শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাত্র ২ লাখ টাকায় দেশেই কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব : ডা. কামরুল

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৪৫:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২
  • ৫৫ Time View

বিশেষ প্রতিবেদক পাবনা.

চিকিৎসাবিদ্যায় স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামকে পাবনায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তিনি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

বুধবার (৩০ মার্চ) রাতে ঈশ্বরদী ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে জেলার সামাজিক, রাজনৈতিক, চিকিৎসকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েসের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের মা অধ্যাপক মোছা. রাহিমা খাতুন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক রাহিমা খাতুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের অ্যাগ্রোনোমিস্ট আমার স্বামী আমিনুল ইসলাম আমিনকে ঈশ্বরদী রোডের ওয়াপদা গেটের কাছে একটি বাড়িতে ডেকে এনে রাজাকার-আলবদররা বেয়নেট ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। আমার ছোট ছেলের জন্মের তৃতীয় দিনে এ ঘটনা ঘটে। আমি আমার স্বামীর লাশটিও দেখতে পারিনি। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নিরাশ না হয়ে সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে চেষ্টা চালিয়ে গেছি। প্রাইভেট পড়িয়ে সন্তানদের মানুষ করেছি।

তিনি আরও বলেন, সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমার মেজ ছেলে কামরুল মেডিেকেলে হয়েছিল দেশসেরা। আজ দেশের একজন গুণী চিকিৎসক হয়েছে। বিনা পারিশ্রমিকে সে কিডনি চিকিৎসা করে। চিকিৎসায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় আমার ছেলেকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। দরিদ্র পরিবেশে বেড়ে ওঠা ছেলে আজ প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেয়েছে, এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বর্তমানে অনেক উন্নত হয়েছে। রোগ নির্ণয়ের জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছ। ইউরোপ-আমেরিকায় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেটাই আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিডনি রোগ নির্ণয়ের জন্য অনেকে বিদেশে যায়, আসলে এটার জন্য বিদেশে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। একটি হাসপাতালে রোগ নির্ণয় না হলে পাশেই আরেকটি হাসপাতাল আছে সেখানে পরামর্শ নেন।

তিনি আরও বলেন, দেশেই এখন অনেক উন্নত মানের হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন যাদের কিডনি রোগ শনাক্ত হলেই ভারতে যায়, সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করেই অনেক টাকা খরচ করেন।অথচ দেশেই ২ লাখ টাকায় কিডনি প্লান্ট করা যায়। রোগ নিরাময় করার জন্য এখন অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে। হার্টের বাইপাস সার্জারির জন্য বিদেশ যেতে হয় না।
স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ায় তিনি বলেন, স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার জন্য বিনা মূল্যে মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপন করি না। সেবা হিসেবেই এসব কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছি। তারপরও যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই সম্মান যেন আজীবন ধরে রাখতে পারি। দরিদ্র রোগীদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা থাকবে। শুধু পাবনা নয়, দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে গরিব, অসহায় রোগী আসলে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নায়েব আলী বিশ্বাস, সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কুয়াশা মাহমুদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) টি এম রাহসিন কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, জেলায় কর্তব্যরত চিকিৎসক, আইনজীবী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

Tag :

মাত্র ২ লাখ টাকায় দেশেই কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব : ডা. কামরুল

Update Time : ০৪:৪৫:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২

বিশেষ প্রতিবেদক পাবনা.

চিকিৎসাবিদ্যায় স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামকে পাবনায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তিনি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

বুধবার (৩০ মার্চ) রাতে ঈশ্বরদী ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে জেলার সামাজিক, রাজনৈতিক, চিকিৎসকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েসের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের মা অধ্যাপক মোছা. রাহিমা খাতুন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক রাহিমা খাতুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের অ্যাগ্রোনোমিস্ট আমার স্বামী আমিনুল ইসলাম আমিনকে ঈশ্বরদী রোডের ওয়াপদা গেটের কাছে একটি বাড়িতে ডেকে এনে রাজাকার-আলবদররা বেয়নেট ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। আমার ছোট ছেলের জন্মের তৃতীয় দিনে এ ঘটনা ঘটে। আমি আমার স্বামীর লাশটিও দেখতে পারিনি। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নিরাশ না হয়ে সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে চেষ্টা চালিয়ে গেছি। প্রাইভেট পড়িয়ে সন্তানদের মানুষ করেছি।

তিনি আরও বলেন, সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমার মেজ ছেলে কামরুল মেডিেকেলে হয়েছিল দেশসেরা। আজ দেশের একজন গুণী চিকিৎসক হয়েছে। বিনা পারিশ্রমিকে সে কিডনি চিকিৎসা করে। চিকিৎসায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় আমার ছেলেকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। দরিদ্র পরিবেশে বেড়ে ওঠা ছেলে আজ প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেয়েছে, এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বর্তমানে অনেক উন্নত হয়েছে। রোগ নির্ণয়ের জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছ। ইউরোপ-আমেরিকায় যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়, সেটাই আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিডনি রোগ নির্ণয়ের জন্য অনেকে বিদেশে যায়, আসলে এটার জন্য বিদেশে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। একটি হাসপাতালে রোগ নির্ণয় না হলে পাশেই আরেকটি হাসপাতাল আছে সেখানে পরামর্শ নেন।

তিনি আরও বলেন, দেশেই এখন অনেক উন্নত মানের হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন যাদের কিডনি রোগ শনাক্ত হলেই ভারতে যায়, সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করেই অনেক টাকা খরচ করেন।অথচ দেশেই ২ লাখ টাকায় কিডনি প্লান্ট করা যায়। রোগ নিরাময় করার জন্য এখন অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে। হার্টের বাইপাস সার্জারির জন্য বিদেশ যেতে হয় না।
স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ায় তিনি বলেন, স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার জন্য বিনা মূল্যে মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপন করি না। সেবা হিসেবেই এসব কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছি। তারপরও যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই সম্মান যেন আজীবন ধরে রাখতে পারি। দরিদ্র রোগীদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা থাকবে। শুধু পাবনা নয়, দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে গরিব, অসহায় রোগী আসলে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নায়েব আলী বিশ্বাস, সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কুয়াশা মাহমুদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) টি এম রাহসিন কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, জেলায় কর্তব্যরত চিকিৎসক, আইনজীবী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।