বনলতা নিউজ ডেস্ক.
সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে নামসর্বস্ব অনলাইন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম। অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনার জন্য কোনো নিয়মনীতি বা আইন না থাকার সুযোগে তৈরি হচ্ছে এসব নিউজ পোর্টাল। এদের অধিকাংশেরই সংবাদের নীতি বা গুণগত মান তো দূরের কথা এসব অনলাইনের মালিক বা সম্পাদকের নাম পরিচয় বা ঠিকানা পাওয়া ও দূরহ। বাহারী সব নাম ও রয়েছে ওই সকল পত্রিকার যেমন খাইছি তোরে,সে কেন আসেনা,আমরা কেন যাইনা, বেহুলা লক্ষিন্দর। সম্পাদক প্রকাশকের যোগ্যতারও প্রয়োজন পরে না।
মাত্র ৮০০ থেকে হাজার টাকায় ডোমেইন ও ২-৩ হাজার টাকায় হোস্টিং কিনে রাতারাতি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মালিক, সম্পাদক, প্রকাশক, উপদেস্টা, প্রধান সম্পাদক, চীফ রিপোর্টার, সিনিয়র রিপোর্টার বনে যাচ্ছেন। একটু খোঁজ নিলেই দেখাযাবে, একজন ব্যক্তিই এখানে সব। তাদের নেই কোনো অফিস, নেই কোনো জনবল, আবার অনেকে করে থাকেন কার্ড ব্যবসা।
দেখা যায়, কোনো কোনো অনলাইনে নানান চটকদার শিরোনামের সম্মানহানী, বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা, উদ্দেশ্য মুলক সংবাদের লিংকে ভরে যাচ্ছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এদের অনেকে কয়েকটি সরাসরি জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডে সমর্থন ও উসকানিমূলক সংবাদ প্রকাশ করে মদদ দিচ্ছে সন্ত্রাসবাদকে। সংবাদের নামে প্রচার করা হচ্ছে মিথ্যা তথ্য, ছড়ানো হচ্ছে গুজব।
অথচ এগুলোর নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংস্থাগুলোর দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম নেই। বর্তমানে দৃশ্যমান তদারকিও নেই তথ্য মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি বা গোয়েন্দা সংস্থার। এ সুযোগে ইন্টারনেট হিটের জন্য বা উদ্দেশ্যমূলক বেপরোয়াভাবে সংবাদের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে বেশ কিছু অখ্যাত অনলাইন। সাংবাদিক নামধারী কিছু চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র হয়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় নিউজ পোর্টাল ও পেশাদার গণমাধ্যম কর্মীদের।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সম্প্রতি জানিয়েছেন, অনলাইন পত্রিকাগুলোর নিবন্ধনের জন্য ৩ হাজার ৫১৭টি আবেদন জমা পড়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ে। সেগুলো আমরা পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। এবিষয়ে স্বরাষ্ট্র, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় একাধিক সভা করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিলাম যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত করে অনলাইন পত্রিকাগুলোর সার্বিক চিত্র আমাদের জানানোর জন্য, যাতে করে আমরা নিবন্ধনের কাজ শুরু করতে পারি।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সভাপতি তপন বিশ্বাস বলেন, দেশে অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিষয়ে কোনো নীতিমালা বা গাইড লাইন না থাকায় প্রতিদিনই গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন অনলাইন নিউজ পোর্টাল। ফলে বাড়ছে নিউজের নামে প্রতারনা।
তিনি আরো বলেন, কোনো দায়বদ্ধতা না থাকায় কোনো কোনো অনলাইন পত্রিকায় সংবাদের নামে প্রচার করা হচ্ছে মিথ্যা তথ্য, ছড়ানো হচ্ছে গুজব। হয়রানি ও অবমাননার শিকার হচ্ছে নারীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। সরকারের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে অনলাইন নীতিমালা জারি করা। যেসব পত্রিকা নীতিমালা মেনে চলবে তাদের নিবন্ধনের আওতায় এনে বাকিদের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া।
এ বিষয়ে ‘অনলাইন নিউজ পোর্টাল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ; এর আহ্বায়ক ড. এম এ হাকিম বলেন, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা অনলাইন নিউজ পোর্টালের লাগাম টেনে ধরার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে অনলাইন নীতিমালা জারি করা প্রয়োজন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা তথ্য মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে।
অনলাইন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, ডিজিটালাইজেশনের এ সময়ে এসব অনলাইনের ব্যাপ্তি এখন রাজধানীর গন্ডি পেড়িয়ে বিভাগীয় শহরাঞ্চল, জেলা শহর, উপজেলা পর্যায়েও বিস্তৃতি ঘটেছে। এমনকি পরিবার কেন্দ্রীকও গড়ে উঠেছে নিউজ পোর্টাল। দেশে এই মূহুর্তে ৩০-৪০ হাজার অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা তথা কথিত সংবাদ মাধ্যম রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো তদারকি বা অনুমোদন প্রক্রিয়া না থাকায় যে কেউ খুলে বসছে এসব অনলাইন। কোন কোন ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য সাধন শেষে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ওয়েবসাট
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মতে, ইন্টারনেটের যুগে ফেসবুক অথবা বিভিন্ন ব্লগ বা বিভিন্ন অনলাইন নিউজ-পোর্টালের মাধ্যমে খবর দ্রুত সবাইকে জানানো যেমন সহজ, তেমনি খবরের নামে বিভ্রান্তিও ছড়ানো যায় দ্রুতই। আর এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিবাদ প্রচার, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, বিতর্ক সৃষ্টিসহ নানা উসকানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে সমাজবিরোধীরা।
সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য নামে-বে-নামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল করে প্রচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নিউজ পোর্টাল ভিজিটর পাচ্ছে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজের মাধ্যমে। এমন সব খবর প্রকাশ করে যা দেখে অনেকেই কৌতূহলে এসব নিউজ-পোর্টাল ভিজিট করেন। জঙ্গিবাদের প্রচারণায় নামা এসব নিউজ পোর্টাল বিভিন্ন ব্যক্তি তথা নারীদের নাম ব্যবহার করে ফেসবুক পেজ খুলে জঙ্গিবাদের প্রচার চালাচ্ছে। অনেক সময় তারা বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করছে এসব পেজে। হাতে গোনা কয়েকটি অনলাইন নিউজ-পোর্টাল বাদে শত শত পোর্টাল আছে যারা কপি পেস্ট বা এমন সব খবর প্রকাশ করে যা জঙ্গিবাদে উৎসাহিত করে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি অথরিটি (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, বিভ্রান্তি মুলক, মিথ্যা, গুজব ও প্রপাগান্ডা ছড়ানো বেনামি অনলাইন পত্রিকা বা পোর্টালগুলোর বিরুদ্ধে প্রায়শঃ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেকগুলোর প্রকাশনাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র্যাব, কিংবা গোয়েন্দা সংস্থা অনলাইন সম্পর্কে বিটিআরসিকে অবহিত করলে তখনই সঙ্গে সঙ্গে বিটিআরসি ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।