শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণ ও স্মরণকালের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে স্মরণকালের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ঈদুল ফিতরের জামাত। শনিবার (২২ এপ্রিল) ঐতিহাসিক এ ময়দানের ১৯৬তম ঈদুল ফিতরের নামাজে অংশগ্রহণ করেন লাখ লাখ মুসল্লি।

এতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, এবারও দেশ-বিদেশের ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এ ময়দানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন।

 

শোলাকিয়ায় নামাজ আদায়ে দুই দিন ধরেই গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোরসহ ৬৪টি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে কিশোরগঞ্জে লোক আসতে শুরু করে। অনেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাসায়, আবাসিক হোটেল, শহরের মসজিদগুলোতে এবং ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে রাতযাপন করেন।

ভোররাতে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও হেঁটে হাজারো মানুষ কিশোরগঞ্জে আসেন। সবার গন্তব্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া। সকাল সাড়ে ৮টার আগেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সকাল ১০টায় নামাজ শুরু হলে শোলাকিয়া মাঠে উপচেপড়া ভিড়ের কারণে আশপাশের রাস্তা-ঘাট, বাড়ির ছাদ, নরসুন্দা নদীর পাড়ে মুসল্লিরা নামাজের কাতার করে দাঁড়িয়ে যান।

ঈদগাহ ময়দানের রেওয়াজ অনুযায়ী নামাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগে পরপর তিনবার শটগানের গুলি ছুঁড়ে মুসল্লিদের নামাজে দাঁড়ানোর সংকেত দেওয়া হয়।

নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট. মো. জিল্লুর রহমান, পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ বিশিষ্টজনেরা এ মাঠে নামাজ আদায় করেন।

এদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ‘শোলাকিয়া স্পেশাল এক্সপ্রেস ট্রেন’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে ভোর ছয়টায় ছেড়ে সকাল আটটায় কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ স্টেশনে আসে। অন্যটি ভোর পৌনে ছয়টায় ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে সকাল সাড়ে আটটায় কিশোরগঞ্জে পৌঁছে। ট্রেন দুটি দুপুর ১২টায় আগত মুসল্লিদের নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়া ময়দানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ঈদ জামাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তায় এ বছর চার স্তরে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মাঠ ও আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ৬টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়। এবারের ঈদের জামাতে টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারেনি মুসল্লিরা।

ফায়ার সার্ভিসসহ ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে প্রস্তুত ছিল মেডিকেল টিম। ছিল পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম। ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তায় বোমা শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয়করণের একটি দল ঢাকা আসে শোলাকিয়া মাঠে। এছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি সদস্যের উপস্থিতি ছিল পুরো এলাকায়।

Tag :
About Author Information

Daily Banalata

লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণ ও স্মরণকালের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

Update Time : ০৫:২৭:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ এপ্রিল ২০২৩

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে স্মরণকালের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ঈদুল ফিতরের জামাত। শনিবার (২২ এপ্রিল) ঐতিহাসিক এ ময়দানের ১৯৬তম ঈদুল ফিতরের নামাজে অংশগ্রহণ করেন লাখ লাখ মুসল্লি।

এতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, এবারও দেশ-বিদেশের ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এ ময়দানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন।

 

শোলাকিয়ায় নামাজ আদায়ে দুই দিন ধরেই গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোরসহ ৬৪টি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে কিশোরগঞ্জে লোক আসতে শুরু করে। অনেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাসায়, আবাসিক হোটেল, শহরের মসজিদগুলোতে এবং ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে রাতযাপন করেন।

ভোররাতে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও হেঁটে হাজারো মানুষ কিশোরগঞ্জে আসেন। সবার গন্তব্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া। সকাল সাড়ে ৮টার আগেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সকাল ১০টায় নামাজ শুরু হলে শোলাকিয়া মাঠে উপচেপড়া ভিড়ের কারণে আশপাশের রাস্তা-ঘাট, বাড়ির ছাদ, নরসুন্দা নদীর পাড়ে মুসল্লিরা নামাজের কাতার করে দাঁড়িয়ে যান।

ঈদগাহ ময়দানের রেওয়াজ অনুযায়ী নামাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগে পরপর তিনবার শটগানের গুলি ছুঁড়ে মুসল্লিদের নামাজে দাঁড়ানোর সংকেত দেওয়া হয়।

নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট. মো. জিল্লুর রহমান, পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ বিশিষ্টজনেরা এ মাঠে নামাজ আদায় করেন।

এদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ‘শোলাকিয়া স্পেশাল এক্সপ্রেস ট্রেন’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে ভোর ছয়টায় ছেড়ে সকাল আটটায় কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ স্টেশনে আসে। অন্যটি ভোর পৌনে ছয়টায় ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে সকাল সাড়ে আটটায় কিশোরগঞ্জে পৌঁছে। ট্রেন দুটি দুপুর ১২টায় আগত মুসল্লিদের নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়া ময়দানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ঈদ জামাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তায় এ বছর চার স্তরে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মাঠ ও আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ৬টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়। এবারের ঈদের জামাতে টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারেনি মুসল্লিরা।

ফায়ার সার্ভিসসহ ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে প্রস্তুত ছিল মেডিকেল টিম। ছিল পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম। ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তায় বোমা শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয়করণের একটি দল ঢাকা আসে শোলাকিয়া মাঠে। এছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি সদস্যের উপস্থিতি ছিল পুরো এলাকায়।