শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলনবিলের প্রধান বাহন ডিঙি নৌকা হাট তৈরী ও বিক্রি জমে উঠেছে

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:০০:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুন ২০২০
  • ১০৭ Time View

বিশেষ প্রতিবেদক.

ভরা বর্ষা মৌসুম, চার দিকে থৈ থৈ পানি। চলনবিলের বিস্তীর্ন এলাকা মাঠঘাট খালবিল গুলো এখন পানির নিচে। ফলে চলনবিলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান বাহন ডিঙি নৌকার কদর একটু বেশী। একারনে বসে নেই নৌকা তৈরীর কাজে নিয়োজিত ব্যবসায়ি ও মিস্ত্রিরা। চলনবিলের বাণিজ্য নগরী চাঁচকৈড়ে গড়ে উঠেছে ডিঙি নৌকার বিশাল হাট।
সরেজমিনে গতকাল শনিবার চাঁচকৈড় হাট ঘুরে দেখা গেছে- প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে নৌকা বিক্রির হাট। পাশা-পাশি প্রায় ১৫-২০টি কারখানায় চলছে নৌকা তৈরীর কাজ। কাঠহাট মোড় হতে চৈতালী হাট মোড় হয়ে শিক্ষা সংঘ পর্যন্ত পাকা সড়কের দুই পাশে নৌকাগুলো সারি সারি করে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। ক্রেতারা ইচ্ছামতো দেখে শুনে কিনছেন নৌকা । আশ পাশের প্রায় দশটি উপজেলা থেকে ক্রেতারা এসেছেন নৌকা কিনতে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে নৌকা বেচা কেনা। এখানকার তৈরিকৃত নৌকা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলাতেও।
চলনবিলের সিংড়া উপজেলার হিজলা গ্রাম থেকে আসা ক্রেতা মনিরুল ইসলাম জানান, বিগত বছরের চেয়ে এবার চলনবিলে পানি বেশী। নিচু এলাকার সড়কগুলো পানিতে ডুবে গেছে। এ গ্রাম থেকে সে গ্রামে যেতে এসব ডিঙি নৌকার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে মাছ ধরার কাজে বেশী দরকারি এসব ডিঙি নৌকা।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের তেতলা গ্রাম থেকে মজিবর ও নাদো-সৈয়দপুরের মোশারফ হোসেন জানালেন, বর্ষায় চারদিক ডুবে যায় তাই কোন কাজকর্ম না থাকায় বিকল্প পেশা মানুষ পাড়াপাড়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এসব ডিঙি নৌকায়। একারনে তারা চাঁচকৈড় হাটে এসেছেন ডিঙি নৌকা কিনতে।
উপজেলার মান্নাননগর, বিনোদপুর গ্রামের আবুল হোসেন ও রেজা শাহ জানালেন- বর্ষাকালে তাদের হাতে কাজ থাকেনা। তাই ডিঙি নৌকা কিনে মাছ ধরে বাড়তি আয় করতেই এসব নৌকা কেনা।
ফার্নিচার মালিক সমিতির সভাপতি ইয়ারুল এবং সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আন্টু জানান, নৌকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি কাঠের তৈরি ডিঙি নৌকা ২হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩হাজার টাকা। প্লেনশীটের তৈরি নৌকা আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫’শ হতে ৫ হাজার ৫’শ টাকায়।
স্থানীয় নৌকা ব্যবসায়ি আব্দুর রাজ্জাক, আলাল উদ্দিন ও হারুন জানান, চলনবিলে বন্যা না থাকায় গত কয়েক বছর নৌকা ব্যবসা মন্দা গেছে। এবার বিলে পানি থাকায় নৌকার চাহিদা বাড়ছে। দিনরাত কাজ করেও নৌকা তৈরীর কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। নৌকার দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তারা জানান- কাঠমিস্ত্রিদের মজুরী ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকার দাম একটু বেড়েছে।
মিস্ত্রী পানু শেখ জানান- প্রতিটি ডিঙি নৌকার জন্য ২৫০ থেকে ৩৫০টাকা মজুরী পান। দিনে ২টি করে ডিঙি নৌকা তৈরী করতে পারেন তারা। তারা আরো জানান, চলনবিলের প্রাণকেন্দ্রে গুরুদাসপুরে চাঁচকৈড় হাটের অবস্থান হওয়ায় চলনবিল কেন্দ্রিক উপজেলাগুলো থেকে এই হাটে আসে নৌকা কিনতে। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে।
গুরুদাসপুর স’মিল মালিক সমিতির সভাপতি মাহাতাব সরকার ও সাধারণ সম্পাদক কামাল সরকার বলেন, গত কয়েক বছরে নৌকা ব্যবসা ভালো না হলেও এ বছর বিক্রি ভালো হচ্ছে। চলনবিলে প্রচুর পানি হয়েছে। ফলে নৌকার কদরও বাড়ছে।

Tag :

চলনবিলের প্রধান বাহন ডিঙি নৌকা হাট তৈরী ও বিক্রি জমে উঠেছে

Update Time : ১১:০০:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুন ২০২০

বিশেষ প্রতিবেদক.

ভরা বর্ষা মৌসুম, চার দিকে থৈ থৈ পানি। চলনবিলের বিস্তীর্ন এলাকা মাঠঘাট খালবিল গুলো এখন পানির নিচে। ফলে চলনবিলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান বাহন ডিঙি নৌকার কদর একটু বেশী। একারনে বসে নেই নৌকা তৈরীর কাজে নিয়োজিত ব্যবসায়ি ও মিস্ত্রিরা। চলনবিলের বাণিজ্য নগরী চাঁচকৈড়ে গড়ে উঠেছে ডিঙি নৌকার বিশাল হাট।
সরেজমিনে গতকাল শনিবার চাঁচকৈড় হাট ঘুরে দেখা গেছে- প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে নৌকা বিক্রির হাট। পাশা-পাশি প্রায় ১৫-২০টি কারখানায় চলছে নৌকা তৈরীর কাজ। কাঠহাট মোড় হতে চৈতালী হাট মোড় হয়ে শিক্ষা সংঘ পর্যন্ত পাকা সড়কের দুই পাশে নৌকাগুলো সারি সারি করে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। ক্রেতারা ইচ্ছামতো দেখে শুনে কিনছেন নৌকা । আশ পাশের প্রায় দশটি উপজেলা থেকে ক্রেতারা এসেছেন নৌকা কিনতে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে নৌকা বেচা কেনা। এখানকার তৈরিকৃত নৌকা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলাতেও।
চলনবিলের সিংড়া উপজেলার হিজলা গ্রাম থেকে আসা ক্রেতা মনিরুল ইসলাম জানান, বিগত বছরের চেয়ে এবার চলনবিলে পানি বেশী। নিচু এলাকার সড়কগুলো পানিতে ডুবে গেছে। এ গ্রাম থেকে সে গ্রামে যেতে এসব ডিঙি নৌকার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে মাছ ধরার কাজে বেশী দরকারি এসব ডিঙি নৌকা।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের তেতলা গ্রাম থেকে মজিবর ও নাদো-সৈয়দপুরের মোশারফ হোসেন জানালেন, বর্ষায় চারদিক ডুবে যায় তাই কোন কাজকর্ম না থাকায় বিকল্প পেশা মানুষ পাড়াপাড়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এসব ডিঙি নৌকায়। একারনে তারা চাঁচকৈড় হাটে এসেছেন ডিঙি নৌকা কিনতে।
উপজেলার মান্নাননগর, বিনোদপুর গ্রামের আবুল হোসেন ও রেজা শাহ জানালেন- বর্ষাকালে তাদের হাতে কাজ থাকেনা। তাই ডিঙি নৌকা কিনে মাছ ধরে বাড়তি আয় করতেই এসব নৌকা কেনা।
ফার্নিচার মালিক সমিতির সভাপতি ইয়ারুল এবং সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আন্টু জানান, নৌকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি কাঠের তৈরি ডিঙি নৌকা ২হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩হাজার টাকা। প্লেনশীটের তৈরি নৌকা আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫’শ হতে ৫ হাজার ৫’শ টাকায়।
স্থানীয় নৌকা ব্যবসায়ি আব্দুর রাজ্জাক, আলাল উদ্দিন ও হারুন জানান, চলনবিলে বন্যা না থাকায় গত কয়েক বছর নৌকা ব্যবসা মন্দা গেছে। এবার বিলে পানি থাকায় নৌকার চাহিদা বাড়ছে। দিনরাত কাজ করেও নৌকা তৈরীর কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। নৌকার দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তারা জানান- কাঠমিস্ত্রিদের মজুরী ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকার দাম একটু বেড়েছে।
মিস্ত্রী পানু শেখ জানান- প্রতিটি ডিঙি নৌকার জন্য ২৫০ থেকে ৩৫০টাকা মজুরী পান। দিনে ২টি করে ডিঙি নৌকা তৈরী করতে পারেন তারা। তারা আরো জানান, চলনবিলের প্রাণকেন্দ্রে গুরুদাসপুরে চাঁচকৈড় হাটের অবস্থান হওয়ায় চলনবিল কেন্দ্রিক উপজেলাগুলো থেকে এই হাটে আসে নৌকা কিনতে। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে।
গুরুদাসপুর স’মিল মালিক সমিতির সভাপতি মাহাতাব সরকার ও সাধারণ সম্পাদক কামাল সরকার বলেন, গত কয়েক বছরে নৌকা ব্যবসা ভালো না হলেও এ বছর বিক্রি ভালো হচ্ছে। চলনবিলে প্রচুর পানি হয়েছে। ফলে নৌকার কদরও বাড়ছে।