বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক মধ্যবিত্ত বাবার গল্প!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৫৫:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০
  • ১২১ Time View

লেখক – ডা: আইরিন আফরিন স্বর্ণা.
একটা পরিবারের আভিজাত্য বোঝা যায় সেই পরিবারের মেয়েগুলা শিক্ষিত কিনা সেইটা দেখে,ব্যাংক এ কত টাকা বা কত বিঘা জমি আছে সেটা দেখে নয়,কারন একটা পরিবারের সবগুলা মেয়েকে যদি আপনি শিক্ষিত করে দিতে পারেন তাহলে তার আভিজাত্য প্রকাশ পায়।
কথাটা শুনেছিলাম খুব সম্ভবত ২০১০ সালের দিকে। তখন আমি এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। কেউ একজন আব্বুকে আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিলে তার প্রেক্ষিতে আব্বু কথাটা বলে। আমার মেয়েকে আমি আরো শিক্ষিত করব কারন এখন যদি আমি আমার ছেলেমেয়েগুলোকে প্রতিষ্ঠিত না করে মারা যাই,তাহলে আমার ছেলেগুলো হয়ত প্রতিষ্ঠিত হবে,আপনারাই জায়গা করে দিবেন,কিন্তু আমার মেয়েগুলোকে এই সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ দিবে না। কথাটা দরজার বাহির থেকে শুনে ফেলছিলাম এবং,মনে গেথে রেখেছিলাম।

গ্রামে মানুষ হয়েছি তো,কেউ একজন বলেছিল লাখ লাখ টাকা খরচ করে মেয়েমানুষ কে কেন ডাক্তারি পড়াব,তার চেয়ে সেই টাকা দিয়ে ডাক্তার,এস পি জামাই কিনে নিব,না হয় ঔ টাকা ব্যাংক এ রেখে প্রতি মাসে সুদ নিব। আমার আব্বুর উত্তর ছিল,আমার ছেলে মেয়েই আমার ব্যাংক,আর আমি তাদের পেছনে টাকা ইনভেস্ট করতেছি,যেটাতে কোন হারাম নাই।আমার মেয়ে ডাক্তার হয়ে আমাকে পাশে বসায় রোগি দেখবে এর চেয়ে বড় স্বার্থকতা আর কিছু নাই।
এরকম বহু ইন্সপিরেশন আছে যেগুলা অফুরন্ত।

যখনি এই সভ্য সমাজের অসভ্য মানুষগুলো পেছন থেকে টেনে ধরেছে তখনি আব্বু বটবৃক্ষের লতাগুল্মের মত মাথায় হাত দিয়ে আগলে রেখেছে।প্রতিটি বাবা এমনই হয়,স্বার্থহীন।
আব্বু খুব ভালো অভিনয় করতে জানত,হাজারটা আঘাত আর বিপদেও কিভাবে ধরা গলা আর ভেজা চোখ ছেলেমেয়েদের সামনে লুকাতে হয় সে ব্যাপারে উনি ছিলেন অত্যান্ত অভিজ্ঞ । মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবারা খুব হাসতে জানেন,উনারা বার বার আঘাত খেয়ে মাটিতে পরেও মাথা তুলে দাড়াতে জানেন।উনারা তাদের আশেপাশের শত্রু বন্ধু প্রত্যেকের মনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকতে জানেন এই জন্যই হয়ত একসময় চরম ক্ষতি করা শত্রুটাও তার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে যেত।,ওনাদের টাকার পাহার না থাকলেও মানুষ কে ভালোবাসার,কাছে টানার প্রবল ক্ষমতা আল্লাহ দিয়ে দেন। তাই হয়ত এই বাবাদের কনক্রিট এর ম্যানশন না থাকলেও, সেটা ছাপিয়ে যে মাথার উপর ছোট ছাদ আছে,ওখানেই মানুষ অনেক আস্থা নিয়ে ভিড় জমায় একটু উপকারের আশায়। একটা ভাল পরামর্শের আশায়। দিনের পর দিন নিজের শরীরের কষ্ট মনের কষ্ট নিজের ভেতরেই চাপা দিবে,তারপর হাসিমুখে পরিবারের,পরিচিতদের অপরিচিতদের মুখে হাসি ফুটাবে। কিন্তু তার ভেতরের ক্ষয়টা হতেই থাকে হতেই থাকে,তাই হয়ত ইনারা খুব বেশিদিন তাদের সন্তানদের কাছে থাকতে পারে না। পৃথিবীর সব দায় মিটিয়ে দিয়ে চলে যায়। কিন্তু এনারা চলে গিয়েও থেকে যায় মানুষ এর সেই রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেখানে তিনি তার অনুরাগ এর স্পর্শ রেখে গেছেন,ঠিক আমার আব্বুর মত। পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরের সমস্ত বাবারা ভাল থাকুক।

Tag :

জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক মধ্যবিত্ত বাবার গল্প!

Update Time : ০৩:৫৫:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০

লেখক – ডা: আইরিন আফরিন স্বর্ণা.
একটা পরিবারের আভিজাত্য বোঝা যায় সেই পরিবারের মেয়েগুলা শিক্ষিত কিনা সেইটা দেখে,ব্যাংক এ কত টাকা বা কত বিঘা জমি আছে সেটা দেখে নয়,কারন একটা পরিবারের সবগুলা মেয়েকে যদি আপনি শিক্ষিত করে দিতে পারেন তাহলে তার আভিজাত্য প্রকাশ পায়।
কথাটা শুনেছিলাম খুব সম্ভবত ২০১০ সালের দিকে। তখন আমি এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। কেউ একজন আব্বুকে আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিলে তার প্রেক্ষিতে আব্বু কথাটা বলে। আমার মেয়েকে আমি আরো শিক্ষিত করব কারন এখন যদি আমি আমার ছেলেমেয়েগুলোকে প্রতিষ্ঠিত না করে মারা যাই,তাহলে আমার ছেলেগুলো হয়ত প্রতিষ্ঠিত হবে,আপনারাই জায়গা করে দিবেন,কিন্তু আমার মেয়েগুলোকে এই সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ দিবে না। কথাটা দরজার বাহির থেকে শুনে ফেলছিলাম এবং,মনে গেথে রেখেছিলাম।

গ্রামে মানুষ হয়েছি তো,কেউ একজন বলেছিল লাখ লাখ টাকা খরচ করে মেয়েমানুষ কে কেন ডাক্তারি পড়াব,তার চেয়ে সেই টাকা দিয়ে ডাক্তার,এস পি জামাই কিনে নিব,না হয় ঔ টাকা ব্যাংক এ রেখে প্রতি মাসে সুদ নিব। আমার আব্বুর উত্তর ছিল,আমার ছেলে মেয়েই আমার ব্যাংক,আর আমি তাদের পেছনে টাকা ইনভেস্ট করতেছি,যেটাতে কোন হারাম নাই।আমার মেয়ে ডাক্তার হয়ে আমাকে পাশে বসায় রোগি দেখবে এর চেয়ে বড় স্বার্থকতা আর কিছু নাই।
এরকম বহু ইন্সপিরেশন আছে যেগুলা অফুরন্ত।

যখনি এই সভ্য সমাজের অসভ্য মানুষগুলো পেছন থেকে টেনে ধরেছে তখনি আব্বু বটবৃক্ষের লতাগুল্মের মত মাথায় হাত দিয়ে আগলে রেখেছে।প্রতিটি বাবা এমনই হয়,স্বার্থহীন।
আব্বু খুব ভালো অভিনয় করতে জানত,হাজারটা আঘাত আর বিপদেও কিভাবে ধরা গলা আর ভেজা চোখ ছেলেমেয়েদের সামনে লুকাতে হয় সে ব্যাপারে উনি ছিলেন অত্যান্ত অভিজ্ঞ । মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবারা খুব হাসতে জানেন,উনারা বার বার আঘাত খেয়ে মাটিতে পরেও মাথা তুলে দাড়াতে জানেন।উনারা তাদের আশেপাশের শত্রু বন্ধু প্রত্যেকের মনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকতে জানেন এই জন্যই হয়ত একসময় চরম ক্ষতি করা শত্রুটাও তার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে যেত।,ওনাদের টাকার পাহার না থাকলেও মানুষ কে ভালোবাসার,কাছে টানার প্রবল ক্ষমতা আল্লাহ দিয়ে দেন। তাই হয়ত এই বাবাদের কনক্রিট এর ম্যানশন না থাকলেও, সেটা ছাপিয়ে যে মাথার উপর ছোট ছাদ আছে,ওখানেই মানুষ অনেক আস্থা নিয়ে ভিড় জমায় একটু উপকারের আশায়। একটা ভাল পরামর্শের আশায়। দিনের পর দিন নিজের শরীরের কষ্ট মনের কষ্ট নিজের ভেতরেই চাপা দিবে,তারপর হাসিমুখে পরিবারের,পরিচিতদের অপরিচিতদের মুখে হাসি ফুটাবে। কিন্তু তার ভেতরের ক্ষয়টা হতেই থাকে হতেই থাকে,তাই হয়ত ইনারা খুব বেশিদিন তাদের সন্তানদের কাছে থাকতে পারে না। পৃথিবীর সব দায় মিটিয়ে দিয়ে চলে যায়। কিন্তু এনারা চলে গিয়েও থেকে যায় মানুষ এর সেই রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেখানে তিনি তার অনুরাগ এর স্পর্শ রেখে গেছেন,ঠিক আমার আব্বুর মত। পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরের সমস্ত বাবারা ভাল থাকুক।