শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিয়তির সংমিশ্রণ

পর্ব এক.
সময়টা নব্বই দশকের মাঝামাঝি।কনকনে শীতের সকালে চারিদিকের প্রকৃতি  কুঁকড়ে আছে। তবুও খেটে খাওয়া গ্রামের  মানুষগুলো থেমে নেই। কেউ বা শুকনো লাঠি ভেঙে আগুন জ্বালিয়ে শীত কমানোর চেষ্টা করছে। আবার কেউ ছেঁড়া কাঁথা জরীয়ে মাঠে কাজ করে। আবার গ্রামের গরীব ঘরের বউ রাও তাদের ঘরের মানুষদের কাজে হাত মেলাচ্ছে। আবার সেখানে গ্রামের ছোট বড় ছেলে মেয়েরাও কাজ করছে পরিবারের আর্থিক যোগান দিতে। এর মধ্যে দুলি ও  তার বান্ধবিদের ঝাঁক  কাজ করছে।সবে মাত্র ৭ম শ্রেণিতে পরে  দুলি।   সে আর তার বান্ধবিরা আলুর ক্ষেতে কাজ করছে।  এক কেজি আলু তুলে দিলে চার আনা টাকা ।  মা,বাবার  অভাবের সংসারের কোন না কোনো কাজ করে  সেও কিছু টাকা যোগান দেয়।  পাঁচ  ভাই বোন দের মধ্যে মধ্যে ও বড়।তাই  ৯জন এর সংসারে ছোট হলেও তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। ওহ্ হ্যা বলাই হয় নি। তাদের সংসারে আরো দুজন সদস্য আছে দুলির নানা,নানি।  দুলির মা তার বাবা,মা এর একটা মাত্র মেয়ে। একমাত্র মেয়েকে ছাড়া উনারা থাকতে পারেন নি।তাই অভাবের সংসারে উনারাও হাতে হাতে কাজ করেন।
দুলিঃ আহ্
মলিঃ কি রে কি হলো?
দুলিঃ হাতের ফোস্কাটা গলে গেছে রে।
মলি ঃ দেখি দেখি,  ইস। রক্ত বের হয়ে গেছে। হয়েছে আজ বন্ধ কর। মনে হয় দশ কেজির বেশি আলু তুলেছিস।  আর তুলতে হবে না।
দুলিঃ না কিচ্ছু হবে না। মাটি লাগলেই ঠিক হয়ে যাবে।
হৈমিঃ বেশি বুঝিস না। চেয়ে দেখ হাতের কি অবস্থা হয়েছে। নে আমরাও তুলবো না আর। চল  দুপুর হয়ে গেছে, সকাল থেকে কিছু পেটে পড়ে নি কারো।   আর সম্ভব না।
দুলিঃ বাড়িতে গেলে মা বকা দিবে রে। সকাল থেকে দশটাকার কাজ ও করতে পারলাম না।
মলিঃ মর তুই এখানে। ওই হৈমি চল তো। ও থাকুক এখানে আলু তুলে চাপা লেগে মরুক। আমাদের কথা শুনবে না তো আমাদের সাথে যেতো ও কথা না বলে।
,
কথাটা বলেই মলি আর হৈমি ঢ্যাংঢ্যাং করতে করতে চলে যেতে লাগে। দুলি পিছে থেকে দৌড় দেয়,
দুলিঃ এই তোরা আসলেই শয়তান। দাড়,টাকাটা নিয়ে যাবি নাকি? এভাবে গেলে মাসিমা তোকে ঝ্যাটা পিটা করবে রে।
মলিঃ এই রে মনেই নেই। চল চল।
,
দুলি তিনটাকা পেলো, মলি ২ টাকা আর হৈমি আড়াই টাকা।
মলিঃ এটা কি হলো তোরা আমার থেকে টাকা বেশি পেলি কি করে?
দুলিঃ মাতব্বর আমাদের জামাইবাবু তো তাই শ্যালিকাদের বেশি টাকা দিয়েছে। তাই না রে হৈমি?
কথাটা বলেই দুলি আর হৈমি দৌড়। মলি দু সেকেন্ড পরে  দুলির কথাটা বুঝতে পেরে ওদের পিছে দৌড় লাগায়।
মলি: দুটোরই চুল ছিড়বো দাড়া। বজ্জাত মেয়ে গুলো
,
,
দুলি বাড়িতে এসে দেখে ওর ছোট ভাই বোন ৩টা কি যেনো খাচ্ছে। আর ওর নানি ওর ছোট ভাইটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। আর ওর মা কাজ করছে।
দুলিঃ মা, খিদা লাগছে।
মাঃ খিদা লাগছে তো আমি কি করবো? বাপে কি রাজভান্ডার খুলে দিয়ে রেখেছে নাকি?
দুলিঃ সেই কাল সন্ধার সময় এইটুকু ভাত খাইছি। আর এখন দুপুর। এতো সময় না খেয়ে থাকা যায়?
মাঃ বাপেরে ক বেশি বেশি কাজ করতে। তখন গান্ডে পিন্ডে গিলিস। যা ঘরে একটা রুটি আছে খেয়ে নে,তারপর এই পুটুলি নিয়ে নানার খাবার দিয়ে আয়।
নানী : একটা নাই আর্ধেক আছে। আমি আর্ধেক খেয়েছি।
দুলিঃ আর্ধেক? আর্ধেক দিয়ে কি হবে?
অমনি দুলির নানি এসে দুলির গালে চড় মেয়ে দেয়।দুলি গালে হাত দিয়ে ওর নানির দিকে তাকিয়ে থাকে।
নানীঃ এই জন্যই তো কি সংসারে এতো অভাব কেন। মাইয়া মানুষ এতো খাই খাই করলে সংসারে তো অভাব লাইগা থাকবই।
,
দুলি কিছু না বলে হাতের টাকা গুলো মায়ের দিকে ছুরে মেরে খাবারের পুটুলি টা নিয়ে দৌড়ে বের হয়ে আছে।
মাঃ দুলালী খেয়ে যা মা,
নানিঃ চুপ কর। মাইয়া মানুষের এতো ত্যাজ কিসের? খিদা লাগলে এমনে খাইবো
মাঃ তুমি চুপ করো তো মা। মেয়ে আমার বড় হইছে। এতো কাজ করে খুদা তো লাগবেই। ঠিক মতো ২ বেলা খেতে দিতে পারি না।
নানিঃ ও তো একটু আকটু আমরাও না খাইয়া থাকবার পাড়ি। তোর মাইয়া এমন কি করে যে না খাইয়া থাকবার পারবো না।শোন ওতো লাই দেস না। পরের বাড়ি যাইয়া পরের গুতানি খাইয়া সব ত্যাজ কইমা যাইবো।
,
দুলির মা ওর নানির সাথে তর্ক করে না। টাকা গুলো খুটে নিয়ে চলে যায়। দুলি কাঁদতে কাঁদতে ক্ষেতের  আঁল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ওর নানার কাছে। এই একটা মাত্র মানুষ যে দুলিকে ভালোবাসে। বাবাও ভালো বাসে। কিন্তুু লোক দেখানো। দুলি যখন জন্ম নেয় তখন ওর বাবা মেয়ে হবার জন্য দুলিকে ১ বছর দেখতে যায় নি। এতোদিন দুলির মা বাপের বাড়ি ছিলো। প্রথম যেদিন দুলির বাবা দুলির মুখ দেখেছিলো সেদিন আরো অসন্তুষ্ট হয়েছিলো।
বাবাঃ একাদে তো মাইয়া মানুষ তার পরে কাইল্যা।
মা: এমন করে বলো কেনো। তোমারই তো মেয়ে।
বাবাঃ এ মাইয়া আমার দরকার নাই।আমার পোলা লাগবো।
,
নানির মুখে কথাগুলো শুনেছিলো দুলি। সেকথাটাই ভাবছে ও। উপরওয়ালা কেনো ওর প্রতি এতো অসন্তুষ্ট। না দিয়েছে রুপ। আর না দিয়েছে বাপের টাকা।
এতো কাজ করেও কারো মন পায়না ও।
,
নানাঃ কি রে দুলো দিদি। চলে আইছিস?
দুলিঃ হ নানা। তুমি  যাও স্নান করে আসো। এই নাও তোমার গামছা,লুঙি,
নানাঃ এদিকে আয় তো বুনু।
দুলি নানার কাছে এগিয়ে যায়।
নানাঃ কে মারছে তোকে? ইস্ গালটা লাল হয়ে আছে।
নানার আদুরে মাখা কথা শুনে দুলি কান্না করে দেয়। নানাকে জরীয়ে কান্না করতে থাকে।
দুলিঃ নানি,
নানা: বুড়ি? বুড়িটা আমার বুনুকে আবার মারছে। আজ যাই বাড়িতে। ওর একদিন কি আমার একদিন।
দুলি: তুমি যাও আগে স্নান করে আসো।
,
দুলির নানা স্নান করে আসে। দুলি খাবার টা থালে বেড়ে দেয়।
নানাঃ পান্তা?
দুলিঃ হুম।
নানা: তুই খাইছিস?
দুলিঃ হুম।
নানা: একটা কাজ করতো বুনু একটা পিয়াজ তুলে নিয়ে আয়,আর ওই ক্ষেত থেকে কাঁচামরিচতুলে আন ২টো, পিয়াজ, কাঁচা মরিচ  দিয়ে পান্তা সেই ভালো লাগবে।
,
দুলি কাঁচামরিচ আর পেয়াজ এনে নানাকে দেয়। নানা পান্তা মেখে আগে দুলির সামনে তুলে।
নানাঃ জানি কিছু খাস নি। আর খাবার এর জন্যই বুড়িটা তোকে মারছে। নে  বুনু এক সাথে খাই।
,
দুলি আর ওর নানা এক সাথে খেয়ে নেয়। তারপর নানার সাথে কাজ করে বিকেলের দিকে বাড়ির পথে হাঁটা দেয়।এ গ্রামের বড় বাড়ি মোতাব্বরের। তার বাড়ির পাশ দিয়ে দুলির বাড়ির রাস্তা।
মোতাব্বরের বউঃ ওই দুলি। কই যাস?
দুলি: বাড়িত যাই বড়মা।
মোতাব্বরের বউ: কয়ডা কাজ করবি আমার? খাওন দিমুনে।
দুলিঃ কি করতে হবে?
মোতাব্বরের বউঃ তেমন কিছুনা। মেহমান আইছিলো, কয়ডা থালবাসুন আছে। মাজতে হবে।
দুলিঃ চলো মেজে দিচ্ছি।
,
দুলি থাল বাসন দেখে অবাক। মনে হচ্ছে ৫০ জন মানুষ খেয়েছে। দুলি বাবার কিনে দেওয়া একমাত্র ওড়নাটা কোমড়ে গুজে থালা বাসন মাজতে শুরু করে।
,
রুপ ঃ এটা কি করে সম্ভব। ডিপিএস টা আমি চালিয়েছি। আর যখন সেটা ভেঙে গেলো সেই টাকা দাদা তুলে নিয়ে চলে এলো?
রুপের মাঃ তো কি হইছে। বড় দাদা তোর। তোর মানে ওর, ওর মানে তোর।
রুপ: সেটা কথা না মা, পাঁচশ টাকা আমি পাঁচ বছর ধরে গুছিয়েছি। আর সেই টাকা দাদা নিয়ে চলে এলো?
রুপের বউদিঃ আজ আসুক তোর দাদা। খাইয়ে পড়িয়ে সব অমানুষ মানুষ করছে। যেটা দুটো টাকা সেটার জন্য মহাভারত সৃষ্টি করছে।
রুপঃ আপনি আমাদের মধ্যে আসবেন না বউদি। আমার বউ বাচ্চা নেই। তবুও সংসারে টাকা দিয়ে খাই।
রুপের বউদিঃ  উদ্ধার করেছিস।  যা খাস না। যেখানে পাড়িস সেখানে দিয়ে খা। ভালো লাগলে থাক না লাগলে চলে যা। তোকে ধরে রেখেছে কে?
,
রুপ কিছু না বলে হনহনিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। রুপ আমাদের গল্পের নায়ক।   সেও গরিব পরিবারের সন্তান। ৮ ভাই বোন দের মধ্যে সে ৬ নম্বর।
বাবা ছোট বেলায় মারা গিয়েছে।  আজ আবার সে তার মা,আর বউদির সাথে ঝগড়া করে  বাসা থেকে বের হলো। পাঁচ বছর যাবৎ ও একটা ডিপি এস করে। যা আজ  ভাঙার কথা ছিলো। কিন্তুু রুপ যাবার আগেই ওর দাদা টাকা নিয়ে চলে আসে।পরে রুপ গিয়ে সেটা জানতে পারে। এতে রুপ রাগ করে বাসায় ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।রুপ বের হয়ে দেখে
রুপের ২নম্বর দাদা দাড়িয়ে আছে। রুপকে দেখে উনি রুপের হাতে একশ টাকার  গুজে দিয়ে বাসার মধ্যে চলে যায়। রুপ ও বেরিয়ে যায়।
,
,
দুলি: সব থাল বাসন মেজে উপর করে দিয়েছি বড়মা।
মোতাব্বরের বউঃ এই নে খেয়ে নে।
দুলি ঃ না বড়মা আমি বাড়ি নিয়ে যাবো।
মোতাব্বরের বউঃ আচ্ছা তাহলে দাড়া আর একটু ভাত দেই।
দুলিঃ আচ্ছা
মোতাব্বরের বউ খাবারের থালাটে দুলিকে দেয়। দুলি খাবারটা ওড়নাতে ঢেকে নেয়।
মোতাব্বরের বউঃ আর এই পেয়ারাটা নে। খেতে খেতে বাড়ি যা।
,
দুলি পেয়ারাটাও হাতে নিলো, কিন্তুু খেলো না। সব নিয়ে গিয়ে মা কে দিলো। ওর মা সবাইকে ভাগ করে একটু একটু করে দিলো। সবাই এক সাথে খায়।
দুলি এটাই করে, কেউ ওকে কিছু খেতে দিলে খায় না। হাতে করে বাসায় নিয়ে যায়।  তারপর সবাই মিলে খায়।
,
রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।
নানিঃ মাইরার কতা কিছু ভাবছোনি জামাই?
দুলির বাবাঃ কি ভাববো?
নানিঃ কি ভাববা মানে? বড় হয়ে গেলো, বিয়া শাদি কিছু দিবানা নাকি?
দুলির বাবাঃ সে তো অনেক টাকার ব্যাপার। ওতো টাকা পামু কই? তার পরে কালা মাইয়া, পোলা কি মাংনা বিয়া করবো নাকি?
নানিঃ এমনি তো অভাবের সংসার। তার ওপরে বড় মাইয়া সংসারে বোঝা হয়ে আছে।
নানাঃ বুড়ি তুই একদম চুপ থাকো। কত খায় আমার নাতনিটা? ঠিক মতো তো খাওন ও পায় না বেচারি টা। সারাদিন কতো কাজ করে। যা পায় সব মায়েরে আইনা দেয়
নানিঃ কি আর আনে ওই চাইর আনা দিয়া কি হয়?
নানাঃ কাল থেকে আমার নাতনি কিছু করবো না। ওর সব খরচ আমি টানমু। আর দেখুম ও কতটাকা আনে।
বাবাঃ ধুর। সারাদিন পড়ে খাইতে বসেও শান্তি নাই। এই মাইয়াটা হবার পর থেকেই আমার সব শ্যাষ। আর ভালো লাগেনা।
,
দুলির বাবার কথা শুনে নানা রাগ করে না খেয়ে চলে যায়। দুলি ঘরে বসে সব শুনছে। ঘরে ছোট বোনটারে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে ও। আর নিঃশব্দে কান্না করছে।
,
অনেক রাতে দুলি খাবারের থালা নিয়ে নানার কাছে যায়।
দুলিঃ নানা,ওই নানা।
নানা’; কেডা?
দুলিঃ ওই বুড়ো তোমাকে এতো রাতে আমি ছাড়া কে ডাকবো?
নানাঃ ওহ্ দুলো। কিছু কইবি?
দুলিঃ কিছু বলবো না। তুই উঠো বুড়ে খিদে পেয়েছে আমার।
নানাঃ খিদে পেয়েছে। খেয়ে নে।
দুলিঃ তুমি রাগ করে না খেয়ে এলে।তোমারে ছাড়া খাই কেমনে?  নাও হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
দুলি আর ওর নানা একসাথে খাচ্ছে।
নানাঃ দিদিরে,  তোর জন্য খুব কষ্ট হয় রে। কিন্তুু কি করবো ক। কিছু করার নাই যে। তবে দেখিস তোর খুব ভালো বিয়ে হবে। কোনো কষ্ট থাকবে না তোর।
,
দুলিঃ যা বিয়ার রাইতে হয় না তা কোনো রাইতেই হয় না নানা।  বিয়ের আগে যা পাচ্ছিনা তা বিয়ের পরে পাবো এতটা আশা করা ঠিক না নানা।
মলিঃ কি রে দুলি তুই মন খারাপ করে আছিস কেনো? কি হয়েছে?
দুলি; মেয়ে মানুষে বড় হলেই  সংসারের বোঝা  হয়ে যায় তাই নারে?
হৈমিঃএটাই তো  সংসারের নিয়ম রে।
দুলিঃ মেয়ে মানুষের নিজের বলতে কিছু হয় না রে। বিয়ের আগে বাপ,মায়ের সংসারের বোঝা আর বিয়ের পরে স্বামীর।
হৈমিঃ আমি তো কোনোদিন বিয়েই করবো না
মলিঃ তো কি মেতাব্বরের বউ এর সতীন হতে?
হৈমি ঃ তোরে তো আমি,
মলিঃ আহ্ লাগছে হুমি ছাড়।
দুলি ঃ আমার খুব ইচ্ছে করে  কিছু করে অনেক টাকা রোজগার করতে। সংসারের এমন অবস্থা আর দেখতে ইচ্ছে হয় না।
মলিঃ যা হবার তাই হবে এতো ভেবে কাজ আছে?   চল কেরামতের বাগানে বড়ই গাছে সেই টকটক বড়ই পেড়ে খাই।আহ্ আমার মুখে পানি চলে আসলো।
দুলিঃ আমার ও।চল চল
ওরা মাটির রাস্তার ধুলা উড়াতে উড়াতে এক সাইড দিয়ে হাঁটছে।আর সেই রাস্তা দিয়ে কেরামতের বড় ছেলে জলের কলসি মাথায় নিয়ে হেলে দুলে হাটছে।
,
মলিঃদুলি রে রাস্তা মনে হয় আজ ভেঙে যাবে রে। দেখ হাতির ছোট বাচ্চা আসতেছে।
হৈমিঃ চুপ করা বিয়াদপ। শুনতে পেলে না পিঠে তুলে আছাড় দিবে। সাইজ দেখেছিছ? চ্যাপ্টা লাগি যাবি রে।
দুলিঃ আস্তে বলবে কেনো রে। মোটা কে মোটাই বলবে।
নাকি ময়দার বস্তা বলবো।
দুলির কথা শুনে সবাই তিন জনেই হো হো করে হেসে ওঠে।
কেরামতের পোলাঃ ওই ছেমরি রা তোরা হাসতাছোস কেনো রে?তোরা আমাকে দেখে হাসতাছোস তাই না?
হৈমিঃ কই দাদা। আমরা তো এমনি হাসতেছি। তাই না রে মলি?
মলিঃ হে দাদা।কেনো তোমার মনে হয় তোমাকে দেখে কেউ হাসতে পারে?
দুলিঃ তুমি কি আর দেখতে বস্তার মতো নাকি যে তোমাকে দেখে হাসবো?
কেরামতের পোলাঃ আমি কি কিচু বুজিনা? রো আইজই আব্বারে কমু। তোদের কি হাল করি দেখিস।
,
বলতে বলতেই কেরামতের ছেলে গোবরে পা স্লিপ কেটে ধরাম করে পড়ে যায়। সাথে সাথেই মাথার মাটির পানি ভর্তি কলসটা ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। পানিতে কাঁদা আর গোবরে পুরো মেখে গেছে কেরামতের পোলা।
এটা দেখে তিন বদমাইশ হাসতে শুরু করে ।
দুলিঃ হাহাহা তুমি বলেছিলে না আমারা তোমাকে দেখে হাসছি কি না? আমরা তেমাকে দেখেই হাসছিলাম।  তোমার যা সাইজ যে দেখবে সেই হাসবে। হাহা
মলিঃ তোমাকে কিসের মতো লাগে দাদা জানো? হাতির বাচ্চা।
একটু দেখে শুনে হাটবা না? এতো বড় শরীর তোমার যদি রাস্তা টা ভাঙি যেতো কি হতো কও।
 কেরামতের মোটা ছেলে এটা শুনে রেগে যায়
)-তবে রে,,
 হুরমুরিয়ে উঠতে গেলে আবার পিছলে ধরাম করে পরে যায়। এবার পরেই বেচারা গড়িয়ে রাস্তার নিচে পড়ে যায়।
এটা দেখে মলি হাসতে হাসতে ধপাস করে রাস্তায় পরে গড়িয়ে গড়িয়ে হাসতে থাকে।
মলিঃআমাকে কেউ ধর রে। আমি আজ মরেই যাবো।
হৈমিঃ বেচারা কুমড়োর মতো ফেটে গেলো রে…..
দুলি আর হৈমি ও মলির ওপর পড়ে হাসতে থাকে।
রুপের মাঃ বলি কি বাবা ও তো টাকাটা নিজেই গুছাইছে। আমি জানি তোর ওপর কত্ত ঝামেলা। কত্ত খরচ তোর। পুরা সংসার তর ওপর। তাও বলি কিছু টাকা ওরে দিস। রাগ করে বাড়ি থেকে গেছে তো।
রুপের  বড়দাঃ কোনো টাকা হবে না। টাকা কি ওর নাকি। টাকা আমার। ও যে টাকা গুছাইছে। ওই টাকা পাইলো কই? এই টাকার কথা কইলে বউ, বাচ্চা নিয়ে চলে যাবো। তখন তুই থাকিস তোর রুপকে নিয়ে।
মাঃ না বাবা এমন কথা বলিস না। তুই তো ঠিকই বলছিস।
রুপের বউদিঃ আপনি এখন এ কথা বলছেন  কেনো এখন? তখন আপনার সামনে আপনার ছেলে এত কথা শুনিয়ে গেলো আমাকে তখন তো কিছু কইলেন না।
বড়দাঃকিহ্ তোমার মুখের ওপর  কথা কইচে?
বউদিঃ হো, তোমারে ারর বলছি কি। আমারে ধমকাইচে।  বলছে কি আমি যে এসব ব্যাপারে নাক না গলাই।
বড়দাঃ এত বড় সাহস। আজ আসুক বাড়িতে। কার বাড়িতে থাকে ও। সেইটা দেখবোনি।
,
রুপের তিন দিদি সতি,আলো,রিতা।
রিতাঃ ভাই এর কপালে আজ দুঃখ আচে রে।
সতিঃ এটা নতুন কি।বাবার আদরের ছিলো রুপ। বাবা চলে যাবার পরে সব থেকে নাজেহাল  ওর বেশি হতে হচ্ছে। আজ প্রতিনিয়ত কথা শুনতে হয়,খাবারের খোটা শুনতে হয়। থাকার খোটা শুনতে হয়। বড়দা ভুলে যায় এ বাড়িটা বাবার। ওর না। আর সংসারের খাবারের সব খরচ মেজদা চালায়।  কেউ তো আর বিয়ে শাদি করে নি। বড়দার বিয়ে হয়েছে  ৩টা বাচ্চা নিয়ে  পাঁচজন  ওরা।। বসে খাবার মতো অনা আর বনা(রুমের ছোট জমজ ভাই) বসে খায়। আমরা কি আর কেউ বসে খাই নাকি?
আলোঃ চুপ কর তো দিদি, করলে বড়দাই করে না করলেও বড়দাই করে। যাই করুক বাপের পরে তো বড়দা। আর রুপকেও বলি জানিসই যখন দাদা এমন তাহলে বাড়াতে বলেছিলিস কেনো যে ডিপিএস করছিস।
মাঃ সব ভাগ্য আমার। ভাগ্য ভালো হলে অকালে স্বামী হারা হয়ে অন্যর উপর পড়তে হয়।
সতিঃ মন খারাপ করোনা মা, কপালে যা আছে তাই হবে। তোমার জামাই আসবে কাল, আমি কিন্তুু পরশুদিনই চলে যাব।ভাইটা আমার রাগ করে চলে গেলো। চারটে খেলো ও না । না জানি কই গেলো।
মাঃ জানিনা আমার আর ভালো লাগছে না  এসব।
,
দুলির কাকিমাঃ এই দুলালী শোন,
দুলিঃ হ্যা কাকিমা বলো।
কাকিমাঃ ঘরে আয়,
দুলিঃ বলো,
কাকিমাঃ নে এটা বসে খা।
দুলিঃ পাটিসাপটা? অনেক খেতে মন চাচ্ছিলো গো। কিন্তু,,,
কাকিমাঃ বেশি না বকে খা তারাতারি।
দুলি ঃ বাড়িতে নিয়ে যাই?
কাকিমাঃ একদম না। তোর ভাই,বোনদের দিয়েছি। এটা তোর জন্য রেখেছি। খা তারাতারি। আমার সামনে বসেই।
দুলিঃ তোমার হাতের রান্না সব কিছু এত্ত ভালো লাগে বলার মতো না। আহ্ খুব মজা হয়েছে।
কাকিমাঃ তোর কৃষ্ণর কথা মনে আছে। ওই যে আমার সেই ভাই টা?
দুলিঃ হ্যা মনে থাকবে না আবার।
কাকিমাঃ ওকে কেমন লাগে রে তোর?
দুলিঃ কেমন লাগবে আবার উনি যেমন তেমনই লাগে।
,
নানিঃ কি রে হতভাগী কি করছিস ও ঘরে? তারাতারি আয় মোতাব্বরের বউ ডাকতাছে তোরে।
,
দুলিঃ আমি আসছি কাকিমা  পরে এসে কথা বলছি।
নানিঃ কি কুমন্ত্রণা দিচ্ছিলো ওই মহারানী শুন দুলি ওর সাতে কতা কবিনা।
দুলিঃ তোমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।আমার কোনো ব্যাপারে তুমি মাথা ঘামাবে না, বলে দিচ্ছি,
নানিঃ কি এতো বড় সাহস?
নিতাই( দুলির ছোট ভাই) ঃ এই বুড়ি তুমি আবার আমার দিদিকে গালি দিচ্ছো? আজ নানা আসুক সব কইয়া দিমুনে।
নানিঃ দাদুভাই, এমন কতা কয়না। দিদি তো মাইয়া মানুষ। ওর সাতে এমন্যেই কতা কইতে হয়।।
নিতাইঃ তাইলে তো তুমিও মাইয়া মানুষ। তোমার লগেও এমনেই কতা কওন লাগবো।
,
নিতাই এর কথা শুনে দুলি হাসতে হাসতে চলে গেলো,
দুলিঃ বড়মা,ডাকছিলেন?
মাতব্বরের বউঃ হয় রে। আমারে ময়দা গুলান বেলে দে তো। রুটি বানামু। আইজ রাত্রে তোর জেঠুর কাজের মানুষ আইবো।
দুলি উনার কথামতো সব কাজ করে দেয়। তার পরে উনার দেওয়া খাবার নিয়ে হাসিমুখে বাসায় আসে। এসে দেখে পাওনাদারেরা ওর মা এর সাথে ঝগড়া করছে,,,,
দুলি কিছু না বলে খাবারটা ঘরে রেখে ওর কাকিমার কাছে চলে যায়।
দুলিঃ কি করছো কাকিমা?
কাকিমাঃ রান্না করছি। আয়।
দুলি কিছু না বলে  চুপটি করে কাকিমার পাশে বসে পড়ে।
কাকিমাঃ কি হলো? মন খারাপ?
দুলিঃ ভালো লাগছে না।
কাকিমাঃ আচার খাবি?
দুলিঃ নাহ্
কাকিমাঃ চালতার আচার কিন্তু।
দুলি দৌড়ে গিয়ে আচারের কৌটা এনে খুলে আচার খেতে থাকে।
কাকিমাঃ একদম মন খারাপ করে থাকবি না বুঝলি। তুই আজ এখানে আছিস কাল থাকবি না।
দুলি ঃ কেনো কই যাবো?( খেতে খেতে)
কাকিমা: আরে কই আবার পরের ঘরে যাবি না?
দুলিঃ আমার না খুব ভয় লাগে কাকিমা। এসব দেখে আর নিজেকে নিয়ে ভাবতে খুব কষ্ট  হয়।
কাকিমাঃ এটাই মেয়েদের জীবন রে দুলালী।  আমাকেই দেখনা। ৬ বছর হলো বিয়ে হয়েছে। এখন ও কোনো বাচ্চার মা হতে পারলাম না। লোকে কতো কথা কয়। কিন্তুু তোর কাকা আমারে ভালোবাসে জন্য এখনও টিকে গেলাম।  জানিনা কি হবে পরে।
দুলিঃ কেদোনা কাকি। তুমি আমাকে বোঝাচ্ছো আর তুমিই কাঁদছো?
কাকিঃ তোকে বড্ড ভালোবাসি রে।  বিয়ে হয়ে এসে  সেই ছোট্ট টি পেয়েছিলাম তোকে। তোর কষ্ট দেখতে পারি না আমি।
দুলিঃ মুচকি হাসি দিলো
কাকিমাঃ কৃষ্ণ তোকে বিয়ে করতে চায় দুলি।
চলবে….
Tag :
About Author Information

Daily Banalata

নিয়তির সংমিশ্রণ

Update Time : ০৬:৫৮:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩
পর্ব এক.
সময়টা নব্বই দশকের মাঝামাঝি।কনকনে শীতের সকালে চারিদিকের প্রকৃতি  কুঁকড়ে আছে। তবুও খেটে খাওয়া গ্রামের  মানুষগুলো থেমে নেই। কেউ বা শুকনো লাঠি ভেঙে আগুন জ্বালিয়ে শীত কমানোর চেষ্টা করছে। আবার কেউ ছেঁড়া কাঁথা জরীয়ে মাঠে কাজ করে। আবার গ্রামের গরীব ঘরের বউ রাও তাদের ঘরের মানুষদের কাজে হাত মেলাচ্ছে। আবার সেখানে গ্রামের ছোট বড় ছেলে মেয়েরাও কাজ করছে পরিবারের আর্থিক যোগান দিতে। এর মধ্যে দুলি ও  তার বান্ধবিদের ঝাঁক  কাজ করছে।সবে মাত্র ৭ম শ্রেণিতে পরে  দুলি।   সে আর তার বান্ধবিরা আলুর ক্ষেতে কাজ করছে।  এক কেজি আলু তুলে দিলে চার আনা টাকা ।  মা,বাবার  অভাবের সংসারের কোন না কোনো কাজ করে  সেও কিছু টাকা যোগান দেয়।  পাঁচ  ভাই বোন দের মধ্যে মধ্যে ও বড়।তাই  ৯জন এর সংসারে ছোট হলেও তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। ওহ্ হ্যা বলাই হয় নি। তাদের সংসারে আরো দুজন সদস্য আছে দুলির নানা,নানি।  দুলির মা তার বাবা,মা এর একটা মাত্র মেয়ে। একমাত্র মেয়েকে ছাড়া উনারা থাকতে পারেন নি।তাই অভাবের সংসারে উনারাও হাতে হাতে কাজ করেন।
দুলিঃ আহ্
মলিঃ কি রে কি হলো?
দুলিঃ হাতের ফোস্কাটা গলে গেছে রে।
মলি ঃ দেখি দেখি,  ইস। রক্ত বের হয়ে গেছে। হয়েছে আজ বন্ধ কর। মনে হয় দশ কেজির বেশি আলু তুলেছিস।  আর তুলতে হবে না।
দুলিঃ না কিচ্ছু হবে না। মাটি লাগলেই ঠিক হয়ে যাবে।
হৈমিঃ বেশি বুঝিস না। চেয়ে দেখ হাতের কি অবস্থা হয়েছে। নে আমরাও তুলবো না আর। চল  দুপুর হয়ে গেছে, সকাল থেকে কিছু পেটে পড়ে নি কারো।   আর সম্ভব না।
দুলিঃ বাড়িতে গেলে মা বকা দিবে রে। সকাল থেকে দশটাকার কাজ ও করতে পারলাম না।
মলিঃ মর তুই এখানে। ওই হৈমি চল তো। ও থাকুক এখানে আলু তুলে চাপা লেগে মরুক। আমাদের কথা শুনবে না তো আমাদের সাথে যেতো ও কথা না বলে।
,
কথাটা বলেই মলি আর হৈমি ঢ্যাংঢ্যাং করতে করতে চলে যেতে লাগে। দুলি পিছে থেকে দৌড় দেয়,
দুলিঃ এই তোরা আসলেই শয়তান। দাড়,টাকাটা নিয়ে যাবি নাকি? এভাবে গেলে মাসিমা তোকে ঝ্যাটা পিটা করবে রে।
মলিঃ এই রে মনেই নেই। চল চল।
,
দুলি তিনটাকা পেলো, মলি ২ টাকা আর হৈমি আড়াই টাকা।
মলিঃ এটা কি হলো তোরা আমার থেকে টাকা বেশি পেলি কি করে?
দুলিঃ মাতব্বর আমাদের জামাইবাবু তো তাই শ্যালিকাদের বেশি টাকা দিয়েছে। তাই না রে হৈমি?
কথাটা বলেই দুলি আর হৈমি দৌড়। মলি দু সেকেন্ড পরে  দুলির কথাটা বুঝতে পেরে ওদের পিছে দৌড় লাগায়।
মলি: দুটোরই চুল ছিড়বো দাড়া। বজ্জাত মেয়ে গুলো
,
,
দুলি বাড়িতে এসে দেখে ওর ছোট ভাই বোন ৩টা কি যেনো খাচ্ছে। আর ওর নানি ওর ছোট ভাইটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। আর ওর মা কাজ করছে।
দুলিঃ মা, খিদা লাগছে।
মাঃ খিদা লাগছে তো আমি কি করবো? বাপে কি রাজভান্ডার খুলে দিয়ে রেখেছে নাকি?
দুলিঃ সেই কাল সন্ধার সময় এইটুকু ভাত খাইছি। আর এখন দুপুর। এতো সময় না খেয়ে থাকা যায়?
মাঃ বাপেরে ক বেশি বেশি কাজ করতে। তখন গান্ডে পিন্ডে গিলিস। যা ঘরে একটা রুটি আছে খেয়ে নে,তারপর এই পুটুলি নিয়ে নানার খাবার দিয়ে আয়।
নানী : একটা নাই আর্ধেক আছে। আমি আর্ধেক খেয়েছি।
দুলিঃ আর্ধেক? আর্ধেক দিয়ে কি হবে?
অমনি দুলির নানি এসে দুলির গালে চড় মেয়ে দেয়।দুলি গালে হাত দিয়ে ওর নানির দিকে তাকিয়ে থাকে।
নানীঃ এই জন্যই তো কি সংসারে এতো অভাব কেন। মাইয়া মানুষ এতো খাই খাই করলে সংসারে তো অভাব লাইগা থাকবই।
,
দুলি কিছু না বলে হাতের টাকা গুলো মায়ের দিকে ছুরে মেরে খাবারের পুটুলি টা নিয়ে দৌড়ে বের হয়ে আছে।
মাঃ দুলালী খেয়ে যা মা,
নানিঃ চুপ কর। মাইয়া মানুষের এতো ত্যাজ কিসের? খিদা লাগলে এমনে খাইবো
মাঃ তুমি চুপ করো তো মা। মেয়ে আমার বড় হইছে। এতো কাজ করে খুদা তো লাগবেই। ঠিক মতো ২ বেলা খেতে দিতে পারি না।
নানিঃ ও তো একটু আকটু আমরাও না খাইয়া থাকবার পাড়ি। তোর মাইয়া এমন কি করে যে না খাইয়া থাকবার পারবো না।শোন ওতো লাই দেস না। পরের বাড়ি যাইয়া পরের গুতানি খাইয়া সব ত্যাজ কইমা যাইবো।
,
দুলির মা ওর নানির সাথে তর্ক করে না। টাকা গুলো খুটে নিয়ে চলে যায়। দুলি কাঁদতে কাঁদতে ক্ষেতের  আঁল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ওর নানার কাছে। এই একটা মাত্র মানুষ যে দুলিকে ভালোবাসে। বাবাও ভালো বাসে। কিন্তুু লোক দেখানো। দুলি যখন জন্ম নেয় তখন ওর বাবা মেয়ে হবার জন্য দুলিকে ১ বছর দেখতে যায় নি। এতোদিন দুলির মা বাপের বাড়ি ছিলো। প্রথম যেদিন দুলির বাবা দুলির মুখ দেখেছিলো সেদিন আরো অসন্তুষ্ট হয়েছিলো।
বাবাঃ একাদে তো মাইয়া মানুষ তার পরে কাইল্যা।
মা: এমন করে বলো কেনো। তোমারই তো মেয়ে।
বাবাঃ এ মাইয়া আমার দরকার নাই।আমার পোলা লাগবো।
,
নানির মুখে কথাগুলো শুনেছিলো দুলি। সেকথাটাই ভাবছে ও। উপরওয়ালা কেনো ওর প্রতি এতো অসন্তুষ্ট। না দিয়েছে রুপ। আর না দিয়েছে বাপের টাকা।
এতো কাজ করেও কারো মন পায়না ও।
,
নানাঃ কি রে দুলো দিদি। চলে আইছিস?
দুলিঃ হ নানা। তুমি  যাও স্নান করে আসো। এই নাও তোমার গামছা,লুঙি,
নানাঃ এদিকে আয় তো বুনু।
দুলি নানার কাছে এগিয়ে যায়।
নানাঃ কে মারছে তোকে? ইস্ গালটা লাল হয়ে আছে।
নানার আদুরে মাখা কথা শুনে দুলি কান্না করে দেয়। নানাকে জরীয়ে কান্না করতে থাকে।
দুলিঃ নানি,
নানা: বুড়ি? বুড়িটা আমার বুনুকে আবার মারছে। আজ যাই বাড়িতে। ওর একদিন কি আমার একদিন।
দুলি: তুমি যাও আগে স্নান করে আসো।
,
দুলির নানা স্নান করে আসে। দুলি খাবার টা থালে বেড়ে দেয়।
নানাঃ পান্তা?
দুলিঃ হুম।
নানা: তুই খাইছিস?
দুলিঃ হুম।
নানা: একটা কাজ করতো বুনু একটা পিয়াজ তুলে নিয়ে আয়,আর ওই ক্ষেত থেকে কাঁচামরিচতুলে আন ২টো, পিয়াজ, কাঁচা মরিচ  দিয়ে পান্তা সেই ভালো লাগবে।
,
দুলি কাঁচামরিচ আর পেয়াজ এনে নানাকে দেয়। নানা পান্তা মেখে আগে দুলির সামনে তুলে।
নানাঃ জানি কিছু খাস নি। আর খাবার এর জন্যই বুড়িটা তোকে মারছে। নে  বুনু এক সাথে খাই।
,
দুলি আর ওর নানা এক সাথে খেয়ে নেয়। তারপর নানার সাথে কাজ করে বিকেলের দিকে বাড়ির পথে হাঁটা দেয়।এ গ্রামের বড় বাড়ি মোতাব্বরের। তার বাড়ির পাশ দিয়ে দুলির বাড়ির রাস্তা।
মোতাব্বরের বউঃ ওই দুলি। কই যাস?
দুলি: বাড়িত যাই বড়মা।
মোতাব্বরের বউ: কয়ডা কাজ করবি আমার? খাওন দিমুনে।
দুলিঃ কি করতে হবে?
মোতাব্বরের বউঃ তেমন কিছুনা। মেহমান আইছিলো, কয়ডা থালবাসুন আছে। মাজতে হবে।
দুলিঃ চলো মেজে দিচ্ছি।
,
দুলি থাল বাসন দেখে অবাক। মনে হচ্ছে ৫০ জন মানুষ খেয়েছে। দুলি বাবার কিনে দেওয়া একমাত্র ওড়নাটা কোমড়ে গুজে থালা বাসন মাজতে শুরু করে।
,
রুপ ঃ এটা কি করে সম্ভব। ডিপিএস টা আমি চালিয়েছি। আর যখন সেটা ভেঙে গেলো সেই টাকা দাদা তুলে নিয়ে চলে এলো?
রুপের মাঃ তো কি হইছে। বড় দাদা তোর। তোর মানে ওর, ওর মানে তোর।
রুপ: সেটা কথা না মা, পাঁচশ টাকা আমি পাঁচ বছর ধরে গুছিয়েছি। আর সেই টাকা দাদা নিয়ে চলে এলো?
রুপের বউদিঃ আজ আসুক তোর দাদা। খাইয়ে পড়িয়ে সব অমানুষ মানুষ করছে। যেটা দুটো টাকা সেটার জন্য মহাভারত সৃষ্টি করছে।
রুপঃ আপনি আমাদের মধ্যে আসবেন না বউদি। আমার বউ বাচ্চা নেই। তবুও সংসারে টাকা দিয়ে খাই।
রুপের বউদিঃ  উদ্ধার করেছিস।  যা খাস না। যেখানে পাড়িস সেখানে দিয়ে খা। ভালো লাগলে থাক না লাগলে চলে যা। তোকে ধরে রেখেছে কে?
,
রুপ কিছু না বলে হনহনিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। রুপ আমাদের গল্পের নায়ক।   সেও গরিব পরিবারের সন্তান। ৮ ভাই বোন দের মধ্যে সে ৬ নম্বর।
বাবা ছোট বেলায় মারা গিয়েছে।  আজ আবার সে তার মা,আর বউদির সাথে ঝগড়া করে  বাসা থেকে বের হলো। পাঁচ বছর যাবৎ ও একটা ডিপি এস করে। যা আজ  ভাঙার কথা ছিলো। কিন্তুু রুপ যাবার আগেই ওর দাদা টাকা নিয়ে চলে আসে।পরে রুপ গিয়ে সেটা জানতে পারে। এতে রুপ রাগ করে বাসায় ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।রুপ বের হয়ে দেখে
রুপের ২নম্বর দাদা দাড়িয়ে আছে। রুপকে দেখে উনি রুপের হাতে একশ টাকার  গুজে দিয়ে বাসার মধ্যে চলে যায়। রুপ ও বেরিয়ে যায়।
,
,
দুলি: সব থাল বাসন মেজে উপর করে দিয়েছি বড়মা।
মোতাব্বরের বউঃ এই নে খেয়ে নে।
দুলি ঃ না বড়মা আমি বাড়ি নিয়ে যাবো।
মোতাব্বরের বউঃ আচ্ছা তাহলে দাড়া আর একটু ভাত দেই।
দুলিঃ আচ্ছা
মোতাব্বরের বউ খাবারের থালাটে দুলিকে দেয়। দুলি খাবারটা ওড়নাতে ঢেকে নেয়।
মোতাব্বরের বউঃ আর এই পেয়ারাটা নে। খেতে খেতে বাড়ি যা।
,
দুলি পেয়ারাটাও হাতে নিলো, কিন্তুু খেলো না। সব নিয়ে গিয়ে মা কে দিলো। ওর মা সবাইকে ভাগ করে একটু একটু করে দিলো। সবাই এক সাথে খায়।
দুলি এটাই করে, কেউ ওকে কিছু খেতে দিলে খায় না। হাতে করে বাসায় নিয়ে যায়।  তারপর সবাই মিলে খায়।
,
রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।
নানিঃ মাইরার কতা কিছু ভাবছোনি জামাই?
দুলির বাবাঃ কি ভাববো?
নানিঃ কি ভাববা মানে? বড় হয়ে গেলো, বিয়া শাদি কিছু দিবানা নাকি?
দুলির বাবাঃ সে তো অনেক টাকার ব্যাপার। ওতো টাকা পামু কই? তার পরে কালা মাইয়া, পোলা কি মাংনা বিয়া করবো নাকি?
নানিঃ এমনি তো অভাবের সংসার। তার ওপরে বড় মাইয়া সংসারে বোঝা হয়ে আছে।
নানাঃ বুড়ি তুই একদম চুপ থাকো। কত খায় আমার নাতনিটা? ঠিক মতো তো খাওন ও পায় না বেচারি টা। সারাদিন কতো কাজ করে। যা পায় সব মায়েরে আইনা দেয়
নানিঃ কি আর আনে ওই চাইর আনা দিয়া কি হয়?
নানাঃ কাল থেকে আমার নাতনি কিছু করবো না। ওর সব খরচ আমি টানমু। আর দেখুম ও কতটাকা আনে।
বাবাঃ ধুর। সারাদিন পড়ে খাইতে বসেও শান্তি নাই। এই মাইয়াটা হবার পর থেকেই আমার সব শ্যাষ। আর ভালো লাগেনা।
,
দুলির বাবার কথা শুনে নানা রাগ করে না খেয়ে চলে যায়। দুলি ঘরে বসে সব শুনছে। ঘরে ছোট বোনটারে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে ও। আর নিঃশব্দে কান্না করছে।
,
অনেক রাতে দুলি খাবারের থালা নিয়ে নানার কাছে যায়।
দুলিঃ নানা,ওই নানা।
নানা’; কেডা?
দুলিঃ ওই বুড়ো তোমাকে এতো রাতে আমি ছাড়া কে ডাকবো?
নানাঃ ওহ্ দুলো। কিছু কইবি?
দুলিঃ কিছু বলবো না। তুই উঠো বুড়ে খিদে পেয়েছে আমার।
নানাঃ খিদে পেয়েছে। খেয়ে নে।
দুলিঃ তুমি রাগ করে না খেয়ে এলে।তোমারে ছাড়া খাই কেমনে?  নাও হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
দুলি আর ওর নানা একসাথে খাচ্ছে।
নানাঃ দিদিরে,  তোর জন্য খুব কষ্ট হয় রে। কিন্তুু কি করবো ক। কিছু করার নাই যে। তবে দেখিস তোর খুব ভালো বিয়ে হবে। কোনো কষ্ট থাকবে না তোর।
,
দুলিঃ যা বিয়ার রাইতে হয় না তা কোনো রাইতেই হয় না নানা।  বিয়ের আগে যা পাচ্ছিনা তা বিয়ের পরে পাবো এতটা আশা করা ঠিক না নানা।
মলিঃ কি রে দুলি তুই মন খারাপ করে আছিস কেনো? কি হয়েছে?
দুলি; মেয়ে মানুষে বড় হলেই  সংসারের বোঝা  হয়ে যায় তাই নারে?
হৈমিঃএটাই তো  সংসারের নিয়ম রে।
দুলিঃ মেয়ে মানুষের নিজের বলতে কিছু হয় না রে। বিয়ের আগে বাপ,মায়ের সংসারের বোঝা আর বিয়ের পরে স্বামীর।
হৈমিঃ আমি তো কোনোদিন বিয়েই করবো না
মলিঃ তো কি মেতাব্বরের বউ এর সতীন হতে?
হৈমি ঃ তোরে তো আমি,
মলিঃ আহ্ লাগছে হুমি ছাড়।
দুলি ঃ আমার খুব ইচ্ছে করে  কিছু করে অনেক টাকা রোজগার করতে। সংসারের এমন অবস্থা আর দেখতে ইচ্ছে হয় না।
মলিঃ যা হবার তাই হবে এতো ভেবে কাজ আছে?   চল কেরামতের বাগানে বড়ই গাছে সেই টকটক বড়ই পেড়ে খাই।আহ্ আমার মুখে পানি চলে আসলো।
দুলিঃ আমার ও।চল চল
ওরা মাটির রাস্তার ধুলা উড়াতে উড়াতে এক সাইড দিয়ে হাঁটছে।আর সেই রাস্তা দিয়ে কেরামতের বড় ছেলে জলের কলসি মাথায় নিয়ে হেলে দুলে হাটছে।
,
মলিঃদুলি রে রাস্তা মনে হয় আজ ভেঙে যাবে রে। দেখ হাতির ছোট বাচ্চা আসতেছে।
হৈমিঃ চুপ করা বিয়াদপ। শুনতে পেলে না পিঠে তুলে আছাড় দিবে। সাইজ দেখেছিছ? চ্যাপ্টা লাগি যাবি রে।
দুলিঃ আস্তে বলবে কেনো রে। মোটা কে মোটাই বলবে।
নাকি ময়দার বস্তা বলবো।
দুলির কথা শুনে সবাই তিন জনেই হো হো করে হেসে ওঠে।
কেরামতের পোলাঃ ওই ছেমরি রা তোরা হাসতাছোস কেনো রে?তোরা আমাকে দেখে হাসতাছোস তাই না?
হৈমিঃ কই দাদা। আমরা তো এমনি হাসতেছি। তাই না রে মলি?
মলিঃ হে দাদা।কেনো তোমার মনে হয় তোমাকে দেখে কেউ হাসতে পারে?
দুলিঃ তুমি কি আর দেখতে বস্তার মতো নাকি যে তোমাকে দেখে হাসবো?
কেরামতের পোলাঃ আমি কি কিচু বুজিনা? রো আইজই আব্বারে কমু। তোদের কি হাল করি দেখিস।
,
বলতে বলতেই কেরামতের ছেলে গোবরে পা স্লিপ কেটে ধরাম করে পড়ে যায়। সাথে সাথেই মাথার মাটির পানি ভর্তি কলসটা ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। পানিতে কাঁদা আর গোবরে পুরো মেখে গেছে কেরামতের পোলা।
এটা দেখে তিন বদমাইশ হাসতে শুরু করে ।
দুলিঃ হাহাহা তুমি বলেছিলে না আমারা তোমাকে দেখে হাসছি কি না? আমরা তেমাকে দেখেই হাসছিলাম।  তোমার যা সাইজ যে দেখবে সেই হাসবে। হাহা
মলিঃ তোমাকে কিসের মতো লাগে দাদা জানো? হাতির বাচ্চা।
একটু দেখে শুনে হাটবা না? এতো বড় শরীর তোমার যদি রাস্তা টা ভাঙি যেতো কি হতো কও।
 কেরামতের মোটা ছেলে এটা শুনে রেগে যায়
)-তবে রে,,
 হুরমুরিয়ে উঠতে গেলে আবার পিছলে ধরাম করে পরে যায়। এবার পরেই বেচারা গড়িয়ে রাস্তার নিচে পড়ে যায়।
এটা দেখে মলি হাসতে হাসতে ধপাস করে রাস্তায় পরে গড়িয়ে গড়িয়ে হাসতে থাকে।
মলিঃআমাকে কেউ ধর রে। আমি আজ মরেই যাবো।
হৈমিঃ বেচারা কুমড়োর মতো ফেটে গেলো রে…..
দুলি আর হৈমি ও মলির ওপর পড়ে হাসতে থাকে।
রুপের মাঃ বলি কি বাবা ও তো টাকাটা নিজেই গুছাইছে। আমি জানি তোর ওপর কত্ত ঝামেলা। কত্ত খরচ তোর। পুরা সংসার তর ওপর। তাও বলি কিছু টাকা ওরে দিস। রাগ করে বাড়ি থেকে গেছে তো।
রুপের  বড়দাঃ কোনো টাকা হবে না। টাকা কি ওর নাকি। টাকা আমার। ও যে টাকা গুছাইছে। ওই টাকা পাইলো কই? এই টাকার কথা কইলে বউ, বাচ্চা নিয়ে চলে যাবো। তখন তুই থাকিস তোর রুপকে নিয়ে।
মাঃ না বাবা এমন কথা বলিস না। তুই তো ঠিকই বলছিস।
রুপের বউদিঃ আপনি এখন এ কথা বলছেন  কেনো এখন? তখন আপনার সামনে আপনার ছেলে এত কথা শুনিয়ে গেলো আমাকে তখন তো কিছু কইলেন না।
বড়দাঃকিহ্ তোমার মুখের ওপর  কথা কইচে?
বউদিঃ হো, তোমারে ারর বলছি কি। আমারে ধমকাইচে।  বলছে কি আমি যে এসব ব্যাপারে নাক না গলাই।
বড়দাঃ এত বড় সাহস। আজ আসুক বাড়িতে। কার বাড়িতে থাকে ও। সেইটা দেখবোনি।
,
রুপের তিন দিদি সতি,আলো,রিতা।
রিতাঃ ভাই এর কপালে আজ দুঃখ আচে রে।
সতিঃ এটা নতুন কি।বাবার আদরের ছিলো রুপ। বাবা চলে যাবার পরে সব থেকে নাজেহাল  ওর বেশি হতে হচ্ছে। আজ প্রতিনিয়ত কথা শুনতে হয়,খাবারের খোটা শুনতে হয়। থাকার খোটা শুনতে হয়। বড়দা ভুলে যায় এ বাড়িটা বাবার। ওর না। আর সংসারের খাবারের সব খরচ মেজদা চালায়।  কেউ তো আর বিয়ে শাদি করে নি। বড়দার বিয়ে হয়েছে  ৩টা বাচ্চা নিয়ে  পাঁচজন  ওরা।। বসে খাবার মতো অনা আর বনা(রুমের ছোট জমজ ভাই) বসে খায়। আমরা কি আর কেউ বসে খাই নাকি?
আলোঃ চুপ কর তো দিদি, করলে বড়দাই করে না করলেও বড়দাই করে। যাই করুক বাপের পরে তো বড়দা। আর রুপকেও বলি জানিসই যখন দাদা এমন তাহলে বাড়াতে বলেছিলিস কেনো যে ডিপিএস করছিস।
মাঃ সব ভাগ্য আমার। ভাগ্য ভালো হলে অকালে স্বামী হারা হয়ে অন্যর উপর পড়তে হয়।
সতিঃ মন খারাপ করোনা মা, কপালে যা আছে তাই হবে। তোমার জামাই আসবে কাল, আমি কিন্তুু পরশুদিনই চলে যাব।ভাইটা আমার রাগ করে চলে গেলো। চারটে খেলো ও না । না জানি কই গেলো।
মাঃ জানিনা আমার আর ভালো লাগছে না  এসব।
,
দুলির কাকিমাঃ এই দুলালী শোন,
দুলিঃ হ্যা কাকিমা বলো।
কাকিমাঃ ঘরে আয়,
দুলিঃ বলো,
কাকিমাঃ নে এটা বসে খা।
দুলিঃ পাটিসাপটা? অনেক খেতে মন চাচ্ছিলো গো। কিন্তু,,,
কাকিমাঃ বেশি না বকে খা তারাতারি।
দুলি ঃ বাড়িতে নিয়ে যাই?
কাকিমাঃ একদম না। তোর ভাই,বোনদের দিয়েছি। এটা তোর জন্য রেখেছি। খা তারাতারি। আমার সামনে বসেই।
দুলিঃ তোমার হাতের রান্না সব কিছু এত্ত ভালো লাগে বলার মতো না। আহ্ খুব মজা হয়েছে।
কাকিমাঃ তোর কৃষ্ণর কথা মনে আছে। ওই যে আমার সেই ভাই টা?
দুলিঃ হ্যা মনে থাকবে না আবার।
কাকিমাঃ ওকে কেমন লাগে রে তোর?
দুলিঃ কেমন লাগবে আবার উনি যেমন তেমনই লাগে।
,
নানিঃ কি রে হতভাগী কি করছিস ও ঘরে? তারাতারি আয় মোতাব্বরের বউ ডাকতাছে তোরে।
,
দুলিঃ আমি আসছি কাকিমা  পরে এসে কথা বলছি।
নানিঃ কি কুমন্ত্রণা দিচ্ছিলো ওই মহারানী শুন দুলি ওর সাতে কতা কবিনা।
দুলিঃ তোমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।আমার কোনো ব্যাপারে তুমি মাথা ঘামাবে না, বলে দিচ্ছি,
নানিঃ কি এতো বড় সাহস?
নিতাই( দুলির ছোট ভাই) ঃ এই বুড়ি তুমি আবার আমার দিদিকে গালি দিচ্ছো? আজ নানা আসুক সব কইয়া দিমুনে।
নানিঃ দাদুভাই, এমন কতা কয়না। দিদি তো মাইয়া মানুষ। ওর সাতে এমন্যেই কতা কইতে হয়।।
নিতাইঃ তাইলে তো তুমিও মাইয়া মানুষ। তোমার লগেও এমনেই কতা কওন লাগবো।
,
নিতাই এর কথা শুনে দুলি হাসতে হাসতে চলে গেলো,
দুলিঃ বড়মা,ডাকছিলেন?
মাতব্বরের বউঃ হয় রে। আমারে ময়দা গুলান বেলে দে তো। রুটি বানামু। আইজ রাত্রে তোর জেঠুর কাজের মানুষ আইবো।
দুলি উনার কথামতো সব কাজ করে দেয়। তার পরে উনার দেওয়া খাবার নিয়ে হাসিমুখে বাসায় আসে। এসে দেখে পাওনাদারেরা ওর মা এর সাথে ঝগড়া করছে,,,,
দুলি কিছু না বলে খাবারটা ঘরে রেখে ওর কাকিমার কাছে চলে যায়।
দুলিঃ কি করছো কাকিমা?
কাকিমাঃ রান্না করছি। আয়।
দুলি কিছু না বলে  চুপটি করে কাকিমার পাশে বসে পড়ে।
কাকিমাঃ কি হলো? মন খারাপ?
দুলিঃ ভালো লাগছে না।
কাকিমাঃ আচার খাবি?
দুলিঃ নাহ্
কাকিমাঃ চালতার আচার কিন্তু।
দুলি দৌড়ে গিয়ে আচারের কৌটা এনে খুলে আচার খেতে থাকে।
কাকিমাঃ একদম মন খারাপ করে থাকবি না বুঝলি। তুই আজ এখানে আছিস কাল থাকবি না।
দুলি ঃ কেনো কই যাবো?( খেতে খেতে)
কাকিমা: আরে কই আবার পরের ঘরে যাবি না?
দুলিঃ আমার না খুব ভয় লাগে কাকিমা। এসব দেখে আর নিজেকে নিয়ে ভাবতে খুব কষ্ট  হয়।
কাকিমাঃ এটাই মেয়েদের জীবন রে দুলালী।  আমাকেই দেখনা। ৬ বছর হলো বিয়ে হয়েছে। এখন ও কোনো বাচ্চার মা হতে পারলাম না। লোকে কতো কথা কয়। কিন্তুু তোর কাকা আমারে ভালোবাসে জন্য এখনও টিকে গেলাম।  জানিনা কি হবে পরে।
দুলিঃ কেদোনা কাকি। তুমি আমাকে বোঝাচ্ছো আর তুমিই কাঁদছো?
কাকিঃ তোকে বড্ড ভালোবাসি রে।  বিয়ে হয়ে এসে  সেই ছোট্ট টি পেয়েছিলাম তোকে। তোর কষ্ট দেখতে পারি না আমি।
দুলিঃ মুচকি হাসি দিলো
কাকিমাঃ কৃষ্ণ তোকে বিয়ে করতে চায় দুলি।
চলবে….