শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবা তুমিই ছিলে আমাদের অনুপ্রেরণা 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:১১:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুন ২০২০
  • ৬৬ Time View

আজ বিশ্ব বাবা দিবস পৃথিবীর সকল বাবাকে ডেডিকেট করে আমার আজকের এই ক্ষুদ্র লেখেটি প্রকাশ করলাম

      ফাত্তাহ তানভীর রানা

বাবাকে নিয়ে আমার তেমন কোনো স্মৃতি নেই, তবে অনুভূতি রয়েছে। বাবাকে ধন্যবাদ দিতে পারিনি বা সরিও বলতে পারিনি, কারণ ভালো-মন্দ কিছু বোঝার বয়স হবার পূর্বেই আমার সাত বছর বয়সে বাবা হার্ট অ্যাটাক করে চলে যান না ফেরার দেশে। আমার বাবা আমার দাদার বড় ছেলে ছিলেন; তাই ছোট ভাইদের মানুষ করার দায়িত্ব তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। যথারিতী  আমার  এক কাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন, অন্যজন কাকা প্যারামেডিক্স চিকিত্সকের চাকুরী পেলেন, আরেক জন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হলেন,এক  ফুফু গ্রাজুয়েটও হলেন। আমার চাচা-ফুফুরা সবাই আমাদের বাসায় থাকতেন; মাঝে আমাদের বাসায় থেকেও এসএসসি পাশ করার পর লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হলেন আমার মা! আমার বাবা নাটোর জেলার গুরুদাসপুরের বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজের বোটানি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক  ছিলেন, সঙ্গত কারণেই তাঁর অগণিত ছাত্র-ছাত্রী ও গুণগ্রাহী ছিল। আমাদের বাসা ছিল উপজেলা সদরে; সেই সূত্রধরে আমাদের বাসায় অনেক এসএসসি পরীক্ষার্থী থাকত। আমার বাবা মোহাম্মদ আলী বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথেও যুক্ত ছিলেন। এই সব ভালোবাসার মানুষ, পরিবার-পরিজন ছেড়ে আমার বাবা ১৯৯০ সালের জুন মাসে কোনো এক বিকেলে চলে গেলেন ওপারে বাবা তুমি যেখানেই থাকো ভাল থেকো।
আমরা যখন বড় হচ্ছিলাম, আমাদের বাবার কাছে যখন আমাদের প্রয়োজন শুরু হলো তখন বাবা পাশে নেই। বাবার শাসন, বাবার আদর, বাবার আর্থিক সাপোর্ট, বাবার বটগাছের মত ছায়া সবই প্রয়োজন ছিল। বাবার উপস্থিতিসহ সব কিছু থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। হঠাৎ করে কোথা থেকে কি যেন হয়ে গেলো! ছেলের শোকে আমার দাদার শরীরের এক অংশ অবশ হয়ে গেলো। আমার অসুস্থ দাদীও বিছানায় পড়ে গেলেন। কাকারা নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বাবার বেতন বন্ধ; তাঁর কোনো সঞ্চয় ছিল না, আর সঞ্চয় থাকে কিভাবে? বেসরকারী চাকুরী। শুধু নিজের বাড়ীখানা ছিল আর ছিল কয়েক বিঘা পৈতৃক কৃষি জমি। তখন আমার মায়ের সংগ্রাম শুরু হলো। দিন থেমে থাকেনি; আমি রাজশাহী  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এখন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। আমার বড় একবোন চিকিতসক, তিনি প্রবাসী। আরেক বড় বোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এখন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা করছেন। আমার মা আমাদের কষ্ট করে মানুষের মত মানুষ করার জন্য সরকারী স্বীকৃতি পেলেন। আমার মা নার্গিস সুলতানাকে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জয়িতা অন্বেষণ কার্যক্রম’র আওতায় ২০১৭ সালে রাজশাহী বিভাগের সেরা জয়িতা নির্বাচিত হন।

বাবা তুমি ছিলে মানুষ গড়ার কারিগর;  তোমার হাতে মানুষ হয়েছেন আমাদের উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলার অনেক ছাত্র-ছাত্রী। বাবা তুমি ছিলে আদর্শবান শিক্ষক; আমরা তোমার আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে । কখনো পিছপা হইনি, কখনো হাল ছাড়িনি, কখনো আশাহত হইনি; বাবা তুমিই ছিলে আমাদের অনুপ্রেরণা। দুঃখ একটাই তুমি আমাদের এই সফলতাকে দেখে যেতে পারলে না। ১৮ জুন, ২০২০ আমার বাবার মৃত্যুর ত্রিশ বছর পূর্ণ হলো! আজ বিশ্ব বাবা দিবস। মহান সৃষ্ট কর্তার দরবারে পৃথিবীর সকল বাবার জন্য  দোয়া, শুভ কামন, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা  অহনিশি।
লেখক- ফাতাহ তানভীর রানা।

fattahtanvir@gmail.com

Tag :

বাবা তুমিই ছিলে আমাদের অনুপ্রেরণা 

Update Time : ০২:১১:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুন ২০২০

আজ বিশ্ব বাবা দিবস পৃথিবীর সকল বাবাকে ডেডিকেট করে আমার আজকের এই ক্ষুদ্র লেখেটি প্রকাশ করলাম

      ফাত্তাহ তানভীর রানা

বাবাকে নিয়ে আমার তেমন কোনো স্মৃতি নেই, তবে অনুভূতি রয়েছে। বাবাকে ধন্যবাদ দিতে পারিনি বা সরিও বলতে পারিনি, কারণ ভালো-মন্দ কিছু বোঝার বয়স হবার পূর্বেই আমার সাত বছর বয়সে বাবা হার্ট অ্যাটাক করে চলে যান না ফেরার দেশে। আমার বাবা আমার দাদার বড় ছেলে ছিলেন; তাই ছোট ভাইদের মানুষ করার দায়িত্ব তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। যথারিতী  আমার  এক কাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন, অন্যজন কাকা প্যারামেডিক্স চিকিত্সকের চাকুরী পেলেন, আরেক জন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হলেন,এক  ফুফু গ্রাজুয়েটও হলেন। আমার চাচা-ফুফুরা সবাই আমাদের বাসায় থাকতেন; মাঝে আমাদের বাসায় থেকেও এসএসসি পাশ করার পর লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হলেন আমার মা! আমার বাবা নাটোর জেলার গুরুদাসপুরের বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজের বোটানি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক  ছিলেন, সঙ্গত কারণেই তাঁর অগণিত ছাত্র-ছাত্রী ও গুণগ্রাহী ছিল। আমাদের বাসা ছিল উপজেলা সদরে; সেই সূত্রধরে আমাদের বাসায় অনেক এসএসসি পরীক্ষার্থী থাকত। আমার বাবা মোহাম্মদ আলী বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথেও যুক্ত ছিলেন। এই সব ভালোবাসার মানুষ, পরিবার-পরিজন ছেড়ে আমার বাবা ১৯৯০ সালের জুন মাসে কোনো এক বিকেলে চলে গেলেন ওপারে বাবা তুমি যেখানেই থাকো ভাল থেকো।
আমরা যখন বড় হচ্ছিলাম, আমাদের বাবার কাছে যখন আমাদের প্রয়োজন শুরু হলো তখন বাবা পাশে নেই। বাবার শাসন, বাবার আদর, বাবার আর্থিক সাপোর্ট, বাবার বটগাছের মত ছায়া সবই প্রয়োজন ছিল। বাবার উপস্থিতিসহ সব কিছু থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। হঠাৎ করে কোথা থেকে কি যেন হয়ে গেলো! ছেলের শোকে আমার দাদার শরীরের এক অংশ অবশ হয়ে গেলো। আমার অসুস্থ দাদীও বিছানায় পড়ে গেলেন। কাকারা নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বাবার বেতন বন্ধ; তাঁর কোনো সঞ্চয় ছিল না, আর সঞ্চয় থাকে কিভাবে? বেসরকারী চাকুরী। শুধু নিজের বাড়ীখানা ছিল আর ছিল কয়েক বিঘা পৈতৃক কৃষি জমি। তখন আমার মায়ের সংগ্রাম শুরু হলো। দিন থেমে থাকেনি; আমি রাজশাহী  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এখন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। আমার বড় একবোন চিকিতসক, তিনি প্রবাসী। আরেক বড় বোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এখন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা করছেন। আমার মা আমাদের কষ্ট করে মানুষের মত মানুষ করার জন্য সরকারী স্বীকৃতি পেলেন। আমার মা নার্গিস সুলতানাকে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জয়িতা অন্বেষণ কার্যক্রম’র আওতায় ২০১৭ সালে রাজশাহী বিভাগের সেরা জয়িতা নির্বাচিত হন।

বাবা তুমি ছিলে মানুষ গড়ার কারিগর;  তোমার হাতে মানুষ হয়েছেন আমাদের উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলার অনেক ছাত্র-ছাত্রী। বাবা তুমি ছিলে আদর্শবান শিক্ষক; আমরা তোমার আদর্শকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে । কখনো পিছপা হইনি, কখনো হাল ছাড়িনি, কখনো আশাহত হইনি; বাবা তুমিই ছিলে আমাদের অনুপ্রেরণা। দুঃখ একটাই তুমি আমাদের এই সফলতাকে দেখে যেতে পারলে না। ১৮ জুন, ২০২০ আমার বাবার মৃত্যুর ত্রিশ বছর পূর্ণ হলো! আজ বিশ্ব বাবা দিবস। মহান সৃষ্ট কর্তার দরবারে পৃথিবীর সকল বাবার জন্য  দোয়া, শুভ কামন, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা  অহনিশি।
লেখক- ফাতাহ তানভীর রানা।

fattahtanvir@gmail.com