শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই সড়কে বসছে ডিভাইস, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পার পাবে না কোনো চালক

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:০৩:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০২২
  • ৬২ Time View

বনলতা ডেস্ক.

জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার ও নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়কে বসছে স্বয়ংক্রিভাবে নম্বর প্লেট সনাক্তকরণ ডিভাইস।

বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তায় ৩৫.৮ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অনুমোদন করেছে বিশ্ব ব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।

সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটনে সোমবার এই ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। রোড সেফটি প্রজেক্টের আওতায় এই অর্থ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। আজ মঙ্গলবার সংস্থাটির ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংক জানায়, প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার ও নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়কে প্রাথমিকভাবে বসানো হচ্ছে স্বয়ংক্রিভাবে নম্বর প্লেট সনাক্তকরণ ডিভাইস। এতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে কোনো চালক পার পাবে না। প্রকল্পটির মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা পরিমাপ, উন্নত নকশা, প্রকৌশল সুবিধা, নকশা, চুক্তি স্বাক্ষর এবং চিহ্নিতকরণ, পথচারীদের সুবিধা, গতি প্রয়োগ, জরুরি সেবাসহ ব্যাপক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। এটা পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করা হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দুটি মহাসড়কে ৩০ শতাংশের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেকটর মার্সি টেম্বন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা স্থায়ী অক্ষমতার প্রধান কারণ এবং শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ। বাংলাদেশের জন্য সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকার। সড়ক নিরাপত্তায় অর্থায়ন করতে পেরে আনন্দিত বিশ্ব ব্যাংক। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।

সংস্থাটি জানায়, প্রকল্পের আওতায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে পাঁচ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক নিরাপদ করা হবে। তথ্যের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার বিবেচনায় বিভিন্ন ইন্টার সেকশনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাত্রার পূর্ত কাজের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। ট্রাফিক পুলিশসহ অন্য সংস্থার ব্যবহারের জন্য স্থাপন করা হবে জাতীয় ডাটা সিস্টেম।

জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা ও নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার মহাসড়কে বসানো হবে সিসিটিভি। স্থাপন করা হবে ইন্টিগ্রিটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনসিডেন্ট ডিটেকশন সিস্টেম। কেউ যদি বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায় এবং কোনো দুর্ঘটনা ঘটায় তবে স্বয়ংক্রিভাবে ধরা পড়বে।

দেশে মোট সড়ক রয়েছে ২১ হাজার ৫৯৫ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৯০৬ ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ৪৮২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার। ১৩ হাজার ২০৬ দশমিক ৯২৩ কিলোমিটার জেলা সড়ক। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৭২ কিলোমিটার সড়ক ‘মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এসব সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বসানো হবে প্রযুক্তি।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে তাই ‘বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প’ হাতে নিচ্ছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), হাইওয়ে পুলিশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)। সমন্বিত নিরাপদ সড়ক প্রণয়নে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সরকার। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় মোট ৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা এবং বার্কি অর্থ সরকারি খাত থেকে মেটানো হবে। চলতি সময় থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া হাইওয়ে পুলিশের দক্ষতা উন্নয়নে মাদারীপুরের শিবচরে হাইওয়ে পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হবে প্রকল্পের আওতায়। তিনটি হাসপাতালে (টাঙ্গাইল জেলারেল হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা জেনারেল হাসপাতাল) ট্রমা রেজিস্ট্রি সিস্টেম চালু করা হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিএ) আওতাধীন মোটরযান রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্সিং ও ফি পরিশোধ সংক্রান্ত ইনফরমেশন সিস্টেম করা হবে একীভূত।

Tag :

দুই সড়কে বসছে ডিভাইস, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পার পাবে না কোনো চালক

Update Time : ০৫:০৩:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ ২০২২

বনলতা ডেস্ক.

জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার ও নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়কে বসছে স্বয়ংক্রিভাবে নম্বর প্লেট সনাক্তকরণ ডিভাইস।

বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তায় ৩৫.৮ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অনুমোদন করেছে বিশ্ব ব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।

সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটনে সোমবার এই ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। রোড সেফটি প্রজেক্টের আওতায় এই অর্থ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। আজ মঙ্গলবার সংস্থাটির ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংক জানায়, প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার ও নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়কে প্রাথমিকভাবে বসানো হচ্ছে স্বয়ংক্রিভাবে নম্বর প্লেট সনাক্তকরণ ডিভাইস। এতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে কোনো চালক পার পাবে না। প্রকল্পটির মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা পরিমাপ, উন্নত নকশা, প্রকৌশল সুবিধা, নকশা, চুক্তি স্বাক্ষর এবং চিহ্নিতকরণ, পথচারীদের সুবিধা, গতি প্রয়োগ, জরুরি সেবাসহ ব্যাপক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। এটা পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করা হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দুটি মহাসড়কে ৩০ শতাংশের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেকটর মার্সি টেম্বন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা স্থায়ী অক্ষমতার প্রধান কারণ এবং শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ। বাংলাদেশের জন্য সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকার। সড়ক নিরাপত্তায় অর্থায়ন করতে পেরে আনন্দিত বিশ্ব ব্যাংক। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।

সংস্থাটি জানায়, প্রকল্পের আওতায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে পাঁচ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক নিরাপদ করা হবে। তথ্যের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার বিবেচনায় বিভিন্ন ইন্টার সেকশনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাত্রার পূর্ত কাজের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। ট্রাফিক পুলিশসহ অন্য সংস্থার ব্যবহারের জন্য স্থাপন করা হবে জাতীয় ডাটা সিস্টেম।

জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা ও নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার মহাসড়কে বসানো হবে সিসিটিভি। স্থাপন করা হবে ইন্টিগ্রিটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনসিডেন্ট ডিটেকশন সিস্টেম। কেউ যদি বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায় এবং কোনো দুর্ঘটনা ঘটায় তবে স্বয়ংক্রিভাবে ধরা পড়বে।

দেশে মোট সড়ক রয়েছে ২১ হাজার ৫৯৫ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৯০৬ ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ৪৮২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার। ১৩ হাজার ২০৬ দশমিক ৯২৩ কিলোমিটার জেলা সড়ক। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৭২ কিলোমিটার সড়ক ‘মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এসব সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বসানো হবে প্রযুক্তি।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে তাই ‘বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প’ হাতে নিচ্ছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), হাইওয়ে পুলিশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)। সমন্বিত নিরাপদ সড়ক প্রণয়নে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সরকার। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় মোট ৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা এবং বার্কি অর্থ সরকারি খাত থেকে মেটানো হবে। চলতি সময় থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া হাইওয়ে পুলিশের দক্ষতা উন্নয়নে মাদারীপুরের শিবচরে হাইওয়ে পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হবে প্রকল্পের আওতায়। তিনটি হাসপাতালে (টাঙ্গাইল জেলারেল হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা জেনারেল হাসপাতাল) ট্রমা রেজিস্ট্রি সিস্টেম চালু করা হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিএ) আওতাধীন মোটরযান রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্সিং ও ফি পরিশোধ সংক্রান্ত ইনফরমেশন সিস্টেম করা হবে একীভূত।