শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেই আরাভ খানের দেশের প্রতিটি জেলায় মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:১৯:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩
  • ৬৫ Time View

বনলতা ডেস্ক.  আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে সোহাগ মোল্লা ওরফে রবিউল ইসলাম রবি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে আরাভ খান তার ফেসবুক লাইভে এসে এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুরের ছেলে। আমি ঢাকায় এসে অনেক কষ্ট করেছি। হোটেলে কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে আমি আজ এ অবস্থানে এসেছি। আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন তাহলে খুব শীঘ্রই দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করবো।’

নিজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার কথা তুলে ধরে আরাভ খান বলেন, ‘আমার নামে মামলা হয়েছে এ কথা সত্য। তবে আমি কোন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। পুলিশ আমাকে অস্ত্র মামলায় জেলে দিয়েছে। এ কথা সত্য। তবে আমি দোষী না। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় জেলে গিয়েছি। আবার জামিনে বেরিয়ে এসেছি। আদালত যদি আমাকে সাজা দেয় তাহলে আমি সে সাজা মাথা পেতে নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও সাকিব আল হাসান ভাই আমার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন। এ জন্য আমি সাকিব আল হাসান ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।’

নিজের ব্যবসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরাভ খান বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমি আমার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছি। এখানে আমার কিছু ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটাচ্ছে। গণমাধ্যমে যেসব খবর আসছে তা পুরোপুরি সত্য নয় বলে দাবি করেন আলোচিত এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী।

আরাভ খান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে তার প্রকৃত নাম সোহাগ মোল্লা বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সোহাগ মোল্লা আশুতিয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে। মতিয়ার রহমান মোল্লা এক সময় বাগেরহাট জেলার চিতলমারি উপজেলায় ফেরি করে সিলভারের হাড়ি পাতিল বিক্রি করতেন। সেখানেই ১৯৮৮ সালে সোহাগ মোল্লার জন্ম হয়। ২০০৫ সালে চিতলমারি সদরের একটি বিদ্যালয় থেকে সোহাগ মোল্লা এসএসসি পাশ করে। দারিদ্রতার কারণে এরপর আর তার লেখাপড়া হয়নি।

চিতলমারি থেকে ২০০৮ সালে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সে ঢাকা চলে যায়। ঢাকা গিয়ে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায় মোল্লা আপন। জড়িয়ে পরে অপরাধ জগতে। ঢাকায় পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণে ঢাকার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ডজন খানেক মামলা হয়। এরপর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি, ওরফে আরাভ খান ভারতে কোলকাতায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে চলে যান দুবাইয়ে।

এদিকে, আরাভ খানের দুবাইয়ে এই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের খবর জানাজানি হলে এলাকায় আলোচনায় ঝড় ওঠে। সকলের মুখে মুখে একই প্রশ্ন সোহাগ মোল্লা কিভাবে রাতারাতি এতো টাকার মালিক বনে গেলেন?

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খানের চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লার সঙ্গে। তিনিও আরাভ খান অল্প দিনে এতো টাকার মালিক হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কয়েকদিন আগে সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান তার দুই বোন ও মা-বাবাকে দুবাই নিয়ে গেছে।

হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, ‘সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান একই ব্যক্তি। আমার গ্রামেই তার বাড়ি। সে একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। গত পাঁচ/সাত বছর ধরে সে এলাকায় আসে না। হঠাৎ করে সে কিভাবে এতো টাকার মালিক হলো এটা আমাদের বোধগম্য নহে।’

কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আরাভ খানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত নয়টি ওয়ারেন্ট আমার থানায় এসেছে। আমি ওয়ারেন্টগুলো তামিল করার জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার কোন হদিস আমরা পাইনি।’

Tag :

সেই আরাভ খানের দেশের প্রতিটি জেলায় মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা

Update Time : ০৫:১৯:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩

বনলতা ডেস্ক.  আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে সোহাগ মোল্লা ওরফে রবিউল ইসলাম রবি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে আরাভ খান তার ফেসবুক লাইভে এসে এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুরের ছেলে। আমি ঢাকায় এসে অনেক কষ্ট করেছি। হোটেলে কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে আমি আজ এ অবস্থানে এসেছি। আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন তাহলে খুব শীঘ্রই দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করবো।’

নিজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার কথা তুলে ধরে আরাভ খান বলেন, ‘আমার নামে মামলা হয়েছে এ কথা সত্য। তবে আমি কোন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। পুলিশ আমাকে অস্ত্র মামলায় জেলে দিয়েছে। এ কথা সত্য। তবে আমি দোষী না। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় জেলে গিয়েছি। আবার জামিনে বেরিয়ে এসেছি। আদালত যদি আমাকে সাজা দেয় তাহলে আমি সে সাজা মাথা পেতে নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও সাকিব আল হাসান ভাই আমার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন। এ জন্য আমি সাকিব আল হাসান ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।’

নিজের ব্যবসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরাভ খান বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমি আমার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছি। এখানে আমার কিছু ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটাচ্ছে। গণমাধ্যমে যেসব খবর আসছে তা পুরোপুরি সত্য নয় বলে দাবি করেন আলোচিত এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী।

আরাভ খান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে তার প্রকৃত নাম সোহাগ মোল্লা বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সোহাগ মোল্লা আশুতিয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে। মতিয়ার রহমান মোল্লা এক সময় বাগেরহাট জেলার চিতলমারি উপজেলায় ফেরি করে সিলভারের হাড়ি পাতিল বিক্রি করতেন। সেখানেই ১৯৮৮ সালে সোহাগ মোল্লার জন্ম হয়। ২০০৫ সালে চিতলমারি সদরের একটি বিদ্যালয় থেকে সোহাগ মোল্লা এসএসসি পাশ করে। দারিদ্রতার কারণে এরপর আর তার লেখাপড়া হয়নি।

চিতলমারি থেকে ২০০৮ সালে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সে ঢাকা চলে যায়। ঢাকা গিয়ে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায় মোল্লা আপন। জড়িয়ে পরে অপরাধ জগতে। ঢাকায় পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণে ঢাকার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ডজন খানেক মামলা হয়। এরপর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি, ওরফে আরাভ খান ভারতে কোলকাতায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে চলে যান দুবাইয়ে।

এদিকে, আরাভ খানের দুবাইয়ে এই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের খবর জানাজানি হলে এলাকায় আলোচনায় ঝড় ওঠে। সকলের মুখে মুখে একই প্রশ্ন সোহাগ মোল্লা কিভাবে রাতারাতি এতো টাকার মালিক বনে গেলেন?

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খানের চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লার সঙ্গে। তিনিও আরাভ খান অল্প দিনে এতো টাকার মালিক হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কয়েকদিন আগে সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান তার দুই বোন ও মা-বাবাকে দুবাই নিয়ে গেছে।

হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, ‘সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান একই ব্যক্তি। আমার গ্রামেই তার বাড়ি। সে একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। গত পাঁচ/সাত বছর ধরে সে এলাকায় আসে না। হঠাৎ করে সে কিভাবে এতো টাকার মালিক হলো এটা আমাদের বোধগম্য নহে।’

কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আরাভ খানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত নয়টি ওয়ারেন্ট আমার থানায় এসেছে। আমি ওয়ারেন্টগুলো তামিল করার জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার কোন হদিস আমরা পাইনি।’