মোঃ মাজেম আলী মলিন. অতীতে দেখেছি সাংবাদিক হতে গেলে নুন্যতম যোগ্যতা ও স্থানীয় পত্রিকায় সর্ব নিম্ন কয়েক বছর লিখতে হতো। সিনিয়রদের পিছে ছুটতে হতো বছরের পর বছর। তার পর ভাগ্যে থাকলে অতি কষ্টে অনেক কাঠ খড়ি পুড়িয়ে জাতীয় পত্রিকায় সুযোগ পেত। কেউবা আবার স্থানীয় পত্রিকাতেই শেষ করতো লিখনি। আর বর্তমানে! একটা দামী বাইক,ক্যামেরা আর অনলাইন অথবা টু লাইনের (রেজিট্রেশন বিহীন পত্রিকা-ইউটিউব টিভি চ্যানেল ,অথবা যে কোন পেইজ) হলেই সাংবাদিক। কখনো সম্পাদক আবার কখনো প্রকাশক- সম্পাদক দুটোই হবার গৌরব অর্জনে সক্ষম হন। এসব সাংবাদিক আবার বিভিন্ন সম্মাননা স্মারকেও ভুষিত হন (টাকা দিয়ে কেনা)। লজ্জ্বায় মাথা লুকানোর জন্য বলতে ইচ্ছে করে ধরণি তুমি বিখন্ডিত হও।
অবশ্য রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয় নেতা, ছাত্র-শিক্ষক, চোর- ডাকাত, মুড়ি ব্যবসায়ী, এমনকি ক্যাডারও রয়েছে এই সাংবাদিকের তালিকায়। কাউকে ছোট করা বা নিরুৎসাহী করা নয় বরং নতুন প্রজন্মকে সর্তক করতেই এই বার্তা। সাংবাদিক শব্দটা ঠিক মতো উৎচারণও করতে পারেনা এমন লোকেরও অভাব নেই এই পেশায়। এদের আচরণ দেখে লজ্জ্বায় কলম ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে, আবার ভাবি তৃর্ণমুলে এমনিতেই সাংবাদিকতার বেহাল দশা। যেনারা সাংবাদিকতায় সম্মানসহ মাষ্টার্স করেছেন তেনারা তো এই পেশায় আসছেন না। বড়জোর বিভাগীয় পর্যায়ে স্বল্প সংখ্যক কাজে হাতে গোনা এমন লেখক রয়েছেন। তবুও যোগ্য উত্তরসূরী তৈরী করে না গেলে এই মহান পেশার প্রতি অবিচার করা হবে। সৃজনশীল,অনুসন্ধানী সংবাদ লেখা তো দুরের কথা নিয়মিত সংবাদটাও কপি পেষ্ট মারেন। অথচ সেই সব হলুদ সাংবাদিকদের দাপট আর গালগল্পে সাংবাদিকতার পরিচয় দিতেই কষ্ট হয়। এমন কি প্রশাসনের আমন্ত্রনে এক সারিতে বসতেই নিজেকে বড় আসহায় মনে হয়।
বর্তমানে সাংবাদিক হবার প্রতিযোগিতা শুরু হবার সুযোগে কিছু (রেজিষ্ট্রেশন বিহীন) পত্রিকা,ইউটিউব চ্যানেলে দেশ জুড়ে সাংবাদিক নিয়োগ বাণিজ্যে নেমেছে। সেই সুযোগে তারা টাকার বিনিময়ে আইডি কার্ড কিনে গলায় ঝুলিয়ে নানা স্থানে চাঁদাবাজি করে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। অনেকে সাংবাদিক হয়ে ভাল আয়ও করছেন বলে একাধিক সুত্রে জানাযায়। কথিত এসব সাংবাদিকদের অনেকেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শেণি পর্যন্ত। বিভিন্ন স্থানে পুকুর খনন, হত্যা,আত্বহত্যা, দুর্ঘটনা, মাদক,চোরাকারবারি, মারামারিতে আহত বা নিহতের ঘটনায় বিশেষ সুবিধা নিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে থাকে এসব সাংবাদিক নামধারী ব্যাক্তিরা। তারা মনে করেন সাংবাদিক হলেই প্রশাসন,আইন ও পুলিশ বিভাগে বিশেষ সুবিধা নেওয়া যায়। এই মনোভাব নিয়েই সাংবাদিকতায় ঝুকছে কপি পেষ্ট মার্কা এসব সাংবাদিক নামধারী লোকজন। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রাম থেকে শহরে। ইদানিং দেখা যাচ্ছে কিছু দুর্ণীতিবাজ অসাধু সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা তাদের ভয়ে তঠস্থ হয়ে সাংবাদিক সাহেব বলে কদরও করছেন বেশ। কিন্তু বড় নেতার সাথে সেলফি মেরে লাইফ দিয়েই রাতারাতি সাংবাদিক বনে যাচ্ছেন অনেকেই। অথচ সাংবাদিকার নুন্নতম(বুঁনিয়াদি) প্রশিক্ষনের যে নিয়ম কানুন জানা দরকার সেটাও তাদের জানা নেই।
কিছু সাংবাদিক আবার নিজের দল (প্রেসক্লাব) ভারি করার জন্য ক্যাডারও নিয়ে আসছেন এই পেশায়। ফলে এক দিকে প্রতিটি উপজেলায় বাড়ছে মানহীন সাংবাদিকের সংখ্যা তেমনি বাড়ছে প্রেসক্লাবের সংখ্যাও। দুঃখের বিষয় অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খাপছাড়া দু চার লাইন লিখেও হয়ে যাচ্ছেন লেখক ও কলামিস্ট। এখনি এসবের লাগাম টেনে না ধরলে অচিরেই দেশে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে ,কেননা এসব সাংঘাতিকরা আবার কুসংস্কারেও নিমজ্জিত। দেলোয়ার হোসেন সাইদী সাহেবদের আবার চাঁদ বাদ দিয়ে অন্য গ্রহেও পাঠাতে পারে। কিন্তু মদ্দা কথা হলো কে দেখবে এসব অনিয়ম আর কেইবা ব্যবস্থা নিবে এসবের। বলতে গেলে বিড়ালের গলায় ঘন্টাটি বাধবে কে?
*সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান(স.বি) বিভাগ, রোজী মোজাম্মেল মহিলা অনার্স কলেজ, সভাপতি গুরুদাসপুর মডেল প্রেসক্লাব।