বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অদ্ভুত বউ!

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুন ২০২০
  • ৫৯ Time View

প্রভাষক আইরিন সুলতানা সোমা,
আমি যখন বিকেলে বা সন্ধ্যা বেলায় শরীরটাকে ফিট রাখার জন্য প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে ছাদে হাঁটি তখন আমার হাজব্যান্ড আমাকে বলে প্লিজ রাতে হাঁটো কেউ যেন দেখতে না পায়! মানুষ দেখলে বলবে এই বাড়িতে একটা অদ্ভুত বউ বাস করে!

যখন গান শুনি আর হাঁটি তখন আমার শ্বাশুড়ি অবাক হয়ে আমাকে দেখে।হয়তো ভাবে এই মেয়ের এত সাহস! গান শুনছে আর হাঁটছে! আমি দেখেও না দেখার ভান করে থাকি। মাঝে মাঝে অদ্ভুত কিছু কথা কানে আসে যেগুলো শুনলে মন খারাপ হয়ে যায় তবু চুপ করে থাকি।আমার মা চুপ করে থাকতে বলে।পরিবারের শিক্ষা, এটাই নাকি ভদ্রতা!

কড়া জবাব দেয়া মেয়েদের পরিবারের মানুষ বা সমাজের মানুষ কখনওই মুখের ওপর হুটহাট উত্তর দেওয়া, সরাসরি “না” বলা অতি সহজে পছন্দ করেনা।

বিশেষ করে পরিবারের মাঝে কখনওই স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড মেয়েদের ভুল করেও মেনে নেওয়া হয় না। কারণ, সমাজের মানুষের মতানুসারে, স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড মেয়ে বলতেই তাকে লজ্জাহীণ, ম্যানারলেস আর বেয়াদব হিসেবে গণ্য হতে হবে।

ছেলেরা সাধারণত জন্মগতভাবেই সরাসরি কোনো কথার কড়া জবাব দেওয়ার স্বভাব নিয়েই বড় হয়। হয়তো ছেলেদের এই কড়া জবাবের জোরে বা জেদের কারণে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতেও অনেকাংশে সক্ষম হয়। তবে মেয়েদের ব্যাপারটা ভিন্ন, তাদের শুধু চুপচাপ সব রম্য কথা সহ্য করে যেতে হয়। নির্বিঘ্নে মেনে নিতে হয় পরিবার বা সমাজের চাপিয়ে দেওয়া সকল অন্যায় সিদ্ধান্ত !

আমাদের সমাজে মেয়েদের সরাসরি “না” বলতে নিষেধ করা হয়। কারণ সবাই ভাবে, মেয়েদের এই সরাসরি “না” বলার মাঝে প্রায় শতভাগ বেয়াদবি, লজ্জাহীনতা আর ম্যানারলেস মিশ্রিত থাকে। যা কখনওই কোনো পরিবারে মেয়েদের ভাগ্য নির্ধারণকারী গুরুজনেরা মেনে নিতে পারে না। তাতে যদি মেয়েটার পুরো জীবনটাও তছনছ হয়ে যায়, তাতেও তাদের সরাসরি না বলা যাবেনা।

হুটহাট অন্যায়কে “না” বলা বা মুখের ওপর কড়া জবাব দেওয়ার পুরস্কার হিসেবে প্রায় সব মেয়েকেই এসব মশলাদার সিজিনিং কমপ্লিমেন্ট শুনতে হয়।

ঘর ত্যাগ করা বেয়াদব ছেলে হয়তো শরীরের জোরে বা বুদ্ধির ক্ষমতায় সহজেই যেকোনো ছোট-খাটো চাকরি-বাকরি জোগাড় করে নিতে পারে, কিন্তু মেয়েরা একবার ঘরত্যাগ করলেই তাদের পতিতালয় বা কোনো রাস্তার কোণা ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।

আমাদের দেশে আর বেগম রোকেয়া বা সুফিয়া কামাল জন্ম নেয় না। কারণ, রোকেয়ার “র” আর সুফিয়ার “স” শেখানোর আগেই সব মেয়েকে “চুপ” শব্দটার “চ” শেখানো হয়।

তাই আজও প্রায় প্রত্যেকটি ঘরে হুটহাট কথা বলা বা সরাসরি “না” বলা কিংবা কড়া জবাব দেয়া মেয়েটাকে অতি সহজেই কেউ কখনও মেনে নিতে পারে না।

Tag :

অদ্ভুত বউ!

Update Time : ১০:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুন ২০২০

প্রভাষক আইরিন সুলতানা সোমা,
আমি যখন বিকেলে বা সন্ধ্যা বেলায় শরীরটাকে ফিট রাখার জন্য প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে ছাদে হাঁটি তখন আমার হাজব্যান্ড আমাকে বলে প্লিজ রাতে হাঁটো কেউ যেন দেখতে না পায়! মানুষ দেখলে বলবে এই বাড়িতে একটা অদ্ভুত বউ বাস করে!

যখন গান শুনি আর হাঁটি তখন আমার শ্বাশুড়ি অবাক হয়ে আমাকে দেখে।হয়তো ভাবে এই মেয়ের এত সাহস! গান শুনছে আর হাঁটছে! আমি দেখেও না দেখার ভান করে থাকি। মাঝে মাঝে অদ্ভুত কিছু কথা কানে আসে যেগুলো শুনলে মন খারাপ হয়ে যায় তবু চুপ করে থাকি।আমার মা চুপ করে থাকতে বলে।পরিবারের শিক্ষা, এটাই নাকি ভদ্রতা!

কড়া জবাব দেয়া মেয়েদের পরিবারের মানুষ বা সমাজের মানুষ কখনওই মুখের ওপর হুটহাট উত্তর দেওয়া, সরাসরি “না” বলা অতি সহজে পছন্দ করেনা।

বিশেষ করে পরিবারের মাঝে কখনওই স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড মেয়েদের ভুল করেও মেনে নেওয়া হয় না। কারণ, সমাজের মানুষের মতানুসারে, স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড মেয়ে বলতেই তাকে লজ্জাহীণ, ম্যানারলেস আর বেয়াদব হিসেবে গণ্য হতে হবে।

ছেলেরা সাধারণত জন্মগতভাবেই সরাসরি কোনো কথার কড়া জবাব দেওয়ার স্বভাব নিয়েই বড় হয়। হয়তো ছেলেদের এই কড়া জবাবের জোরে বা জেদের কারণে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতেও অনেকাংশে সক্ষম হয়। তবে মেয়েদের ব্যাপারটা ভিন্ন, তাদের শুধু চুপচাপ সব রম্য কথা সহ্য করে যেতে হয়। নির্বিঘ্নে মেনে নিতে হয় পরিবার বা সমাজের চাপিয়ে দেওয়া সকল অন্যায় সিদ্ধান্ত !

আমাদের সমাজে মেয়েদের সরাসরি “না” বলতে নিষেধ করা হয়। কারণ সবাই ভাবে, মেয়েদের এই সরাসরি “না” বলার মাঝে প্রায় শতভাগ বেয়াদবি, লজ্জাহীনতা আর ম্যানারলেস মিশ্রিত থাকে। যা কখনওই কোনো পরিবারে মেয়েদের ভাগ্য নির্ধারণকারী গুরুজনেরা মেনে নিতে পারে না। তাতে যদি মেয়েটার পুরো জীবনটাও তছনছ হয়ে যায়, তাতেও তাদের সরাসরি না বলা যাবেনা।

হুটহাট অন্যায়কে “না” বলা বা মুখের ওপর কড়া জবাব দেওয়ার পুরস্কার হিসেবে প্রায় সব মেয়েকেই এসব মশলাদার সিজিনিং কমপ্লিমেন্ট শুনতে হয়।

ঘর ত্যাগ করা বেয়াদব ছেলে হয়তো শরীরের জোরে বা বুদ্ধির ক্ষমতায় সহজেই যেকোনো ছোট-খাটো চাকরি-বাকরি জোগাড় করে নিতে পারে, কিন্তু মেয়েরা একবার ঘরত্যাগ করলেই তাদের পতিতালয় বা কোনো রাস্তার কোণা ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।

আমাদের দেশে আর বেগম রোকেয়া বা সুফিয়া কামাল জন্ম নেয় না। কারণ, রোকেয়ার “র” আর সুফিয়ার “স” শেখানোর আগেই সব মেয়েকে “চুপ” শব্দটার “চ” শেখানো হয়।

তাই আজও প্রায় প্রত্যেকটি ঘরে হুটহাট কথা বলা বা সরাসরি “না” বলা কিংবা কড়া জবাব দেয়া মেয়েটাকে অতি সহজেই কেউ কখনও মেনে নিতে পারে না।