সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কর্মজীবি বাবা মার সন্তানের বোবা কান্না!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:০৬:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুন ২০২০
  • ২২ Time View

লেখক -প্রিয়ন্তি রুম্পা দিনাজপুর থেকে
বাবা,মা সরকারী চাকুরীজীবি। তিন বোন, এক ভাই আমরা। ছোট বেলা থেকেই দুরন্তপনায় মেতে থাকতাম সারাক্ষন । এখনো সেরকমী আছি। কর্মজীবী বাবা,মা যার আছে সে বুঝে কষ্ট টা কি। আমিও বুঝি বাবা,মা কে দীর্ঘ সময় পাশে না পাওয়ার কষ্টটা। মা সরকারী শিক্ষক বাবা প্রধান শিক্ষক। মা তার সংসার আমাদেরকে সামলিয়ে অফিসে যায়। মাকে দেখতাম সে কোনদিনও সকালের খাবারটা ভালভাবে খেয়ে যেতে পারতো না।মা না খেয়ে চলে যেতো। পরে কাজের মেয়ে আমার মায়ের খাবারের টিফিন বক্সে করে খাবার পৌছে দিয়ে আসতো। বাবা হেড টিচার একই স্কুলের হওয়াতে মাকে খুব তাড়া দিতো মা যেনো দেরী করে অফিসে না আসে।মা এক গ্লাস পানি খেয়ে দৌড় দিতো স্কুলে। আমি মা-মা করে কাঁদতাম, মায়ের শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরে বলতাম মা তোমাকে অফিসে যেতে হবে না। তুমি আমাকে নিয়ে যাও।আমি ছোট আর খুব দুষ্ট বলে আমাকে নিয়ে মা অফিসে যেত না কখনই । আমাকে যেদিন অফিসে নিয়ে যেত। আমি সেদিন বাবার আলমারির ফাইল এলোমেলো করে ফেলতাম,মেডামদের কোলে বসে থাকতাম,অফিসে আমার মায়ের চেয়ারে বসে বাচ্চাদের পড়াতাম,দুষ্টমী করতাম আর আমার মা পিছনের সারিতে বসে থাকতো আবার মিনিট পাঁচেক পর আমার কাছে এসে আমাকে জোর করে আমাদের কাজের মেয়ের কাছে রেখে আসতো। বুঝতে পারতাম দুষ্টমির কারনে আমাকে স্কুলে মা নিয়ে যেতে চাইত না।আমার মাকে ছেড়ে মোটেও একা একা বাসায় ভাল লাগতো না,যদিও বড় আপু,দাদি, আম্মুর কাজের এসিসটেন্ট আপু ছিলো তবুও। ছোট বোনের বয়স তখন ছয় মাস। সারাদিন মা-মা করে কান্না করত , মায়ের যে শূন্যতা আমি বুঝি। আপু আমাকে যথেষ্ট আদর,যত্ন ও ভালবাসা দিতো।।আমাকে মায়ের মতোই যত্ন করতো।সারাদিন মা কে অনেক মিস করতাম আমি।দুপুরবেলা বিছানায় আপু,দাদি নিয়ে ঘুম পাড়াতো আমাদের দু বোনকে।আমি ঘুমের মধ্যে মা-মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠতাম।আপু আবার ঘুম পাড়িয়ে দিতো। অনেক খারাপ লাগতো মা তার কর্মস্থলে থাকায়।ঘুম থেকে উঠে দেখতাম তিনটা বেজে বিশ মিনিট। চোঁখ বন্ধ করে ভাবতাম কখন ৪:৩০ বাজবে,মায়ের অফিস ছুটি হবে।প্রতি মুহুর্ত পথ চেয়ে থাকতাম কখন মা আসবে। যখন ৪:২০ বাজত আমি উঠে দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকতাম এই বুঝি মা আসচ্ছে।একে একে বাচ্চারা সব বাসায় যাচ্ছে মা আর আসছে না। এভাবে প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম।বাসায় এসে বিছানায় ক্লান্ত মন নিয়ে বসে থাকি হঠাৎ দেখি মা এসেছে।কি যে আনন্দ লাগে বলে বুঝানো যাবে না।মাকে দেখে কোলে উঠতে কাঁন্না করি। মা স্কুলের ব্যাগটা রেখে আমায় কোলে তুলে নেয়,কোলে নিয়েই তার ড্রেস খুজাখুজি করে চেঞ্জ করার জন্য।আমি মায়ের কোল থেকে নামি না।আপু আমাকে জোর করে নিয়ে যায়।মা ফ্রেস না হওয়া পর্যন্ত আমি দাড়িয়ে থাকি মায়ের বাথরুমের দরজার পাশে।মা বের হয়েই আমাকে কোলে নেয়।আমার ছোট বোনের বয়স ছয় মাস ওর কিছু বোঝার বয়স হয়নি। আমি বুঝি মায়ের শূন্যতা কি জিনিস। যাদের মা জব করে তারা বুঝতে পারে কষ্ট টা কত প্রবল। এখনকার বাচ্চাদের দেখে আমি অবাক হই তারা মা ছাড়া থাকে কাজের বুয়া বা পরিবারের লোকজনদের কাছে।আর এখনকার মতো মোবাইল ফোন,গেম,টিভিতে কার্টুন এসব ছিলো না আমাদের সময়।মিনা কার্টুন হতো তাও সপ্তাহে একদিন।মা ছাড়া কোন কিছু ভাবতেই পারতাম না। ছোট বেলায় এসব মানসিক চাপ একটা শিশুর জন্য অনেক ক্ষতির কারন যা আমাদের চাকুরিজীবি মায়েরা বোঝে না।একটা শিশুর সারাদিন মায়ের সংগ খুব দরকর। মায়ের ভালবাসা খাটি।মায়ের মতো কেউ কোনদিনও হয়না।প্রিয় শৈশব মনে হলে এখনো কাঁন্না চলে আসে।যাদের মা গৃহিণী তাদের মতো সৌভাগ্যবান,সৌভাগ্যবতী আর কেউ পৃথিবীতে নেই।মা আমার শ্রেষ্ঠ ভালবাসা।সব মা কে সালাম জানাই।আমার মনে হয়,একজন চাকুরীজীবী মায়ের চেয়ে একজন গৃহিনী মা আমাদের বেশি দরকার শিশুদের মেধাবিকাশের জন্য।মায়ের হাতের ছোয়া যে কত্ত টা জরুরী তা লিখে বোঝানো সম্ভব না। তবুও বলবো আমার মা একজন অলরাউন্ডার।সব মায়েরাই সেরা সন্তানের কাছে। প্রিয় শৈশব আনন্দের আবার খুব কষ্টেরও তবুও বলব পৃথীবির সকল মা ভালো থাকুক সুস্থ্য থাকুক। লেখক : প্রিয়ন্তি রূম্পা

Tag :

কর্মজীবি বাবা মার সন্তানের বোবা কান্না!

Update Time : ০১:০৬:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুন ২০২০

লেখক -প্রিয়ন্তি রুম্পা দিনাজপুর থেকে
বাবা,মা সরকারী চাকুরীজীবি। তিন বোন, এক ভাই আমরা। ছোট বেলা থেকেই দুরন্তপনায় মেতে থাকতাম সারাক্ষন । এখনো সেরকমী আছি। কর্মজীবী বাবা,মা যার আছে সে বুঝে কষ্ট টা কি। আমিও বুঝি বাবা,মা কে দীর্ঘ সময় পাশে না পাওয়ার কষ্টটা। মা সরকারী শিক্ষক বাবা প্রধান শিক্ষক। মা তার সংসার আমাদেরকে সামলিয়ে অফিসে যায়। মাকে দেখতাম সে কোনদিনও সকালের খাবারটা ভালভাবে খেয়ে যেতে পারতো না।মা না খেয়ে চলে যেতো। পরে কাজের মেয়ে আমার মায়ের খাবারের টিফিন বক্সে করে খাবার পৌছে দিয়ে আসতো। বাবা হেড টিচার একই স্কুলের হওয়াতে মাকে খুব তাড়া দিতো মা যেনো দেরী করে অফিসে না আসে।মা এক গ্লাস পানি খেয়ে দৌড় দিতো স্কুলে। আমি মা-মা করে কাঁদতাম, মায়ের শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরে বলতাম মা তোমাকে অফিসে যেতে হবে না। তুমি আমাকে নিয়ে যাও।আমি ছোট আর খুব দুষ্ট বলে আমাকে নিয়ে মা অফিসে যেত না কখনই । আমাকে যেদিন অফিসে নিয়ে যেত। আমি সেদিন বাবার আলমারির ফাইল এলোমেলো করে ফেলতাম,মেডামদের কোলে বসে থাকতাম,অফিসে আমার মায়ের চেয়ারে বসে বাচ্চাদের পড়াতাম,দুষ্টমী করতাম আর আমার মা পিছনের সারিতে বসে থাকতো আবার মিনিট পাঁচেক পর আমার কাছে এসে আমাকে জোর করে আমাদের কাজের মেয়ের কাছে রেখে আসতো। বুঝতে পারতাম দুষ্টমির কারনে আমাকে স্কুলে মা নিয়ে যেতে চাইত না।আমার মাকে ছেড়ে মোটেও একা একা বাসায় ভাল লাগতো না,যদিও বড় আপু,দাদি, আম্মুর কাজের এসিসটেন্ট আপু ছিলো তবুও। ছোট বোনের বয়স তখন ছয় মাস। সারাদিন মা-মা করে কান্না করত , মায়ের যে শূন্যতা আমি বুঝি। আপু আমাকে যথেষ্ট আদর,যত্ন ও ভালবাসা দিতো।।আমাকে মায়ের মতোই যত্ন করতো।সারাদিন মা কে অনেক মিস করতাম আমি।দুপুরবেলা বিছানায় আপু,দাদি নিয়ে ঘুম পাড়াতো আমাদের দু বোনকে।আমি ঘুমের মধ্যে মা-মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠতাম।আপু আবার ঘুম পাড়িয়ে দিতো। অনেক খারাপ লাগতো মা তার কর্মস্থলে থাকায়।ঘুম থেকে উঠে দেখতাম তিনটা বেজে বিশ মিনিট। চোঁখ বন্ধ করে ভাবতাম কখন ৪:৩০ বাজবে,মায়ের অফিস ছুটি হবে।প্রতি মুহুর্ত পথ চেয়ে থাকতাম কখন মা আসবে। যখন ৪:২০ বাজত আমি উঠে দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকতাম এই বুঝি মা আসচ্ছে।একে একে বাচ্চারা সব বাসায় যাচ্ছে মা আর আসছে না। এভাবে প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম।বাসায় এসে বিছানায় ক্লান্ত মন নিয়ে বসে থাকি হঠাৎ দেখি মা এসেছে।কি যে আনন্দ লাগে বলে বুঝানো যাবে না।মাকে দেখে কোলে উঠতে কাঁন্না করি। মা স্কুলের ব্যাগটা রেখে আমায় কোলে তুলে নেয়,কোলে নিয়েই তার ড্রেস খুজাখুজি করে চেঞ্জ করার জন্য।আমি মায়ের কোল থেকে নামি না।আপু আমাকে জোর করে নিয়ে যায়।মা ফ্রেস না হওয়া পর্যন্ত আমি দাড়িয়ে থাকি মায়ের বাথরুমের দরজার পাশে।মা বের হয়েই আমাকে কোলে নেয়।আমার ছোট বোনের বয়স ছয় মাস ওর কিছু বোঝার বয়স হয়নি। আমি বুঝি মায়ের শূন্যতা কি জিনিস। যাদের মা জব করে তারা বুঝতে পারে কষ্ট টা কত প্রবল। এখনকার বাচ্চাদের দেখে আমি অবাক হই তারা মা ছাড়া থাকে কাজের বুয়া বা পরিবারের লোকজনদের কাছে।আর এখনকার মতো মোবাইল ফোন,গেম,টিভিতে কার্টুন এসব ছিলো না আমাদের সময়।মিনা কার্টুন হতো তাও সপ্তাহে একদিন।মা ছাড়া কোন কিছু ভাবতেই পারতাম না। ছোট বেলায় এসব মানসিক চাপ একটা শিশুর জন্য অনেক ক্ষতির কারন যা আমাদের চাকুরিজীবি মায়েরা বোঝে না।একটা শিশুর সারাদিন মায়ের সংগ খুব দরকর। মায়ের ভালবাসা খাটি।মায়ের মতো কেউ কোনদিনও হয়না।প্রিয় শৈশব মনে হলে এখনো কাঁন্না চলে আসে।যাদের মা গৃহিণী তাদের মতো সৌভাগ্যবান,সৌভাগ্যবতী আর কেউ পৃথিবীতে নেই।মা আমার শ্রেষ্ঠ ভালবাসা।সব মা কে সালাম জানাই।আমার মনে হয়,একজন চাকুরীজীবী মায়ের চেয়ে একজন গৃহিনী মা আমাদের বেশি দরকার শিশুদের মেধাবিকাশের জন্য।মায়ের হাতের ছোয়া যে কত্ত টা জরুরী তা লিখে বোঝানো সম্ভব না। তবুও বলবো আমার মা একজন অলরাউন্ডার।সব মায়েরাই সেরা সন্তানের কাছে। প্রিয় শৈশব আনন্দের আবার খুব কষ্টেরও তবুও বলব পৃথীবির সকল মা ভালো থাকুক সুস্থ্য থাকুক। লেখক : প্রিয়ন্তি রূম্পা