গুরুদাসপুর(নাটোর) প্রতিনিধি.
ফতোয়া দিয়ে একটি অসহায় পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছিল নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের দেবোত্তর গরিলা গ্রামের মসজিদের ইমাম ও গ্রাম্য মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। গেল দুই দিন ধরে অমানবিক জীবন যাপন করছিল ওই পরিবারটি।
শনিবার বাদ আছর পাশের রানীনগর মোল্লাপাড়া মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুজ্জামান (৫৫)মসজিদে বসে একঘরে করার ফতোয়াটিজারী করেছিলেন। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন জানান, একঘরে করার খবরটি বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ঘটনাটি তার দৃষ্টগোচর হবার সাথে সাথেই সেখানে দুই জন প্রতিনিধি পাঠান তিনি। ঘটনার তীব্র নিন্দা ও গ্রাম্য মাতব্বর, স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ইমামসহ যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আশার আশ্বাস দেন। সেই সাথে ভুক্তভোগী পরিবারে যেন আর কোন সমস্যা না হয় এব্যাপারে অত্র ইউনিয়োনের চেয়ায়ারম্যানকে অবহিতসহ সতর্ক করেন দেন। পাশাপাশি পরিস্থিতিতে শিকার ওই মেয়েটিকে স্বামীর বাড়িতে পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন।
এর পরই ইউএনও দুজন প্রতিনিধি আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের লুতফর নাহার লতা এবং বি,আর,ডিবি কর্মকর্তা নুরে আলমকে ঘটনাস্থলে পাঠান তিনি। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানান ফতোয়া দিয়ে প্রচলিত আইনের বাহিরে যাবার সুযোগ নেই। এমন বার্তা দেবার পর এলাকাবাসী তাদের হয়রানি করবেনা মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন।
ইউএনও আরো জানান,প্রচলিত আইনের বাহিরে গিয়ে কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখার এখতিয়ার কারো নেই। বিষয়টি জানার পর পরই ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ফতোয়ায় শিকার পরিবারের এক নারীর (৫০) সাথে তাঁর মেয়ে জামাইয়ের (৩৬) অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে ফতোয়া দিয়ে একঘরে রাখার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন গ্রাম্য মাতব্বররা। একই সাথে ওই নারীর মেয়েকে (৩০) তার স্বামীর পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন করা হয়।
ভুক্তভোগী ওই নারী (৫০) জানান, মেয়ে জামাই তার সন্তানেরমত। বেশ কিছুদিন আগে তার ভাইয়ের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার করে মেয়ে জামাইকে দিয়েছিলেন। গত সোমবার সন্ধ্যার পর ধারের টাকা পরিশোধ করে জামাইকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।
রাত ৮টার দিকে রানীনগর মোল্লাপাড়ার একটি পুকুরপাড় দিয়ে ফেরার সময় একই গ্রামের শুকচাঁদ আলী ,কামরুল ইসলাম, আতহার হোসেন ও আলামিন নামে চার যুবক তাদের পথরোধ করে। অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে তাঁদের (জামাই-শ্বাশুরী) বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালান।
এক পর্যায়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা চাঁদাদাবী করে ওই চার যুবক। চাঁদার টাকা দিয়ে অপারগতা জানালে গ্রামের লোকজন ডেকে এনে গ্রামে নিয়ে যায় তারা। জামাই-শ্বাশুরীকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালানোর পর রাত ১২ টার ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।
জামাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার মেয়েকে জোর করে তার বাড়িতে পাঠানো হয়। এনিয়ে পুলিশকে কোন অভিযোগ না দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়। নিজেদের নিরাপত্তার কারনে থানায় অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছিলনা বলে জানান পরিবারটি।
সর্বশেষ গত শনিবার (১৩ জুন) গ্রাম্য মাতব্বর মো. ওসমান আলী, রমজান আলী, মকছেদ আলী ও ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলী যোগসাজশ করে রানীনগর মোল্লাপাড়া মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুজ্জামানকে সেখানে উপস্থিত করেন তাঁরা।
বিচারে শ্বাশুরী-জামাইকে উপস্থিত রেখে শরীয়ত পরিপন্থী অপরাধের জন্য তওবা পড়ান ইমাম নুরুজ্জামান। শ্বাশুরী-জামাইয়ের অনৈতিক সম্পর্র্র্র্কের কারনে তাদের মেয়ে আর স্ত্রী নয় বলে ফতোয়াদেন ওই মাওলানা। এর পর থেকে স্বামীরঘর ছেড়ে মায়ের বাড়িতে অবস্থান করছিল মেয়েটি।
তার মাকে ঘিরে মিথ্যা অভিযোগ এনে সংসার তছনছ করে দিচ্ছে গ্রামের কিছু মাতব্বর। ফতোয়ার কারনে হাটবাজারে কিংবা বাড়ির বাইরে পর্যন্ত বের হতে পারছেনা তাঁরা। এই অন্যায় ফতোয়াবাজির সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবী করেন তাঁরা।
ফতোয়া সম্পর্কে মাওলানা নুরুজ্জামান বলেন, ‘ ইসলামী দৃষ্টিতে জামাই-শ্বাশুরীর মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক থাকলে স্ত্রী সম্পর্ক থাকেনা। গ্রামবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ফতোয়া দিতে বাধ্য হয়েছি। তবে জামাই শ্বাশুরীকে নির্যাতের বিষয়টি জানায়নি গ্রামের মাতব্বররা।
নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকতরানা বলেন, বিষয়টি থানার ওসিকে মুঠোফোনে জানিয়েছিলেন তিনি।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাহারুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন এ নিয়ে কেউ অভিযোগ দেওয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়েরাজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।