মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অপরাধ ঢাকতে সংবাদ সম্মেলন

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:২০:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ৪০৮৩ Time View

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.  নাটোরের গুরুদাসপুরে বিনা নোটিশে ২ নম্বর বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সেবাপ্রত্যাশীদের। সোমবার দেশের জাতীয় একটি টেলিভিশন ও একটি পত্রিকায় “বিনা নোটিশে বন্ধ ইউপি” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর সোমবার বিকেলে অপরাধ ঢাকতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টরা। বন্ধের দিন দায়িত্বে থাকা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশকে ভয় দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা বক্তব্যও প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে।

গুরুদাসপুরের স্থানীয় ফেসবুক পেইজ ভিত্তিক অনিবন্ধিত ‘নাটোর ডট টিভি ও দর্পন টাইমস’ নামের দুইটি ফেইসবুক পেইজে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সুজা, সচিব জালাল উদ্দিন, ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলাম, গ্রাম পুলিশ বাবলু, স্থানীয় মসজিদের ইমামসহ একজন ইউপি সদস্য সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া গ্রাম পুলিশ বাবলু বলেন, আমি বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রাম পুলিশের দায়িত্বে আছি। গত রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) আমি সকালে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে বসেছিলাম। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তা কেউ পরিষদে আসেনি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে যখন কেউ আসলো না তখন আমি বাড়িতে খেতে গিয়েছিলাম। তারপর বিকেলে এসেও দেখি কেউ আসেনি। পরবর্তীতে টেলিভিশন ও পত্রিকায় ইউনিয়ন পরিষদ বন্ধ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বলে শুনেছি। সোমবার বিকেলে আমাকে পরিষদে ডেকে ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা বলেছে, আমরা যা শিখিয়ে দিচ্ছি সেগুলো সংবাদ সম্মেলনে ক্যামেরার সামনে বলো। তাতে তোমারও ভাল আমাদেরও ভাল। না হলে তোমার চাকুরি থাকবেনা । বিভিন্ন রকম ভয় ভীতির কারণে আমি ভয় পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা কথা বলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া স্থানীয় মসজিদের ইমাম বলেন, সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সকলেই এসে আমাকে বললো তাই কথা বলেছি। তবে রবিবার ইউনিয়ন পরিষদ বন্ধ ছিলো। এছাড়াও ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আলুফা বেগম দাবি করেন, আমি সকাল ৯টায় পরিষদে এসেছিলাম। তারপরে কাজের জন্য চলে গেছিলাম। তবে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী পরিষদ যতক্ষন খোলা থাকার কথা ততক্ষন খোলা থাকেনি।

সংবাদ সম্মেলনে এক ভিডিও সাক্ষাতকারে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সুজা বলেন, ইউনিয়নের সুনাম ক্ষুন্য করার জন্যই মিথ্যা ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়াও সাংবাদিকরা কতটাকা বেতন পান আমরা তা জানি। অথচ রবিবার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে চেয়ারম্যান নিজেই শিকার করেছিলেন পরিষদের সচিব ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা ছুটিতে আছেন। আর তিনিও কারণবসত পরিষদে যেতে পারেননি। তাই পরিষদ বন্ধ ছিলো।

অপরাধ ঢাকতে সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মুঠোফনে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। সচিব জালাল উদ্দিন ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি এবং ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলামের মুঠোফনও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্থানীয় একজন সাংবাদিককে দিয়ে দৈনিক সমকালের সাংবাদিকের সাথে বিষয়টি নিয়ে বসে সমাধান করার প্রস্তাবও দিয়েছেন চেয়ারম্যানের স্বজনরা।

এ বিষয়ে নাটোর স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাদিম সারওয়ার জানান, একজন জনপ্রতিনিধির এতো প্রতিক্রিয়া দেখানো মোটেও ঠিক হয়নি। আমি তার সাথে কথা বলবো। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে বিষয়টা দেখবো।
উল্লেখ্য, ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার ইউনিয়ন পরিষদ বিনা নোটিশে বন্ধ থাকার কারণে অনেক সেবাপ্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে পড়ে।

Tag :

অপরাধ ঢাকতে সংবাদ সম্মেলন

Update Time : ০৪:২০:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.  নাটোরের গুরুদাসপুরে বিনা নোটিশে ২ নম্বর বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সেবাপ্রত্যাশীদের। সোমবার দেশের জাতীয় একটি টেলিভিশন ও একটি পত্রিকায় “বিনা নোটিশে বন্ধ ইউপি” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর সোমবার বিকেলে অপরাধ ঢাকতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্টরা। বন্ধের দিন দায়িত্বে থাকা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশকে ভয় দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা বক্তব্যও প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে।

গুরুদাসপুরের স্থানীয় ফেসবুক পেইজ ভিত্তিক অনিবন্ধিত ‘নাটোর ডট টিভি ও দর্পন টাইমস’ নামের দুইটি ফেইসবুক পেইজে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সুজা, সচিব জালাল উদ্দিন, ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলাম, গ্রাম পুলিশ বাবলু, স্থানীয় মসজিদের ইমামসহ একজন ইউপি সদস্য সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া গ্রাম পুলিশ বাবলু বলেন, আমি বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রাম পুলিশের দায়িত্বে আছি। গত রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) আমি সকালে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে বসেছিলাম। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব এবং ডিজিটাল উদ্যোক্তা কেউ পরিষদে আসেনি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে যখন কেউ আসলো না তখন আমি বাড়িতে খেতে গিয়েছিলাম। তারপর বিকেলে এসেও দেখি কেউ আসেনি। পরবর্তীতে টেলিভিশন ও পত্রিকায় ইউনিয়ন পরিষদ বন্ধ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বলে শুনেছি। সোমবার বিকেলে আমাকে পরিষদে ডেকে ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা বলেছে, আমরা যা শিখিয়ে দিচ্ছি সেগুলো সংবাদ সম্মেলনে ক্যামেরার সামনে বলো। তাতে তোমারও ভাল আমাদেরও ভাল। না হলে তোমার চাকুরি থাকবেনা । বিভিন্ন রকম ভয় ভীতির কারণে আমি ভয় পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা কথা বলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়া স্থানীয় মসজিদের ইমাম বলেন, সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সকলেই এসে আমাকে বললো তাই কথা বলেছি। তবে রবিবার ইউনিয়ন পরিষদ বন্ধ ছিলো। এছাড়াও ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আলুফা বেগম দাবি করেন, আমি সকাল ৯টায় পরিষদে এসেছিলাম। তারপরে কাজের জন্য চলে গেছিলাম। তবে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী পরিষদ যতক্ষন খোলা থাকার কথা ততক্ষন খোলা থাকেনি।

সংবাদ সম্মেলনে এক ভিডিও সাক্ষাতকারে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সুজা বলেন, ইউনিয়নের সুনাম ক্ষুন্য করার জন্যই মিথ্যা ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়াও সাংবাদিকরা কতটাকা বেতন পান আমরা তা জানি। অথচ রবিবার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে চেয়ারম্যান নিজেই শিকার করেছিলেন পরিষদের সচিব ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা ছুটিতে আছেন। আর তিনিও কারণবসত পরিষদে যেতে পারেননি। তাই পরিষদ বন্ধ ছিলো।

অপরাধ ঢাকতে সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মুঠোফনে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। সচিব জালাল উদ্দিন ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি এবং ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলামের মুঠোফনও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্থানীয় একজন সাংবাদিককে দিয়ে দৈনিক সমকালের সাংবাদিকের সাথে বিষয়টি নিয়ে বসে সমাধান করার প্রস্তাবও দিয়েছেন চেয়ারম্যানের স্বজনরা।

এ বিষয়ে নাটোর স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাদিম সারওয়ার জানান, একজন জনপ্রতিনিধির এতো প্রতিক্রিয়া দেখানো মোটেও ঠিক হয়নি। আমি তার সাথে কথা বলবো। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে বিষয়টা দেখবো।
উল্লেখ্য, ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার ইউনিয়ন পরিষদ বিনা নোটিশে বন্ধ থাকার কারণে অনেক সেবাপ্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে পড়ে।