ফাত্তাহ তানভীর মোঃ ফয়সাল রানা.
বিশ্ব মা দিবস-২০২২ উপলক্ষে ১২ জন ‘স্বপ্নজয়ী মা’কে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর। এর মধ্যে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ‘স্বপ্নজয়ী মা’ নার্গিস সুলতানা অন্যতম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর আয়োজিত রাজধানীর নিজ অফিসে পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা। আরও উপস্থিত ছিলেন সচিব ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, বাংলাদেশ শিশু একাডমির মহাপরিচালক মো: শরিফুল ইসলাম , মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন প্রমুখ। স্বপ্নজয়ী মা নার্গিস সুলতানা দেশের বাহিরে থাকায় তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন তার পুত্র ব্যাংকার ও লেখক ফাত্তাহ তানভীর রানা।
অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার ফলে নার্গিস সুলতানা তার নিজের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলেও মরে যায়নি তার স্বপ্ন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন নিজে না পারলেও সন্তানদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। তার এই স্বপ্ন পূরণের যাত্রা ছিল অত্যন্ত সংগ্রামময়। তিনি হাল ছাড়েন নি সহসাই। তার স্বপ্নকে সার্থক করেছেন কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে। নারী হয়ে কৃষি কাজ দেখাশোনার পাশাপাশি সাংসারিক কাজ-কর্ম পরিচালনা, দর্জির কাজ করা ও সন্তান-সন্তুতি মানুষ করা ছিল অত্যন্ত কষ্টের। নার্গিস সুলতানা নানা সামাজিক চাপ, সমস্যা ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম করে তিনজন সন্তানকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
তার বড় মেয়ে জান্নাতুন ফেরদৌস (লীনা) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বি.এ. (সম্মান), এম. এ সম্পন্ন করে স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। আর বড় জামাতা ড. মোঃ রবিউল করিম, অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। তার ছোট মেয়ে ডাঃ নাদিরা পারভীন (রুনা) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস. সম্পন্ন করেছেন। ডাক্তার হবার পরে সে ২৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় (স্বাস্থ্য ক্যাডার) উত্তীর্ণ হয়। এফ.সি.পি.এস, পার্ট-১ সম্পন্ন হলে স্বামীর হাত ধরে চলে যান ঢাকায়। তারপর ২০০৮ সালে উচ্চ শিক্ষার্থে স্বামীর সাথে বিদেশে (অস্ট্রেলিয়ায়) পাড়ি দেন। ছোট মেয়ে ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল (AMC) এক্সাম এর দুই পর্ব কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেছেন। এছাড়াও সে ফেলো অব রয়েল অস্ট্রেলিয়ান কলেজ অব জেনারেল প্রাকটিশনার্স (FELLOW OF ROYAL AUSTRALIAN COLLEGE OF GENERAL PRACTITIONERS) এর ৩য়/ চুড়ান্ত পর্ব কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার সরকারি চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। আর ছোট জামাতা ডা. রাশেদুল হাসান, এম.বি.বি.এস. (ঢামেক), বি.সি.এস (স্বাস্থ্য), এফ.সি.পি.এস, এমডি ডিগ্রীধারী। তার ছোট জামাতাও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার সরকারি চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। একমাত্র পুত্র ফাত্তাহ তানভীর মোঃ ফয়সাল রানা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এলএল.বি (সস্মান), এলএল.এম সম্পন্ন করে বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, ল ডিভিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকাতে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। আর বউমা আনজুমান আরা উপ-পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, বনানী, ঢাকাতে কর্মরত আছেন।
উল্লেখ্য, নার্গিস সুলতানা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের ’জয়িতা অন্বেষণ কার্যক্রম’র আওতায় ২০১৭ সালে রাজশাহী বিভাগের সফল জননী ক্যাটাগরিতে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া একই কার্যক্রমের আওতায়ও ২০১৬ সালে গুরুদাসপুর উপজেলা এবং নাটোর জেলার ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ মনোনীত হয়েছিলেন। নার্গিস সুলতানা ২০১৫ সালে গার্ল গাইডস নাটোর কর্তৃক আয়োজিত সফল জননী পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০২০ সালে র্যাপিড পি আর রত্নগর্ভা মা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।