বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এর জীবনি (পর্ব-২)

  • Special Correspondent.
  • Update Time : ০২:১১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩
  • ১৪৪ Time View

‘কেয়ার অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’.বঙ্গবন্ধু পিজি হাসপাতালের ডাইরেক্টর নুরুল ইসলামকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন, আমার কুদ্দুস কেমন আছে? মো. আব্দুল কুদ্দুসের শরীরের অবস্থা জানানোর পর নুরুল সাহেব বলেন, ওনার একটু সমস্যা হয়েছে। সেটা হলো, ওনার যে কাগজপত্র হাতে পেয়েছি, তাতে তো শুধু নাম পেয়েছি, কিন্তু ওনার বাবার নাম নেই। বঙ্গবন্ধু বলেন, ওই কাগজে যেখানে ওর বাবার নাম নেই সেখানে লেখো, কেয়ার অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর শোন, তুমি যে কোনোভাবেই হোক, ওকে সুস্থ করে তোলো। আমি ওকে জীবিত দেখতে চাই। পরে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষে নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরে এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা পিজি হাসপাতালে চলে আসেন। এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলেন। এসব দেখে সব ডাক্তাররা তো হতভম্ভ! এ কি ঘটনা!

এভাবেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে নিজের ছাত্ররাজনীতি জীবনের স্মৃতিচারণ করছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আব্দুল কুদ্দুস এমপি।

তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে সরাসরি রাজনীতি করার ফলে কাছ থেকে দেখেছি বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ। বঙ্গবন্ধু একজন আদর্শ নেতা ছিলেন। তার সান্নিধ্যে থেকে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমিও বঙ্গবন্ধুর নীতি আর আদর্শকে বুকে ধারণ করেছি। সে নীতি আর আদর্শ অনুসারে মানুষের সেবায় রাজনীতি করে যাচ্ছি।

সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন বরণ্যে এই রাজনীতিবিদ। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নেতৃত্বে তাঁর রাজনৈতিক জীবন, বঙ্গবন্ধুর সাথে কাটানো বিভিন্ন মধুর স্মৃতি। তাঁর সেই বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে দীর্ঘ আলাপচারিতা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।

প্রশ্নঃ জেনেছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপনি সরাসরি রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে কাটানো সেই দিনগুলো কেমন ছিলো?

মো. আব্দুল কুদ্দুস: সেই গল্প বলতে গেলে শেষ হবে না। তবুও ছোট করে বলি। ১৯৭৪ সালে নাটোরের একটা অংশ, রাজশাহীর বাঘমারা, আত্রাই, ভবানীপুর, গোদাগাড়ী, তানোর এই অঞ্চলে বিপ্লবী সরকার গঠন করবে অহিদুর রহমান। প্রতিদিনই মানুষ খুন হয়। সন্ত্রাসীরা তিন মাসে ৩২৬ মানুষ খুন করেছে। ওরা নাকি জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা প্রতিষ্ঠা করবে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন দখল করবে, বাংলাদেশের মুদ্রা পরিবর্তন করবে। এই সব হচ্ছে তাদের পরিকল্পনা। ডিগ্রি কলেজের একটা মেয়ে ছিলো। সে কলেজের মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক। ওর বাড়ি আত্রাইয়ে। তার রুমমেট আবার জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার সঙ্গে যুক্ত। ওর কাছে একটা বই মেয়েটা পড়তে দিয়েছে। ওই বইয়ের প্রথম দিকের কয়েক লাইনে বঙ্গবন্ধুর বংশ নিয়ে বিভিন্ন আজেবাজে কথা লিখেছে। ধ্বংস করতে হবে, খুন করতে হবে এসব আর কি। এছাড়া জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা সরকার গড়ার বিভিন্ন বিষয়ে লেখা ছিলো।

ওই বইটা আমার কাছে এসে পৌঁছে। আমি বুঝতে পারলাম এই কারণেই তো এতো লোক মারা যাচ্ছে। আমি ভাবলাম, উচ্চ পর্যায়ের গোপন একটা খবর। বঙ্গবন্ধুকে জানানো দরকার। ঢাকায় গেলাম। সময়টা ১৯৭৪ এর মে মাস। স্রেফ আমি, বঙ্গবন্ধু আর রফিকুল্লাহ চেীধুরী (স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা)। উনি বঙ্গবন্ধুর সচিব ছিলেন। উনি বইটা পড়লেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর সাহেবকে ডাকলেন। উনি আসলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, মনুসর ভাই আপনে হচ্ছেন গিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আমি হচ্ছি প্রধানমন্ত্রী। আমাদের এসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই আছে। তারা কোনো খবর পেলো না, কুদ্দুস খবরটা নিয়ে আসলো। কী ব্যবস্থা নিবো বলেন? আপনি যা বলেন তাই হবে।

নেতা (বঙ্গবন্ধু) সেনাবাহিনী প্রধান শফিউল্লাহকে ডাকলেন। রক্ষীবাহিনীর চিফ ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান ও বিডিআরের চিফ মেজর জেনারেল সিআর দত্তকে ডাকলেন। ডিজিএফআই, এনএসআইকে ডাকার পর বললেন, আজকে প্ল্যান করেন। ওখানে কম্বিং অপারেশন হবে। এর পলিটিক্যাল লিয়াঁজো করবে কুদ্দুস। লিখিত দিয়ে দিলেন।

তিনদিনের মধ্যে বৃহত্তর রাজশাহীতে ৮টা ক্যাম্প হলো। হেড কোয়ার্টার ছিলো তানোর। সেখানে মেজর আশরাফের সাথে আমি থাকতাম। সবকিছু দেখাশোনা করতেন কর্নেল শাফায়াত জামিল। নানা জায়গায় প্রায় আড়াই মাসের মতো অভিযান পরিচালিত হলো। হঠাৎ করে শোনা যায় তারাও সংগঠিত হচ্ছে। ক্যাম্পের কাছে একটা বিল ছিলো। খবর আসে সেই বিলের পাড়ে একটা বাড়ি দখল করেছে প্রায় ২০০ সন্ত্রাসী। তারা আমাদের মেইন ক্যাম্পে আক্রমণ করবে বলে ঠিক করেছিলো। আমাদের কাছে খবর এলো। পরে আমরা পরদিন সকালেই অভিযান চালাই। তখন জুলাই মাস। আমরা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১১০ জনকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসি। এই তাদের পতন হয়ে গেলো।

এর দুই দিন পর জেনারেল শফিউল্লাহ ও মেজর জেনারেল জিয়া ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। জিয়া বলেন, এই আশরাফ তোমাদের গোলাগুলিতে নাকি বহু লোকজন মারা গেছে। লাশ কোথায়? আশরাফ বলেন, না স্যার, আমরা যাদের অ্যারেস্ট করেছি তাদের পুলিশে দিয়ে দিয়েছি। পুলিশ তাদেরকে রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে।

যুদ্ধের সময় ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ইন্ডিয়ান আর্মির পক্ষ থেকে আমাকে একটা অস্ত্র দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছিলো। টেন্টে বালিশের ওপর ছিলো অস্ত্রটা। জিয়া কোথা থেকে সেই খবর পেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কার? আমি বললাম আমার। তিনি বললেন, এসব অস্ত্র সেনাবাহিনীর কাছে থাকে। অন্যের কাছে থাকা অবৈধ। এই বলে তিনি অস্ত্রটা নিয়ে নিলেন। আমি বললাম, এটা তো আপনারা দেননি। এটা রাখার পারমিশন আছে। আমি সাথে সাথেই বলেছি, এটা নিয়ে আপনি হজম করতে পারবেন না।

অভিযান শেষ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ঘটনা শোনার জন্য ঢাকায় ডাকলেন। সবকিছু শোনার পর বঙ্গবন্ধু চুমু দিলেন। আমার গায়ে বঙ্গবন্ধুর কত যে চুমু আছে, তার হিসাব নাই। কামরুজ্জামান হেনা ভাইয়ের বাসায় গেলাম। বললাম, আমার কাছ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসলেন জিনিসটা কি পাবো না। তিনি বললেন, আমার কাছে নাই। দেখতে থাকুন ৩য় -পর্ব

Tag :
About Author Information

Daily Banalata

অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এর জীবনি (পর্ব-২)

Update Time : ০২:১১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩

‘কেয়ার অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’.বঙ্গবন্ধু পিজি হাসপাতালের ডাইরেক্টর নুরুল ইসলামকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন, আমার কুদ্দুস কেমন আছে? মো. আব্দুল কুদ্দুসের শরীরের অবস্থা জানানোর পর নুরুল সাহেব বলেন, ওনার একটু সমস্যা হয়েছে। সেটা হলো, ওনার যে কাগজপত্র হাতে পেয়েছি, তাতে তো শুধু নাম পেয়েছি, কিন্তু ওনার বাবার নাম নেই। বঙ্গবন্ধু বলেন, ওই কাগজে যেখানে ওর বাবার নাম নেই সেখানে লেখো, কেয়ার অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর শোন, তুমি যে কোনোভাবেই হোক, ওকে সুস্থ করে তোলো। আমি ওকে জীবিত দেখতে চাই। পরে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষে নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরে এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা পিজি হাসপাতালে চলে আসেন। এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলেন। এসব দেখে সব ডাক্তাররা তো হতভম্ভ! এ কি ঘটনা!

এভাবেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে নিজের ছাত্ররাজনীতি জীবনের স্মৃতিচারণ করছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আব্দুল কুদ্দুস এমপি।

তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে সরাসরি রাজনীতি করার ফলে কাছ থেকে দেখেছি বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ। বঙ্গবন্ধু একজন আদর্শ নেতা ছিলেন। তার সান্নিধ্যে থেকে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমিও বঙ্গবন্ধুর নীতি আর আদর্শকে বুকে ধারণ করেছি। সে নীতি আর আদর্শ অনুসারে মানুষের সেবায় রাজনীতি করে যাচ্ছি।

সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন বরণ্যে এই রাজনীতিবিদ। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নেতৃত্বে তাঁর রাজনৈতিক জীবন, বঙ্গবন্ধুর সাথে কাটানো বিভিন্ন মধুর স্মৃতি। তাঁর সেই বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে দীর্ঘ আলাপচারিতা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।

প্রশ্নঃ জেনেছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপনি সরাসরি রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে কাটানো সেই দিনগুলো কেমন ছিলো?

মো. আব্দুল কুদ্দুস: সেই গল্প বলতে গেলে শেষ হবে না। তবুও ছোট করে বলি। ১৯৭৪ সালে নাটোরের একটা অংশ, রাজশাহীর বাঘমারা, আত্রাই, ভবানীপুর, গোদাগাড়ী, তানোর এই অঞ্চলে বিপ্লবী সরকার গঠন করবে অহিদুর রহমান। প্রতিদিনই মানুষ খুন হয়। সন্ত্রাসীরা তিন মাসে ৩২৬ মানুষ খুন করেছে। ওরা নাকি জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা প্রতিষ্ঠা করবে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন দখল করবে, বাংলাদেশের মুদ্রা পরিবর্তন করবে। এই সব হচ্ছে তাদের পরিকল্পনা। ডিগ্রি কলেজের একটা মেয়ে ছিলো। সে কলেজের মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক। ওর বাড়ি আত্রাইয়ে। তার রুমমেট আবার জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার সঙ্গে যুক্ত। ওর কাছে একটা বই মেয়েটা পড়তে দিয়েছে। ওই বইয়ের প্রথম দিকের কয়েক লাইনে বঙ্গবন্ধুর বংশ নিয়ে বিভিন্ন আজেবাজে কথা লিখেছে। ধ্বংস করতে হবে, খুন করতে হবে এসব আর কি। এছাড়া জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলা সরকার গড়ার বিভিন্ন বিষয়ে লেখা ছিলো।

ওই বইটা আমার কাছে এসে পৌঁছে। আমি বুঝতে পারলাম এই কারণেই তো এতো লোক মারা যাচ্ছে। আমি ভাবলাম, উচ্চ পর্যায়ের গোপন একটা খবর। বঙ্গবন্ধুকে জানানো দরকার। ঢাকায় গেলাম। সময়টা ১৯৭৪ এর মে মাস। স্রেফ আমি, বঙ্গবন্ধু আর রফিকুল্লাহ চেীধুরী (স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা)। উনি বঙ্গবন্ধুর সচিব ছিলেন। উনি বইটা পড়লেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর সাহেবকে ডাকলেন। উনি আসলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, মনুসর ভাই আপনে হচ্ছেন গিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আমি হচ্ছি প্রধানমন্ত্রী। আমাদের এসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই আছে। তারা কোনো খবর পেলো না, কুদ্দুস খবরটা নিয়ে আসলো। কী ব্যবস্থা নিবো বলেন? আপনি যা বলেন তাই হবে।

নেতা (বঙ্গবন্ধু) সেনাবাহিনী প্রধান শফিউল্লাহকে ডাকলেন। রক্ষীবাহিনীর চিফ ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান ও বিডিআরের চিফ মেজর জেনারেল সিআর দত্তকে ডাকলেন। ডিজিএফআই, এনএসআইকে ডাকার পর বললেন, আজকে প্ল্যান করেন। ওখানে কম্বিং অপারেশন হবে। এর পলিটিক্যাল লিয়াঁজো করবে কুদ্দুস। লিখিত দিয়ে দিলেন।

তিনদিনের মধ্যে বৃহত্তর রাজশাহীতে ৮টা ক্যাম্প হলো। হেড কোয়ার্টার ছিলো তানোর। সেখানে মেজর আশরাফের সাথে আমি থাকতাম। সবকিছু দেখাশোনা করতেন কর্নেল শাফায়াত জামিল। নানা জায়গায় প্রায় আড়াই মাসের মতো অভিযান পরিচালিত হলো। হঠাৎ করে শোনা যায় তারাও সংগঠিত হচ্ছে। ক্যাম্পের কাছে একটা বিল ছিলো। খবর আসে সেই বিলের পাড়ে একটা বাড়ি দখল করেছে প্রায় ২০০ সন্ত্রাসী। তারা আমাদের মেইন ক্যাম্পে আক্রমণ করবে বলে ঠিক করেছিলো। আমাদের কাছে খবর এলো। পরে আমরা পরদিন সকালেই অভিযান চালাই। তখন জুলাই মাস। আমরা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১১০ জনকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসি। এই তাদের পতন হয়ে গেলো।

এর দুই দিন পর জেনারেল শফিউল্লাহ ও মেজর জেনারেল জিয়া ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। জিয়া বলেন, এই আশরাফ তোমাদের গোলাগুলিতে নাকি বহু লোকজন মারা গেছে। লাশ কোথায়? আশরাফ বলেন, না স্যার, আমরা যাদের অ্যারেস্ট করেছি তাদের পুলিশে দিয়ে দিয়েছি। পুলিশ তাদেরকে রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে।

যুদ্ধের সময় ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ইন্ডিয়ান আর্মির পক্ষ থেকে আমাকে একটা অস্ত্র দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছিলো। টেন্টে বালিশের ওপর ছিলো অস্ত্রটা। জিয়া কোথা থেকে সেই খবর পেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কার? আমি বললাম আমার। তিনি বললেন, এসব অস্ত্র সেনাবাহিনীর কাছে থাকে। অন্যের কাছে থাকা অবৈধ। এই বলে তিনি অস্ত্রটা নিয়ে নিলেন। আমি বললাম, এটা তো আপনারা দেননি। এটা রাখার পারমিশন আছে। আমি সাথে সাথেই বলেছি, এটা নিয়ে আপনি হজম করতে পারবেন না।

অভিযান শেষ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ঘটনা শোনার জন্য ঢাকায় ডাকলেন। সবকিছু শোনার পর বঙ্গবন্ধু চুমু দিলেন। আমার গায়ে বঙ্গবন্ধুর কত যে চুমু আছে, তার হিসাব নাই। কামরুজ্জামান হেনা ভাইয়ের বাসায় গেলাম। বললাম, আমার কাছ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসলেন জিনিসটা কি পাবো না। তিনি বললেন, আমার কাছে নাই। দেখতে থাকুন ৩য় -পর্ব