চলনবিল প্রতিবেদক.
বর্ষায় চলনবিল ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ। প্রয়োজনের তাগিদেই ভাসমান মানুষ ডিঙ্গি নৌকায় ছুটে চলেছেন দিগি¦দিক। দ্বীপের মতো গ্রামগুলো যেন একেকটা ভাসমান দ্বীপ। বর্ষায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া, স্কুল-কলেজ-হাটবাজারসহ যোগাযোগের সব জায়গায় ভাসমান মানুষের নিত্যসঙ্গী ঐতিহ্যবাহী ডিঙ্গি নৌকা। বর্ষা এলেই চারদিক জলে ডুবে যায় মাঠঘাট-রাস্তাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। তখনই দেখা যায় চলনবিলের ঐতিহ্য বাহারি সব ডিঙ্গি নৌকা।
কোনোটা পাল উড়িয়ে, কোনোটা ঠেলা নৌকা, আবার কোনোটা স্টিলের তৈরি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। চলনবিল এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট (সাবমার্চেবল) বর্ষা এলেই পানির নিচে ডুবে যায়। তখন ডিঙ্গি নৌকাই হয় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তাই বর্ষা এলেই বেড়ে যায় এসব ডিঙ্গি নৌকার ব্যাপক চাহিদা। স্থানীয় বাজারগুলোতে বেড়ে যায় কাঠমিস্ত্রিদের ব্যস্ততা। সকাল থেকে শুরু হয় তাদের কর্মব্যস্ততা।
সরেজমিন শনিবার ২৭ জুন চাঁচকৈড় হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে নৌকা বিক্রির হাট। পাশাপাশি প্রায় ১৫ থেকে ২০টি কারখানায় চলছে নৌকা তৈরির কাজ। কাঠহাট মোড় থেকে চৈতালীহাট মোড় হয়ে শিক্ষা সংঘ পর্যন্ত পাকা সড়কের দুপাশে নৌকাগুলো সারি সারি করে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। ক্রেতারা ইচ্ছা মতো দেখেশুনে কিনছেন নৌকা। আশপাশের প্রায় ১০টি উপজেলা থেকে ক্রেতারা এসেছেন নৌকা কিনতে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে নৌকা বেচাকেনা। এখানকার তৈরি নৌকা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলাতেও।
চলনবিলের সিংড়া উপজেলার নুরপুর গ্রাম থেকে আসা ক্রেতা শহিদুল ইসলাম জানান, বিগত বছরের চেয়ে এবার চলনবিলে পানি বেশি। নিচু এলাকার সড়কগুলো পানিতে ডুবে গেছে। এ গ্রাম থেকে সে গ্রামে যেতে এসব ডিঙ্গি নৌকার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে মাছ ধরার কাজে বেশি দরকার হয় এসব ডিঙ্গি নৌকা। সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বিলবিয়াসপুর গ্রাম থেকে মজিবর রহমান ও নাদোসৈয়দপুরের রুবেল হোসেন জানান, বর্ষায় চারদিক ডুবে গেলে কোনো কাজকর্ম থাকেনা। তখন বিকল্প পেশা হিসেবে মানুষ পারাপারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এসব ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে। এ কারণে তারা চাঁচকৈড় হাটে এসেছেন ডিঙ্গি নৌকা কিনতে। ফার্নিচার মালিক সমিতির সভাপতি ইয়ারুল এবং সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আন্টু জানান, নৌকার চাহিদা বেড়েছে কিন্তু করোনার কারনে প্রতিটি কাঠের তৈরি ডিঙ্গি নৌকা ১০ হাত ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। প্লেনশিটের তৈরি নৌকা আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৫০০ টাকায়।
স্থানীয় নৌকা ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক, আলাল উদ্দিন ও হারুন জানান, চলনবিলে বন্যা না থাকায় গত কয়েক বছর নৌকা ব্যবসা মন্দা গেছে। এবার বিলে পানি থাকায় নৌকার চাহিদা বাড়ছে। দিন-রাত কাজ করেও নৌকা তৈরির কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। নৌকার দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তারা জানান, কাঠমিস্ত্রিদের মজুরি ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকার দাম একটু বাড়লেও বেচা কেনা কম। কাঠমিস্ত্রি আকবার আলী জানান, প্রতিটি ডিঙ্গি নৌকার জন্য ২০০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি পান। দিনে ২টি করে ডিঙ্গি নৌকা তৈরি করতে পারেন তারা। তারা জানান, চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় হাটের অবস্থান হওয়ায় চলনবিলকেন্দ্রিক উপজেলাগুলো থেকে লোকজন এ হাটে আসে নৌকা কিনতে। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে।
গুরুদাসপুর স-মিল মালিক সমিতির সভাপতি মাহাতাব সরকার ও সাধারণ সম্পাদক কামাল সরকার বলেন, গত কয়েক বছরে নৌকা ব্যবসা ভালো হলেও এ বছর বিক্রি ভালো হচ্ছে না। চলনবিলে প্রচুর পানি হয়েছে। ফলে নৌকার কদরও বাড়ছে। তবে আশানুরুপ কেনা বেচা হচ্ছে না।
সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বর্ষায় ফিরছে চলনবিলের জৌলুস
-
Reporter Name
- Update Time : ০৭:২৬:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুন ২০২০
- ৩৩ Time View
Tag :
Popular Post