শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনাকালে সবচাইতে বেশি অসহায় মধ্যবিত্তরা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:২৩:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০২০
  • ৭২ Time View

 

নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধিঃ
মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্ব আজ ভীত ও স্তম্ভিত। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে প্রতিদিন নতুন নতুন নাম। মানুষ অসহায় হয়ে লকডাউনের কারণে ঘরে বন্দি। কেউবা আবার বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে চাকুরী হারিয়ে শহরের যান্ত্রিক পরিবেশের কোলাহল ছেড়ে গ্রামে এসে বসবাস করছে। করোনার কারণে ব্যবসা, বানিজ্য, কাজ কর্মে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এই পরিস্থিতির মধ্যে সবচাইতে বেশি অসহায় ও বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, আন্তর্জাতিক হিসাবে যাদের দৈনিক আয় ১৫ থেকে ৪৫ ডলারের মধ্যে তারাই মধ্যবিত্ত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাদের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা থেকে ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে। তবে আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সামাজিক মর্যাদা, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক সুযোগ-সুবিধাকেও বিবেচনার মানদণ্ডে আনতে হবে। ওই বিবেচনায় বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটির মত। তবে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অংশই নিম্ন-মধ্যবিত্ত। এরা ছোট বেসরকারি চাকরি, ছোট ব্যবসা এবং দৈনন্দিন কাজের ওপর নির্ভরশীল। করোনার প্রাদুর্ভাবে বর্তমানে এদের বড় অংশের আয়-রোজগার বন্ধ। এতে খাবার ও বাসা ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। কিন্তু সামাজিক সম্মানের কারণে কারও কাছে টাকা-পয়সা বা খাবার সাহায্য চাইতে পারে না। নীরবে দিন পার করতে হচ্ছে তাদেরকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মধ্যবিত্ত ব্যক্তি বলেন, আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করতাম, আমার কিছু জমি আছে, সংসার ভালই চলত। করোনা ভাইরাসের কারণে এখন ব্যবসা প্রায় বন্ধ। তেমন আর আয় রোজগার হয় না। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে খুব অসহায় হয়ে পড়েছি, সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। লজ্জায় কারো কাছে কোন সাহায্য চাইতেও পারছি না। করোনা ভাইরাসের কারণে চাকুরি হারানো মাহবুব আলম নামের একজন বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জে চাকরি করতাম। করোনা ভাইরাসের কারণে আমি চাকরি ছেড়ে বাসায় চলে আসি। আমি বেতন পেতাম প্রায় ২৫ হাজারের মত। আমার স্ত্রী আর দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার ভালই চলতো। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে বাসায় এসে আয় রোজগারের পথ বন্ধ। কারো কাছে কোন সাহায্য চাইতে পারছি না বা লাইনে দাঁড়িয়ে নিতেও পারছিনা। এমতাবস্থায় সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, করোনার প্রভাবে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো খুবই সঙ্কটে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যবিত্তদের জন্য পৃথিবীর উন্নত দেশে নগদ সহায়তা দেওয়া হলেও আমাদের দেশে এ নিয়ে চিন্তা করা হয় না। দেশের সম্পদশালী ব্যক্তিদের অনেক সুবিধা আছে। আবার গরীব মানুষদের জন্য প্রান্তিক ভাবে এক ধরনের ব্যবস্থাও আছে। তাই মধ্যবিত্তদের জন্য আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। সরকার মধ্যবিত্তদের জন্য একটি হেল্প লাইন খুলতে পারে। যেসকল মধ্যবিত্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দরকার তারা আবেদন করবে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মধ্যবিত্তদের সহায়তা দিতে পারে। কিন্তু মধ্যবিত্তরা সব সময় চাপে থাকে। রাজনীতিবিদরা ভোটের কারণে নিম্নবিত্তদের খুব গুরুত্ব সহকারে দেখে। কিন্তু মধ্যবিত্তদের মূল্যায়ন করা হয় না। আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নলডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফকরুদ্দিন ফুটু মাস্টার বলেন, বর্তমান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সবচাইতে বেশি অসহায় দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। এরা লজ্জায় কারো কাছে সাহায্য চাইতে বা নিতে পারে না। আমি জনপ্রতিনিধিদেরকে অনুরোধ সহকারে বলব, আপনারা গোপনীয় ভাবে মধ্যবিত্তদের সহায়তা করুন। তাহলেই কেবল দেশের মধ্যবিত্তরা একটু শান্তিতে থাকবে। তবেই আমরা সকলে মিলে এই করোনা কালীন দুর্যোগ জয় করতে পারব।

 

Tag :

করোনাকালে সবচাইতে বেশি অসহায় মধ্যবিত্তরা

Update Time : ০১:২৩:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০২০

 

নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধিঃ
মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্ব আজ ভীত ও স্তম্ভিত। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে প্রতিদিন নতুন নতুন নাম। মানুষ অসহায় হয়ে লকডাউনের কারণে ঘরে বন্দি। কেউবা আবার বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে চাকুরী হারিয়ে শহরের যান্ত্রিক পরিবেশের কোলাহল ছেড়ে গ্রামে এসে বসবাস করছে। করোনার কারণে ব্যবসা, বানিজ্য, কাজ কর্মে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এই পরিস্থিতির মধ্যে সবচাইতে বেশি অসহায় ও বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, আন্তর্জাতিক হিসাবে যাদের দৈনিক আয় ১৫ থেকে ৪৫ ডলারের মধ্যে তারাই মধ্যবিত্ত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাদের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা থেকে ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে। তবে আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সামাজিক মর্যাদা, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক সুযোগ-সুবিধাকেও বিবেচনার মানদণ্ডে আনতে হবে। ওই বিবেচনায় বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটির মত। তবে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অংশই নিম্ন-মধ্যবিত্ত। এরা ছোট বেসরকারি চাকরি, ছোট ব্যবসা এবং দৈনন্দিন কাজের ওপর নির্ভরশীল। করোনার প্রাদুর্ভাবে বর্তমানে এদের বড় অংশের আয়-রোজগার বন্ধ। এতে খাবার ও বাসা ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। কিন্তু সামাজিক সম্মানের কারণে কারও কাছে টাকা-পয়সা বা খাবার সাহায্য চাইতে পারে না। নীরবে দিন পার করতে হচ্ছে তাদেরকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মধ্যবিত্ত ব্যক্তি বলেন, আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করতাম, আমার কিছু জমি আছে, সংসার ভালই চলত। করোনা ভাইরাসের কারণে এখন ব্যবসা প্রায় বন্ধ। তেমন আর আয় রোজগার হয় না। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে খুব অসহায় হয়ে পড়েছি, সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। লজ্জায় কারো কাছে কোন সাহায্য চাইতেও পারছি না। করোনা ভাইরাসের কারণে চাকুরি হারানো মাহবুব আলম নামের একজন বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জে চাকরি করতাম। করোনা ভাইরাসের কারণে আমি চাকরি ছেড়ে বাসায় চলে আসি। আমি বেতন পেতাম প্রায় ২৫ হাজারের মত। আমার স্ত্রী আর দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার ভালই চলতো। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে বাসায় এসে আয় রোজগারের পথ বন্ধ। কারো কাছে কোন সাহায্য চাইতে পারছি না বা লাইনে দাঁড়িয়ে নিতেও পারছিনা। এমতাবস্থায় সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, করোনার প্রভাবে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো খুবই সঙ্কটে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যবিত্তদের জন্য পৃথিবীর উন্নত দেশে নগদ সহায়তা দেওয়া হলেও আমাদের দেশে এ নিয়ে চিন্তা করা হয় না। দেশের সম্পদশালী ব্যক্তিদের অনেক সুবিধা আছে। আবার গরীব মানুষদের জন্য প্রান্তিক ভাবে এক ধরনের ব্যবস্থাও আছে। তাই মধ্যবিত্তদের জন্য আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। সরকার মধ্যবিত্তদের জন্য একটি হেল্প লাইন খুলতে পারে। যেসকল মধ্যবিত্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দরকার তারা আবেদন করবে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মধ্যবিত্তদের সহায়তা দিতে পারে। কিন্তু মধ্যবিত্তরা সব সময় চাপে থাকে। রাজনীতিবিদরা ভোটের কারণে নিম্নবিত্তদের খুব গুরুত্ব সহকারে দেখে। কিন্তু মধ্যবিত্তদের মূল্যায়ন করা হয় না। আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নলডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফকরুদ্দিন ফুটু মাস্টার বলেন, বর্তমান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সবচাইতে বেশি অসহায় দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। এরা লজ্জায় কারো কাছে সাহায্য চাইতে বা নিতে পারে না। আমি জনপ্রতিনিধিদেরকে অনুরোধ সহকারে বলব, আপনারা গোপনীয় ভাবে মধ্যবিত্তদের সহায়তা করুন। তাহলেই কেবল দেশের মধ্যবিত্তরা একটু শান্তিতে থাকবে। তবেই আমরা সকলে মিলে এই করোনা কালীন দুর্যোগ জয় করতে পারব।