রাষ্ট্রের নাগরিকদের কষ্টার্জিত টাকায় করা রাষ্ট্রীয় সম্পদ বা গুরুতপুর্ণ স্থাপনা। কারো দয়া বা করুণায় এগুলো তৈরী হয়নি। রাষ্ট্রের এসব সম্পদ বিশ্বের আর কোন রাষ্ট্রে এভাবে ধ্বংস করা হয় কিনা আমার জানা নেই। আমার ক্ষুদ্র জীবনে বেশ কয়েকটা রাষ্ট্র ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে। সেখানে দেখেছি দেশ প্রেম কাকে বলে। শুধু আমি দেশকে ভালোবাসি বললেই তাকে দেশপ্রেমিক বলা যায় না। দেশ প্রেমের সংজ্ঞাটা অত্যান্ত ভারী ও তাৎপর্যপুর্ণ।
পার্শবর্তীদেশ ইন্ডিয়াতে একজন কনস্টেবলের কাছ থেকেই দেশপ্রেম কারে বলে শিখতে হয়েছে আমাকে। আমি মুগ্ধ হয়েছি ওই এসএসসি পাস একজন দেশপ্রেমিক কনস্টেবলের কথা শুনে। যাই হোক আমাদের দেশের মানুষ প্রচন্ড আবেগী আর লোভী প্রকৃতির। লোভ তো খাকবেই প্রতিটি মানুষেরই থাকে। তাই বলে অবৈধ্য ভাবে সেই চাহিদা পুরণ করতে হবে, দেশের ক্ষতি করে? যেমনটি বিগত ফেসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়ে আমি ডেইলি অবজারভারের কলামে তুলে ধরেছিলাম অর্থপাচার,দুর্ণীতি, দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি সহ নানা অনিয়মের কথা। আসলে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশপ্রেমের বড্ড অভাব। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ওনারা সব কিছু করতে পারেন এমন চিত্র আমরা দেখেছি। দেখেছি ছোট শিশু থেকে শুরু করে টোকাই মাদকসেবীদেরও ব্যাহার করতে। যাদের দুই শত টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে মুহুর্তেই দুই কোটি টাকার ক্ষতি করা সম্ভব। সে সাংস্কৃতিও আমাদের দেশে প্রচলিত আছে । তাই সর্ব প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। গত জুলাই থেকে আগষ্ট জুড়ে দেশ ব্যাপি যে নৈরাজ্য চললো সেটি শুধু দেশবাসীই নয় গোটা বিশ্বাবসী দেখলো। ছি! এ লজ্জা রাখি কোথায়। কীভাবে শুকাবে এই ‘ক্ষত’? স্বাধীন বাংলাদেশে এর আগে আমার মনে হয় এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেউ দেখেনি।
একেক করে পুড়িয়ে দেওয়া হলো যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোলপ্লাজা, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, মেট্রোরেলের স্টেশন। পুড়িয়ে দেওয়া হলো পুলিশ ফাঁড়ি ও ট্রাফিক বক্স। হামলা চালানো হলো থানায়ও। দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেল না ফায়ার সার্ভিসও। হামলা চালানো হয় মিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে। তান্ডবের শিকার হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়াম। বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, বাদ যায়নি মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। ঘটনার সপ্তাহখানেক পরও ঢাকার মোড়ে মোড়ে রয়ে গেছে হামলার দগদগে ক্ষতচিহ্ন। এভাবেই চলে দেশ ব্যাপি হামলা,ভাঙচুর,সন্ত্রাস আর লুটপাটের রাজত্ব। রাষ্ট্রের উচিত এদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা। অন্যথায় ভবিষ্যতে এদের স্পর্ধা আরো বেড়ে যাবে। আর সেটা দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবে।
আন্দোলনটা ছিল শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারসংক্রান্ত। এই আনন্দোলন ছিলো তাদের ন্যায্য অধিকার। অথচ সেই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করে রেখেছিলো দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতায় থাকা ফেসিষ্ট শেখ হাসিনার ফেসিস্ট আওয়ামী সরকার। সেই অধিকার আদায় করতে রাস্তায় নেমেছিলো শিক্ষার্থীরা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন কীভাবে সহিংসতায় রূপ নিল, সে প্রশ্ন এখন সবার মনে। এখানে তৃতীয় পক্ষের কোন হাত ছিলো নাতো ? তাছাড়া এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে দেশে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালালো কারা ? পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে হামলা চালানো হলো জাতীয় স্থাপনায়; ভয়াবহ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো অনেক রাষ্ট্রীয় সম্পদ। সহিংসতা আর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে প্রাণ গেছে প্রায় ৫ থেকে ৬ শতাধিক মানুষের। এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে সেটি কারোই কাম্য ছিল না। এখন প্রশ্ন হলো, যে ক্ষতি এরই মধ্যে হয়ে গেছে, সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে তো? শিক্ষার্থীদের কাঁধে ভর করে যারা সহিংস কর্মকান্ড চালালো তারা কি বিচারের আওতায় আসবে না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। শাস্তি দিতে হবে অপরাধীদের। তানা হলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
অর্ন্তরবর্কী কালিন সরকারের কথার সূত্র ধরে আমরাও বলতে চাই, যারা দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করার মতো জঘন্য কর্মকান্ডে মেতে উঠল তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়গুলোসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের তাজা প্রাণ কেড়ে নিলো এবিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা দেশবাসীর প্রত্যাশা।
যারা হামলা চালিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, তরুণ মেধাবী শির্ক্ষাথীদের তাজা প্রাণ বুলেটের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করেছে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম। তিনি আরও বলেন, দেশকে ভালোবাসতে না পারলে কারও রাজনীতি করার অধিকার নেই। দেশের সম্পদ নষ্ট করে, ক্ষতি করে রাজনীতি করা যায় না।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে ধ্বংসলীলা চালানো ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. আইনুল ইসলাম এই দাবি জানান।
এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা জানান, দেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে আন্দোলন চলাকালে স্বার্থান্বেষীদের দ্বারা রাষ্ট্রীয় সম্পদে ধ্বংসলীলা চালানো হয়। এই আন্দোলন ও ধ্বংসলীলা চালাকালে অনেক মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে কোটা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় সম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বর্তমান সরকার ক্ষতিয়ে দেখছে।
সুত্রমতে, আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে। পুলিশ প্রশাসনসহ এই ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়াা ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত রায় হয়নি। সরকার ঘোষণা করেছে যে, আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। যারা আইন ভঙ্গ করেছে, তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোই মুল কাজ। সুষ্ঠু বিচার না হলে এমন কাজে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। তাদের বিচার করে অন্যদের জন্য একটা সতর্কবার্তা দেওয়া জরুরি। নিরীহ মানুষের জীবন ও সম্পত্তি নষ্ট করেছে, তাদের বিচার না করে ছাড় দেওয়া ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।এ ধরনের ঘটনার জন্য যদি কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এ ধরনের কাজ করতে সাহস পাবে না।
তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে যারাই রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে খুঁজে বের করা মোটেও সহজ কাজ নয়। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সব দিক বিবেচনা করা জরুরি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দোষীদের বিচার করা জরুরি হলেও, একই সাথে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং পুলিশি অত্যাচারের বিষয়টিও বিবেচনা করা উচিত। সেই সাথে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের সাথে তৃতীয় কোন গোষ্ঠি জড়িত আছে কিনা বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নেওয়া জরুরী।
মোঃ মাজেম আলী মলিন ,সাংবাদিক,কলামিস্ট ডেইলি অবজারভার,প্রকাশক ও সম্পাদক দৈনিক বনলতা।