শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রসুনে সুবিধা না হলেও বাঙ্গিতে স্বপ্ন পুরণ চলনবিল এলাকার কৃষকদের !

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:১৪:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২
  • ১৫০ Time View

প্রভাষক মোঃ মাজেম আলী মলিন.

চলতি মৌসুমে নাটোরের গুরুদাসপুরে রসুনে ন্যায্যমুল্য না পেলেও বাঙ্গিতে আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। দেশজুড়ে বেলে ও আঠালো বাঙ্গির কদর ও রোমজান মাসকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে বেঁচাকেনা। এতে রসুনের ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে

উল্লেখ্য রসুনের জমির মধ্যেই সাথী ফসল হিসাবে বাঙ্গির বীজ রোপন করা হয়। রসুন উঠলেই বাঙ্গির গুটি আসা শুরু হওয়ার ৩ সপ্তাহের মধ্যেই বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়ে হতে থাকে। এবছর রসুন চাষে ব্যাপক ক্ষতিতে পরেছে গুরুদাসপুরসহ চলনবিল এলাকার কৃষক। প্রতি বিঘা রসুনে খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। রসুনের ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ। বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৬শ থেকে ৮শ টাকা।এতে ক্ষতি হচ্ছে প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে খুশির খবর হলো রোজা আর প্রচন্ড তাপদাহের কারনে বাঙ্গির ভালো দাম পাবার কারনে লোকশান পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন এলাকার কৃষক । কয়েকটা দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে তাদের লোকসান পুষিয়ে লাভের পাল্লাটাই ভারী হবে বলে জানিয়েছেন এলাকার কৃষকরা।

 


উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাযায়, গুরুদাসপুর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় ধারাবারিষা ও নাজিরপুর ইউনিয়নে। এই অঞ্চলের মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ায় বাঙ্গি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। ধারাবারিষা ইউনিয়নের চরকাদহ,চলনালী, পাঁচশিশা সিধুলী ,সোনাবাজু, উদবাড়িয়া ও তালবাড়িয়া গ্রামের জমিগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে বাঙ্গির। মাঠের পর মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে এসব বাঙ্গি। ফলনও ভালো সাথে ন্যায মুল্যও পাচ্ছেন কৃষকরা। অল্প পুঁজি ও শ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই ওই সব এলাকায় বাড়ছে গ্রীষ্মকালীন ফল বাঙ্গি চাষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, । বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তরমুজ ও মসলা জাতীয় রসুনের মধ্যে সাথী ফসল বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাঙ্গি গাছের সবুজ লতা পাতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি। পাশেই গাঁদা করে রাখা হয়েছে এসব বাঙ্গির স্তুপ। ওই অঞ্চলে উৎপাদিত বাঙ্গির আকার বড় ও রং উজ্জ্বল হওয়ায় দেখতে ও খেতে সুস্বাদু হয়। এসব বাঙ্গি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকাররা নিয়ে তা বিক্রি করছে।

উপজেলার উত্তর নাড়ি বাড়ির মহল্লার বাঙ্গি চাষি মো: আসাদ আলী জানান, আকার ভেদে প্রতি একশ বাঙ্গি পাইকারী দামে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছর চার বিঘা জমিতে রসুন ও বাঙ্গি চাষে তার ২ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় গড়ে সে ৪ বিঘা জমিতে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন। তবে রসুনের ক্ষতি পুষিয়ে তার ৪ বিঘা জমিতে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকার লাভ হবে বলে তিনি আশাবাদী।

অপর চাষী মিজানুর রহমান বলেন, বাঙ্গি চাষ করতে তেমন খরচ লাগে না। রসুন ও বাঙ্গি দুই ফসল একসঙ্গেই আবাদ করা যায়। রসুনের জন্য সার দেওয়ায়, আলাদা করে বাঙ্গির জন্য সার দেয়া লাগে না। শুধুমাত্র বীজ ও ঔষধের খরচ ছাড়া বাড়তি খরচ হয় না।

নরসিংদী থেকে আসা পাইকারি ফল ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন, আব্দুর রশিদ, বাঞ্ছারামপুর থেকে আসা জাফর ও ঢাকা থেকে আসা রতন কুমার বলেন, এই অঞ্চলের বাঙ্গি খেতে সুস্বাদু ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় বাজারে চাহিদা রয়েছে। ক্যামিকেল না থাকায় অনেকেই বাঙ্গি পছন্দ করেন। প্রতি মৌসুমে আমরা এই এলাকার জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে আসি। ভালো যোগাযোগ ব্যাবস্থা থাকায় পরিবহনও সহজ ও সময় কম লাগে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, গুরুদাসপরের বাঙ্গি চাষ সমপ্রসারণে আমরা সার্বক্ষণিক মাঠ পরিদর্শনসহ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপশি বাঙ্গি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নত জাতের বীজ সরবরাহসহ সকল সুবিধা দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে গুরুদাসপুরে মোট ৭২০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষা হয়েছে এবং ৫৫০ হেক্টর তরমুজের চাষ হয়েছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

Tag :

রসুনে সুবিধা না হলেও বাঙ্গিতে স্বপ্ন পুরণ চলনবিল এলাকার কৃষকদের !

Update Time : ০২:১৪:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২

প্রভাষক মোঃ মাজেম আলী মলিন.

চলতি মৌসুমে নাটোরের গুরুদাসপুরে রসুনে ন্যায্যমুল্য না পেলেও বাঙ্গিতে আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। দেশজুড়ে বেলে ও আঠালো বাঙ্গির কদর ও রোমজান মাসকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে বেঁচাকেনা। এতে রসুনের ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে

উল্লেখ্য রসুনের জমির মধ্যেই সাথী ফসল হিসাবে বাঙ্গির বীজ রোপন করা হয়। রসুন উঠলেই বাঙ্গির গুটি আসা শুরু হওয়ার ৩ সপ্তাহের মধ্যেই বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়ে হতে থাকে। এবছর রসুন চাষে ব্যাপক ক্ষতিতে পরেছে গুরুদাসপুরসহ চলনবিল এলাকার কৃষক। প্রতি বিঘা রসুনে খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। রসুনের ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ। বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৬শ থেকে ৮শ টাকা।এতে ক্ষতি হচ্ছে প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে খুশির খবর হলো রোজা আর প্রচন্ড তাপদাহের কারনে বাঙ্গির ভালো দাম পাবার কারনে লোকশান পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন এলাকার কৃষক । কয়েকটা দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে তাদের লোকসান পুষিয়ে লাভের পাল্লাটাই ভারী হবে বলে জানিয়েছেন এলাকার কৃষকরা।

 


উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাযায়, গুরুদাসপুর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় ধারাবারিষা ও নাজিরপুর ইউনিয়নে। এই অঞ্চলের মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ায় বাঙ্গি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। ধারাবারিষা ইউনিয়নের চরকাদহ,চলনালী, পাঁচশিশা সিধুলী ,সোনাবাজু, উদবাড়িয়া ও তালবাড়িয়া গ্রামের জমিগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে বাঙ্গির। মাঠের পর মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে এসব বাঙ্গি। ফলনও ভালো সাথে ন্যায মুল্যও পাচ্ছেন কৃষকরা। অল্প পুঁজি ও শ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই ওই সব এলাকায় বাড়ছে গ্রীষ্মকালীন ফল বাঙ্গি চাষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, । বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তরমুজ ও মসলা জাতীয় রসুনের মধ্যে সাথী ফসল বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বাঙ্গি গাছের সবুজ লতা পাতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি। পাশেই গাঁদা করে রাখা হয়েছে এসব বাঙ্গির স্তুপ। ওই অঞ্চলে উৎপাদিত বাঙ্গির আকার বড় ও রং উজ্জ্বল হওয়ায় দেখতে ও খেতে সুস্বাদু হয়। এসব বাঙ্গি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকাররা নিয়ে তা বিক্রি করছে।

উপজেলার উত্তর নাড়ি বাড়ির মহল্লার বাঙ্গি চাষি মো: আসাদ আলী জানান, আকার ভেদে প্রতি একশ বাঙ্গি পাইকারী দামে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি বছর চার বিঘা জমিতে রসুন ও বাঙ্গি চাষে তার ২ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় গড়ে সে ৪ বিঘা জমিতে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন। তবে রসুনের ক্ষতি পুষিয়ে তার ৪ বিঘা জমিতে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকার লাভ হবে বলে তিনি আশাবাদী।

অপর চাষী মিজানুর রহমান বলেন, বাঙ্গি চাষ করতে তেমন খরচ লাগে না। রসুন ও বাঙ্গি দুই ফসল একসঙ্গেই আবাদ করা যায়। রসুনের জন্য সার দেওয়ায়, আলাদা করে বাঙ্গির জন্য সার দেয়া লাগে না। শুধুমাত্র বীজ ও ঔষধের খরচ ছাড়া বাড়তি খরচ হয় না।

নরসিংদী থেকে আসা পাইকারি ফল ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন, আব্দুর রশিদ, বাঞ্ছারামপুর থেকে আসা জাফর ও ঢাকা থেকে আসা রতন কুমার বলেন, এই অঞ্চলের বাঙ্গি খেতে সুস্বাদু ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় বাজারে চাহিদা রয়েছে। ক্যামিকেল না থাকায় অনেকেই বাঙ্গি পছন্দ করেন। প্রতি মৌসুমে আমরা এই এলাকার জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে আসি। ভালো যোগাযোগ ব্যাবস্থা থাকায় পরিবহনও সহজ ও সময় কম লাগে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, গুরুদাসপরের বাঙ্গি চাষ সমপ্রসারণে আমরা সার্বক্ষণিক মাঠ পরিদর্শনসহ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপশি বাঙ্গি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নত জাতের বীজ সরবরাহসহ সকল সুবিধা দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে গুরুদাসপুরে মোট ৭২০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষা হয়েছে এবং ৫৫০ হেক্টর তরমুজের চাষ হয়েছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।