শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশীতে মায়ের বিক্রি করা জমিতে ছেলের চাঁদা দাবী

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:০২:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০
  • ৬০ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী.

রাজশাহী মহানগরীর আলীগঞ্জ মৌজায় তিন কাঠা জমি বিক্রি করেছেন রওশন আরা বেগম নামে এক নারী। কিন্তু এই জমি কিনে বিপদে পড়েছেন মিজানুর রহমান তালুকদার নামে এক ব্যক্তি। জমিতে গেলেই বিক্রেতা রওশন আরা বেগমের ছেলে আবদে রাব্বী চাঁদা চাইছেন। ছেলের সঙ্গে রয়েছেন ঐ নারীর স্বামী মুক্তিযোদ্ধা নাম ধারী মহিউদ্দিন।
চাঁদা না দেয়ায় তারা জমি দখল করতে দিচ্ছেন না ক্রেতাকে। তারপরও জমি দখলে নিতে গেলে মিজানুর রহমানের শ্যালিকার ছেলে সুমন (৩০) পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন তারা। এ নিয়ে থানায় মামলা করেছেন সুমনের মামা আবদুস সাত্তার। পরে হেনস্থা করতে মহিউদ্দিনও তার নিকটাত্বীয়কে দিয়ে পাল্টা একটি মামলা করিয়েছেন। এখন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে মহিউদ্দিন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। অথচ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার সনদই নেই। নাম নেই সরকারি গেজেটেও।
মহিউদ্দিন নগরীর বড়বনগ্রাম আমচত্বর এলাকার বাসিন্দা। আর মিজানুর রহমান তালুকদারের বাড়ি পিরোজপুর। তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে কুড়িগ্রামে আছেন। তার শ্যালক আবদুস সাত্তারের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। মিজানুর রাজশাহীতে না থাকায় শ্যালক সাত্তারকেই কেনা জমিটিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে বলেছিলেন। সাত্তার তার ভাগ্নে সুমনকে নিয়ে জমিতে গেলে বাধার সম্মুখীন হন। বিক্রেতা রওশন আরার স্বামী ও ছেলে চাঁদা দাবি করেন।
আবদুস সাত্তার তার মামলার এজাহারে বলেছেন, গেল বছরের ২৩ মে রওশন আরা ২৩ লাখ টাকায় তার ৩ কাঠা ভিটা জমি মিজানুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। এরপর জমিটিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য তাকে দায়িত্ব দেন মিজানুর। তিনি তার ভাগ্নে সুমনকে নিয়ে গত ৭ জুন জমিটিতে গেলে রওশন আরার স্বামী মহিউদ্দিন ও ছেলে রাব্বী ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বলেন, জমি দখলে নিতে হলে তাদের এই টাকা দিতে হবে। তারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে মহিউদ্দিন ও রাব্বী জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙে দিতে শুরু করেন। এতে বাধা দিতে গেলে পিটিয়ে সুমনের হাত ভেঙে দেয়া হয়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে গত ১০ জুন নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানায় মহিউদ্দিন ও রাব্বীসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবিরও অভিযোগ আনা হয়। এরপর উল্টো তাদের ওপর হামলার অভিযোগে মহিউদ্দিনও তার এক নিকটাত্মীয়কে দিয়ে থানায় পাল্টা একটি মামলা করান।
সাত্তার বলেন, মামলাটি মিথ্যা। তাদের হেনস্থা করতে মামলাটি করা হয়েছে। তারা ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেন। একইসঙ্গে তাদের কেনা জমির দখল বুঝিয়ে দিতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহিউদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ধরেননি। আর তার ছেলে রাব্বীর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। মহিউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার কেল্লাবারুইপাড়া মহল্লায়। পরে তিনি রাজশাহী শহরে বাড়ি করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গোদাগাড়ী পৌর সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুর রশিদ বলেন, এলাকার বাসিন্দা হিসেবে মহিউদ্দিনকে চিনি। কিন্তু একাত্তরে কোথায় লড়াই করেছেন তা জানি না। তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেই।
নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর আলী আরিফ বলেন, মহিউদ্দিনের স্ত্রী রওশন আরা জমি বিক্রি করেছেন। যারা কিনেছেন তাদের সকল কাগজপত্র আছে। কিন্তু মহিউদ্দিন ও তার ছেলে তাদের জমির দখল নিতে দিচ্ছেন না। এটা অন্যায়। তিনি পাল্টা একটা মামলা করিয়েছেন জমির ক্রেতাদের নামে।

Tag :

রাজশীতে মায়ের বিক্রি করা জমিতে ছেলের চাঁদা দাবী

Update Time : ০১:০২:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী.

রাজশাহী মহানগরীর আলীগঞ্জ মৌজায় তিন কাঠা জমি বিক্রি করেছেন রওশন আরা বেগম নামে এক নারী। কিন্তু এই জমি কিনে বিপদে পড়েছেন মিজানুর রহমান তালুকদার নামে এক ব্যক্তি। জমিতে গেলেই বিক্রেতা রওশন আরা বেগমের ছেলে আবদে রাব্বী চাঁদা চাইছেন। ছেলের সঙ্গে রয়েছেন ঐ নারীর স্বামী মুক্তিযোদ্ধা নাম ধারী মহিউদ্দিন।
চাঁদা না দেয়ায় তারা জমি দখল করতে দিচ্ছেন না ক্রেতাকে। তারপরও জমি দখলে নিতে গেলে মিজানুর রহমানের শ্যালিকার ছেলে সুমন (৩০) পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন তারা। এ নিয়ে থানায় মামলা করেছেন সুমনের মামা আবদুস সাত্তার। পরে হেনস্থা করতে মহিউদ্দিনও তার নিকটাত্বীয়কে দিয়ে পাল্টা একটি মামলা করিয়েছেন। এখন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে মহিউদ্দিন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। অথচ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার সনদই নেই। নাম নেই সরকারি গেজেটেও।
মহিউদ্দিন নগরীর বড়বনগ্রাম আমচত্বর এলাকার বাসিন্দা। আর মিজানুর রহমান তালুকদারের বাড়ি পিরোজপুর। তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে কুড়িগ্রামে আছেন। তার শ্যালক আবদুস সাত্তারের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। মিজানুর রাজশাহীতে না থাকায় শ্যালক সাত্তারকেই কেনা জমিটিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে বলেছিলেন। সাত্তার তার ভাগ্নে সুমনকে নিয়ে জমিতে গেলে বাধার সম্মুখীন হন। বিক্রেতা রওশন আরার স্বামী ও ছেলে চাঁদা দাবি করেন।
আবদুস সাত্তার তার মামলার এজাহারে বলেছেন, গেল বছরের ২৩ মে রওশন আরা ২৩ লাখ টাকায় তার ৩ কাঠা ভিটা জমি মিজানুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। এরপর জমিটিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য তাকে দায়িত্ব দেন মিজানুর। তিনি তার ভাগ্নে সুমনকে নিয়ে গত ৭ জুন জমিটিতে গেলে রওশন আরার স্বামী মহিউদ্দিন ও ছেলে রাব্বী ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বলেন, জমি দখলে নিতে হলে তাদের এই টাকা দিতে হবে। তারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে মহিউদ্দিন ও রাব্বী জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙে দিতে শুরু করেন। এতে বাধা দিতে গেলে পিটিয়ে সুমনের হাত ভেঙে দেয়া হয়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে গত ১০ জুন নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানায় মহিউদ্দিন ও রাব্বীসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবিরও অভিযোগ আনা হয়। এরপর উল্টো তাদের ওপর হামলার অভিযোগে মহিউদ্দিনও তার এক নিকটাত্মীয়কে দিয়ে থানায় পাল্টা একটি মামলা করান।
সাত্তার বলেন, মামলাটি মিথ্যা। তাদের হেনস্থা করতে মামলাটি করা হয়েছে। তারা ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেন। একইসঙ্গে তাদের কেনা জমির দখল বুঝিয়ে দিতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহিউদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ধরেননি। আর তার ছেলে রাব্বীর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। মহিউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার কেল্লাবারুইপাড়া মহল্লায়। পরে তিনি রাজশাহী শহরে বাড়ি করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গোদাগাড়ী পৌর সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুর রশিদ বলেন, এলাকার বাসিন্দা হিসেবে মহিউদ্দিনকে চিনি। কিন্তু একাত্তরে কোথায় লড়াই করেছেন তা জানি না। তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেই।
নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর আলী আরিফ বলেন, মহিউদ্দিনের স্ত্রী রওশন আরা জমি বিক্রি করেছেন। যারা কিনেছেন তাদের সকল কাগজপত্র আছে। কিন্তু মহিউদ্দিন ও তার ছেলে তাদের জমির দখল নিতে দিচ্ছেন না। এটা অন্যায়। তিনি পাল্টা একটা মামলা করিয়েছেন জমির ক্রেতাদের নামে।