বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংকটকে কাজে লাগিয়ে দেশের শীর্ষ টেলিকম কোম্পানী গ্রামীণফোন (জিপি) বাজার কুক্ষিগত করছে বলে গুরুতর অভিযোগ করেছে গ্রাহক সংখ্যার বিচারে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা অপারেটর রবি। সোমবার অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে জিপি এসএমপি বিধিমালা না মেনে বিভিন্ন ধরনের অফার চালু করে বাজার কুক্ষিগত করছে। তারা নিজেদের বাণিজ্যিক পদক্ষেপগুলোকে কর্পোরেট স্যোশাল রেসপন্সিবিলিটির (সিএসআর) মোড়কে উপস্থাপন করছে। ফলে দেশের টেলিকম খাতে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গ্রামীণফোন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) যদি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে সুশৃঙ্খলভাবে চলার জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে তারা আরো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবে। তাই সরকার এবং বিটিআরসিকে এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে দেশের অন্যান্য টেলিকম কোম্পানীগুলো তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবে না।
গত শুক্রবার গ্রামীণফোনের তরফ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জিপি সিম ব্যবহারকারী যারা এপ্রিল মাসে কোনো টাকা রিচার্জ করতে পারেননি বা যেসব ব্যবহারকারীর ব্যালেন্স একেবারেই ছিল না, এমন এক কোটি গ্রাহককে ১০ কোটি মিনিট ফ্রি টকটাইম দেয়া হবে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সনদপ্রাপ্ত ২৫ হাজার চিকিৎসককে আগামী ৬ মাসের প্রতিমাসে এক টাকার বিনিময়ে ৩০ জিবি করে মোবাইল ডাটা দেওয়া হবে। এছাড়াও সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগের ঘোষণা দেয় দেশে শীর্ষ এ মোবাইল কোম্পানী।
অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ
এর প্রেক্ষিতেই গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে বাজার কুক্ষিগত করার অভিযোগ করেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। পাশপাশি বিটিআরসি জিপির এসব অফার অনুমোদন দেওয়ায় ‘বিষ্ময়’ প্রকাশ করেন তিনি।
রবির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন মো. হাসান জানান, দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সংকট মোকাবেলায় দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। রবির পক্ষ থেকে এ ধরনের মন্তব্য করা খুবই দুঃখজনক। তবে অনেকেই জিপির নেওয়া উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসছেন, এটিকে সাধুবাদ জানাই।
এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, জিপির অফারের অনুমোদন নিয়ম মেনেই দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রতিষ্ঠানটি নিয়ম ভঙ্গ করলে সে অনযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে জিপির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অফার আনছে রবিও। সংবাদ সম্মেলনে মাহতাব উদ্দিন জানান, দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যারা নিয়মিত রিচার্জ করতে পারছেন না তাদের ১০ মিনিট ফ্রি টকটাইম ও ৫০ এমবি ডাটা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রবির বিক্রয় ও পরিবেশন কর্মীদের জন্য খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রবি সেনা কল্যাণ সংস্থার সহযোগিতায় দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের দরিদ্র-অসহায় ১০ হাজার পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণ করবে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামের যেসব স্থানে জনসমাগম বেশি হয়, সেসব জায়গায় জীবাণুমুক্ত বুথ স্থাপন করা হবে।