শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রহ্মপুত্রে সেতু হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের দৃশ্যপট!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৪৩:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৩০৯ Time View

মাসুদ পারভেজ রুবেল: রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ দেশে দারিদ্র্যের শীর্ষে কুড়িগ্রাম জেলা। এর দুটি উপজেলা রৌমারী ও চর রাজিবপুর ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন। তবে উপজেলা দুটি স্থলপথে ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুর জেলার সাথে যুক্ত। স্বাধীনতার ৫০বছরেও জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়নি উপজেলা দুটির।

কুড়িগ্রাম শহরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ দুই উপজেলার ৪লক্ষাধিক মানুষকে। কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার জটিলতার কারণে জরুরী রোগি ও প্রসূতিদের উপযুক্ত চিকিৎসা মেলে না। বস্তুত দেশ এগিয়ে গেলেও স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চলখ্যাত রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলা উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস। দারিদ্র্যের হার ৭৯দশমিক ৮। উপজেলাটির জনসংখ্যা প্রায় ৮৫হাজার। অন্তত ৩০টি চর রয়েছে। এসব চরের বাসিন্দারের বেশিরভাগ হতদরিদ্র। অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রৌমারী উপজেলা। এ উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৭৬দশমিক৪।

স্থানীয়দের মতে, জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্নতা, ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নদীভাঙন ও বেকারত্ব উপজেলা দুটিকে দারিদ্র্যতার শীর্ষে নিয়ে গেছে।
এলজিইডি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৪০০কিলোমিটার। অন্যদিকে রৌমারী থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ২৬০কিলোমিটার। জেলা সদর থেকে রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার দূরত্ব ৬৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২কিলোমিটার দুর্গম নদীপথ। বর্ষা মৌসুমে এ নদীপথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ৩-৪ঘন্টা। শুষ্ক মৌসুমে ৬-৭ঘন্টারও বেশি সময় লাগে। উপজেলা দুটির বিভিন্ন অফিস আদালতে কর্মরত ওপারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে নিয়মিত অফিসে উপস্থিত হতে পারেন না। ফলে সাধারণ মানুষ এসব অফিসের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনি নানা বঞ্চনা ও যন্ত্রণা সহ্য করেও দীর্ঘদিন উপজেলা দুটির ৪লক্ষাধিক মানুষ জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০০৬ ও ২০০৭সালের দিকে রৌমারী-কুড়িগ্রাম সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাব করেছিল স্থানীয় এলজিইডি। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, কুড়িগ্রাম শহর থেকে ধরলা সেতু পেরিয়ে যাত্রাপুর পর্যন্ত পাকা সড়ক রয়েছে। সেখান থেকে মোল্লারহাট পর্যন্ত ৪কিলোমিটার একটি সেতু নির্মাণ অথবা ফেরি পারাপারের ব্যবস্থা করলে রৌমারী ও চর রাজিবপুর যাতায়াত খুব সহজ হবে। অথবা রৌমারীর বলদমারা খেয়াঘাট থেকে মাত্র ৬কিলোমিটার চিলমারী উপজেলার ফকিরের হাট পর্যন্ত পাকা সড়ক ও একটি ব্রিজের ব্যবস্থা করলে কুড়িগ্রামের সঙ্গে উপজেলা দুটির সড়ক যোগাযোগ পূর্ণাঙ্গভাবে স্থাপিত হবে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য দলমত নির্বিশেষে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তখন দাবি জানিয়েছিলেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাবনাময় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি দেখা দিলেও পরে আর কিছু শোনা যায়নি।

রৌমারী উপজেলার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইদুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণে সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন উদ্যোগী হন। তিনি সংসদে একাধিকবার ব্রহ্মপত্র নদের ওপর একটি ব্রিজের দাবি উত্থাপন করেছেন। ২০২১সালের ৭নভেম্বর ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধি দল এই এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শক দলের নেতৃত্বে ছিলেন, সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ড. মনিরুজ্জামান। পরিদর্শনের কয়েক মাস পর রৌমারীর বলদমারা ঘাট-চিলমারীর ফকিরের হাট পর্যন্ত কয়েকটি জায়গা থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয় ‘সয়েল টেস্ট’ করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম মেয়াদে যুমনা নদীতে যমুনা সেতু নির্মাণ করে দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলকে যুক্ত করেছিলেন। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল। এখন ব্রহ্মপুত্রে সেতু নির্মাণের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করা সময়ের দাবি। এটা আমাদের প্রাণের দাবি।

রৌমারী উপজেলার কর্তিমারী বাজারপাড়ার বাসিন্দা সাংবাদিক আনিছুর রহমান বলেন,‘সেতুটি নির্মিত হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সঙ্গে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের সড়ক পথের দৈর্ঘ্য উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমে আসবে। রৌমারী, চর রাজিবপুর উপজেলাসহ কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর জেলাতেও গড়ে উঠবে শিল্প-কলকারখানা। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ব্রহ্মপুত্র সেতু ও রেল সড়ক চালু হলে রৌমারী স্থলবন্দর ও লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের সাথে মালপত্র আমদানী-রপ্তানী খুবই সহজ ও সময় সাশ্রয়ী হবে। বাড়বে পর্যটনের সম্ভাবনা। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সহজেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবেন। মরণাপন্ন রোগি নিয়ে আর নৌকা ঘাটে অপেক্ষা করতে হবে না।’

জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে রৌমারী উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার স্মৃতি বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের কারনে উন্নত চিকিৎসা ,কৃষি, শিক্ষাসহ নানা জটিলতায় পরতে হচ্ছে এ উপজেলার মানুষকে। সেতু নির্মাণ হলে মানুষের আর দুর্ভোগ থাকবে না। এতে জীবন মান বাড়ার পাশাপাশি চাঙ্গা হবে পিছিয়ে পড়া রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার অর্থনীতির চাকা।
রৌমারীর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই রৌমারী ছিলো মুক্তাঞ্চল। এ অঞ্চলটি স্বাধীনতার পর থেকেই অবহেলিত। জেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে চরাঞ্চল রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা। বাংলাদেশ সৃষ্টির ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও জেলার সাথে কোন সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়নি। অতি কষ্টে নৌকাযোগে পারাপার হতে হয়। এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি সেতু বাস্তবায়ন করার।

স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল ছিলো রৌমারী। এখানে ৬৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এটি নির্মাণ হলে, উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলা (পঞ্চগর,ঠাকুরগাও, দিনাজপুর,নিলফামারী,কুড়িগ্রাম,লালমনিরহাট,রংপুর) এর মানুষ সহজে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। অপর দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে চাপ অনেক কমবে। হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান হবে, বেকারত্ব কমবে। এতে কুড়িগ্রামসহ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে। তিনি আরও বলেন, এটি নির্মাণের ফলে আন্ত:দেশীয় ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটবে। ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যসহ সেভেন সিস্টারের সাথে বাংলাদেশের রৌমারী ও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কম সময়ে যাতায়াত করা যাবে। অপর দিকে নেপাল-ভুটানের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে আসবে নতুনত্ব।

Tag :

ব্রহ্মপুত্রে সেতু হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের দৃশ্যপট!

Update Time : ০৭:৪৩:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

মাসুদ পারভেজ রুবেল: রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ দেশে দারিদ্র্যের শীর্ষে কুড়িগ্রাম জেলা। এর দুটি উপজেলা রৌমারী ও চর রাজিবপুর ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন। তবে উপজেলা দুটি স্থলপথে ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুর জেলার সাথে যুক্ত। স্বাধীনতার ৫০বছরেও জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়নি উপজেলা দুটির।

কুড়িগ্রাম শহরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ দুই উপজেলার ৪লক্ষাধিক মানুষকে। কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার জটিলতার কারণে জরুরী রোগি ও প্রসূতিদের উপযুক্ত চিকিৎসা মেলে না। বস্তুত দেশ এগিয়ে গেলেও স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চলখ্যাত রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলা উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস। দারিদ্র্যের হার ৭৯দশমিক ৮। উপজেলাটির জনসংখ্যা প্রায় ৮৫হাজার। অন্তত ৩০টি চর রয়েছে। এসব চরের বাসিন্দারের বেশিরভাগ হতদরিদ্র। অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রৌমারী উপজেলা। এ উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৭৬দশমিক৪।

স্থানীয়দের মতে, জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্নতা, ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নদীভাঙন ও বেকারত্ব উপজেলা দুটিকে দারিদ্র্যতার শীর্ষে নিয়ে গেছে।
এলজিইডি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৪০০কিলোমিটার। অন্যদিকে রৌমারী থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ২৬০কিলোমিটার। জেলা সদর থেকে রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার দূরত্ব ৬৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২কিলোমিটার দুর্গম নদীপথ। বর্ষা মৌসুমে এ নদীপথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ৩-৪ঘন্টা। শুষ্ক মৌসুমে ৬-৭ঘন্টারও বেশি সময় লাগে। উপজেলা দুটির বিভিন্ন অফিস আদালতে কর্মরত ওপারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে নিয়মিত অফিসে উপস্থিত হতে পারেন না। ফলে সাধারণ মানুষ এসব অফিসের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনি নানা বঞ্চনা ও যন্ত্রণা সহ্য করেও দীর্ঘদিন উপজেলা দুটির ৪লক্ষাধিক মানুষ জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০০৬ ও ২০০৭সালের দিকে রৌমারী-কুড়িগ্রাম সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাব করেছিল স্থানীয় এলজিইডি। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, কুড়িগ্রাম শহর থেকে ধরলা সেতু পেরিয়ে যাত্রাপুর পর্যন্ত পাকা সড়ক রয়েছে। সেখান থেকে মোল্লারহাট পর্যন্ত ৪কিলোমিটার একটি সেতু নির্মাণ অথবা ফেরি পারাপারের ব্যবস্থা করলে রৌমারী ও চর রাজিবপুর যাতায়াত খুব সহজ হবে। অথবা রৌমারীর বলদমারা খেয়াঘাট থেকে মাত্র ৬কিলোমিটার চিলমারী উপজেলার ফকিরের হাট পর্যন্ত পাকা সড়ক ও একটি ব্রিজের ব্যবস্থা করলে কুড়িগ্রামের সঙ্গে উপজেলা দুটির সড়ক যোগাযোগ পূর্ণাঙ্গভাবে স্থাপিত হবে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য দলমত নির্বিশেষে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তখন দাবি জানিয়েছিলেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাবনাময় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি দেখা দিলেও পরে আর কিছু শোনা যায়নি।

রৌমারী উপজেলার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইদুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণে সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন উদ্যোগী হন। তিনি সংসদে একাধিকবার ব্রহ্মপত্র নদের ওপর একটি ব্রিজের দাবি উত্থাপন করেছেন। ২০২১সালের ৭নভেম্বর ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধি দল এই এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শক দলের নেতৃত্বে ছিলেন, সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ড. মনিরুজ্জামান। পরিদর্শনের কয়েক মাস পর রৌমারীর বলদমারা ঘাট-চিলমারীর ফকিরের হাট পর্যন্ত কয়েকটি জায়গা থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয় ‘সয়েল টেস্ট’ করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম মেয়াদে যুমনা নদীতে যমুনা সেতু নির্মাণ করে দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলকে যুক্ত করেছিলেন। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল। এখন ব্রহ্মপুত্রে সেতু নির্মাণের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করা সময়ের দাবি। এটা আমাদের প্রাণের দাবি।

রৌমারী উপজেলার কর্তিমারী বাজারপাড়ার বাসিন্দা সাংবাদিক আনিছুর রহমান বলেন,‘সেতুটি নির্মিত হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সঙ্গে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের সড়ক পথের দৈর্ঘ্য উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমে আসবে। রৌমারী, চর রাজিবপুর উপজেলাসহ কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর জেলাতেও গড়ে উঠবে শিল্প-কলকারখানা। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ব্রহ্মপুত্র সেতু ও রেল সড়ক চালু হলে রৌমারী স্থলবন্দর ও লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের সাথে মালপত্র আমদানী-রপ্তানী খুবই সহজ ও সময় সাশ্রয়ী হবে। বাড়বে পর্যটনের সম্ভাবনা। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সহজেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবেন। মরণাপন্ন রোগি নিয়ে আর নৌকা ঘাটে অপেক্ষা করতে হবে না।’

জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে রৌমারী উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার স্মৃতি বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের কারনে উন্নত চিকিৎসা ,কৃষি, শিক্ষাসহ নানা জটিলতায় পরতে হচ্ছে এ উপজেলার মানুষকে। সেতু নির্মাণ হলে মানুষের আর দুর্ভোগ থাকবে না। এতে জীবন মান বাড়ার পাশাপাশি চাঙ্গা হবে পিছিয়ে পড়া রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার অর্থনীতির চাকা।
রৌমারীর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই রৌমারী ছিলো মুক্তাঞ্চল। এ অঞ্চলটি স্বাধীনতার পর থেকেই অবহেলিত। জেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে চরাঞ্চল রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা। বাংলাদেশ সৃষ্টির ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও জেলার সাথে কোন সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়নি। অতি কষ্টে নৌকাযোগে পারাপার হতে হয়। এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি সেতু বাস্তবায়ন করার।

স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল ছিলো রৌমারী। এখানে ৬৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এটি নির্মাণ হলে, উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলা (পঞ্চগর,ঠাকুরগাও, দিনাজপুর,নিলফামারী,কুড়িগ্রাম,লালমনিরহাট,রংপুর) এর মানুষ সহজে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। অপর দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে চাপ অনেক কমবে। হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান হবে, বেকারত্ব কমবে। এতে কুড়িগ্রামসহ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে। তিনি আরও বলেন, এটি নির্মাণের ফলে আন্ত:দেশীয় ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটবে। ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যসহ সেভেন সিস্টারের সাথে বাংলাদেশের রৌমারী ও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কম সময়ে যাতায়াত করা যাবে। অপর দিকে নেপাল-ভুটানের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে আসবে নতুনত্ব।