সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“সিগারেট টা দাও জ্বালিয়ে দি” দুরান্ত শৈশব

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৫৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুলাই ২০২০
  • ১২৫ Time View

“সিগারেট টা দাও জ্বালিয়ে দি” দুরান্ত শৈশব
প্রিয়ন্তি রুম্পা দিনাজপুর থেকে.
,আমি তখন ক্লাস টেন এ পড়ি।স্বভাব আমার ভদ্র, দুষ্ট দুটোই ছিলো। তাই মাইর খাইতাম প্রচুর। আমার আব্বা খুব রাগি মানুষ ছিলেন। গ্রামে সবাই সন্মান করেন, যেকোন বিচার শালিসে আমার বাবাকে বিচার দিয়ে আসে এলাকার মানুষ। রাগি হলেও মনটা খুবই ভালা আমার বাজানের। কথা হইতেছে আমার বাবা আগে সিগারেট খাইতো। এখন হজ্জ করে আসছে তাই আর খায়না। যাই হোক একদিন বাসায় ম্যাচের কাঠি ছিলো না শেষ হয়ে গেছে, লাইটারেও আগুন নাই,আব্বা সিগারেট খাবে। সেই সময় কোনটায় আগুন নেই। আমার মা লাঠির চুলায় সেদিন শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় লাঠি দিয়ে রান্না করতেছিল।আব্বা পাশের রুমে। আমি আমার রুমে। আব্বা আমার নাম ধরে ডাক দিলো,,,,,, আমি জি আব্বা।আব্বা এইদিকে আসো তো মা। আমি গেলাম। আব্বা বলে মা ম্যাচের কাঠি নাই, আগুন লাগতো সিগারেট খাইতাম। আমি আব্বাকে বললাম মা চুলায় রান্না করছে আমাকে সিগারেট টা দাও আমি জালায় নিয়ে আসি।আব্বা না না থাক খাবো না এখন, তুমি পারবে না। আমি নাছোর বান্দা না না আব্বা আমি চুলার আগুন থেকে জালিয়ে নিয়ে আসবো।আব্বা না না না। আমি আব্বার কাছে গিয়ে সিগারেট হাতে নিয়ে চুলায় কাছে দৌড় দিলাম।দেখি মা নেই, মা সবজি কাটতে বারান্দায় গেছে।আমি সিগারেট জালাবো কিন্তু কেমনে, ওহ বুদ্ধি পাইছি মুখে নিয়ে জালাতে হয়,,,,,,,,,লেফট হ্যান্ড দিয়ে সিগারেট টা মুখে নিলাম আর এক হাতে চুলার আগুন।আগুন দিয়ে সিগারেট জালাতে পারছি না ফু ফু করে দু তিন বার সিগারেট মাটিতে ফেলে দিছি। আবার চেষ্টা শুরু করলাম এইবার মনে পড়ছে মিঠুন চক্রবতির একটা সিনেমা সেই সিনেমায় মিঠুন উহ উহ করে সিগারেট টানছিলো। আমি আবার চেষ্টা করলাম এইবার আগুন ধরে সিগারেটের অর্ধেক পুড়ে গেছে। আমি খুক খুক খুক কাশি দিলাম তিনবার।আবার একবার টান দিলাম আহ ভালই লাগে, নাক দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে, মুখ দিয়েও বের হচ্ছে,ওই যে শীতের সকালে কুয়াশা ঢাকা দিনে হা হা হা করলে মুখ দিয়ে ধোয়া বের হয় ঠিক তেমন সুন্দর ধোয়া বের হচ্ছে।একটু পর দেখি সিগারেটের বারোটা বেজে গেছে, মানে সিগারেট শেষ হয়ে গেছে! এখন কই পাবো মনে মনে ভাবলাম আর একটা এনে জালাই দিয়ে আসবো আব্বা কে, না থাক যদি ধরা খাই সিগারেট গেলো কই আব্বা জিগায়। ওরে বাপ রেহ একশত চুয়াল্লিশ ধারা জারি হইলে মাইর খাবো। মনে মনে বুদ্ধি করতে করতে আব্বার ঘরে গেলাম। আব্বা আমার দিকে তাকায় বলে সিগারেট কই মা। আমি-কি একটা ছোট সিগারেট ঝালাইতে দিছো আব্বা চুলায় পইড়া ছাই হয়ে গেছে তাই আনতে পারি নাই। আব্বা এই শুনে আমাকে বলে মা হাত পুড়িস নাই তো আবার তোমার মা এই কাহিনী জানলে আমার খবর আছে, তোমাকে সিগারেট জালাতে দেয়া উচিত হয়নি আমার। আমি চলে আসলাম আমার রুমে, এসে খালি কাসি পায় খুক খুক খুক। মা বলে পানি খাও ঠিক হবে। আমি মনে মনে বলি মা পানি না আমি যে আজ লংকা কান্ড ঘটাইছি তুমি জানলে আমারে জুতা দিয়ে মারবা।পরে রুমে বসে থেকে বাইরে গেলাম আপু বলে এই তোর গায়ে দিয়ে সিগারেটের গন্ধ কেন রেহ। আমি বললাম আব্বা খাচ্ছে তাই গন্ধ পাইছিস। কি প্রকার দুষ্ট ছিলাম আপনারাই কন।আমার পিতাজি আর মাতাজি এই কথা জানলে আমায় আস্ত রাখবে না। সেদিনের কথা মনে হলে আজও হাঁসি পায়।। সিগারেটে টান দিছিলাম মিঠুন চক্রবতির স্টাইলে,সেদিন মনে হইছিলো “আই এম এ সুপার স্টার”।

প্রিয় শৈশব অনেক মধুর হয়।

Tag :

“সিগারেট টা দাও জ্বালিয়ে দি” দুরান্ত শৈশব

Update Time : ০৬:৫৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুলাই ২০২০

“সিগারেট টা দাও জ্বালিয়ে দি” দুরান্ত শৈশব
প্রিয়ন্তি রুম্পা দিনাজপুর থেকে.
,আমি তখন ক্লাস টেন এ পড়ি।স্বভাব আমার ভদ্র, দুষ্ট দুটোই ছিলো। তাই মাইর খাইতাম প্রচুর। আমার আব্বা খুব রাগি মানুষ ছিলেন। গ্রামে সবাই সন্মান করেন, যেকোন বিচার শালিসে আমার বাবাকে বিচার দিয়ে আসে এলাকার মানুষ। রাগি হলেও মনটা খুবই ভালা আমার বাজানের। কথা হইতেছে আমার বাবা আগে সিগারেট খাইতো। এখন হজ্জ করে আসছে তাই আর খায়না। যাই হোক একদিন বাসায় ম্যাচের কাঠি ছিলো না শেষ হয়ে গেছে, লাইটারেও আগুন নাই,আব্বা সিগারেট খাবে। সেই সময় কোনটায় আগুন নেই। আমার মা লাঠির চুলায় সেদিন শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় লাঠি দিয়ে রান্না করতেছিল।আব্বা পাশের রুমে। আমি আমার রুমে। আব্বা আমার নাম ধরে ডাক দিলো,,,,,, আমি জি আব্বা।আব্বা এইদিকে আসো তো মা। আমি গেলাম। আব্বা বলে মা ম্যাচের কাঠি নাই, আগুন লাগতো সিগারেট খাইতাম। আমি আব্বাকে বললাম মা চুলায় রান্না করছে আমাকে সিগারেট টা দাও আমি জালায় নিয়ে আসি।আব্বা না না থাক খাবো না এখন, তুমি পারবে না। আমি নাছোর বান্দা না না আব্বা আমি চুলার আগুন থেকে জালিয়ে নিয়ে আসবো।আব্বা না না না। আমি আব্বার কাছে গিয়ে সিগারেট হাতে নিয়ে চুলায় কাছে দৌড় দিলাম।দেখি মা নেই, মা সবজি কাটতে বারান্দায় গেছে।আমি সিগারেট জালাবো কিন্তু কেমনে, ওহ বুদ্ধি পাইছি মুখে নিয়ে জালাতে হয়,,,,,,,,,লেফট হ্যান্ড দিয়ে সিগারেট টা মুখে নিলাম আর এক হাতে চুলার আগুন।আগুন দিয়ে সিগারেট জালাতে পারছি না ফু ফু করে দু তিন বার সিগারেট মাটিতে ফেলে দিছি। আবার চেষ্টা শুরু করলাম এইবার মনে পড়ছে মিঠুন চক্রবতির একটা সিনেমা সেই সিনেমায় মিঠুন উহ উহ করে সিগারেট টানছিলো। আমি আবার চেষ্টা করলাম এইবার আগুন ধরে সিগারেটের অর্ধেক পুড়ে গেছে। আমি খুক খুক খুক কাশি দিলাম তিনবার।আবার একবার টান দিলাম আহ ভালই লাগে, নাক দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে, মুখ দিয়েও বের হচ্ছে,ওই যে শীতের সকালে কুয়াশা ঢাকা দিনে হা হা হা করলে মুখ দিয়ে ধোয়া বের হয় ঠিক তেমন সুন্দর ধোয়া বের হচ্ছে।একটু পর দেখি সিগারেটের বারোটা বেজে গেছে, মানে সিগারেট শেষ হয়ে গেছে! এখন কই পাবো মনে মনে ভাবলাম আর একটা এনে জালাই দিয়ে আসবো আব্বা কে, না থাক যদি ধরা খাই সিগারেট গেলো কই আব্বা জিগায়। ওরে বাপ রেহ একশত চুয়াল্লিশ ধারা জারি হইলে মাইর খাবো। মনে মনে বুদ্ধি করতে করতে আব্বার ঘরে গেলাম। আব্বা আমার দিকে তাকায় বলে সিগারেট কই মা। আমি-কি একটা ছোট সিগারেট ঝালাইতে দিছো আব্বা চুলায় পইড়া ছাই হয়ে গেছে তাই আনতে পারি নাই। আব্বা এই শুনে আমাকে বলে মা হাত পুড়িস নাই তো আবার তোমার মা এই কাহিনী জানলে আমার খবর আছে, তোমাকে সিগারেট জালাতে দেয়া উচিত হয়নি আমার। আমি চলে আসলাম আমার রুমে, এসে খালি কাসি পায় খুক খুক খুক। মা বলে পানি খাও ঠিক হবে। আমি মনে মনে বলি মা পানি না আমি যে আজ লংকা কান্ড ঘটাইছি তুমি জানলে আমারে জুতা দিয়ে মারবা।পরে রুমে বসে থেকে বাইরে গেলাম আপু বলে এই তোর গায়ে দিয়ে সিগারেটের গন্ধ কেন রেহ। আমি বললাম আব্বা খাচ্ছে তাই গন্ধ পাইছিস। কি প্রকার দুষ্ট ছিলাম আপনারাই কন।আমার পিতাজি আর মাতাজি এই কথা জানলে আমায় আস্ত রাখবে না। সেদিনের কথা মনে হলে আজও হাঁসি পায়।। সিগারেটে টান দিছিলাম মিঠুন চক্রবতির স্টাইলে,সেদিন মনে হইছিলো “আই এম এ সুপার স্টার”।

প্রিয় শৈশব অনেক মধুর হয়।