শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এটা আমার জন্য অনেক বড় শাস্তি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৪৮:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মে ২০২০
  • ১১১ Time View

আমার দিনটা কীভাবে শুরু হয়, সেটিই আগে বলি। ভোর রাতে সাহরি খেয়ে নামাজ পড়ে ঘুমাই। ঘুম থেকে দেরিতে উঠতে মন চায়। কিন্তু ছেলে মায়ান ঘুম থেকে উঠে গেলেই আমাদের ঘুমও শেষ। ‘বাবা ওঠো, মাম্মা ওঠো’ বলে আমাদের সে উঠিয়ে দেবেই।

দুপুর ১২টার দিকে আমি ফিটনেস নিয়ে কাজ শুরু করি। দেড় ঘণ্টা মতো জিম করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ি। একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে ধর্মীয় বই পড়ি। ইফতারের আগে স্ত্রীকে একটু সহায়তা করি।

ইফতারের পর ছেলে ঘুম থেকে উঠে যায়। ওর সঙ্গে একটু সময় কাটিয়ে আমি আর আমার স্ত্রী তারাবিহর নামাজ পড়ি। হোম কোয়ারেন্টিনে আমার আরেকটা দায়িত্ব ছেলেকে মাঝে মাঝে খাওয়ানো। ওকে খাওয়ানোর পর অপেক্ষায় থাকি কখন সে ঘুমাবে। সে না ঘুমানো পর্যন্ত আমাদেরও ঘুম নেই!

করোনার সময়ে চেষ্টা করছি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। অনেকে বিকাশ নম্বর পাঠিয়ে দেয়, অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয়। যাকে যেভাবে সহায়তা করা যায়, করছি। এর মধ্যে সাকিবের ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছি, যেগুলো বগুড়ায় বিতরণ করেছি। বড় ভাই, বন্ধুবান্ধবেরা আমাকে সহায়তা করেছেন। মানুষের সামনে উদাহরণ তৈরি করা অনেক তৃপ্তিদায়ক। আমার মাধ্যমে যদি মানুষের উপকার হয়, মানুষ নিরাপদে থাকে, সেটা অনেক বড় তৃপ্তির।

করোনা নিয়ে আশার কথা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। আমাদের দেশ মনে হচ্ছে কঠিন পরিস্থিতির দিকেই যাচ্ছে। সংক্রমণের হার ক্রমেই বাড়ছে। পোশাক শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহনও শুনলাম চালু করার চিন্ত আছে। এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুব জরুরি। কিন্তু শিল্পকারখানায় সামাজিক দূরত্ব কীভাবে বজায় রাখবে! তাদের যাতায়াতব্যবস্থা দেখেও সংশয়ে পড়ে গেছি। এখন যদি ওই পর্যায়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে কে জানে! বলা হচ্ছিল এপ্রিল -মে মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ, এই সময়ে অনেকে সংক্রমিত হবে। আমার ব্যক্তিগত মত, অন্তত ঈদ পর্যন্ত যদি অবরুদ্ধ অবস্থা থাকত, তাহলেও হতো।

এটাও ঠিক, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও তেমন ভালো নয়। শ্রমিকেরা কাজ না করলে বেতন দেবে না। কাজ করেও তো অনেক সময় তাঁরা ন্যায্য বেতন পান না। কাজ না করে তাঁদের চলা কঠিন। সব দিক দিয়েই পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেল। এ পরিস্থিতি দ্রুত শেষ হলে খুব ভালো হয়। তবে অন্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক ঝুঁকিতেই আছি।

নিজের কথা যদি বলি, অনেক দিন হয়ে গেল ব্যাটিং করতে পারছি না। আমার ক্যারিয়ারে এমন কখনো হয়নি। আমার স্ত্রীও বলছে, ‘তুমি এত দিন অনুশীলনের বাইরে, এ এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার!’ কিন্তু কী করব, এটা তো আর আমার হাতে নেই। তার পরও বাসায় যে কটি ব্যাট আছে, প্রতিদিনই হাতে নিই। কিছু না কিছু করার চেষ্টা করি।

আসলে এটা আমার জন্য অনেক বড় শাস্তি। যদি কেউ বলে, দুদিন অনুশীলন করবে না, বাসায় থাকবে, সেটাই আমার কাছে জেলখানা হয়ে যায়। আর কোনো শাস্তি দেওয়া লাগে না। খুবই খারাপ লাগছে ঘরবন্দী থাকতে থাকতে। কিন্তু কিছু করার নেই। অন্যদের কথা চিন্তা করছি, যারা অসহায় অবস্থায় আছে। সবাই যেন নিরাপদ থাকে, ভালো থাকে। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে এতটুকু বিসর্জন তো দিতে হবে। ঘরে থাকতে হবে।

Tag :

এটা আমার জন্য অনেক বড় শাস্তি

Update Time : ০৫:৪৮:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মে ২০২০

আমার দিনটা কীভাবে শুরু হয়, সেটিই আগে বলি। ভোর রাতে সাহরি খেয়ে নামাজ পড়ে ঘুমাই। ঘুম থেকে দেরিতে উঠতে মন চায়। কিন্তু ছেলে মায়ান ঘুম থেকে উঠে গেলেই আমাদের ঘুমও শেষ। ‘বাবা ওঠো, মাম্মা ওঠো’ বলে আমাদের সে উঠিয়ে দেবেই।

দুপুর ১২টার দিকে আমি ফিটনেস নিয়ে কাজ শুরু করি। দেড় ঘণ্টা মতো জিম করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ি। একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে ধর্মীয় বই পড়ি। ইফতারের আগে স্ত্রীকে একটু সহায়তা করি।

ইফতারের পর ছেলে ঘুম থেকে উঠে যায়। ওর সঙ্গে একটু সময় কাটিয়ে আমি আর আমার স্ত্রী তারাবিহর নামাজ পড়ি। হোম কোয়ারেন্টিনে আমার আরেকটা দায়িত্ব ছেলেকে মাঝে মাঝে খাওয়ানো। ওকে খাওয়ানোর পর অপেক্ষায় থাকি কখন সে ঘুমাবে। সে না ঘুমানো পর্যন্ত আমাদেরও ঘুম নেই!

করোনার সময়ে চেষ্টা করছি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। অনেকে বিকাশ নম্বর পাঠিয়ে দেয়, অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয়। যাকে যেভাবে সহায়তা করা যায়, করছি। এর মধ্যে সাকিবের ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছি, যেগুলো বগুড়ায় বিতরণ করেছি। বড় ভাই, বন্ধুবান্ধবেরা আমাকে সহায়তা করেছেন। মানুষের সামনে উদাহরণ তৈরি করা অনেক তৃপ্তিদায়ক। আমার মাধ্যমে যদি মানুষের উপকার হয়, মানুষ নিরাপদে থাকে, সেটা অনেক বড় তৃপ্তির।

করোনা নিয়ে আশার কথা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। আমাদের দেশ মনে হচ্ছে কঠিন পরিস্থিতির দিকেই যাচ্ছে। সংক্রমণের হার ক্রমেই বাড়ছে। পোশাক শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহনও শুনলাম চালু করার চিন্ত আছে। এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুব জরুরি। কিন্তু শিল্পকারখানায় সামাজিক দূরত্ব কীভাবে বজায় রাখবে! তাদের যাতায়াতব্যবস্থা দেখেও সংশয়ে পড়ে গেছি। এখন যদি ওই পর্যায়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে কে জানে! বলা হচ্ছিল এপ্রিল -মে মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ, এই সময়ে অনেকে সংক্রমিত হবে। আমার ব্যক্তিগত মত, অন্তত ঈদ পর্যন্ত যদি অবরুদ্ধ অবস্থা থাকত, তাহলেও হতো।

এটাও ঠিক, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও তেমন ভালো নয়। শ্রমিকেরা কাজ না করলে বেতন দেবে না। কাজ করেও তো অনেক সময় তাঁরা ন্যায্য বেতন পান না। কাজ না করে তাঁদের চলা কঠিন। সব দিক দিয়েই পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেল। এ পরিস্থিতি দ্রুত শেষ হলে খুব ভালো হয়। তবে অন্য দেশের তুলনায় আমরা অনেক ঝুঁকিতেই আছি।

নিজের কথা যদি বলি, অনেক দিন হয়ে গেল ব্যাটিং করতে পারছি না। আমার ক্যারিয়ারে এমন কখনো হয়নি। আমার স্ত্রীও বলছে, ‘তুমি এত দিন অনুশীলনের বাইরে, এ এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার!’ কিন্তু কী করব, এটা তো আর আমার হাতে নেই। তার পরও বাসায় যে কটি ব্যাট আছে, প্রতিদিনই হাতে নিই। কিছু না কিছু করার চেষ্টা করি।

আসলে এটা আমার জন্য অনেক বড় শাস্তি। যদি কেউ বলে, দুদিন অনুশীলন করবে না, বাসায় থাকবে, সেটাই আমার কাছে জেলখানা হয়ে যায়। আর কোনো শাস্তি দেওয়া লাগে না। খুবই খারাপ লাগছে ঘরবন্দী থাকতে থাকতে। কিন্তু কিছু করার নেই। অন্যদের কথা চিন্তা করছি, যারা অসহায় অবস্থায় আছে। সবাই যেন নিরাপদ থাকে, ভালো থাকে। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে এতটুকু বিসর্জন তো দিতে হবে। ঘরে থাকতে হবে।