শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমনায় বোমা হামলার ২২ বছর বিচারে মন্থরগতি

  • বনলতা ডেস্ক.
  • Update Time : ১০:৪৭:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩
  • ৬৬ Time View

বনলতা ডেস্ক.পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দুটি মামলার বিচারে গতি নেই। ঘটনার ২২ বছরে হত্যা মামলাটি বিচারিক আদালতে রায় হলেও উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স বিচারাধীন রয়েছে প্রায় ৯ বছর। আর বিস্ফোরক আইনে দায়ের হওয়া মামলাটি বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

জানা যায়, হত্যা মামলাটির ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চে ২০২১ সালের ২৪ জুন দিন ধার্য ছিল। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিনের বেঞ্চ। কিন্তু বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলে ওই বেঞ্চটি ভেঙে যায়। মামলার নথি চলে যায় প্রধান বিচারপতির কাছে। এখন প্রধান বিচারপতি অন্য একটি বেঞ্চে পাঠালে সেখানে মামলার শুনানি হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি কোনো বেঞ্চের তালিকায় দেখা যায়নি।

জানতে চাইলে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, রমনা বটমূলে বোমা হামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলটি বর্তমানে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনে রয়েছে। শুনানির জন্য শিগগিরই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে পাঠানো হবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহিন আহমেদ খান বলেন, ডেথ রেফারেন্সটি এর আগেও কয়েকটি বেঞ্চের তালিকায় শুনানির জন্য ছিল। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় দিয়েছিলেন। সর্বশেষ আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিলেও বেঞ্চটি ভেঙে যায়। পরে মামলার নথি চলে যায় প্রধান বিচারপতির কাছে। শুনেছি হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চে শুনানির জন্য সেটি পাঠানো হতে পারে।

আইনজীবীরা বলছেন, বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা হিসাবে পরিচিত। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায় ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। আর সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারাগারে থেকে জেল আপিল করতে পারেন। এছাড়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদনও করতে পারেন। ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করতে হয়। প্রক্রিয়া শেষে ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল, জেল আপিল ও আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।

সুপ্রিমকোর্ট সূত্র জানায়, এই মামলাটিতে ২০১৬ সালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য ছিল। ওই বেঞ্চে শুনানি শুরু হলেও পরে এই আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটির শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে মামলাটি হাইকোর্টের আরও কয়েকটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় এলেও আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন ও বেঞ্চের বিচারকের পরিবর্তন এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিন পর মামলাটি শুনানির জন্য আবারও হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসে।

বাঙালির ঐতিহ্যের অন্যতম একটি উৎসব পহেলা বৈশাখ। সেই অনুষ্ঠানে ২০০১ সালে চালানো হয় নারকীয় বোমা হামলা। ছায়ানটের অনুষ্ঠানে সেই হামলায় নিহত হন ১০ জন, আহত হন শতাধিক। ঘটনার পরপরই হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়। ঘটনার প্রায় ১৩ বছর পর হত্যা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত। ২০১৪ সালের ওই রায়ে মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে ডেথ রেফারেন্স শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্বাস আলী বলেন, রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায়ের নথি হাইকোর্টে আসার পর যথারীতি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। মামলাটির ডেথ রেফারেন্স এখনো শুনানি হয়নি। এটা সম্পূর্ণ প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আব্দুল্লাহ আবু জানান, বিস্ফোরক মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের প্রায় শেষ পর্যায়ে।

দুই বছর করোনার কারণে বিচার বিলম্বিত হয়েছে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আলোচিত এই মামলাটির ডেথ রেফারেন্স ৯ বছর ধরে হাইকোর্টে পড়ে থাকা দুঃখজনক। দ্রুত মামলাটির শুনানি হওয়া দরকার। জাতি এটা প্রত্যাশা করে।

Tag :
About Author Information

Daily Banalata

রমনায় বোমা হামলার ২২ বছর বিচারে মন্থরগতি

Update Time : ১০:৪৭:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩

বনলতা ডেস্ক.পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দুটি মামলার বিচারে গতি নেই। ঘটনার ২২ বছরে হত্যা মামলাটি বিচারিক আদালতে রায় হলেও উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স বিচারাধীন রয়েছে প্রায় ৯ বছর। আর বিস্ফোরক আইনে দায়ের হওয়া মামলাটি বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

জানা যায়, হত্যা মামলাটির ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চে ২০২১ সালের ২৪ জুন দিন ধার্য ছিল। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মোবিনের বেঞ্চ। কিন্তু বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলে ওই বেঞ্চটি ভেঙে যায়। মামলার নথি চলে যায় প্রধান বিচারপতির কাছে। এখন প্রধান বিচারপতি অন্য একটি বেঞ্চে পাঠালে সেখানে মামলার শুনানি হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি কোনো বেঞ্চের তালিকায় দেখা যায়নি।

জানতে চাইলে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, রমনা বটমূলে বোমা হামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলটি বর্তমানে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনে রয়েছে। শুনানির জন্য শিগগিরই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে পাঠানো হবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহিন আহমেদ খান বলেন, ডেথ রেফারেন্সটি এর আগেও কয়েকটি বেঞ্চের তালিকায় শুনানির জন্য ছিল। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় দিয়েছিলেন। সর্বশেষ আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিলেও বেঞ্চটি ভেঙে যায়। পরে মামলার নথি চলে যায় প্রধান বিচারপতির কাছে। শুনেছি হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চে শুনানির জন্য সেটি পাঠানো হতে পারে।

আইনজীবীরা বলছেন, বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা হিসাবে পরিচিত। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায় ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। আর সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারাগারে থেকে জেল আপিল করতে পারেন। এছাড়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদনও করতে পারেন। ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করতে হয়। প্রক্রিয়া শেষে ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল, জেল আপিল ও আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।

সুপ্রিমকোর্ট সূত্র জানায়, এই মামলাটিতে ২০১৬ সালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য ছিল। ওই বেঞ্চে শুনানি শুরু হলেও পরে এই আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটির শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে মামলাটি হাইকোর্টের আরও কয়েকটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় এলেও আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন ও বেঞ্চের বিচারকের পরিবর্তন এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিন পর মামলাটি শুনানির জন্য আবারও হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসে।

বাঙালির ঐতিহ্যের অন্যতম একটি উৎসব পহেলা বৈশাখ। সেই অনুষ্ঠানে ২০০১ সালে চালানো হয় নারকীয় বোমা হামলা। ছায়ানটের অনুষ্ঠানে সেই হামলায় নিহত হন ১০ জন, আহত হন শতাধিক। ঘটনার পরপরই হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়। ঘটনার প্রায় ১৩ বছর পর হত্যা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত। ২০১৪ সালের ওই রায়ে মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে ডেথ রেফারেন্স শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্বাস আলী বলেন, রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায়ের নথি হাইকোর্টে আসার পর যথারীতি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। মামলাটির ডেথ রেফারেন্স এখনো শুনানি হয়নি। এটা সম্পূর্ণ প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আব্দুল্লাহ আবু জানান, বিস্ফোরক মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের প্রায় শেষ পর্যায়ে।

দুই বছর করোনার কারণে বিচার বিলম্বিত হয়েছে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আলোচিত এই মামলাটির ডেথ রেফারেন্স ৯ বছর ধরে হাইকোর্টে পড়ে থাকা দুঃখজনক। দ্রুত মামলাটির শুনানি হওয়া দরকার। জাতি এটা প্রত্যাশা করে।