মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গারো সম্প্রদায়ের লোকেরা সারা দিন পূজা-অর্চনা করে নেচে-গেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করেছেন সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উৎসব ওয়ানগালা। রোববার উপজেলার ফুলছড়া গারো লাইনের মাঠে ওয়ানগালা উদযাপন কমিটির আয়োজনে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। এর আগে শনিবার সন্ধ্যা থেকে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
ওয়ানগালা হলো নবান্ন উৎসব। গারো সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, ‘মিশি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর ভরসা রাখলে ফসলের ফলন ভালো হয়। এই শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির পাশাপাশি সব পরিবারের ভালোবাসা, আনন্দ এবং মঙ্গল কামনা করে ওয়ানগালা (নবান্ন) উৎসব পালন করেন গারো সম্প্রদায়।
দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী জুম নাচ, নিজ ভাষায় গান ও গারো নাচ পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এ সময় গারো সম্প্রদায়ের মেয়েরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ে ওয়ানগালা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। এর আগে গারো মেয়েরা তাদের ট্রেডিশনাল নাচের মাধ্যমে আমন্ত্রিত প্রধান ও বিশেষ অতিথিকে বরণ করে নেয়।
ওয়ানগালা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামুয়েল জোসেফ হাজং ডেইলি অবজারভারকে বলেন, ‘আমাদের নতুন ফসল ঘরে তোলার এই উৎসব হচ্ছে ওয়ানগালা। নতুন ফসল যখন আমরা ঘরে তুলি তখন মিশি সালজং বা শস্য দেবতাকে এই ফসল উৎসর্গ করার পরেই এটা আমরা গ্রহণ করে থাকি। তবে এখন আমরা যেহেতু গারোরা সবাই ৯৯ শতাংশ খ্রীস্টান ধর্মে দীক্ষিত। তাই দীক্ষিত হওয়ার পর সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিক ভাবে একত্রে করে পালন করা হয়। অর্থাৎ এক সময় শস্য দেবতা মিশি সালজংকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করা হয়।’
উৎসবের আলোচনা পর্বে ক্যাথলিক মিশনের প্রধান পুরোহিত ফাদার ড. জেমস শ্যামল গমেজের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য প্রীতম দাশ, ফিনলে ডিনস্টন ডিভিশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির মজুমদার, মাজদিহি চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. শাহারিয়া পারভেজ প্রমুখ।