতুর্দিকের দেয়ালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, কাজী নজরুল ইসলামসহ বিখ্যাত মনীষীদের ভাষা নিয়ে বিভিন্ন উক্তি লেখা হয়েছে।

ঘোষণা মঞ্চ থেকে প্রতিনিয়ত শব্দযন্ত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শহীদ মিনারকে ঝকঝকে রাখতে অনবরত কাজ করে চলছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান এবং ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম শহীদ মিনার এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ঢাবি উপাচার্য মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখার জন্য ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সমন্বয় কমিটি গৃহীত সব কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নিরাপত্তা পরিদর্শন শেষে শনিবার ডিএমপি কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে বলেন, মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এবার একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে কোন হুমকি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তারপরও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় তিন শিফটে ছয় স্তরের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে পুলিশ।

শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য নিরাপত্তার কোন ঘাটতি থাকবে না উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারির দিন ইউনিফর্মধারী সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডিবি, র‌্যাব ও সোয়াত টিম দায়িত্ব পালন করবে। সবার সমন্বয়ে ছয় স্তরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এদিকে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার পথ নির্ধারণ করে দিয়েছে একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সংবাদ সম্মেলনে এ পথনির্দেশনা তুলে ধরেন উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জনসাধারণকে পলাশী মোড় দিয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং জগন্নাথ হলের পাশের রাস্তা হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেতে হবে। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে চানখারপুল হয়ে বের হওয়া যাবে।

উপাচার্য বলেন, যেহেতু কোভিড পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি, তাই গতবারের মতো এবারও কিছু নিয়মনীতি মেনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করব। এর মানে এই নয় যে, বেশি মানুষ ফুল দিতে পারবে না। সবার জন্য এটা অবারিত থাকবে, তবে নিয়মানুযায়ী স্লটে স্লটে ভাগ করে। তিনি জানান, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পলাশী মোড় থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়কে তিন ফুট পর পর চিহ্ন দেয়া থাকবে। এই চিহ্ন অনুসরণ করে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে হবে।

এক্ষেত্রে যথাযথভাবে রুটম্যাপ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে আখতারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবকরা হ্যান্ড মাইক দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে প্রচার চালাবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিও তারা মনিটর করবেন। শহীদ মিনারে যাওয়া সকলকে কোভিড টিকার সনদ সঙ্গে রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। উপাচার্য বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যানডমলি যে কারও কোভিড সনদ চেক করতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি, যারাই শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসবেন, সবারই টিকা নেয়া হয়েছে। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে অতিথিদের জন্য অভ্যর্থনার ব্যবস্থা থাকলেও এ বছর পরিস্থিতি বিবেচনায় তা থাকছে না বলে জানান তিনি।

রাষ্ট্রীয় আচার অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২ উদযাপনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেছে একুশে উদযাপন কমিটি।