বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও টিউশানী করে সংসার চালাচ্ছে মেধাবী ছাত্রী নদী

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৪৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১১০ Time View

মোঃ মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর নাটোর থেকে. নাম নদী। পুরোনাম নাদিয়া আখতার নদী। নদীর মতোই প্রবাহমান ছিলো তার জীবন। নদীতে যৌলুস ও খরস্রোত থাকলেও স্রোতের  প্রতিকুলেই হাটতে হচ্ছে তাকে অনবরত। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও বাসা বাড়িতে টিউশানী করে চালাচ্ছেন অভাবের সংসার ও লেখা পড়ার খরচ। বাবা আখতার হোসেনও ৮ মাস যাবৎ লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছেন। এযেন মরার উপর খারার ঘাঁ। ছোট মেয়ে নদী এখন কিংকর্তব্য বিমুর।জিজ্ঞাসা করলেই শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। যেন নিস্তব্ধ একটা পাথরের মুর্তি।

 

নদী স্থানীয় বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী । এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া নাদিয়া আখতার নদীর স্বপ্ন ছিলো আকাশ ছোঁয়া। ডাক্তার হয়ে সেবা করবে অসহায় মানুষের। তাই নদী তার নদীর গতিতেই ছুটে চলছিলো কাংখিত সেই স্বপ্নটার পিছে। বাবার ক্ষুদ্র ব্যবসা আর ৩শতাংশ জমির উপর তৈরী দোচালা ঘরে বসেই স্বপ্ন দেখছিলেন অভাবের সংসারের দৈন্যতা দুর করারও। কিন্তু দরিদ্র বাবা আখতার হোসেন (৫০) ব্যবসায় লোকসান করে ঋনগ্রস্থ হয়ে পরেন। তার লিভারে ধরা পরে জটিল রোগ। নাক,কান আর গলা দিয়ে পরতে থাকে রক্ত অনবরত। দিশে হারা হয়ে পরে ছোট মেয়ে নদী। সংসারে রয়েছে মা গৃহিনী নারগিস আক্তার(৪৫) আর ছোট বোন আফিয়া তাবাসসুম রোযা(৬)। সে স্থানীয় কেজি স্কুলে নার্সারীতে পড়ে। নদী স্বপ্ন দেখছিলেন বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর। তাই সে নিজের সুখ শান্তি আর আরাম আয়েশের কথা না ভেবে নেমে পরেন বাসা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে টিউশানী করতে। সেই স্বল্প টাকায়ই চলতো ৪ সদস্যের অভাবের সংসার আর নিজের লেখা পড়ার খরচ। শত কষ্টেও সে কারো কাছে হাত পাতেনি। অন্যের গলগ্রহ না হয়ে নিজের পরিশ্রমের টাকায় চলতেই সে স্বাচ্ছন্দ বোধ করত একারনেই দিনরাত পরিশ্রম করলেও ক্লান্তি যেন হার মানে তার কাছে। সেই নদীও আজ মরন ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার রক্তেও দেখা দিয়েছে সমস্যা।

 

এখন বেঁচে থাকতে পারাটাই যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার! দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কিন্তু অর্থাভাবে আটকে আছে তার চিকিৎসা। নদীর বাসা নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের খামারনাচকৈড় মহল্লায়।

 

গাইনি ও প্রসুতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তারান্না ইসলাম ইতি জানান , নদী ব্রেষ্ট ক্যান্সারসহ রক্তেও রয়েছে সমস্যা। দ্রæত চিকিৎসা করালে সুস্থ জীবনে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। অপর দিকে রাজশাহী মেডিক্যালের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, নদীর বাবা আখতার হোসেন ৮মাস যাবত লিভারে মারাত্বক রোগে ভুগছেন। ঠিক মতো চিকিৎসা না হলে যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

২ নং ওয়ার্ড কমিশনার শ্রী বিদ্যুত কুমার জানান, সত্যি ঘটনাটি দুঃখজন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এবং পৌর মেয়র শাহনেওয়াজকে বলে একটা ব্যবস্থা নিবো। তাছাড়া ডাক্তাররা বলেছেন দুই জনের চিকিৎসায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এই ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা করার সক্ষমতা তার পরিবারের নেই । তাই বাবা-মেয়েকে বাঁচাতে সরকারসহ বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।

নদীর মা নারগিস আক্তার জানান, তার মেয়ে নদী ও স্বামী আখতার হোসেনর প্রতিদিন ১ থেকে ২ হাজার টাকার ঔষধ লাগছে তাছাড়া থেরাপি তো আছেই। শেষ সম্বল জীবন দুটি বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশ বিদেশের বিত্তবানদের দয়া ও সহযোগীতা চেয়েছেন।

নদীর জন্য সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা-
বিকাশ +8801328917454 নদীর আম্মু।
অথবা নদীর বাবা ব্যাংক একাউন্ট নং ০১০০০৩০১১৫৪৬০ জনতা ব্যাংক গুরুদাসপুর শাখা(স্থান চাঁচকৈড় বাজার) গুরুদাসপুর, নাটোর।

Tag :

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও টিউশানী করে সংসার চালাচ্ছে মেধাবী ছাত্রী নদী

Update Time : ০১:৪৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মোঃ মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর নাটোর থেকে. নাম নদী। পুরোনাম নাদিয়া আখতার নদী। নদীর মতোই প্রবাহমান ছিলো তার জীবন। নদীতে যৌলুস ও খরস্রোত থাকলেও স্রোতের  প্রতিকুলেই হাটতে হচ্ছে তাকে অনবরত। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও বাসা বাড়িতে টিউশানী করে চালাচ্ছেন অভাবের সংসার ও লেখা পড়ার খরচ। বাবা আখতার হোসেনও ৮ মাস যাবৎ লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছেন। এযেন মরার উপর খারার ঘাঁ। ছোট মেয়ে নদী এখন কিংকর্তব্য বিমুর।জিজ্ঞাসা করলেই শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। যেন নিস্তব্ধ একটা পাথরের মুর্তি।

 

নদী স্থানীয় বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী । এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া নাদিয়া আখতার নদীর স্বপ্ন ছিলো আকাশ ছোঁয়া। ডাক্তার হয়ে সেবা করবে অসহায় মানুষের। তাই নদী তার নদীর গতিতেই ছুটে চলছিলো কাংখিত সেই স্বপ্নটার পিছে। বাবার ক্ষুদ্র ব্যবসা আর ৩শতাংশ জমির উপর তৈরী দোচালা ঘরে বসেই স্বপ্ন দেখছিলেন অভাবের সংসারের দৈন্যতা দুর করারও। কিন্তু দরিদ্র বাবা আখতার হোসেন (৫০) ব্যবসায় লোকসান করে ঋনগ্রস্থ হয়ে পরেন। তার লিভারে ধরা পরে জটিল রোগ। নাক,কান আর গলা দিয়ে পরতে থাকে রক্ত অনবরত। দিশে হারা হয়ে পরে ছোট মেয়ে নদী। সংসারে রয়েছে মা গৃহিনী নারগিস আক্তার(৪৫) আর ছোট বোন আফিয়া তাবাসসুম রোযা(৬)। সে স্থানীয় কেজি স্কুলে নার্সারীতে পড়ে। নদী স্বপ্ন দেখছিলেন বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর। তাই সে নিজের সুখ শান্তি আর আরাম আয়েশের কথা না ভেবে নেমে পরেন বাসা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে টিউশানী করতে। সেই স্বল্প টাকায়ই চলতো ৪ সদস্যের অভাবের সংসার আর নিজের লেখা পড়ার খরচ। শত কষ্টেও সে কারো কাছে হাত পাতেনি। অন্যের গলগ্রহ না হয়ে নিজের পরিশ্রমের টাকায় চলতেই সে স্বাচ্ছন্দ বোধ করত একারনেই দিনরাত পরিশ্রম করলেও ক্লান্তি যেন হার মানে তার কাছে। সেই নদীও আজ মরন ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার রক্তেও দেখা দিয়েছে সমস্যা।

 

এখন বেঁচে থাকতে পারাটাই যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার! দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কিন্তু অর্থাভাবে আটকে আছে তার চিকিৎসা। নদীর বাসা নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের খামারনাচকৈড় মহল্লায়।

 

গাইনি ও প্রসুতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তারান্না ইসলাম ইতি জানান , নদী ব্রেষ্ট ক্যান্সারসহ রক্তেও রয়েছে সমস্যা। দ্রæত চিকিৎসা করালে সুস্থ জীবনে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। অপর দিকে রাজশাহী মেডিক্যালের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, নদীর বাবা আখতার হোসেন ৮মাস যাবত লিভারে মারাত্বক রোগে ভুগছেন। ঠিক মতো চিকিৎসা না হলে যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

২ নং ওয়ার্ড কমিশনার শ্রী বিদ্যুত কুমার জানান, সত্যি ঘটনাটি দুঃখজন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এবং পৌর মেয়র শাহনেওয়াজকে বলে একটা ব্যবস্থা নিবো। তাছাড়া ডাক্তাররা বলেছেন দুই জনের চিকিৎসায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এই ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা করার সক্ষমতা তার পরিবারের নেই । তাই বাবা-মেয়েকে বাঁচাতে সরকারসহ বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।

নদীর মা নারগিস আক্তার জানান, তার মেয়ে নদী ও স্বামী আখতার হোসেনর প্রতিদিন ১ থেকে ২ হাজার টাকার ঔষধ লাগছে তাছাড়া থেরাপি তো আছেই। শেষ সম্বল জীবন দুটি বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশ বিদেশের বিত্তবানদের দয়া ও সহযোগীতা চেয়েছেন।

নদীর জন্য সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা-
বিকাশ +8801328917454 নদীর আম্মু।
অথবা নদীর বাবা ব্যাংক একাউন্ট নং ০১০০০৩০১১৫৪৬০ জনতা ব্যাংক গুরুদাসপুর শাখা(স্থান চাঁচকৈড় বাজার) গুরুদাসপুর, নাটোর।