শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নন্দকুজা নদী জুড়ে চলছে বোরো ধানের চাষ!

চলনবিলের নদীগুলোতে চলছে বোরো ধানের চাষ

মোঃ মাজেম আলী মলিন.চলনবিল অঞ্চলের প্রাণ কেন্দ্র নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া প্রায় ১৬টি নদী খালবিল এখন শ্রী,জৌলুশ ও স্বকীয়তা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। দখল, দূষণ ও ভরাটে এ উপজেলার প্রধান নদী নন্দকুঁজা, গুমানী, আত্রাইসহ তুলসীগঙ্গা, মির্জামামুদ ও খলিসাডাঙ্গা নদী সংকুচিত হয়ে পড়ায় অস্তিত্ব সংকটে।এ অবস্থায় স্থানীয়রা যার যার সীমানা অনুযায়ী করছে বরোধানের চাষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা শেষে চলনবিলের নদী-নালা ও খাল-বিলে পানি থাকে না। তাই বন্ধ হয়ে যায় নৌ চলাচলসহ জেলেদের মাছ ধরা। ধ্বংস হয় জীববৈচিত্র, ব্যাহত হয় স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। সমস্যা দেখা দেয় সেচ কার্যেও। ফলে কৃষিজমির সেচকার্য্য ব্যহতসহ দেশীয় মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। বেকার হচ্ছে নদীথেকে জীবিকা অর্জন করে চলা মানুষগুলো। ব্যবসা- বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

দুর্গাপুর গ্রামের সব চেয়ে প্রবীণ কৃষক ইউনুছ(৭৫) জানান, কৈশোর ও যৌবন কালে আমরা আত্রাই নদীতে সাতারকেটে ওপার যেতে ভয় পেতাম। নদীতে শিশু বৃদ্ধ যবক ও নারী-পুরুষ এক সাথে গোসল করতাম। গরু ঝাপাতাম। ধানপাটসহ কৃষি পণ্য নিয়ে নদী পথে হাট বাজারে যেতাম। গৃহস্থালী যাবতীয় কাজ করতাম এই নদীতেই। এক সময় এসব নদীতেই বছর জুড়ে পানি থাকতো। চলাচল করত ছোট বড় নৌকা। অথচ এখন ওই নদীতেই ধান চাষ হচ্ছে। এসব নদী এখন মৃত্যুপ্রায়।

গুরুদাসপুর বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা রুমা জানান, এসব নদী আর নৌকাকে ঘিরেই গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, নাজিরপুর, খুবজীপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, আহম্মেদপুর, তাড়াশ, ধামাইচ, নাদোসৈয়দপুর, চাটমোহর, ছাইকোলা, অষ্টমনিষা, মির্জাপুর, ভাঙ্গুড়ায় গড়ে উঠেছিল বড় নৌবন্দরে চলত রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য। কালের বিবর্তনে সেসব এখন শুধুই ইতিহাস।

স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, নদীর পানিতে সেচ সুবিধা সহ ফসলের উৎপাদন খরচ কম হতো। এখন আর নদীর পানি দিয়ে সেচ হয়না। আবার ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিক্রিতে মূল্য পাওয়া যায় না। এক সময় নৌকায় করে শত শত মণ ধান, পাট, গম সরিষাসহ চলনবিলের সকল কৃষিজাত পণ্য ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করতেন ব্যবসায়ীরা। মোকাম থেকেই নানা পণ্য গুরুদাসপুরে এনে পাইকারি দামে বিক্রি করতেন। নদীপথে কম খরচে সহজলভ্য পরিবহন সুবিধা ভোগ করলেও বর্তমানে পানি না থাকায় আগের মত ব্যবসা করতে পারছেন না তারা।

চলনবিল ও নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদ মোল্লা জানান, গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া থেকে উপজেলার চলনালী-কান্দিপাড়া, কান্টাগাড়ী বিল হয়ে পাটপাড়া, সোনাবাজু, চাকলের বিল এবং পশ্চিমের চাপিলা হয়ে নন্দকুঁজা নদীতে মিলিত হয়েছে মির্জা-মামুদ নদী। এই নদীর সংযোগ নালা বয়ে গেছে দক্ষিণের সিধুলী হয়ে চরকাদহ, ধারাবারিষা, চামটা বিলে। দখল ও ভরাটে এই নদের স্মৃতিচিহ্নই মুছে গেছে। নদীগুলো রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপের দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে নাটোর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ২ হাজার ১৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে নাটোরের প্রধান নদী নারদ, বড়াল ও মুসাখাঁ মিলে ১৫৪ কিলোমিটার শাখা নদী পুনঃখননের জন্য পৃথক একটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলেই ছোট-বড় নদীনালা খনন হলে কিছুটা হলেও নাব্যতা ফিরে আসবে নদী ও ছোট বড় খালগুলোতে।

Tag :
About Author Information

Daily Banalata

নন্দকুজা নদী জুড়ে চলছে বোরো ধানের চাষ!

চলনবিলের নদীগুলোতে চলছে বোরো ধানের চাষ

Update Time : ০৭:৫০:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

মোঃ মাজেম আলী মলিন.চলনবিল অঞ্চলের প্রাণ কেন্দ্র নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া প্রায় ১৬টি নদী খালবিল এখন শ্রী,জৌলুশ ও স্বকীয়তা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। দখল, দূষণ ও ভরাটে এ উপজেলার প্রধান নদী নন্দকুঁজা, গুমানী, আত্রাইসহ তুলসীগঙ্গা, মির্জামামুদ ও খলিসাডাঙ্গা নদী সংকুচিত হয়ে পড়ায় অস্তিত্ব সংকটে।এ অবস্থায় স্থানীয়রা যার যার সীমানা অনুযায়ী করছে বরোধানের চাষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা শেষে চলনবিলের নদী-নালা ও খাল-বিলে পানি থাকে না। তাই বন্ধ হয়ে যায় নৌ চলাচলসহ জেলেদের মাছ ধরা। ধ্বংস হয় জীববৈচিত্র, ব্যাহত হয় স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। সমস্যা দেখা দেয় সেচ কার্যেও। ফলে কৃষিজমির সেচকার্য্য ব্যহতসহ দেশীয় মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। বেকার হচ্ছে নদীথেকে জীবিকা অর্জন করে চলা মানুষগুলো। ব্যবসা- বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

দুর্গাপুর গ্রামের সব চেয়ে প্রবীণ কৃষক ইউনুছ(৭৫) জানান, কৈশোর ও যৌবন কালে আমরা আত্রাই নদীতে সাতারকেটে ওপার যেতে ভয় পেতাম। নদীতে শিশু বৃদ্ধ যবক ও নারী-পুরুষ এক সাথে গোসল করতাম। গরু ঝাপাতাম। ধানপাটসহ কৃষি পণ্য নিয়ে নদী পথে হাট বাজারে যেতাম। গৃহস্থালী যাবতীয় কাজ করতাম এই নদীতেই। এক সময় এসব নদীতেই বছর জুড়ে পানি থাকতো। চলাচল করত ছোট বড় নৌকা। অথচ এখন ওই নদীতেই ধান চাষ হচ্ছে। এসব নদী এখন মৃত্যুপ্রায়।

গুরুদাসপুর বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা রুমা জানান, এসব নদী আর নৌকাকে ঘিরেই গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, নাজিরপুর, খুবজীপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, আহম্মেদপুর, তাড়াশ, ধামাইচ, নাদোসৈয়দপুর, চাটমোহর, ছাইকোলা, অষ্টমনিষা, মির্জাপুর, ভাঙ্গুড়ায় গড়ে উঠেছিল বড় নৌবন্দরে চলত রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য। কালের বিবর্তনে সেসব এখন শুধুই ইতিহাস।

স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, নদীর পানিতে সেচ সুবিধা সহ ফসলের উৎপাদন খরচ কম হতো। এখন আর নদীর পানি দিয়ে সেচ হয়না। আবার ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিক্রিতে মূল্য পাওয়া যায় না। এক সময় নৌকায় করে শত শত মণ ধান, পাট, গম সরিষাসহ চলনবিলের সকল কৃষিজাত পণ্য ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করতেন ব্যবসায়ীরা। মোকাম থেকেই নানা পণ্য গুরুদাসপুরে এনে পাইকারি দামে বিক্রি করতেন। নদীপথে কম খরচে সহজলভ্য পরিবহন সুবিধা ভোগ করলেও বর্তমানে পানি না থাকায় আগের মত ব্যবসা করতে পারছেন না তারা।

চলনবিল ও নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদ মোল্লা জানান, গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া থেকে উপজেলার চলনালী-কান্দিপাড়া, কান্টাগাড়ী বিল হয়ে পাটপাড়া, সোনাবাজু, চাকলের বিল এবং পশ্চিমের চাপিলা হয়ে নন্দকুঁজা নদীতে মিলিত হয়েছে মির্জা-মামুদ নদী। এই নদীর সংযোগ নালা বয়ে গেছে দক্ষিণের সিধুলী হয়ে চরকাদহ, ধারাবারিষা, চামটা বিলে। দখল ও ভরাটে এই নদের স্মৃতিচিহ্নই মুছে গেছে। নদীগুলো রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপের দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে নাটোর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ২ হাজার ১৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে নাটোরের প্রধান নদী নারদ, বড়াল ও মুসাখাঁ মিলে ১৫৪ কিলোমিটার শাখা নদী পুনঃখননের জন্য পৃথক একটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলেই ছোট-বড় নদীনালা খনন হলে কিছুটা হলেও নাব্যতা ফিরে আসবে নদী ও ছোট বড় খালগুলোতে।