এক লিটার দুধের উৎপাদন খরচ ৪৫ টাকা। ১০ টাকা লোকসানে দিয়ে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তারপরও অনেক সময় ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না। এই হিসাবে প্রায় ৩ লাখ টাকা ওপরে লোকসান গুনতে হচ্ছে মাসে। গাড়ি বন্ধ থাকায় গরুর খাবারও পাওয়া যাচ্ছে না। খাদ্যের অভাবে খামারের শতাধিক গরুর যথাযথ যত্ন নিতে না পারায় দুধের উৎপাদনও কমে গেছে। লোকসানের কারণে এখন খামার টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়েছে।’ কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ফুলপুরের ভাইটকান্দি এলাকার বিগ ব্যাং ডেইরি ফার্মের মালিক জহিরুল হক বাসান।
শুধু জহিরুল হক বাসানই না, জেলার সব ডেইরি ফার্মের মালিকদের একই অবস্থা। ময়মনসিংহ সদরের অষ্টধারের আবু ডেইরি ফার্মের মালিক আবু হানিফ জানান, করোনাভাইরাসের কারণে মিষ্টি দোকান বন্ধ হওয়ায় প্রতিদিন তাকে ৪০০ লিটার দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদন খরচের চেয়েও ১০ টাকা কম মূল্যে। প্রতিদিন তার চার হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দুধ বিক্রি থেকে যে আয় হয় তা থেকে গরুর খাদ্য কেনা, কর্মচারীর বেতনসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে হয়। দুধের দাম কমে যাওয়ায় জেলার সব খামারিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এসব খামারিকে বাঁচাতে দ্রুত সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা জরুরি।
জেলা ডেইরি খামার সমিতির সভাপতি সজীব দেবনাথ জানান, জেলায় প্রায় আড়াইশ’ ডেইরি খামার আছে। করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি লোকসানে পড়েছেন খামারিরা।
তিনি জানান, জেলার প্রত্যেক মিষ্টি দোকান মালিকদের সঙ্গে কোনও কোনও ডেইরি খামারের এক বছরের জন্য দুধ দেওয়ার চুক্তি হয়ে থাকে। মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় এখন আর মিষ্টি মালিকরা দুধ নিতে পারছেন না। এ কারণে দুধ বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। গ্রামের বাজারে উৎপাদন খরচের চেয়েও খুব কম মূল্যে লোকসান দিয়ে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এই সময়ে ডেইরি খামার টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে এখন ডেইরি খামারের ব্যবসা ইচ্ছে করলে ছেড়েও দিতে পারছেন না। এই অবস্থায় খামারিদের লোকসান কিছুটা কমাতে এবং টিকে থাকতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
ডেইরি খামারিদের লোকসানের কথা স্বীকার করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জানান, ডেইরি খামারিদের লোকসানের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা জেলার ডেইরি খামারিদের নামের তালিকা নিয়েছেন।